হজ্জের মৌসুমে আরব গোত্রসমূহকে দাওয়াত প্রদান
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে কা’ব ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তিন বৎসর পর্যন্ত গোপনে দাওয়াত প্রদান করিয়াছেন। চতুর্থ বছর প্রাকাশ্যে দাওয়াত দিতে আরম্ভ করেন। দশ বছরকাল তিনি এই প্রকাশ্যে দাওয়াতের কাজ করিতে রহিলেন।
হজ্জের মৌসুমে, উকায, মাজান্নাহ ও যিলমায নামক বাজারসমূহে লোকদের অবস্থানস্থলে গমন করিতেন এবং তাহাদিগকে আহবান করিতে যেন, তাঁহাকে সাহায্য ও হেফাজত করে যাহাতে তিনি আপন রব্বের পয়গাম পৌছাতেই পারেন। বিনিময়ে তাঁহারা বেহেশত পাইবে। কিন্তু তাঁহাকে সাহায্য করিবে এমন একজন লোকও তিনি পাইতেন না। এইরূপে তিনি এক এক গোত্রের পরিচয় ও তাদের অবস্থান খোজ করিতে করিতে একবার তিনি বনু আমের ইবনে সা’সাআ আমক গোত্রের নিকট পৌঁছিলেন। তাঁহারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু এমন কষ্ট দিলেন যাহা তিনি আর কাহারও নিকট হইতে পান নাই।
এমন কি তিনি যখন তাহাদের নিকট হইতে ফিরিয়া চলিলেন তখন তাঁহারা পিছন হইতে তাঁহাকে পাথর ইক্ষেপ করিতে লাগিল। অতঃপর তিনি বুনু মুহারিব ইবনে খাসাফাস গোত্রের নিকট পৌছিলেন। তাহাদের মধ্যে একশত বিশ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধা ব্যক্তিকে পাইয়া তাঁহার সহিত কথা বলিলেন এবং তাঁহাকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিলেন। আর তাঁহাকে এই আহবান জানালেন যে, আমাকে হেফাজত কর। যাহাতে আমি আমার রব্বের পয়গাম পৌছাইতে পারি।
বৃদ্ধ লোকটি বলিল্, আরে মিয়া! তোমার কাওম তোমার সম্পর্কে ভাল জানে। খোদার কছম, যে ব্যক্তি তোমাকে লইয়া ঘরে ফিরিবে সে হজ্জে আগমনকারী সকলের মধ্যে সর্বাপেক্ষা খারাপ জিনিস লইয়া ফিরিবে (নাউযুবিল্লাহ)। আমাদের নিকট হইতে দূর হও, এখান হইতে সরিয়া যাও। আবু লাহাব সেখানে দাড়াইয়া মুহারিবী বৃদ্ধটির কথাবার্তা শুনিতেছিল। সে বৃদ্ধকে বলিল, এই হজ্জ মৌসুমে সমবেত সকল লোক যদি তোমার ন্যায় হইতে তবে সে যে দ্বীনের উপর কায়েম রহিয়াছে উহা পরিত্যাগ করিয়া দিত। (নাউযুবিল্লাহ)
এই লোকটির বে-দ্বীন ও মিথ্যাবাদী। বৃদ্ধ বলিল। খোদার কসম, তুমিই তাঁহার সম্পর্কে ভাল জানিবে, কারণ সে তোমারই ভাতিজা, তোমারই আত্মীয়। অতঃপর বৃদ্ধ বলিল, হে আবু ওতবাহ, আমার মনে হয় তাঁহার মস্তিষ্ক বিকৃত ঘটিয়াছে। আমাদের সহিত স্বগোত্রীয় এক ব্যক্তি আছে যে, উহার চিকিৎসা করিতে পারে। আবু লাহাব তাঁহার কথার কোন জবাব দিল না। তবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখনই কোন আরব গোত্রের নিকট দাঁড়াইতে দেখিত, আবু লাহাব চিৎকার করিয়া বলিত, এই ব্যক্তি বে-দ্বীন, মিথ্যাবাদী।