স্বাধীনতা সংগ্রাম দেশে দেশে যুগে যুগে

একটি দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বের, মর্যাদার আর আবেগের বিষয়টি কী?
এক বাক্যে আমরা স্বীকার করে নেব—অবশ্যই স্বাধীনতা। আর তা যদি হয় রক্ত দিয়ে কেনা, তাহলে সেই সংগ্রাম আর সংগ্রামী মানুষ চিরভাস্বর হয়ে বেঁচে থাকে সেই দেশের ইতিহাসে, মানুষের হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে। আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতার মাস মার্চ। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির জন্ম হলেও, এরকম গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাস বিশ্বের আরও অনেক দেশে রয়েছে।

স্কটল্যান্ড : প্রাচীনতম স্বাধীনতা সংগ্রাম

স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামই সম্ভবত আমাদের জানা ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। দুটি পর্যায়ে এ সংগ্রাম সম্পন্ন হয়—প্রথম পর্যায় ১২৯৬ থেকে ১৩২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্যায় ১৩৩২ থেকে ১৩৫৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মহান সংগ্রামী যোদ্ধা রবার্ট ব্রুস কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন। তাঁর পুত্র ও বংশধরেরা স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়ে যান। তবে রবার্ট ব্রুসের মৃত্যুর পর আবারও ব্রিটেন চুক্তি ভঙ্গ করে স্কটল্যান্ডে আগ্রাসন চালায়। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৩৫৭ সালে বারউইক চুক্তির মাধ্যমে স্কটল্যান্ড সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশ আগ্রাসনমুক্ত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র : রক্তে কেনা স্বাধীনতা

বর্তমান পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ আমেরিকাও স্বাধীনতা পেয়েছে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত এ দেশটির সংগ্রাম শুরু হয় ১৭৭৫ সালে। এ সময় ব্রিটিশ অধিভুক্ত ১৩টি কলোনি (আজকের অঙ্গরাজ্য) বিদ্রোহ করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ঐতিহাসিকদের মতে, এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়—আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দেয় ৪০-৪৫% মানুষ, বিরোধিতা করে ১৫-২০% এবং নিরপেক্ষ থাকে ৩৫-৪৫% মানুষ। জর্জ ওয়াশিংটন সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন। ব্রিটিশরা অধিক সেনা মোতায়েনের জন্য ভারতবর্ষ থেকে সৈন্য নিয়ে যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এর ফলে মহীশূরে টিপু সুলতান ও ফরাসিদের সম্মিলিত আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্রিটিশদের বেগ পেতে হয়। আমেরিকায় স্বাধীনতাকামীদের বিপক্ষে ব্রিটিশ বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস, যাকে পরে ভাইসরয় করে ভারতবর্ষে পাঠানো হয়। স্বাধীনতাকামীদের অব্যাহত আক্রমণের ফলে ১৭৮৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস জর্জ ওয়াশিংটনের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এভাবেই জন্ম নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

চীন

গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বর্তমান সময়ের একমাত্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব একবিংশ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বছর চীনে সিয়া রাজবংশ স্থায়ী ছিল। সিয়াই চীনের ইতিহাসের প্রথম রাজবংশ। এরপর বিভিন্ন রাজবংশ চীনকে শাসন করে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্য আজন্ম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের কাছ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বহু জাতি-গোষ্ঠী স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ এলাকা ও জনগণ ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে ছিল। বর্তমানে এদের বেশির ভাগই স্বাধীন হলেও অনেকেই ব্রিটিশ আইন, প্রতিষ্ঠান এবং রীতিনীতি ধরে রেখেছে। এমনকি যেসব এলাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল না, সেখানেও অনেক দেশে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্য। যুক্তরাজ্যের মূল কাঠামো গঠিত হয় ১৭০৭ সালের ১ মে এবং ১৮০১ সালের ১ জানুয়ারি আয়ারল্যান্ড দেশটির অন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমানে ১৪টি বাইরের এলাকা এখনও যুক্তরাজ্যের অধীনে রয়েছে।

রাশিয়া

১৪ ও ১৫ শতকে মস্কোকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী রুশ রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। সম্রাট পিটারের সময় রাশিয়া বিশ্বের বুকে একটি বিরাট শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবে বলশেভিকরা রাজতন্ত্রের পতন ঘটায়। ১৯২২ সালে বিশ্বের প্রথম সাম্যবাদী রাষ্ট্র—সোভিয়েত ইউনিয়ন—প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে রাশিয়া ছিল ১৫টি অংশের একটি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে রাশিয়া মুক্ত বাজার ও গণতন্ত্রকে স্বাগত জানায়। ১৯৯০ সালের ১২ জুন রাশিয়ার নতুন ফরমেশন হওয়ায় এ দিনটি রাশিয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়।

ফ্রান্স

বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জাতি-রাষ্ট্রগুলোর একটি হলো ফ্রান্স। খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকে প্রাচীন রোমানরা অঞ্চলটির দখল নেয় এবং খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে রোমান সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত শাসন করে। ৮৪৩ সালে ভ্যরদার চুক্তির মাধ্যমে একক শাসকের অধীনে ফরাসি রাষ্ট্র গঠিত হয়। ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং দেশটি বহু দশক ধরে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত থাকে। বর্তমানে ফ্রান্স পঞ্চম প্রজাতন্ত্র পর্যায়ে রয়েছে, যা ১৯৫৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে।

জার্মানি

১৮৭১ সালের আগে জার্মানি একক রাষ্ট্র ছিল না। বিভিন্ন সময়ে এটি কনফেডারেশন বা স্বতন্ত্র রাজ্যের সমষ্টি ছিল। ১৮৭১ সালের ১৮ জানুয়ারি রাষ্ট্রগুলো একত্রিত হয়ে জার্মান সাম্রাজ্য গঠন করে। ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মানি বার্লিন প্রাচীর তোলে। ১৯৮৯ সালে প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়, যা পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদের পতনের প্রতীক হয়ে ওঠে। ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর দুই জার্মানি একত্রিত হয়ে জার্মান ফেডারেল প্রজাতন্ত্র গঠন করে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!