স্কুলের ছুটিতে দু’জনে

হাবলু চল মাছ মারতি যাই। প্রস্তাব ছুঁড়ে দেয় আলাল। কথাটা মন্দ না। আজতো শুক্রবার ইস্কুল ছুটি অতএব যাওয়া যায়। চল যাই। আলালের সাথে করে কেঁচো খুঁড়তে বেরোয় দুজন। মাছের প্রিয় হলো লাল কেঁচো। দেখতে ভাল হতে হবে। না হলে তিঁনিরা খাননা। এমনিতেই আলালের সাথে মাছ ধরে পারেনা হাবলু। এর জন্য খুবই কষ্ট হয় হাবলু’র। কারণ আলাল দেখতে খুবই বাজে। নাক দিয়ে নস্যি পড়ে আর তার দাগ কালো কালো হয়ে ষ্পষ্ট।

অথচ হাবলুর গায়ের রং ফর্সা। স্যাণ্ডেল পায়ে দিয়ে হাঁটাচলা ফেরা করে। বড়দেরকে সম্মান দেয়। লেখাপড়ায় ক্লাসের ফার্ষ্ট বয়। অথচ মাছ ধরার ক্ষেত্রে; নাহ আলালের সাথে পাড়া যায়না। এসবই ভাবছে আর হাঁটছে হাবলু। খানিক বাদে কেঁচো সংগ্রহ করে গ্রামের খালের দিকে রওনা দেয় দুজন । খালের উপর ছোট্ট একটি কালভার্ট তার উপর বসে আছেন কাশিনাথ দাদা। লোকটার ছেলের নাম আমজাদ। কিন্তু সে কাশিনাথ কি করে হয় মাথায় ঢোকেনা হাবলুর। কারণ কাশিনাথ নামটা হিন্দুদের মতো শোনায়। তবুও ছোটবেলা থেকে শুনতে শুনতে কান পেকে গেছে ওদের। এই লোকটিকে মোটেও ভাল লাগেনা হাবলুর। কারণ যেদিনই মাছ ধরতে যাক সেদিনই কাশিনাথ দাদা বলে, দেহিস আজও বড় মাচটা আলালই পাবি। এই কথাটা শোনার সাথে সাথে হাবলুর মনে হয় বুড়াটাকে ধাক্কা দিয়ে খালের মধ্যে ফেলে দেয়। কিন্তু পারেনা স্যার আর মা-বাবার কথার জন্য। বইতে পড়েছে, স্যার বলেছে, মা-বাবা বলেছে। বড় হতে হলে বড়দের সম্মান আর ছোটদের আদর দিতে হবে।

হাবলু মনে মনে আল্লাহ ডাকে, হে আল্লাহ আজ আমার বর্শিতে একটা বড় মাছ ধরায়ে দিও তাহলে মসজিদে গিয়ে আজই পাঁচশিকির সিন্নি দিবো। দুজন গিয়ে পাশাপাশি বসে। বর্শি ফেলার সাথে সাথে আলালের বর্শির নল তল করিয়ে নিয়ে যায়। ওমনি টান হেইয়ো। উঠে এলো একটা তাজা লকলকে মাগুর মাছ। আহ কি তার চেহারা! ময়লা দাঁত বের করে হাঁসতে থাকে আলাল। তা দেখে গায়ে আগুন লেগে যায় হাবলুর। উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে আর বলতে থাকে, ওহে মাছ পাইচো, মাছ পাইচো। দাঁতে কেলানোর কি হয়চে? শালার দাঁত দেখেছো; দাঁতে কি ময়লা। তা শুনে আলাল আরও খুশি হয়ে বলতে থাকে, আরে চেহারা দেখে মাছ বর্শির কাছে আসেনা হে। মানুষ চিনে আসে। একথা শোনার সাথে সাথে হাবলু রাগে, দুঃখে, অপমানে মাটির সাথে মিশে যেতে থাকে। তবুও আর কোন কথা বলেনা। মনে মনে একটি বাক্য পাঠ করে চলেছে, হে আল্লাহ একটা বড় মাছ আমার বর্শিতে তুমি গেঁথে দাও আজই মসজিদে গিয়ে তোমার নামে পাঁচ শিকির সিন্নি করবো। কিন্তু মাছ ধরেনা ওর বর্শিতে। ইতোমধ্যে আলাল আরও দুইটা মাছ পেয়ে যায়। সেগুলো অবশ্য উল্লেখযোগ্য বড় না। তবুও হাবলু জ্বলছে। তার বর্শিতে একটাও মাছ ওঠেনি। রাগ করে বর্শির ছিপগুলো ভেঙ্গে খালের মধ্যে ফেলে দিয়ে বদনাটা নিয়ে বাড়ী চলে আসে হাবলু। সাবান দিয়ে ভাল করে গোসল করে মসজিদে নামাজ পড়তে যায় বাবার সাথে। কিন্তু মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে থাকে ওর। নামাজ শেষে ছোট্ট হাত দুটি আল্লাহর দরবারে তুলে বলে, হে আল্লাহ তুমি আমার বর্শিতে একটা বড় মাছ গেঁথে দিও আমি সামনে শুক্রবার তোমার নামে পাঁচশিকির সিন্নি দিবো।

পরের শুক্রবারের আগের দিন অর্থ্যাৎ বৃহস্পতিবার হাবলু যত্ন করে বর্শির ছিপ কাটে সোজা ও চিকন দেখে বাঁশের কঞ্চি। যত্ন করে বর্শি গাথে সূতার সাথে। তারপর তাজা তাজা কেঁচো সংগ্রহ করে আলাদা একটা জায়গা থেকে। যা আলাল জানেনা। সব গোছানো শেষ হলে একা একা রওনা দেয় মাছ ধরতে। পথমধ্যে দেখা হয় আলালের সাথে। আলাল বলে আজও তুই মাছ পাবিনে। চোখ রাঙিয়ে আলালের দিকে তাকায় হাবলু। তা দেখে আলাল বলে – আসলে মাছ লোক চেনে বুজলি। কারণ তোরে পরিবারের কেউ কোনদিন মাছ ধরে নাই। খালি মাছ কিনে কিনে খায়ছে। আর আমার দাদার দাদা তার দাদা, আমার বাপ তার বাপ তার বাপরা ছিল জালে(জেলে)। তাই মাছ আমার গার গন্দ শুঁকেই চলে আসে। কথাগুলো বলে হো হো করে হেসে ওঠে আলাল। হাবলু তার জবাবে বলে, দেখিস আজ মাছ পাবোই পাবো। আচ্ছা দেকা যাবিনি। চল আগে।

আলাল হাবলুর কথার জবাব দিয়ে পথচলা শুরু করে। নিয়মিত ভাবে দেখা হয় কাশিনাথ বুড়োর সাথে। আজ হাবলু অন্য পথ দিয়ে গেল। কারণ আজ ও বড় মাছ পাবেই পাবে। তাই কাশিনাথ বুড়োর সামনে দিয়ে গেলনা। নির্ধারিত জায়গা দুজন বসে গেল। আর ধারাবাহিক ভাবে আলাল একটা বড় পুঁটি পেয়ে গেল। এই পুঁটিকে জাপানি পুঁটি বলা হয়। বেশ বড়সড়। আলাল তার দাঁত বের করে হাঁসতে লাগলো। আর হাবলু রাগে ফুলতে থাকলো আর একদৃষ্টিতে বর্শির নলের দিকে তাকিয়ে রইলো। হাবলুকে চুপ থাকতে দেখে আলাল বললো, বুজলি হাবলু, তোর বর্শিতে মাছ ধরবিনানে। ক্যা? প্রশ্ন করে আলালের দিকে তাকালো হাবলু। আর আলাল খুব মনোযোগ সহকারে বর্শিতে কেঁচো গাঁথতে গাঁথতে বললো, তুই এই বর্শির ছিপ কাটিছিস লতিফ বুড়োর বাগান থেকে না? হ্যাঁ বলল হাবলু। তা শুনে আগের মতো বর্শির কেঁচোতে থু থু লাগাতে লাগাতে বললো, দ্যাখ লতিফ বুড়োর তো কোন ছাওয়াল-পল নাই। যার কয় হাটকুঁড়ে(আটকুড়ে)। আর হাটকুঁড়ে লোকের বাগানের কঞ্চিতে ছিপ বানালি আর দরবেশের মতো আর হাটকুঁড়ের ফাঁসের গাদিরতে কেঁচো আনলি কি মাচ বাধে? কথা শেষ করে আবার হাসতে লাগলো আলাল। সব কথা গুলো শুনে হাবলু খুব রেগে যায় কিন্তু খুব কষ্টে তা সংবরণ করে আর আল্লাহর কাছে মিনতি করে, হে আল্লাহ আমার বর্শিতে একটা বড় মাছ গেঁথে দাও, আমি তোমার নামে মসজিদে পাঁচশিকির সিন্নি দেবো।

বসে থাকতে থাকতে কাঁন্না পায় হাবলুর। জুম্মার আজান দিলো গ্রামের মসজিদে তা শুনে আলাল বললো, হাবলুরে, নামাজ পড়তি যাবিনে? যাবো কি যাবোনা তুমার কাছে কি আমার শুনতি হবি? হাবলুকে রাগতে দেখে কোমড় হাফপ্যাণ্টের পকেট থেকে বিড়ি আর ম্যাচ বের করে আলাল। হাবলুর দিকে তাকিয়ে বলে, কিরে দিবি নাহি একটান। প্রচণ্ড ক্রব্ধ হয়ে হাবলু বলে, শালা তুই খাচ্ছিস না। কাল স্যারের কাছে কয়া তোর মা’র খাওয়াবো। শালার গাওদে সারাদিন কেঁচো কেঁচো গন্দ কয়। বিড়ি খায়। দাঁত মাজেনা। পিচেট (পিশাচ) কোনকার। কথাগুলো শুনে আলাল আগের মতো করেই হাঁসতে থাকে যেন হাবলু ওর গুণকীর্তন করছে। এবার রাগটাকে দমাতে না পেরে আলালকে মারার জন্য উদ্যত হয়। আর ওমনি আলাল মাছের বদনাটা নিয়ে বর্শিগুলো ফেলে রেখে দৌড় দেয়। এবার শান্ত হয়ে বসে হাবলু। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, আজ মাছ ধরেই তবে সে বাড়ীতে যাবে। মাছটা ধরে নিয়ে সে কাশিনাথ বুড়োকে দেখাবে আর বলবে শুধুমাত্র আলালই না আমিও পারি মাছ ধরতে।

দুপুর থেকে বিকাল, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। কিন্তু হাবলুর বর্শিতে দুই তিনটা চিংড়ি আর ছোট ছোট পুঁটি ছাড়া আর কিছু উঠেনা। সন্ধ্যার আজান দেবে দেবে এমন সময় বর্শির নলটাকে খুঁজে পায়না হাবলু। দেখতে পায় খুবই জোরের সাথে বর্শির ছিপসহ চলে যাচ্ছে পানির মধ্যে। তা দেখে খুবই খুশি হয় হাবলু। এই বুঝি বড় মাছ পেয়ে গেল। বর্শির ছিপ হাতে ধরলো এবং আলগোছে টানদিল। কিন্তু মাছ উঠেনা। মনে পানির নিচে কোথাও কোন কিছুর সাথে আটকে গেছে বর্শি। তাই হাবলু মনে মনে ভাবতে থাকে, যদি পানির নিচে গিয়ে দেখে ইয়া বড় এক বোয়াল মাছ গেঁথে আছে। তাহলে তো দারুন ব্যাপার ঘটে যাবে। কাশিনাথ বুড়োকে দেখাবো আর বলবো এই দ্যাখ, আলাল এতদিন ধরে মাছ ধরছে অথচ এত্তোবড়ো মাছ কোনদিন ধরতে পেরেছে? পারে নাই। কাশিনাথ বুড়ো বেশ খুশি হবে। মা-ও খুব খুশি হবে। আব্বাও বকবেনা মাছ ধরার জন্য। আলালকেও বলতে পারবো, দ্যাখ মানুষের মনে দুঃখ দিয়ে কোন কথা বলতে নেই। লতিফ বুড়ো হাটকুঁড়ে হোক যাইহোক, দরবেশ যাইহোক, মানুষ মানুষই। মানুষ হয়ে মানুষকে খারাপ বলতে নেই।

এসব ভাবতে ভাবতে হাঁটু পানিতে নেমে গেল। নাগাল পেলনা বর্শির। তারপর কোমড় পানি। তবুও নাগাল পেলোনা। গলা পানিতে যাওয়ার পর ডুব দিলো হাবলু। যদিও সন্ধ্যা ভয় ভয় লাগছে। কিন্তু বড় মাছের লোভে সব ভয়কে জয় করেছে হাবলু। একডুব হলোনা। দুইডুব তবুও পারলোনা। তিনডুব, চারডুব, পাঁচডুব, ছয়ডুব অত:পর সাতডুবের মাথায় সবসুদ্ধ তুলে আনলো হাবলু। নাহ কোন মাছের কোন আঁইশ পর্যন্ত পেলনা হাবলু। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। আর ভাবলো সবাইকে দেখানোর কথা বললাম কিন্তু সিন্নি দেওয়ার কথা বললাম বলেই বোধহয় মাছটা পেলাম না। তবে ভাল লাগছে এটা ভেবে যার সাথে বর্শি বেধে ছিল, সেটা হেঁচকা টানে তুলে এনেছে হাবলু। তবে বেশ ভারি ভারি আর লম্বা লম্বা লাগছে। বিষয়টি কি বাড়ী গিয়ে দেখতে হবে। তাই হাবলু তাড়াতাড়ি পা চালালো।

চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। যতদ্রুত সম্ভব পা চালিয়ে খুব কষ্টে জিনিসটাকে বাড়ীতে আনলো। তবে কাউকে দেখতে দেওয়া যাবেনা। বাড়ীতে অতি সন্তর্পনে প্রবেশ করলো হাবলু। বদনাটা খুব সাবধানে রেখে গোয়াল ঘরের দিকে চলে গেল। কারণ গোয়াল ঘরে খড়ের গাদার মধ্যে পলানটুকটুক(লুকোচুরি) খেলার জন্য একটা জায়গা বানিয়েছে হাবলু। একবার লুকালে আর কেউ খুঁজে পায়না। সেখানে গিয়ে জিনিসটাকে খুব যত্ন করে রাখলো। কারণ এখানে রাতের বেলা কিছুই দেখা যাবেনা। আবার কোন আলো নিয়ে এসেও দেখা যাবেনা। কারণ খড়ের গাদায় আগুন লেগে গেলে সর্বনাশ। অবশ্য বাবার কাছ থেকে টর্চলাইটটা নিলে দেখা যায়। কিন্তু বাবা তো হাট থেকে আসবে মেলা রাত্রে। অতএব রাত্রে সম্ভব না।

কিন্তু দেখতে না পেলেও তো ঘুম আসবেনা। কি করা যায় ভাবতে থাকে হাবলু। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো, আজ রাত জেগে পড়বে আর বাবা এলে তাঁর থেকে লাইট নিয়ে এসে দেখবে। যা ভাবা তাই কাজ। খড়ের গাদা থেকে বের হয়ে এসে সাবান দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসলো। তা দেখে হাবলুর মা খুব খুশি। যদিও হাবলু ক্লাসের ফার্ষ্টবয়। তবুও কখনও সন্ধ্যায় পড়তে বসেনা। কিন্তু আজ পড়তে বসা দেখে হাবলুর মা কাছে গিয়ে বললো, কি ব্যাপার আজ আমার বাপ সোনার কি হয়েছে যে পড়তে বসলো? মুখটা লজ্জায় লাল করে অন্য দিকে তাকিয়ে হাবলু বললো, এমন ভাবে কথা বলছো যেন আমি কখনো পড়িনা। না তা বলছিনা। আচ্ছা তুমি পড়ো বাবা সোনা। কথাটা বলেই হাবলুর মা চলে গেল। পড়তে পড়তে কাহিল হয়ে গেল হাবলু কিন্তু ওর বাবা আর আসেনা। ওর মা খাওয়ার জন্য ডেকেছে তবুও খেতে যায়নি। হঠাৎ কখন ঘুমিয়ে গেছে টের পায়নি হাবলু।

পরে যখন ঘুম ভাঙলো দেখলো বাড়ীতে বেশ হুলুস্থল ব্যাপার। অনেক লোকজনের সমাগম। কিছুই বুঝতে পারছেনা। হাবলুর বাপ-চাচাদের বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। গ্রামবাসী অনেকেই এসে জুটেছে ওদের বাড়ীতে। শুধু তাই-ই না থানা থেকে পুলিশ পর্যন্ত এসেছে। দুচোখ কচলিয়ে সবকিছু বুঝে নেবার চেষ্টা করে হাবলু। দেখলো বাহির বাড়ীতে কাচারী ঘরে বিরাট এক মজলিশ। যেখানে উচ্চস্বরে কথা বলছে দারোগা। প্রিয় গ্রামবাসি, গ্রামের মধ্যে কিছু সন্ত্রাসী প্রবেশ করেছে। যাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র আছে। তারা যেকোন সময় একটা হট্টগোল পাকাতে পারে তাই আপনারা সাবধান থাকবেন। আর খেয়ালে খেয়ালে থাকবেন যদি কোন অপরিচিত লোকদেরকে সন্দেহজনক ভাবে ঘুরাফেরা করতে দেখেন তাহলে পশ্চিমপাড়া ওয়াপদা ঘরে আমরা সিভিল পোশাকে থাকবো আপনারা আমাদের খোঁজ দেবেন আমরা তাদেরকে পাকড়াও করবো। আর হ্যাঁ, আপনারা যদি আমাদের সার্বিক ভাবে সাহায্য করেন তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। কোন ভয় পাবেন না। আমরা আছি আপনাদের সাথে।

যা বোঝার বুঝে নেয় হাবলু তার মতো করে। পরেরদিন তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে উঠে চলে যায় গোয়াল ঘরে খড়ের গাদায়। চুপি চুপি সেই ভারী জিনিসটি খড়ের গাদা থেকে বের করে। খুব যত্নে রাখা পলিথিনে মোড়ানো। আস্তে আস্তে সেই পলিথিন খোলে হাবলু। পলিথিনের পর আর কালো কাপড় পেচানো। তারপর আবার পলিথিন। আবার কালো কাপড়। এবার খবরের কাগজে মোড়ানো। কাগজ খুলতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় হাবলুর। আরে বাস! এতো সিনেমাতে দেখা যায় সন্ত্রাসীদের হাতে থাকে। যাকে বলে বন্দুক। আবার ছয়টা গুলিও আছে। বুকের মধ্যে কেমন যেন ছ্যানাৎকরে ওঠে। আবার যেরকম ছিল সেরকম করে জড়িয়ে রেখে দিল খড়ের গাদায়। গোসল করে খাবার খেয়ে স্কুলের দিকে রওনা দিল হাবলু। পথের মধ্যে দেখা হয় আলালের সাথে। আলালকে দেখে হাবলু বলে, কি রে স্কুলে যাবিনা? নারে আজ মাচ মারবো ম্যালা । তুই যা ঘুরে আয়। আজ মাচ বিক্রি না করলি খাবার নাই। ও আচ্ছা। তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে। হাবলু বলল। কি কতারে? জিজ্ঞাসা করলো আলাল। হাবলু বলল, আগে স্কুল থেকে আসি তারপর বলবো।

হাবলু স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখলো আলালদের বাড়ীতে মানুষের ভীড়। একপা দুপায়ে এগিয়ে গেল হাবলু। দেখলো, আলালের ভাই দুলালকে ওর মা মাথায় পানি দিচ্ছে আর কাঁদছে। তা দেখে হাবলু আলালের কাছে গিয়ে বলল, আলাল কি হয়েছেরে? তোদের বাড়ীতে এতো লোকজন ক্যাঁন? তখন আলাল বলতে থাকে, তুই স্কুলে যাওয়ার পর আমি আর দুলাল মাছ মারতি যাই। আমি যেনে বসি সেনে আমিই বইছিলাম। আর তোর জাগা দুলালের বসাইছিলাম। হঠাৎ দুডে লোক আসে দুলালের বর্শি ভাঙ্গে ফেলে পানির নিচে কি যিনি খুঁজতিছিল। না পায়ে আমার আর দুলালের ধরে কি মারা মারলো। কথাগুলো বলে আলাল কাঁদতে লাগলো। আবার বলতে শুরু করলো, আমারতো খালি মারেছে কিন্তু দুলালকে মাথার উপর তুলে আছাড় মারেছে। ডাক্তার কয়ছে ওর নাকি কোন হাড় ভাঙ্গে যাওয়ার মতো হয়া গেছে। কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনে হাবলু আলালকে বললো, আচ্ছা ঐ লোকগুলোর দেখলি তুই চিনতি পারবিনি? হ্যাঁ পারবোনে। আয় আমার সাথে বলে ডেকে নিয়ে গেল আলাল কে। দুজন মিলে যুক্তি পরামর্শ করলো। কিভাবে কি করা যায়? সিদ্ধান্ত নিল দুজন এমন, লোকগুলোকে দেখার সাথে সাথে কাছা খুলে নিবে…

দুঃখিত!