হযরত আদম(আঃ) এর পার্থিব জীবন-৩য় পর্ব
হযরত আদম(আঃ) এর পার্থিব জীবন-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত জাকারিয়া (আঃ)-এর যুগে ছিল কলমের বিচার। এভাবে অধিকাংশ নবীর যুগে সত্য-মিথ্যা যাচায়ের এক একটি খোদায়ী ব্যবস্থা থাকত। কিন্তু শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর যুগে আল্লাহ তায়ালা এসব ব্যবস্থা বাতিল করে দুজন সাক্ষীর জবান বন্দীর উপর সত্য-মিথ্যার প্রমাণ নির্ভর করে দিলেন। এটা ছিল শেষ নবীর উম্মতকে সন্মানীত করে দেখবার একটি পদ্ধতি মাত্র।
হযরত আদম (আঃ) এর নির্দেশে অনুসারে তাঁর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল দুটি মেষ জবাই করে মিনার এক পাহাড়ের উপর রেখে আসল। কিছুক্ষণের মধ্যে একখন্ড অগ্নি এসে হাবিলের জবেহকৃত মেষটি উধাও করে দিল। এ দৃশ্য অবলোকন করে হযরত আদম (আঃ) বললেন, হাবিলের কুরবানী কবুল হয়েছে। অতএব সেই একলিমাকে বিবাহ করবে। আল্লাহ তায়ালার এ ইঙ্গিত অনুসারে হযরত আদম (আঃ) হাবিলের সঙ্গে একলিমাকে এবং কাবিলের সঙ্গে গাজাকে বিবাহ দিয়ে দিলেন।
কাবিল ইমানদারীর ক্ষেত্রে খুব অগ্রগামী ছিল না। সে পিতার সিদ্ধান্ত মনে প্রাণে মেনে নিতে পারল না। সে হাবিলকে হুমকি দিয়ে বলল, তুমি একলিমাকে পরিত্যাগ কর, না হয় আমি তোমাকে হত্যা করব। হাবিল সে কথায় বলল, আমি আল্লাহ ও রাসূলের সিদ্ধান্তের উপর বহাল থাকব। তাতে তুমি আমাকে ভয় প্রদর্শন করে পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। কাবিল এ কথায় ভীষণ ক্রোধান্বিত হল এবং হাবিলকে হত্যা করার প্রতিজ্ঞা করল। একদা হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া কাবাঘর জিয়ারতের জন্য মক্কা শরীফে চলে গেলেন। এদিকে কাবিল এ সময়টাকে তাঁর দুরভিসন্ধি চরিতার্থের উপযোগী সময় হিসেবে বেছে নিল এবং হাবিলের পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়াতে লাগল।
কাবিলের চিন্তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে একটা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিল। সেটা হল কি উপায়ে তাঁকে হত্যা করবে তা স্থির করতে পারল না। এ সময় শয়তান দীর্ঘদিন পরে হযরত আদম (আঃ)-এর সন্তানদের ক্ষেত্রে একটু কাজ করার সুযোগ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হল। সে কাবিলের সম্মুখে একজন পথচারী হিসেবে উপস্থিত হল। কাবিল দেখল পথচারীর সম্মুখ দিয়ে একটি সাপ অতিক্রম করছিল। এমন সময় পথচারী একখন্ড ভারী পাথর এনে সাপের মাথায় আঘাত করল। তাতে সাপের মাথা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল এবং অল্প সময়ের মধ্যে সাপটি মারা গেল। এ কাজ সমাধা করে পথচারী চলে গেল। কাবিল এ দৃশ্য দেখে হত্যার উপযুক্ত কৌশল গ্রহণ করল।
অতপর হাবিলের খোঁজ খবরে বের হল। বাড়ির বাইরে গিয়ে সে দেখতে পেল, হাবিল ছাগল বসবাসকারী একটি নির্জন গৃহের এক কোনে ঘুমিয়ে আছে। তখন কাবিল দূর থেকে একটি ভারী পাথর বহন করে নিয়ে আসল এবং ধীরে ধীরে হাবিলের কাছে গিয়ে সজোরে পাথর দ্বারা তাঁর মাথায় আঘাত করল। অমনি হাবিল ছটফট করে উঠলেন। তখন পাথরটি উঠিয়ে পুনরায় তাঁর মাথায় আঘাত করল। এবার সে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। হাবিল মৃত্যুবরণ করলেন।
প্রাথমিক কাজ সমাধা করে সে দ্বিতীয় আর একটি সমস্যার সম্মুখীন হল। হাবিলকে হত্যা করা হয়েছে এখন তাঁর লাশটি কি করা হবে। যদি এভাবে রাস্তার পাশে লাশটি পড়ে থাকে তাহলে তাঁর অন্যান্য ভাইয়েরা এ হত্যার রহস্য অবশ্যই উদ্ঘাটন করে ফেলবে। কাবিল এ বিষয় নিয়ে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হল। এমনকি সে দু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগল। এমন সময় সে একটু দূরে দেখতে পেল, দুটি কাক ভীষণ যুদ্ধে ও মারামারিতে লিপ্ত। কিছুক্ষণ মরণপণ যুদ্ধ করার ফলে একটি কাক মৃত্যবরণ করল, হত্যাকারী কাকটি নিজ ঠোট ও পা দ্বারা মাটিতে একটা বড় গর্ত করে নিল এবং মৃত কাকটিকে টেনে এনে সে গর্তের মধ্যে ফেলে উপরে মাট দিয়ে ঢেকে দিল। এ কাজ সমাধা করে কাকটি উড়ে চলে গেল। কাবিল এ দৃশ্য দেখে নিজের জন্য পথ পেয়ে গেল। তাড়াতাড়ি সে নিকটবর্তী স্থানে একটি কবর খনন করল এবং তাঁর মধ্যে হাবিলকে রেখে মাটি চাপা দিল।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত আদম(আঃ) এর পার্থিব জীবন-৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন