হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা– পর্ব ৫

হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

বিবি রহিমা বললেন, তাহলে এবার ওষুধটির কথা বলুন। বৃদ্ধ বলল, তুমি এখানে অপেক্ষা কর আমি ওষুধ এনে তোমাকে দিচ্ছি। এই বলে বৃদ্ধ চলে গেল। বিবি রহিমা সেখানে বৃদ্ধের অপেক্ষার দাঁড়িয়ে রইলেন। কিছু সময় পরে বৃদ্ধ এক বোতল পানিজাতীয় ওষুধ এবং মাংসজাতীয় এক প্রকার ওষুধ নিয়ে হাজির হল। বৃদ্ধ রহিমার হাতে বোতল তুলে দিয়ে বলল এ ওষুধ তাঁর শরীরে লাগাবে এবং মাংসজাতীয় ওষুধ দিয়ে বলল, এটা ভুনা করে তাঁকে খেতে দিবে। দেখবে আগামী দিনের মধ্যে তাঁর শরীর অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেছে। পরের দিন এভাবে লাগালে দুদিনেই তিনি আরোগ্য লাভ করবেন। হযরত আইয়ুব (আঃ) আল্লাহ্‌র নবী। আমাদের প্রিয় পথ প্রদর্শক। তাঁর প্রতি আমাদের প্রাণের গভীর আকার্ষণ রয়েছে। অতএব তাঁর সামান্য উপকার করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। আমি তাঁর একজন ভক্ত। শত্রুদের সতর্ক বিরোধিতার কারণে তাঁর খোজ-খবর নিতে পারি নি। তবে আগামীতে আমি সরাসরি তাঁর নিকট যাতায়াত করব। এ ধারনের লম্বা বক্তৃতা দিয়ে সে বিবি রহিমার আস্থাভাজন হল।

বিবি রহিমা ওষুধ নিয়ে নবীর কাছে পৌঁছলেন। প্রথমে তাঁর আহারাদী সম্পন্ন করে। তারপরে অনেক চিন্তা ভাবনা করলেন। শেষ পর্যন্ত নবীর অগোচরে ওষুধ ব্যবহার করতে সাহস পেলেন না। তাই তিনি এক পর্যায়ে নবীর নিকট বৃদ্ধের দেয়া ওষুধের কথা বললেন। নবী ওষুধের কথা শুনে রাগান্বিত হলেন এবং বললেন আমার অসুখ ওষুধে আরোগ্য হবে না।

এটা আল্লাহ্‌ তা’য়ালার নিকট থেকে আমি চেয়ে এনেছি। যখন আরোগ্য লাভ করা আমার জন্য মঙ্গল জনক হবে তখন বিনা ওষুধে আল্লাহ্‌ এ রোগ ভাল করে দিবেন। এ জন্য তুমি নিশ্চিত থাক। ওষুধ যিনি দিয়েছেন তিনি আমাদের বন্ধু নয়। আমাদের শত্রু। দ্বিতীয়ত ঐ ওষুধ মনে হয় কোন হালাল জিনিষ দ্বারা তৈরি হয় নি।  এটা আমাদের জন্য মঙ্গল জনক হবে না বলে আমার মনে হয়। অতএব ওটা তুমি ফেলে দাও। ওটা আমাকে ব্যবহার করানোর চেষ্টা করবে না।

হযরত রহিমা স্বামীর কথা শুনে বললেন, যিনি এ ওষুধ দিয়েছেন তিনি একজন মুসলমান। আপনার একান্ত ভক্ত। তাই তাঁর ওষুধের ব্যাপারে আমার কোন রকম সন্দেহ নেই। এখন আপনার মর্জির উপর নির্ভর। নবী বললেন, আপাতাত তুমি ওষুধটা রেখে দাও। আল্লাহ্‌ তা’য়ালার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন সংবাদ পেলে তখন যা করার করা যাবে। হযরত রহিমা ওষুধটা নবীর বিছানার কাছেই রেখে দিলেন।

পরের দিন নবী বিবি রহিমাকে ডেকে বললেন, রহিমা, আমি অসুস্থ হবার পর থেকে প্রতি রাতে দুবার আল্লাহ্‌র তাজাল্লি দর্শন করে থাকি এবং তাতে অশেষ তৃপ্তি পাই। কিন্তু আজকের রাতে আমি সে তাজাল্লি দর্শন করতে আদৌ সক্ষম হইনি। এর কি কারণ তা বুঝতে পারলাম না। রহিমা বললেন, আপনি আল্লাহ্‌র নবী, আল্লাহ্‌র সাথে আপনার সম্পর্কের বিষয় আমরা কি জানি। এ ব্যপারে আমরা কোন তথ্য দিতে অক্ষম। হযরত আইয়ুব (আঃ) খুবই দুশ্চিতায় পতিত হলেন। এভাবে এক এক করে তিন দিন কেটে গেল তিনি আর তাজাল্লি দেখতে পেলেন না।

অবশেষে তিনি দুহাত তুলে আল্লাহ্‌র দরবারে কেঁদে কেঁদে তাজাল্লি লাভের আরজ জানালেন। তখন হযরত জিব্রাইল (আঃ) এসে জানলেন। আপানার বিছানার পাশে শরাবের বোতল ও শূকুরের মাংস রেখে আল্লাহ্‌র তাজাল্লির দর্শন চাচ্ছেন? এটা নিতান্ত বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। আপনি অতি সত্তর ঐ অপবিত্র দ্রব্যাদি দূরে নিক্ষেপ করুন তাহলে পুনরায় তাজাল্লি দর্শন লাভে সক্ষম হবেন।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।