স্বর্ণলতাপুর— তাহেরা বেগম

সাধারণত লক্ষ করা যায়, সমবয়সী ভাইবোনদের মধ্যে ঝগড়া, খুঁনসুটি লেগেই থাকে। কিন্তু আরাফাত আর বোন আফরাসিয়াবের কথা আলাদা। তাদের মধ্যে গলায় গলায় ভাব। তারা দু’জন একেবারে বন্ধুর মতো। তারা তাদের মধ্যে নিজেদের কথা নিজেরা শেয়ার করে।
তাদের বাড়ির পর কিছু বাড়ি ফেলে গ্রামের শেষাংশে একটি বন আছে। তারা ছোট থেকেই এই বন নিয়ে অনেক গল্প শুনেছে। মায়ের মুখে শুনেছে যে, অনেকদিন আগে ঐ বনটিতে গ্রামের কিছু মানুষ গিয়েছিল বসতি স্থাপনের লক্ষ্যে। কিন্তু তারা সেই যে গেলো আর ফিরে আসেনি। পরে তাদেরকে কিছু মানুষ উদ্ধার করতে গেলে তারাও আর ফিরে আসেনি। কেন সেই হারিয়ে যাওয়া লোকগুলো আর ফিরে আসেনি, সেই রহস্য এখনও উন্মোচিত হয়নি।
এইতো কিছুদিন আগেও কয়েকটি বালক খেলতে খেলতে ভুলে সে বনে হারিয়ে যায়। তারাও এখনও ফিরে আসেনি। এ গল্পটি শুনে তারা দুই ভাইবোন ঠিক করলো এবার সময় হয়েছে রহস্য উন্মোচনের। তাই তারা সিদ্ধামত্ম নিল এই ভয়াল বনের রহস্য তারা উন্মোচন করবেই। যেই ভাবা সেই কাজ। তারা নিজেদের মধ্যে তাদের কাজও ভাগ করে নিল। তারা তাদের সঙ্গে তাদের আরো কিছু সহপাঠী আরিফ, শিমুল, ফারহান, কেয়াকে নিয়ে একটি নির্ভীক দল গঠন করলো।
শিমুল, কেয়া, আফরাসিয়াব দায়িত্ব নিল প্রযুক্তি ও যোগাযোগের আর আরাফাত, আরিফ ও ফারহান দায়িত্ব নিল রাসত্মা চেনা ও যে কোন মুহূর্তের ব্যবস্থা করার আরাফাতরা অবশ্য বনে যাওয়ার আগে বনের আশেপাশে বসবাসরত কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও সংগ্রহ করেছে।
তারা যে তথ্যগুলো পেয়েছে তা হল, একবার এক লোক বনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল এক গলাকাটা লোক তলোয়ার নিয়ে ছুটে আসছে। তখন অবশ্য গভীর রাত হওয়ায় সে ভাল করে খেয়াল করেনি বলে সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু তা দেখে সে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। লোকটি ভয়ার্ত গলায় আরাফাতকে বলল, ‘‘বাবা এমন ভয় আমি কখনো পাইনি। এমন ভয়ার্ত দৃশ্য আমি আর কখনো দেখিনি।’’
আরাফাত লোকটিকে অভয় দিয়ে বললো, ‘‘চাচা আপনি ভয় পাবেন না। এটা আপনার চোখের ভুল। গলাকাটা লাশ কি করে তলোয়ার নিয়ে তেড়ে আসবে আপনার দিকে? আপনি কোনো চিমত্মা করবেন না। আমরা এই গুপ্তরহস্য উন্মোচন করবোই ইনশা’আল্লাহ্। আপনারা শুধু আমাদের জন্য দোয়া করুন তাহলেই হবে।’’
কিন্তু আরাফাতরা এক বড় সমস্যার মুখে পড়লো, তাদের বাবা-মাকে কি করে রাজি করাবে! বনে যাওয়ার কথা বললে ওদের বাবা-মা কেউ রাজি হবে না। এদিকে মিথ্যেও বলা যাবেনা। তাছাড়া তাড়াতাড়ি না গেলে যে স্কুল খুলে যাবে। ভাগ্যিস গ্রীষ্মের বন্ধ চলছে, তাইতো তারা এখন রহস্য সমাধানে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। শেষ পর্যমত্ম তারা সিদ্ধামত্ম নিল আর যাই হোক মিথ্যা বলা যাবে না। অগত্যা তারা তাদের মা-বাবাকে সত্যি কথা জানালো। লোকটির কথা জানাতেও ওরা ভুললোনা। তারা তাদের মা-বাবাদের অভয় দিল। আরাফাতের বাবা-মা ও অন্যান্যদের বাবা-মারা বললেন, ‘‘হ্যাঁ ঠিক আছে যাবে, আমরা চাইনা আমাদের ছেলেমেয়েরা কোনো কুসংস্কারের মাঝে বেড়ে উঠুক। আল্লাহ্ ভরসা।’’
ওরা খুশি হয়ে ওদের এই মিশনের জন্য তৈরি হতে লাগলো। ওরা সিদ্ধামত্ম নিল আগামীকালই বেরিয়ে পড়বে। সকালে উঠেই তারা তৈরি হয়ে নিল। সঙ্গে নিল বেশ কিছু শুকনো খাবার আর পানি। আল্লাহ্র নাম আর মা-বাবার দোয়া নিয়ে তারা রওয়ানা দিল তাদের প্রতীক্ষিত গমত্মব্যের উদ্দেশ্যে।
ওরা নিশ্চিমেত্ম হাঁটছে। কিন্তু ওরা সাবধান। কোনো শব্দ হলেই লক্ষ করছে কিসের শব্দ। বনের মধ্যে একটা সুন্দর জায়গা বেছে নিল ওরা তাঁবু খাটানোর উদ্দেশ্যে। তাড়াতাড়ি তাঁবু খাটানো শেষে ওরা বাসা থেকে আনা শুকনো খাবার কিছু খেয়ে বাকী অংশ রেখে দিল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। ওরা সিদ্ধামত্ম নিল আগামীকাল চষে বেড়াবে পুরো জঙ্গলটা (বন)। আগুন জ্বালিয়ে নিল ওরা, যাতে বন্যহিংস্র প্রাণী আক্রমণ না করে। তা ছাড়া আলোরও প্রয়োজন। ধীরে ধীরে রাতের অন্ধকারের কালোছায়া নেমে এল গভীর বনটিতে। দুটো তাঁবুর মধ্যে শুয়ে পড়লো ওরা, একটিতে ছেলেরা আর অন্যটিতে মেয়েরা। শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লো সকলেই।
মাঝরাতে একটি চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে গেলো আরাফাত। তাড়াতাড়ি সবাইকে জাগিয়ে দিয়ে, ওরা অনুসরণ করতে লাগলো শব্দটিকে। ওরা অনুসরণ করতে করতে একটি ঝর্ণার কাছে এসে পড়লো। অন্ধকারে চলতে অসুবিধা হলেও আরাফাত টর্চ জ্বালাতে নিষেধ করলো’ যাতে ওদের উপস্থিতি কেউ টের না পায়। চাঁদের আবছা আলোতে দেখতে পেল একটি ছায়া ঝর্ণার পাশের গুহাটিতে ঢুকে পড়লো। ওরা দ্বিধায় পড়ে গেলো এই ভেবে যে, ছায়াটি কোনো মানুষের কিনা। সাথে সাথে ওদের মাথায় যেন প্রশ্নের ঝাঁক উড়তে লাগলো। যদি ছায়াটি কোনো মানুষের হয় তবে সে ছায়া মানুষটি কি তাদের দেখেছে। যদি দেখে থাকে, তাহলে ওদের প্ল্যান নষ্ট হয়ে যাবে।
আফরাসিয়াব চেয়েছিল গুহাটি পর্যবেক্ষণ করতে। কিন্তু আরাফাত নিষেধ করলো, কারণ এ গুহাটিতে যদি কোনো মানুষ থাকে তবে তো ওরা ধরা পড়ে যাবে। তাছাড়া এই মানুষদের কাছে যদি অস্ত্র থাকে তবে ওরা তাদের সাথে কীভাবে মোকাবেলা করবে! নানা সংশয় আর দ্বিধা নিয়ে ওরা ফিরে গেল ওদের তাঁবুতে। অবশ্য যাবার সময় আফরাসিয়াব চিহ্ন রেখে গেলো, গাছে গাছে সাদা চক দিয়ে। তারপর ওরা তাঁবুতে গিয়ে মিটিংয়ে বসলো। ওরা ঠিক করলো আগামীকাল সকালে বেরিয়ে পড়বে। সকালে উঠে হালকা নাসত্মা করে ওরা আগের জায়গায় যাবে যেখানে ওরা গতরাতে গিয়েছিল। আফরাসিয়াবের চিহ্ন ধরে আরাফাতের নির্দেশমতো ওরা সামনে এগিয়ে চললো। গতরাতে তো অন্ধকারের জন্য কিছুই দেখতে পারেনি ওরা, তাই আজ জায়গাটি ভালোভাবে চিনে নিলো ওরা। শিমুল কিছু ছবিও তুললো। ওরা যখন ঝর্ণার ওখানে পৌঁছলো তখন সকালের অনেকাংশ পেরিয়ে গেছে। কাল রাত তো পিছু নেওয়াতে তাড়াতাড়ি আসা গেছে কিন্তু এখন আসতে তো ওদের সময় লেগেছে জায়গাটা চিনতে, ছবি তুলতে। যাই হোক ওরা এখান পর্যমত্ম এসেও ক্লামত্ম হলোনা, বরং প্রফুল্ল চিত্তে সাবধানে গুহার বিপরীত দূরত্ব বজায় রেখে একটি ঝোপে আশ্রয় নিল আর অপেক্ষা করতে লাগলো কি হয় দেখার জন্য।
আফরাসিয়াব কিছুক্ষণ পর বললো, ‘‘বেশ কিছুক্ষণ তো হয়ে গেল, এখান থেকে গুহাটা দেখে মনে হচ্ছে গুহাটা খালি। গিয়ে দেখে আসলে কেমন হয়?’’ ওরা সবাই একবাক্যে রাজি হয়ে গেল। আরাফাত বললো, ‘‘ঠিক আছে, তবে আমার মনে হয় আমি, আরিফ আর ফারহান ঘুরে আসি। তোরা থাক যদি কোনো বিপদ হয়, তবে আমি আমার টেপ রেকর্ডারটা ছেড়ে দেবো, যেটা থেকে কুকুরের আওয়াজ বের হয় আর যদি কেউ না থাকে তবে আমি তোদের ডাকতে আসবো।’’
আফরাসিয়াব বললো, ‘‘কিন্তু এখানে যদি কেউ আসে, তবে? আরাফাত মুচকি হেসে বললো, তোর টেপ রেকর্ডারটা বাজাবি, যেটা বাঘের গর্জনের মতো শব্দ করে। এতো গভীর বনে তো বাঘ থাকারই কথা। তাই কেউ সন্দেহও করবে না। আচ্ছা, এখন আসি, আল্লাহ হাফেজ।’’
আফরাসিয়াবও আল্লাহ্ হাফেজ বলে ভাইয়ের গমন পথে চেয়ে রইলো। আর আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাইতে লাগলো যাতে গুহায় কেউ না থাকে।
হলোও তাই, কারণ দয়াময় আল্লাহ্ আফরাসিয়াবের কথা শুনেছে। আরাফাতরা ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল। একি! গুহা তো আলোয় উদ্ভাসিত। যেন দিনের আলো! আরাফাত এবার নিশ্চিমত্ম হলো যে এ গুহায় মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী থাকতে পারে না। যদিও বাইরে দেখতে গুহার মতো কিন্তু ভেতের পাকা দেয়াল আর বৈদ্যুতিক সুবিধাসহ গুহাঘর এটি। এর মাঝে আসবাবপত্র, কাপড়চোপড়, খাদ্যপানি দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে এখানে কোনো মানুষ থাকে। শুধু একটি মানুষ নয়, বেশ কিছুসংখ্যক মানুষ এখানে থাকে। তারা তারা হয়তো শিক্ষিত। আর হয়তো সবাই প্রতিদিন এখানে থাকেনা। তাছাড়া রুমগুলো বেশ পরিপাটি করে গোছানো। এখানকার বসবাসকারীরা যে শিক্ষিত তার প্রমাণ পাওয়া যায়, এদের বইয়ের সংগ্রহ দেখে। ওরা সব রুম ঘুরে দেখতে শুরু করলো। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রুমের অবস্থা দেখে মনে হয় এখানে কেউ থাকে এবং তারা স্থায়ী। একটা ল্যাপটপও পাওয়া গেলো দ্বিতীয় রুম থেকে। আরাফাত তা চেক করার সময় সঙ্গে একটা পেনড্রাইভও পেল। ভাবলো তার ক্যারি বেগে নিয়ে নিতে, কিন্তু অন্যের জিনিস নেওয়া তাও আবার বিনা অনুমতিতে, অনুপস্থিতে কি ঠিক হবে? আচ্ছা থাক নেওয়া যাক। তারা তো রহস্য উন্মোচনের জন্যে এসেছে এ বনে কোনো ক্ষতি করতে নয়। তাছাড়া এমন এক গভীর বনে এরকম এক জায়গায় কোনো ভালো মানুষ তো থাকবেনা যে, গ্রামবাসীরা এ বনে আসা-যাওয়া বিপজ্জনক বলে মনে করে। এই ভেবে আরাফাত পেনড্রাইভ ও ল্যাপটপ নিয়ে নিল। এরপর ওরা এক রুমের সামনে এল, যে রুমটি ছিল অন্যরকম। কারণ এরুমের দরজাটি হল কোডসম্বলিত আর দরজার বাইর লেখা ‘‘সিক্রেট ওয়ার্ল্ড (ঝবপৎবঃ ড়িৎষফ)।’’
এসব দেখে ওরা হকচকিয়ে গেল। এমন এক গুহার মধ্যে আজব আজব জিনিস যা একটি গভীর বনের মধ্যে অবস্থিত। কিন্তু তবুও ওরা সাহস হারালো না। আরাফাত বললো, ‘‘বুদ্ধি দিয়ে সমাধান করতে হবে। আর যা করার, খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। যদি কেউ এসে পড়ে তবে সমস্যা হবে। কিন্তু তার আগে আফরাসিয়াবকে ডেকে নিলে ভালো হবে। যাই ওকে ডেকে নিয়ে আসি। তোরা থাক। আমি এখন যাবো আর আসবো।’’
এদিকে আফরাসিয়াব ভাবছে তার ভাইয়া এখনও আসছে না কেন। কোনো বিপদ হয়নি তো! অবশ্য বিপদ হলে তা ভাইয়ার রেকর্ডারটা বাজাতো। ঠিক তখনই আরাফাত ওদের ডাক দিল। ওরা তখন আরাফাতের পিছু পিছু গুহায় ঢুকে এর ভেতরকার অবস্থা দেখে অবাক হয়ে গেল। তখন আরাফাত ওদের সব খুলে বললো আর রুমটির সামনে নিয়ে গেল যেখানে কোডসিস্টেম দরজাটা আছে। ওরা ভাবনায় পড়ে গেল কীভাবে সমাধান করা যায় এ সংখ্যা কোডটির।
আরিফ বললো, ‘‘দরজার গায়ে যতটা শব্দ লেখা আছে ততোটা সংখ্যা গণলে হবে।’’
আরাফাত বললো, ‘‘চেষ্টা করা যাক না। দরজার গায়ে শব্দ আছে ১১টি। ১১টিপে দেখি।’’ কিন্তু ডায়াল করে লাভ হলো না। বরং কোড স্ক্রিনে উঠলো রং নাম্বার (ডৎড়হম হঁসনবৎ)। এবার ওরা অন্যভাবে ভাবতে লাগলো। এমন সময় শিমুল বললো, ‘‘আচ্ছা এমন কি হয় না, এ শব্দ গুলো ইংরেজি বর্ণমালার কত নম্বর শব্দসমূহ তা হয়তো কোড নাম্বার হবে।’’ আরাফাত বললো, ‘‘হতে পারে, দেখি না চেষ্টা করে।’’ তাই ওরা বর্ণ হিসেব করে (১৯৫১৮৫২০২৩১৫১৮১২৪) ১৭টি নম্বর ডায়াল করলো কিন্তু কোডস্ক্রিনে ৮টির বেশি নম্বর ওঠে না। অর্থাৎ কোডটি হবে ৮ডিজিট অথবা তার কম। আরাফাত বললো, ‘‘ঠিক আছে, আশাহত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনও তো হতে পারে হয়তো ১৭টি নম্বরের মধ্যে সমাধান আছে। ‘সিক্রেট’ (ঝবপৎবঃ) আর ‘ওয়ার্ল্ড’ (ডড়ৎষফ) দু’টি আলাদা শব্দ তাই ১৭টি নাম্বারও দু’ভাগে বিভক্ত। আর এখান থেকেই প্রত্যেক নম্বরগুলো ভাগ অনুসারে সাজালে হবে ১৯৫১৮৫২০ ও ২৩১৫১৮১২৪। এ ভাগে দেখা যাচ্ছে একটি সংখ্যার উপস্থিতি একাধিকবার আবার অন্যটি হয়তো দু’ভাগ মিলেও মাত্র একবার আছে, তাহলে আমরা এমন সব সংখ্যা নিই যেগুলো কমনও আনকমনও হবে। অর্থাৎ যে সংখ্যা একাধিকবার আছে সেগুলোর প্রত্যেকটি একবার আর যেগুলো একবার আছে ওগুলোও নিই একবার। তাহলে কোডটি হবে- ০১২৩৪৫৮৯। হয়তো এবার কোডটি সঠিক হতে পারে। কারণ এ কোডটিও ৮ডিজিটের।’’
কিন্তু ওদের দুর্ভাগ্য যে এবারও কোডটি ভুল হলো। তখন আফরাসিয়াব বললো, ‘‘এমনও হতে পারে কোডটি শুধু কমন সংখ্যাগুলোকে নিবে অর্থাৎ যে সংখ্যাগুলো একাধিকবার আছে সেগুলোর প্রত্যেকটিকে একবার করে নিয়ে কোড গঠন করা হয়েছে।’’ আরাফাত তৃতীয় বার ব্যর্থ হওয়ায় খুব দুঃখ পেয়েছিল। কিন্তু বোনের কথায় তার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
আরাফাত বললো, ‘‘তাহলে কোডটি হবে, ২১৫৮।’’ এবার ওরা আল্লাহ্ তা’আলার নাম নিয়ে নাম্বারটি ডায়াল করলো। আল্লাহ্র রহমতে, কোডস্ক্রিনে লেখা উঠলো ‘‘ইওর কোডনাম্বার ইজ কারেক্ট; (ণড়ঁৎ পড়ফব হঁসনবৎ রং পড়ৎৎবপঃ)’’।
ওরা আনন্দের সাথে সাথে আল্লাহ্র কাছেও শুকরিয়া আদায় করলো। ঠিক তখনই দরজা খুলে গেল কিন্তু বাইরে থেকে কিসের শব্দ হলো। আরাফাত বলে উঠলো, ‘‘আবার বিপদ।’’
আরাফাতের কথায় সবাই চমকে উঠলো। এক অজানা শঙ্কায় ওদের মন ভারাক্রামত্ম হয়ে উঠলো। কি করবে কিছু ভেবে উঠতে পারছে না। এমন সময় আরাফাত বললো, ‘‘আচ্ছা এমন এক জায়গার পেছনে দরজাতো থাকার কথা। আমরা সে দরজাটি খুঁজি। তবে আগে এই কোড দরজাটা বন্ধ করি।’’ আরাফাত যখন দরজাটি বন্ধ করলো, দরজাটি অটোলক্ড হয়ে গেল। তখন তাড়াতাড়ি ওরা পেছনের দরজা কি আছে নাকি নেই তা দেখতে পেছনের দিকে ছুটলো। দেখলো আরাফাত ঠিকই বলেছে। সেজন্য ওরা আল্লাহ্কে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানালো। এবার ওরা আগের জায়গায় ফিরে গেলো। নামাজ পড়লো আর আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া জানালো যেন ওরা এতদূর এসে বিফল না হয়, রহস্যের সমাধানা করতে পারে।

ওরা ঠিক করলো, গুহা, দেখা যাবে এমন জায়গায় তাঁবু খাটাবে। ওরা গুহা থেকে পনের-বিশ হাত দূরে তাঁবু খাটিয়ে হালকা নাসত্মা খেল। ওরা ঠিক করলো কাল সকালে আবার গুহায় যাবে। গিয়ে দেখবে যে ওই কোডদরজাটিতে কী আছে। এখন প্রায় সন্ধ্যা। হয়তো এখন ঐ গুহায় মানুষ আছে। আরাফাত সবার উদ্দেশ্যে বললো, ‘‘এখন আমরা বসে বসে সময় নষ্ট না করে বরং ল্যাপটপটা অন করে পেনড্রাইভটা চালু করে দেখি কি আছে এতে। সবাই এতে একমত হলো। ল্যাপটপ অন করতেই লেখা উঠলো ‘‘প্রেস দ্যা রাইট ওয়ার্ডস’’ (চৎবংংঃযব ৎরমযঃ ড়িৎফং)’’ এখন ওরা ভাবতে লাগলো সঠিক শব্দটি ঠিক কি হতে পারে। কেয়া বললো, ‘‘ইউরেকা! পেয়েছি! মনে আছে কোড সিস্টেম অর্থাৎ গুপ্ত দরজাটির কথা? দরজার গায়ে লেখা ছিল ‘‘ঝবপৎবঃ ডড়ৎষফ’’ (গুপ্ত জগৎ)। তাহলে শব্দ দু’টি প্রেস করলো হয়তো ল্যাপটপটি আনলক হয়ে যাবে।’’
কেয়ার কথামতো আরাফাত আল্লাহ্র নাম নিয়ে শব্দ দু’টি প্রেস করলো। কেয়ার ধারণা সঠিক হলো। ওরা আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করলো। ল্যাপটপে সার্চ (ঝবধৎপয) করেও একটি ম্যাপ ছাড়া কোনো ফাইল বা প্রোগ্রাম পাওয়া গেল না, যা থেকে ওদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যাবে। এখন একমাত্র ভরসা এ ম্যাপ আর পেন ড্রাইভটি। ম্যাপটি দেখে ওরা বুঝতে পারলো এটি ঐ গুহাবাসীদের নিজস্ব কোনো কর্মকান্ডের জন্য করা। কারণ এতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেডমার্ক (জবফসধৎশ) করা। আরাফাত বললো, ‘‘ম্যাপটি চেনা চেনা লাগছে। মানে ম্যাপটির উল্লেখ করা স্থানগুলো আমাদের গ্রামেরই বেশকয়েকটি স্থান, যেগুলো শহরের দিক নির্দেশ করে। তাছাড়া, এই বনের আগের স্থানটির নামও উল্লেখ আছে। মনে হচ্ছে, এ বনের বিভিন্ন স্থানও রাসত্মার বর্ণনা আছে এ ম্যাপে।’’ আফরাসিয়াব উৎফুল্ল হয়ে বললো, ‘‘তবে, আমাদের আর কষ্ট করতে হবে না। এমরা আর হারিয়ে যাবো না।’’ আরাফাত খুশি হয়ে বললো, ‘‘হ্যাঁ তুই একেবারে সঠিক কথাই বলেছিস। তবে, একটা জিনিস কী লক্ষ্য করেছিস, ম্যাপে যে রেডমার্কটি আছে, তা আছে বনের শেষপ্রামেত্ম, অর্থাৎ গুহাবাসীরা হয়তো এ জায়গাটিতে এমন মূল্যবান কিছু রেখেছে বা কিছু করছে, যার জন্য বনের শেষ প্রামত্মকে বেছে নিয়েছে। আচ্ছা এবার পেনড্রাইভটা চালিয়ে দেখি কী আছে এতে।’’
পেনড্রাইভ ওপেন করতেই একটা ফাইল দেখা গেল যা ওপেন করে পাওয়া গেল অনেক লোকের আইডেনটিটি ইনফরমেশন আর ছবি। ওপরে লেখা ‘‘ইম্পর্টেন্ট কাস্টোমারস্ (ওসঢ়ড়ৎঃধহঃ ঈঁংঃড়সবৎং)’’ লেখাটা পড়তেই সবার খটকা লাগলো। কি বুঝাচ্ছে লেখাটি তা কেউ বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ গুহার কাছ থেকে চিল্লাচিল্লির শব্দ ভেসে এলো। ওরা খুব সাবধানে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে গুহাটির বিপরীতে একটি ঝোপে লুকিয়ে গুহাটি দেখতে লাগলো। ওরা তাঁবুর পাশাপাশি থেকেও গুহাটি দেখতে পারতো। এমনকি কেউ বুঝতেও পেতনা যে ঝোপের কাছে তাঁবু আছে। কিন্তু গুহাটি যদি বেশি কাছে থেকে দেখে তবে হয়তো কথা শুনতে পারবে ওরা গুহাবাসীর। ওরা দেখে অবাক হয়ে গেল, কারণ গুহার বাইরে তিনটি লোককে দেখা যাচ্ছে, লোকগুলো নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে। ১ম লোকটিকে দেখে ওরা অবাক। কারণ লোকটি কোর্ট, প্যান্ট পরা শিক্ষিত লোক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় লোকটি সাধারণ পোশাক পরেছে। দেখা যাচ্ছে ১ম লোকটি ২য় ও ৩য় লোকগুলোকে হুকুম করছে আর বকাঝকা করছে। ২য় আর ৩য় লোকটি ১ম লোকটির কাছে কাকুতি-মিনতি করছে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য।
১ম লোক : ‘‘শহিদ, তুমি কী করে এত অসাবধান, যত্নহীন হতে পারো?’’
শহিদ : ‘‘সরি স্যার, এমন ভুল আর হবে না। আজ প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে আপনার সাথে কাজ করছি। এমন ভুল কখনো হয়নি। কিন্তু হঠাৎ…. স্যার, আমার মনে হয়না কেউ নিয়েছে। কারণ এখানে আমরা ছাড়া আর কেউ আসেও না। তাছাড়া, আমরা গ্রামবাসীদের যেভাবে ভয় দেখিয়েছি ওরা তো এখানে আসার নামও নেবে না। আমার মনে হয় গুহায় আছে ল্যাপটপ। আর পেনড্রাইভ তো ল্যপটপের সাথে লাগানো ছিল। তাছাড়া স্যার ল্যাপটপে তো একটা ম্যাপের কপি ছাড়া আর কিছুই নেই। আর পেনড্রাইভে শুধু আছে কাস্টোমারদের তথ্য। তাই এগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ আসল ম্যাপ আর সকল কাস্টোমারের তথ্য-তালিকার নোটবুক তো ‘‘সিক্রেট ওয়ার্ল্ড’’ রুমে আছে। এমনকি ল্যাপটপেও ও পেনড্রাইভে যা নেই, তাও ঐ রুমে আছে। কিন্তু তবুও আমি ল্যাপটপ আর পেনড্রাইভ ভালো করে খুঁজবো। আশা করি পেয়েও যাবো। দয়া করে আপনি রাগান্বিত হবেন না।’’
১ম লোক : ‘‘আমার নাম ফয়েজ-উর-রহমান। লোকে আমায় এক নামে চেনে। সবাই আমার জনদরদিভাবে। কিন্তু কেউতো আমার মূল সত্য জানে না। তাই আমাকে খুব সাবধান থাকতে হবে। আর এখন আমি স্বর্ণলতাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তাই আমাকে দেখে শুনে সবকিছু করতে হবে। ভুল হলে চলবেনা, কারণ আর পাঁচদিন পরেই তো নির্বাচন। ঠিক আছে, তোমাকে আমি মাফ করে দিলাম। তবুও খোঁজ। কারণ, ল্যাপটপের তো আর হাত-পা গজায়নি যে নিজে নিজে হারিয়ে যাবে। আর শরিফ তুমি ও শহিদ দুজন মিলে, এখানে আসা মেহমানদের যত্নআত্তি করো। এ মেহমানরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্টস্ (ঈষরবহঃং)। কারণ এরা হলো শিক্ষিত লোকের বোকা শিক্ষিত ছেলে। এদের দু’নম্বর ধরিয়ে দিয়ে টাকার বসত্মা নিয়ে নিলেও এদের কোন খবর থাকে না। বরং খুশি হলে আরো দেবে। ভালো করে যত্ন করো। আমি এখন আসি।’’
২য় ও ৩য় লোক : ‘‘সালাম স্যার। আপনি কোনো চিমত্মা করনে না।’’
কথোপকথনের পর ফয়েজ-উর-রহমান চলে গেলেন গ্রামের দিকে। আর শরিফ ও শহিদ দু’জন গুহায় ঢুকে গেল।
আরাফাতরা নিজেদের তাঁবুতে ফিরে গেল। তাঁবুতে ফিরে আরাফাত সবাইকে বললো, ‘‘একটা জিনিস পরিষ্কার। আমরা যে ল্যাপটপ আর পেনড্রাইভ এনেছি, তা ওদের কেউ জানে না। অর্থাৎ, ওরা আমাদের উপস্থিতি টের পায়নি। যা আমাদের জন্য প্লাসপয়েন্ট। একটা জিনিস কী তোর মনে আছে আফরাসিয়াব, ফয়েজ-উর-রহমান আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল ভোটের জন্য। ওনি নিশ্চয়ই এখানে কোনো বেআইনী কাজ করছেন। আর গ্রামের যে লোকটি গলাকাটা মানুষ দেখেছে, তা ছিল আসলে শহিদ ও শরিফের কারসাজি। ওরা ছদ্মবেশে গ্রামের মানুষদের ভয় দেখিয়েছে। আর আমাদের গ্রাম থেকে যেসব লোক আর বাচ্চারা হারিয়ে গিয়েছিল বনে, ওদের এরাই অপহরণ করেছে, নিরীহ মানুষগুলোকে কোনো কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। এমনকি গুপ্ত ও ফয়েজ-উর-রহমানের ষড়যন্ত্রের সকল রহস্যের সমাধান আছে গুহার ঐ ‘‘সিক্রেট ওয়ার্ল্ড’’ রুমটিতে। ঐ রুমেই আমাদের যেতে হবে। সকল চক্রামত্মকে ভুক্তভোগী গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ফাঁস করে দিতে হবে।’’
আফরাসিয়াব বললো, ‘‘কিন্তু ভাইয়া আর তো সময় নেই। আর পাঁচদিন পরেই তো নির্বাচন। তাহলে যদি ফয়েজ-উর-রহমান নির্বাচনে জিতে যায়, তবে তো ওনার অগাধ সুযোগ। ওনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে অপকর্ম করবে। তাছাড়া, আজ তো ঐ গুহায় অনেক মেহমান মানে ওদের কাস্টোমারস্ আছে। আমরা আজ আর কোনো তথ্য পাবো না।’’
আরাফাত বললো, ‘‘তা তুই ঠিকই বলেছিস। তাহলে আজ আমরা বরং প্ল্যান করি। একটা কঠিন কাজ করতে হবে; আমরা যে ল্যাপটপ আর পেনড্রাইভটা নিয়েছি তা ফেরত দিয়ে আসতে হবে ঐ গুহায়। নইলে, ওরা যদি এখানে খুঁজতে আসে তবে সমস্যা হবে। এ কাজটা আমি করবো। আর তারপর আমরা যাবো বনের শেষপ্রামেত্ম। যে জায়গাটি ওরা ওদের ম্যাপে রেডমার্ক দিয়ে রেখেছিলো, সেখানে। সেখানে হয়তো আমাদের গ্রামের হারিয়ে যাওয়া মানুষ আর বাচ্চাদের পাওয়া যাবে। তাহলে আর আজকের দিনটা নষ্ট করতে হবে না।’’
আরাফাত ঠিক করলো, ও পেছনের দরজা দিয়ে গুহায় ঢুকে ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভটি রেখে আসবে। আরাফাত মুখে একটা মাস্ক পরে নিল। যাতে কেউ ওকে দেখলেও চেহারা না দেখে। আর সঙ্গে নিল ওর টেপ রেকর্ডারটা। ল্যাপটপ আর পেনড্রাইভটাও নিতে ভুললো না। আল্লাহ্র নাম আর বোন এবং অন্যদের দোয়া নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। গুহায় ল্যাপটপ আর পেনড্রাইভটা রেখে পেছনের দরজা দিয়ে বেরোনোর সময় শুনলো শহিদ ও শরিফের কথোপকথন।
শহিদ : আগে অতিথিদের বেহুশ করে দিই। তারপর লুটে নেব। হুশ ফিরে এলে দু’নম্বর ড্রাগস্ দিয়ে স্যারের কাছে পাঠিয়ে দেব।
শরফি : আমার খুব কষ্ট হয় এদের জন্য। এরা শিক্ষিত হয়েও কেন যে ড্রাগস্ নেয় বুঝিনা। এসব ফালতু নেশার দ্রব্যের পেছনে শুধু শুধু অর্থ নষ্ট করে। আমাদের এজেন্টদের কথার ফাঁদে আকৃষ্ট হয়ে নিজেদের জীবনকে নষ্ট করে ফেলে।
শহিদ : হ্যাঁ রে, তুই ঠিকই বলেছিস। আমি যদি পারতাম তবে এ পাপকর্ম থেকে দূরে সরে যেতাম আর এসব অপকর্মকে আইনের সামনে তুলে ধরতাম। প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে গ্রামে যাইনা আমরা। কী সুন্দর ছিল আমাদের গ্রাম। বাবা-মাকে কতদিন দেখিনা আমরা দুই ভাই। মারা গেছে না বেঁচে আছে কে জানে। সেই যে বস আমাদের ধরে এনেছে আর কোথাও যেতে দেয়নি। এই বন আর কংক্রীটের শহরটি ছাড়া আমরা কখনো আর কোথাও যেতে পারিনি।’’
শরফি : হ্যাঁ রে ভাই। তবে একটা জিনিস ভাবলে আমি একটু সুখ পাই যে, আমরা জীবনে একটা ভাল কাজ করতে পেরেছি। আমাদের সাথে গ্রামের যেসব মানুষদের এনেছিল, ওদের শহরে একটা বাড়িতে কষ্ট থেকে আরামে রাখতে পেরেছি। কিন্তু বেচারারাও আমাদের মতো গ্রামে যেতে পারছেনা। কারণ, আমরা কী করে তাদের যেতে দেই। তাদের গ্রামে দেখলে তো বস মেরে ফেলবে। সঙ্গে আমাদেরও। আমরা যে বাঁধা বসের শিকলে।
শহিদ : ‘‘হে পরোয়াদেগার, রহমানুর রাহীম তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও, সাহায্য করো।’’
এত কিছু শুনে আরাফাত হতবাক। তার মানে ফয়েজ-উর-রহমান ড্রাগসের ব্যবসা করে। আর শহিদ, শরিফও ওদের গ্রামের লোক। আর গুহায় আসা মানুষ গুলো ড্রাগস্ নিতে এসেছে। তাইতো, ওরা গুহা এতো সাজানো আর সুব্যবস্থাসম্পন্ন দেখেছে, গুহাতে লাইব্রেরি দেখেছে।
আরাফাত তাদের তাঁবুতে ফিরে বাকিদের সব খুলে বললো ও কী শুনেছে। ঠিক করলো, আজই গুহায় গিয়ে শরিফ ও শহিদকে সব খুলে বলবে যে ওরা কেন এখানে এসেছে। শরিফ ও শহিদের সাহায্য চাইবে তারা। ওরা তখন গুহায় গিয়ে আগে শরিফ ও শহিদকে এক রুমে নিয়ে গিয়ে সব খুলে বললো। শহিদ ও শরিফ খুশি হয়ে রাজি হলো ওদের সাহায্য করতে। গুহায় আসা মানুষদের যখন হুশ ফিরে এলো, তখন ওরা তাদের ড্রাগসের কুফল, ইসলামের বিধি-নিষেধ ও পরকালে এর শাসিত্মর কথা বুঝিয়ে বললো।
তখন ওনারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারলো এবং ওয়াদা করলেন যে, যারা ফয়েজ-উর-রহমানের কাস্টোমার, তাদের এ কথাগুলো বুঝিয়ে বলবেন ড্রাগস্ আর নিতে নিষেধ করবেন ফয়েজ-উর-রহমানকে আইনের হাতে ধরিয়ে দিতে ওদের সাহায্য করবেন। প্রয়োজন হলে, যেসব লোক ওনাদের কথা না শুনে ড্রাগস্ নিবে তাদেরকেও আইনের হাতে সমপর্ণ করতে তারা দ্বিধা করবেন না। আর যেসব এজেন্ট ফয়েজ-উর-রহমানের হয়ে ওনাদের বিভ্রামত্ম করেছে, এমন পাপকর্মে আসার জন্য, করার উৎসাহ দিয়েছে তাদেরকেও চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দেবো। ওনারা বিদায় নেবার পর আরাফাত পুলিশকে ফোন করে সব ঘটনা বিসত্মারিতভাবে জানালো। পুলিশ আসার পর শরিফ ও শহিদ পুলিশদের সব ড্রাগস্; যেগুলো গুহায় ‘‘সিক্রেট ওয়ার্ল্ড’’ রুমটিতে ছিল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জিনিস ছিল, তা দেখিয়ে দিল। পুলিশ এগুলো উদ্ধার করে ধ্বংস করে দিলেন আর রেডমার্ক দেওয়া বনের জায়গাটিতে যেসব ড্রাগস্ ছিল তাও ধ্বংস করে ফেললেন। পুলিশ ফোর্সকে অসহায়, হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাসীদের মুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন, যেখানে শহিদ, শরিফ তাদের সাথে আনা গ্রামবাসীদের রেখে এসেছিল। এবার আরাফাতরা, শহিদ ও শরিফকে মাফ করে দেয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করলো। পুলিশও তাদের অনুশোচনার কাথা শুনে শহিদ ও শরিফকে মাফ করে দিল।
এতকিছুর পর ওরা সবাই গ্রামে ফিরে গিয়ে গ্রামবাসী সবার সামনে ফয়েজ-উর-রহমানের কুকীর্তির কথা তুলো ধরলো আর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিল। ওদের এত সাহসিকতা, বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে গ্রামের সবাই প্রশংসা করলো। আর পুরনো আত্মীয়দের ফিরে পেয়ে সবাই প্রাণভরে দোয়া করলো। অসংখ্য ধন্যবাদ জানালো।
ওদের এই সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও বীরত্বের কথা পত্রপত্রিকায় ছাপানো হলে বাংলাদেশ সরকার ওদের পুরস্কৃত করলো। গর্বে ওদের মা-বাবার তো অনেক অনেক খুশি। তখন ওরা সবাই আল্লাহ্র দরবারে শুকরিয়া জানালো আর দোয়া করলো যাতে বাংলাদেশে আর কখনো ড্রাগসের বিষাক্ত ছোবল না পড়ে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!