স্কুলের ডাইরী-১

এ বছর আমাদের ক্লাস টিচার পরেছে মিসেস মেনযিস। ভীষণ করা ধাচের মহিলা। উপর ক্লাসের শিবাজির সাথে সকাল বেলা কথা হচ্ছিল। বলল ” ক্লাস টিচার কাকে পেলি মেনযিস না গোমেজ”? যখন শুনল মেনযিস তখন একবার ভুরু কপালে তুলে মাথা নারল, অনুশোচনার সাথে – “সাবধান – এদিক থেকে ওদিক হলে হেবি ক্যালায়ে”। বাবু আর নিলু আমাদের থেকে তিন বছরের বড়। ওরা তার ক্লাসে পরেছে এক সময়। ওরাও আমাদের খুব সে ভয় দেখিয়ে বলল “মিসেস মেনযিসের ঠ্যাঙ্গাবার কায়েদা একেবারে নিজস্ব। গণ্ডগোল করলে হাত ঘুরিয়ে আঙ্গুলের গাঁটের উপর স্কেলের বাড়ি”। যাই হোক এইসব ভয়াবাহ কাহিনী শুনে আমরা সকলেই ক্লাসে প্রথম দিন খুব চুপ চাপ। আমরা জারা মেনযিসের কিরতি কলাপের গল্প জেনে ক্লাসে ঢুকেছি – আমরা সবাই মটে ঝামেলা করছি না। চুপ চাপ নিজের নিজের জায়েগা বেছে নিয়েছি নতুন ক্লাস্রুমে। কিছু ছেলে মেনযিসের গল্প শোনে নি, তারা জথারিতি ক্লাসে টিচার ঢোকার আগে সোরগোল করছে, জেমনটা হয় থাকে। মিসেস মেনযিস ক্লাসে ঢুকলেন, আমরা সবাই উঠে দারিয়ে একসাথে বললাম “গুড মর্নিং মিস”। এটাই আমাদের স্কুলে রিতি। লাঞ্চের আগে পর্যন্ত নতুন টিচার ঢুকলে গুড মর্নিং আর লাঞ্চের পর গুড আফটারনুন। সবাই মিলে একসাথে গুড মর্নিং বলতে গেলে কি করে জানি বলার মধ্যে একটা সুর এসে জেত, সব ক্লাসের সেই একই সুর অনেকটা এরকম – গুড মরনীইইইইইইং মিইইইস। মিস মেনযিস করা নজরে আমাদের পানে কিছুক্ষণ চাইলেন। লেসার বিমের মতন দ্রিশটি আর বাজ পাখির মতন চোখ দিয়ে একবার – প্রথমবার আমাদের এক একজনকে নজর করলেন। ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ৪০টা আলাদা আলাদা ছেলেকে নজরবন্দি করতে আমি আর কাউকে দেখি নি। তারপর বললেন “গুড মর্নিং – সুর করে গুড মর্নিং বলা আমি পছন্দ করি না। সুর না করে বল – আবার বল এবার সুর না করে”। আমরা আবার সবাই মিলে বললাম “গুড মর্নিং মিস”, এবার সুর না করে।
“ঠিক আছে, বস্তে পার । আমার ক্লাসে এই তোমাদের প্রথম দিন। হয়ত তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার সমন্ধে কথা শুনেছ – শুনে থাকবে অন্যের মুখে। আমি চাই প্রথম দিনেই আমাদের মধ্যে কিছু জিনিস পরিস্কার করে দিতে, জাতে পরে কনও ভুল বোঝা বুঝি না হয়। আমার সমন্ধে একটা কথা তমরা সবাই জেনে রেখো – আমার সঙ্গে ভাল থাকলে আমি খুব ভাল্ – আর আমার সাথে যদি চালাকি করবার চেষ্টা কর, বা ক্লাসে কনও বদমায়েশি কর তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হতে পারে না। কারোর কিছু জিগ্যাশ আছে”?
আমরা সবাই চুপ, কার কোন প্রশ্ন নেই। সেই সারা বছরটা আমি মেনযিসের প্রথম দিনের বার্তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ছিলাম। একেবার প্রথম ঢুকেই ওরকম ভয় দেখাতে আমি আর কোন টিচার কে দেখিনি। ফলে আঙ্গুলের গাটে স্কেলের বাড়ি খেতে হয়ছিল বড়জোর সারা বছরে একবার কি দুবার। সেই মারের দুরকম পন্থা ছিল – যদি অপরাধ মাঝারি গোছের হয় তাহলে স্কেলের চ্যাপ্টা দিক্টা দিয়ে গাঁটের উপর – এক এক হাতে একটা করে। আর যদি গুরতর অপরাধ তাহলে স্কেলের ধারটা দিয়ে। শুনেছিলাম আগের বছর বারনারড ওয়ং কে নাকি একবার স্টিলের রুলার দিয়ে পেদিয়েছিল। বারনারড ওয়ং ইস্কুলের ডাকসাইটে বদমাইশ। তার পরের বছর ফেল করে আমাদের ক্লাসে ঢুকেছিল। তার কিরতি অন্য গল্পে লিখব। যাই হোক আমাদের ক্লাসের কারুর উপর স্টিলের রুলার প্রয়োগ করতে হয় নি। টিচার ডেস্কের নিচের তাকে একটা স্টিলের রুলার রাখা থাকত, টিফিনের সময় চুপি চুপি গুরু আর সঞ্জয় দেখেছে। মাপার স্কেল কে রুলার কেন বলে আমরা খুব ভাল বুঝি।
যাই হোক করা টিচার বরাতে জুটেছে – তাতে আমরা ক্লাসে সুবোধ বালক হলেও, ক্লাসের বাইরে যে কে সেই। প্রথম দিন সিনেমা দেখবার পর টিফিনের সময় আর ছুটির পর আমাদের মধ্যে খুব সে সোরড ফাইটিং লেগে জেত। হাতের কাছে জা পাওয়া যায় তাই হত অস্ত্র। সব চাইতে বেশি ব্যাবহার হত রুলার আর টিফিন বাক্সের ঢাকা। রুলার হত তরোয়াল আর টিফিন বাক্সের ঢাকা হত ঢাল।
পর দিন শকালে বাসে উঠে বাবু একটা ঘশনা করল জেটা শুনে আমরা সবাই বেশ উত্তজিত হলাম। সিটের তল থেকে দুটো লাঠি বার করল। লাঠি দুটো বাগানে ফুল গাছ ঠেকিয়ে বাধবার লাঠি। মালির থেকে চেয়ে বা চুরি করে এনেছে।
“এটা কি জানিস” ? প্রশ্ন করল আমাদেরকে।
“লাঠি” বলল মন্টি।
“চুপ কর – তোকে জিগ্যেস কে করেছে”, দাবরে দিল পার্থ।
“হ্যা – এটা লাঠি, এবার দ্যাখ এই কারডবোরড জুরলে কি হয়” বলে নাটকিয় কায়দায় বাবু ব্যাগ থেক দুটো চৌক কারডবোরডের টুকরো বার করল। কারডবোরডে দুটো ফুটো কাঁটা। লাঠিটা ফুটোর ভেতর গলিয়ে দিয়ে তুলে ধরে আমাদের দেখালউ
“এবার এটা কি মনে হচ্ছে”? বোঝাই যাচ্ছে বাবু নিজের আবিশকারে নিজেই গরবিত। গর্ব হবারই কথা, দারুন আইডিয়া। আমরা সকলে একসঙ্গে চেচিয়ে উঠলাম তলোয়ার – সোড়ড ফাইটিং করবার তলোয়ার।
“আমরা তলোয়ার লরাইয়ের প্রতিজগিতা করব। সবাই নিজের তলোয়ার বানিয়ে আনবে শুক্রবারের আগে। আমি আর বিবেক মিলে প্রতিজগিতার ড্র বানাব – তাতে থাকবে কার সাথে কার লরাই করতে হবে”। বাবু পুরো ব্যাপারটা বেশ তলিয়ে ভেবেছে।
“আমি দোকান থেকে প্রাইজ কিনে আনব – যে ফাইনালে উঠে জিতবে তাকে কাপ বা মেডেল পুরশকার দেওয়া হবে” বলল পার্থ দঃ। ভাঙ্গুর পারকে একটা খাতা কলমের দোকান আছে সেখানে ৫ টাকা দিয়ে ছোট কাপ কিনতে পাওয়া যায়।
আমাদের সবার মধ্যে উত্তজনার সরগোল পরে গেল, সবার হাজার প্রশ্ন। আমাদের সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বাবু হাত তুলে বলল ” সবাই কাল থেকে কুচকাওয়াজ চালু করে দাও, শুক্রবার স্কুলের পর ভগবান্দাসের গারেজে প্রতিজগিতা হবে”।
পরের কয়েকটা দিন কাটল একটা চাপা উত্তজনার মধ্যে। ক্লাস শেষ হবার জন্য বসে থাকতাম সবাই। প্রাইমারি স্কুল শেষ হয় ২:১০ আর বড়দের স্কুল ছুটি ৩:৪০। অর্থাৎ পাক্কা দের ঘন্টা লরাই প্রতিজগিতার জন্য প্রস্তুতি। এটাও বুঝলাম যে আমার জেতবার একটা আশা আছে, এর প্রধান কারন আমি লম্বার দিকে তাই হাতের পৌঁছ আমার বাকিদের তুলনায় অল্প বেশি। এটা একটা significant advantage. তবে হাতের পৌঁছ সব কিছু নয় আর অনেক ফ্যাক্টর প্রভাব করবে লরাই এর পরিনাম। আমার সঙ্গে জারা লরাই প্রতিজগি তাদের যদি এক বাক্যে ব্যাখ্যা করা যায় তাহলে অনেকটা এরকম দারাবেঃ
1. তিলক – তরোয়াল লরাইতে ভাল, ওকে হারানো মুশকিল কাজ
2. তপু – চট পট নরতে পারে না
3. সমির – একটু গোয়ার তাই রেগে গেলে মাথা কাজ করে না
4. কউশিক – একেবারেই মারকুটে নয়
5. টুকাই – খারাপ লরে না
6. টান্টু – ভাল লরে কিন্তু বেটে বলে হাতের পৌঁছ কম
7. আশ্বিন – ইয়ারকি মারা আর লোক হাসানও ওর প্রধান লক্ষ
8. মন্টি – দুধ ভাত
দেখতে দেখতে সপ্তাহ ঘুরে – শুক্রবার এসে পরল। স্কুল থেকে ফেরবার পথে প্রতি শুক্রবার বাসটা একটা গ্যারেজে বেশ কিছুক্ষণ থামে। পন্ডিতজি বাসের বনেট খুলে মিস্তিরির সাথে অনেক আলচনা করে। রিষরা আর কন্নগরের মাঝামাঝি এই গ্যারেগ – ভগবান দাস মটর গ্যারেজ – সবুজ লোহার গেটের উপর সাদা রঙ দিয়ে নাম ছাপানো। এ জাগাটা ছিল আমাদের খেলবার অতি প্রিয় স্থান – আমরা একটা খেলা খেলতাম তার নাম ধাপ্পা – অনেকটা লুকচুরি গছের, কিন্তু কেউ যদি চোরকে পিঠের উপর লুকিয়ে একটা কিল বা ধাপ্পা বসাতে পারে তাহলে তাকে আবার চোর খাটতে হবে। এই গ্যারেজটাতে লুকবার জাগা অগুন্তিক – ধাপ্পা খেল্বার জাগা হিসেবে এর জুরি নেই।
তবে আজ আমরা ধাপ্পা খেলব না, আজ হবে সোরড ফাইটিং প্রতিজগিতা। একটা ফাকা জাগা ঠিক হল লরাইয়ের কেন্দ্র, আর সুরু হয় গেল আমাদের তলোয়ার খেলা। খেলার নিয়ম সহজ – প্রতিদন্দির হাতে বা পায়ে লাঠির খোঁচা মারতে পারলে ১ পয়েন্ট আর পেটে কি বুকে মারলে ৩ পয়েন্ট। তিন পয়েন্ট যে আগে পাবে সে জিতবে। একে একে হার জিতের ফলাফলে প্রতিজগির সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে কমতে শুরু করল। তিলক জার উপর সবার আশা ছিল হেরে গেল টান্টুর কাছে। সমির তপুকে হারাল কিন্তু টুকাই ওকে ধরাসয়ই করল। আশ্বিন সবাই কে অবাক করে দিল টুকাই কে হারিয়ে কিন্ত কৌশিকের কাছে হেরে গেল। আমি টান্টু কে হারিয়ে ফাইনালে উঠলাম অপর দিক থেকে উঠল কৌশিক। লরাইয়ের আগে আমার আত্মবিশ্বাসে কোণো ঘাটতি নেই। কুচকায়য়াজের সময় কৌশিক একবার আমার গায়ে তলোয়ার লাগাতে পারে নি, মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলে – জিত নিশ্চিত – নিজেকে নিজেই বললাম। শুরুটাও হয়ছিল ভাল, অল্প সময়ের ভেতর দুইবার ওর হাতে খোঁচা লাগিয়ে ২ পইন্ট সংগ্রহ করলাম। আর এক পয়েন্ট পেলেই আমি চাম্পিয়ান – মাথার মধ্যে এই চিন্তাটা খেলে গেল – আর সেটাই হল কাল। দ্রুত বেগে তরোয়াল ঘুরিয়ে ফাক খুজছি – ক্রমাগত কউশিকের লাঠির সাথে আমার লাঠি ঠোকা খাচ্ছে। কউশিক পিচ্ছছে – আমি এগচ্ছি, আর ঠিক এই সময় সর্বনাশ – ঠোকা খেয়ে আমার হাত থেকে লাঠি ফস্কে গেল। তার সাথে জিতের কাপ্টাও ফস্কে গেল। বিনা অস্ত্রে লাফিয়ে পালানও ছাড়া আমার করবার কিছুই নেই। এবার কৌশিকের এগবার পালা আর আমি খরগোসের মত ডানদিক বাদিক লাফিয়ে ওর লাঠির খোঁচা এরাচ্ছি। কিন্তু কাঁহাতক খরগোসের মতন লাফিয়ে নিজেকে বাঁচানো যায়, শেষ পর্যন্ত ঠিক ব্যাটা আমার পেটে লাঠির ডগা খুচিয়ে দিল। আর ব্যাস খেল খতম – কৌশিক হল আমাদের প্রথম (এবং শেষ) তলোয়ার লরাই প্রতিজগিতার বিজয়ী চাম্পিয়ান।
সেদিন রাতে যখন অঙ্কের খাতা খুলে – মিসেস মেনযিসের দেওয়া

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!