স্কুল

সেল ফোনটার রিংটোন বেজে উঠল । কেয়ার এই ফোনটা নতুন । আগের ফোনটা চুরি হয়ে যাওয়াতে এই ফোনটা কিনেছে । বেশীর ভাগ ফোন  নাম্বার আর নেই ।  কেয়া অত খুঁটিনাটি জানত না। ডিভাইস মেমোরিতে নামের সঙ্গে নাম্বার গুলো সেভ করে রাখা ছিল বলে এই বিপত্তি । নাম্বারটা একই , সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই পাওয়া গেছে ।
কলিং নাম্বারটা তাই অচেনা । ওদিকে স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে ! এখন, ফোন তুলে কথা বলতে গেলে, খানিকটা সময় নষ্ট । দোনোমনা হয়ে ফোনের আনসার বাটনে চাপ দিল কেয়া ।
– হ্যালো!

– নমস্কার ম্যাডাম । আমায় আপনি চিনবেন না । সামান্য কথা ছিল দু- একটা ।
– নমস্কার, কি বলবেন সংক্ষেপে বলুন । একটু তাড়া আছে । আমার নাম্বারটা কোত্থেকে পেলেন?
– নাম্বার আমরা পেয়ে যাই । এসব নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। বলছিলাম কি, দুদিন পরে যে বন্ধ্ ডাকা হয়েছে, সেই দুদিন স্কুলে যাবেন নাকি?
– না ! প্রথম দিন বন্ধ্ ! তাই যাবো না । দ্বিতীয় দিন স্কুলে যাবো ।
– আপনি লালকমল?
– মানে ?
– কিছুই না! ওই লালকমলরা বন্ধ্ ডেকেছে । আমি নীলকমলের লোক । প্রথম দিনও আপনি স্কুলে যাবেন , কেমন ? রাখি ।
কেয়া একটু ঘাবড়ালো ! এসব ওর ভালো লাগে না । গতকাল টিচারদের একটা মিটিংয়ে ঠিক হয়েছে, ওরা কেউ আসবে না স্কুলে প্রথম দিন । সুমন্ত বেরিয়ে গেছে । বুবাই ওর সাথেই বেরুবে । এই সময় হঠাৎ উটকো ঝামেলা ভালো লাগে না ।
শহরতলীর এই আধা সরকারী স্কুলে গণ্ডগোল লেগেই আছে। কেয়ার দুই বন্ধু বড় বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ায় । সেখানে, এই সব বন্ধের দিনগুলোতে, একটা অলিখিত নিয়মই আছে, বন্ধ , তা যে পার্টিই ডাকুক, আসতে হবে না স্কুলে ।

সাড়ে তিন লক্ষ টাকার ডোনেশান আর মাসে সাড়ে বাইশ হাজার টাকা ফি দিয়ে যে  সব অভিভাবকরা ভর্তি করান নামী স্কুলে, সেই সব স্কুলে কে আর ঝামেলা বাধাতে চায় । অবশ্য কিছুই বলা যায় না, অতি বাঁদর ছাত্র- ছাত্রীদের । বাঁদরামি করলেও  আস্তে করে বলে, কি সুইট  বাচ্চাটা ! ঠিক যেন বাচ্চা শুয়োর- বলে ঝাল মেটায় বন্ধু টিচাররা । অভিভাবকরাও খুশী আর ছাত্র- ছাত্রীরাও ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না । এসব কথা রেক্টরের কানে গেলে বিপদ । দুধেল গাইকে কে আর খোঁচাতে চায় !!!!

গত একমাস ধরে স্কুলে খুব গণ্ডগোল । টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে অভিভাবকরা বেশ ঝামেলা করছে । এইসব মার্কস নিয়ে যে আসল পরীক্ষায় পাশ করা যাবে না, সেটা কিছুতেই ওদের বোঝানো যাচ্ছে না । বাইরের লোকজন নিয়ে হামলা করেছে বড় দিদিমণির ওপর । উনি অনড় । কিছুতেই  অ্যালাউ করবেন না  ফেল-করা ছাত্রীদের।
এর কিছুদিন আগে একজন ফোর্থ গ্রেড স্টাফের নিয়োগ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটিতে একটা গণ্ডগোল হয়েছিল । তিনজন টিচার রিপ্রেজেনটেটিভের মধ্যে একজন ছিল কেয়া ।
বড় দিদিমণির কিছুই করার ছিল না । এই ফোর্থ গ্রেড স্টাফের পোষ্টটা ডিআই থেকে এসএসসির মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল । এস সি/ এস টি কোটা থেকে জেনারেল কোটা করেই পাঠানো । তাও নীলকমলরা এন্তার ঝামেলা করেই যাচ্ছে । একদিন তো সাজিয়ে গুছিয়ে একটা দলকেও আনা হয়েছিল, স্কুলের গেটের সামনে, বিক্ষোভ দেখানোর জন্য ।
অনেকেই ব্যক্তিগত কুৎসা শুরু করেছিল, অন্যতম টিচার রিপ্রেজেনটেটিভ তুলিকার বিরুদ্ধে । ওর নিজস্ব জীবনে ডিভোর্সের কারণ নিয়ে নানা আজে বাজে মন্তব্য মিটিংয়ে তো বটেই, অভিভাবকদের প্রতিনিধিদের সামনে বীভৎস খারাপ ভাবে তুলে ধরে, তুলিকা যে কতখানি বদ চরিত্রের সেটাও বোঝানো হয়েছিল । এটা করেছিল পুরুষরাই বেশী ভাবে । চিৎকার করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল কেয়া । তুলিকার স্বামী যে রোজ মদ খেয়ে এসে পেটাত, সেটা আর বলতে পারলো না। তবে অন্যভাবে যতটা পারা যায়, সেটা করাতে অন্যদের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা বুঝতে পারে । কেয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে । মোকাবিলা করার শক্ত শপথ নিয়ে বুবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে স্কুলের জন্য । বুবাইকে ওর স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে, রিক্সাটা ঘুরিয়ে নেয় নিজের স্কুলের সামনে ।
ভাড়াটা চুকিয়ে দিয়ে, নামতেই একটা ছেলে বলল- দিদিমণির বুকের সাইজটা বেশ ডবকা তো ! একবারে আয়েশা টাকিয়া !!!! দিদিমণির ব্রার সাইজ কত ? আশেপাশের কয়েকজন হো হো করে হেসে ওঠে । অপমানে মুখ লাল হয়ে হয়ে আসে কেয়ার । থাপ্পড় কষাতে ইচ্ছে করলেও, জবাব না দিয়ে, স্টাফ রুমে ঢকঢক করে এক গ্লাস জল খায় । ছেলেটাকে মনে হয়, সেদিনের সাজানো জমায়েতে দেখেছিল । প্রতিমা আর অহনা ট্যারা চোখে তাকায় কেয়ার দিকে ।
– কি রে, কেয়া!

  • আরে দ্যাখ না ! বাইরে কয়েকটা ছেলে অসভ্য কথা বলছিল আমার শরীর নিয়ে । মাথাটা গরম হয়ে গেছে ।
  • কি বলেছে ?
  • আমাকে আয়েশা টাকিয়ার সঙ্গে তুলনা করে খারাপ কথাগুলো বলেছে ।

 

সালওয়ার কামিজ পরে আসিস কেন ?

  • বেশ করি !
  • তোর ভালো ভালো শাড়ী গুলো বিক্রি করার জন্য ওএলএক্স ডট. ইনে বিজ্ঞাপন দে । আমি কিনে নেবো । আমার তো বাবা, আবার শাড়ী ছাড়া ভালোই লাগে না ! আমি তো তোর মত হিন্দি সিনেমার অনন্ত যৌবনা নায়িকা নই ।

অহনা একটা বিছুটি মার্কা হাসি হেসে বলল ।

 

রাগে ফেটে পড়লেও বেশী কথা বাড়াল না কেয়া । প্রতিমা আর অহনা হল জলের চরিত্র । যে পাত্রে যখন, তখন সেই রূপ ধারণ করে । এখন এখানকার কাউন্সিলরের খোচর। স্কুলের দৈনন্দিন খবর পাচার করে ম্যানেজিং কমিটির ওই স্থানীয় কাউন্সিলরকে । তুলিকা, একদিন তার ডিভোর্সের ব্যাপারটা খুব আবেগের বশে বলে ফেলেছিল প্রতিমাকে । ঠিক তারপরেই চারদিকে রাষ্ট্র হয়ে যায়। ব্যাপারটা কুলের আচারের মত, অনেকেই তারিয়ে উপভোগ করে ।
আর উত্তর না দিয়ে, ক্লাসে যাবার জন্য তৈরি হল কেয়া । কোনো রকমে পঁয়তাল্লিশ মিনিট কাটিয়ে ফিরে এলো স্টাফ রুমে ।

 

সেল ফোনটা অন করতেই দেখল, সুমন্তর একটা মিসড কল অ্যালার্ট। রিং ব্যাক করতেই সুমন্ত উত্তেজিত হয়ে বলল:-
– শোনো, অজিতকে মনে আছে ? অজিত সরকার- আমার কলেজের ক্লাসমেট ?
– মনে থাকবে না কেন? পুলিশে চাকরী করে তো ?
– হ্যাঁ! সেই অজিত আমাদের থানায় ওসি হয়ে এসেছে । আজ দেখা হল । সন্ধেবেলায় বৌকে নিয়ে ফ্ল্যাটে আসতে পারে, সময় পেলে । জলখাবারের জন্য কিছু একটা বানিয়ে রেখ ।
– ঠিক আছে ।
সেল ফোনটা বন্ধ করল কেয়া । মনমেজাজ ভাল নেই । সুযোগ পেলে সুমন্তর সামনেই অজিতকেও বলবে আজকের অনামা কলের কথা । এখন আর সুমন্তকে বলবে না । টেনশনে থাকবে ।
চারটের সময়ে বেরিয়ে পড়ল কেয়া । বুবাইকে নিয়েই বাড়ী ফিরে যাবে । সুবিধে একটাই- বুবাইয়ের স্কুলের সময়টা ম্যাচ করে নিজের স্কুলের সাথে । ছেলেটার ক্লাস নাইন হয়ে গেছে, তাও একটু সাবধানেই থাকে কেয়া । স্কুলে একা ছাড়তে চায় না । বুবাই একটু গাঁইগুঁই করে, তবে ওর বেশী কিছু বলে না । গীটার শেখার বায়না করেছিল । সুমন্তর চেনা সিনে মিউজিসান আ্যসোসিয়েশানের একজনকে ঠিক করে দিয়েছে, শেখানর জন্য । বাড়ীতেই এসে শিখিয়ে যান উনি । ভালই শেখান । বুবাইও মনের আনন্দে আছে বলে আর বেশী কথা বলে না ।
সন্ধে সাতটা নাগাদ এল, অজিত মৌমিতাকে নিয়ে ।ওদের চার বছরের মেয়েটাও দারুণ ফুটফুটে । বুবাইয়ের সাথে জমে গেল টুনটুনি । আধঘন্টার মত পুরোনো দিনের চর্বিত চর্বণ হলো । গল্প- গুজবে কেয়া ভুলেই গেছিল সকালের টেনশানের কথা ।

 

বেসফোনে ফোনের বাজনা । সুমন্তই ধরল ফোনটা ।
– বাঃ ! বাঃ ! থানার নতুন ওসির সঙ্গে দেখি ভালই পীরিত আপনাদের । তাতে তো লাভ হবে না দাদা ! আপনার মিসেসকে বলবেন, উনি যেন স্কুলে যান বন্ধের প্রথম দিন । আর আপনি তো আপিস যাবেনই । সরকারি চাকুরে তো ! তাই আর বেশী কিছু বললাম না ।
– কে আপনি ?
– জেনে কি লাভ ? আর হ্যাঁ ! ওই ওসি আমাদের নজরে আছে । বলে দেবেন । আগের থানায় থাকতে, মালটা সোজা ব্যাটে খেলতে গেছিল। কী লাভ হল?  বরফিকে অ্যারেস্ট করেও তো ধরে রাখতে পারলি না ! উল্টে এই থানায় বদলী । এখানে বেশী তেড়িবেড়ী করলে দুঃখ আছে ওর কপালে । বলে দেবেন ! রাখি !
কুঁউউউউউউউউউ শব্দটা হতেই লাগল ফোনে । সুমন্তর মাথাতেও ওই শব্দটা ঘুরপাক খাচ্ছে সংক্রমণের মত।
অজিতই প্রথম নৈঃশব্দ ভাঙল ।
– কে করেছিল ফোনটা ? আর তুই ওরকম ধিনিকেষ্টর মত দাঁড়িয়ে কেন সুমন্ত ?
– না, মানে !
– আরে, কি হয়েছে বলবি তো !
– একজন ফোন করে বন্ধের প্রথম দিন কেয়াকে স্কুলে যেতে বলল । আর তুই যে আমার বাড়ী এসেছিস সেটাও জানে । বরফিকে  অ্যারেস্ট করার জন্য তোকে এই থানায় বদলি করেছে সেটাও বলল । কেয়া আর তোর প্রতি হামদর্দী দেখিয়ে তোদের বলল, সাবধানে থাকতে ।
হা হা করে প্রত্যুত্তরে হাসল অজিত । মৌমিতা বলল:-
– আপনার বন্ধুকে নিয়ে আর পারি না! জ্বলে পুড়ে গেলাম। সব সময় টেনশানে থাকতে হয় । ওই জমানাতেও একই কেস করত আর এই জমানাতেও সেই জেদ । এটা ক্যালকাটা পুলিসের  অ্যাডেড এরিয়া হওয়াতে এখানে নিয়ে এসেছে । জানি না, কপালে কি আছে । আর কেয়া বৌদি, তোমাকেও বলি- এইসব গণ্ডগোলের মধ্যে যাও কেন বাপু ! বুঝতে পেরেছি, তুমি ওই দিন স্কুলে যাবে না ! তাই এই থ্রেট ! পুলিশের ঘর করছি তো, একটু একটু বুঝি ।
অজিত জিজ্ঞেস করল- তোর বেস ফোনে কলার আই ডি আছে সুমন্ত ?
– না নেই ! এটা তো জাষ্ট সেল ফোন অফ করে রাখলে রাতে ব্যবহার করি আমরা । তাছাড়া, ফিনান্স কোম্পানীর লোনের জন্য একটা প্রুফ অফ  অ্যাড্রেসও বটে । তাই রাখা।
– হুম !
কেয়া হতভম্ব হয়েছিল এতক্ষণ । আস্তে আস্তে সম্বিত ফিরে পেয়ে সকালের ঘটনাটা বলল সবাইকে ।
অজিত মুচকি হেসে বলল- সেদিন স্কুলে যাবে কি যাবে না, সেটা তোমার ব্যাপার কেয়া । আমার কিছু বক্তব্য নেই । তবে, তোমার সেল ফোনে ওই নাম্বরটা উঠেছে, ঐটে দাও আর সঙ্গে তোমার নাম্বার । দেখি, ট্রেস করতে পারি কিনা !
সুমন্ত বলল:- আমাকে তো যেতেই হবে । সরকারি চাকরি। না হলে একগাদা হুজ্জতি ! আমি বলি কি কেয়া, তুমি সেদিন স্কুলে যাও । বুবাইকে যেতে হবে না । পাশের ফ্ল্যাটে মাসীমার কাছেই থাকবে । বেকার ঝামেলা বাড়িয়ে কি লাভ? কি বল, অজিত?
– আমার কিছু বলার নেই, যেতে পারো, তবে ওদের অত সাহস হবে না মনে হয়। শান্ত স্বরে উত্তর দিল অজিত ।

– হ্যাঁ হ্যাঁ ! কেয়া যাবে ! রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায় ! মৌমিতা ঝাঁঝিয়ে উঠল ।
তালটা কেটে সেদিনের মত আড্ডা শেষ ।
বন্ধের আগের দিন সুমন্ত একটা ব্যাকপ্যাকে পাজামা,ফোলানো বালিশ, পাতলা একটা চাদর, টুথব্রাশ, টুথপেষ্ট, তোয়ালে আর এক প্যাকেট তাস নিয়ে চলে গেল অফিসে । একদম বন্ধের শেষে ফিরবে বাড়ীতে, তার পরের দিন ! টেবিল জোড়া দিয়ে রাত কাটাবে অফিসে।
বুবাইকে সব বুঝিয়ে পাশের ফ্ল্যাটে মাসীমার জিম্মায় রেখে বেরিয়ে পড়ল । একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে মনে । জানে, প্রতিমা দেখেই হাড় জ্বালানো হাসি হাসবে । অহনা ফুট কাটবে , সব সংগ্রামীদের জানা আছে !
একটু এগিয়েই দেখল- বন্ধ দোকানগুলোতে শাবল দিয়ে পেটান চলছে শাটার গুলোতে । একপাল ছেলে দৌড়াদৌড়ি করছে লাঠি নিয়ে । স্কুলের গেটে ভীষণ ভীড় ।
ঢুকতে পারবে কিনা স্কুলে, এই চিন্তা কেয়ার মনে । অজিতকে দেখল, পুলিশ নিয়ে খেদানোর চেষ্টা করছে ওই সব ছেলেদের । স্থানীয় কাউন্সিলর চড় উঁচিয়ে হঠাৎ তেড়ে গেল অজিতের দিকে। অজিত প্রাণপণে বোঝাবার চেষ্টা করছে তাকে ।

অজিতের সহযোগী কন্সটেবলরা ধীরে ধীরে অধৈর্য হয়ে উঠছেন। সহকারী এস আই ছেলেটি এসে অজিতের কানে কানে কিছু বললে সে একটু সরে এল। অজিত মোবাইল বের করে পকেট থেকে। কাউন্সিলার ভদ্রলোক তান্ডব শুরু করেছেন। সঙ্গে বহু ছেলে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে যে কোন মুহূর্তে। এক্ষুণি কিছু করা দরকার। শূন্যে ফায়ার করতে পারলে ভালো হত, কিন্তু প্রয়োজনীয় পারমিশান পাবে না, অজিত জানে। কাউন্সিলার অজিতের দিকে দু’হাত দিয়ে কদর্য ঈঙ্গিত করছে। কেয়া দেখল অজিত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তার হাতে লাঠি। সামান্য পাঁচ-সাত জনের পুলিশবাহিনী লাঠিচার্জ করতে উদ্যত হতেই কাউন্সিলার পেছিয়ে এসে দাঁড়াল একটা বাসের পেছনে। ফ্লিপ-টপ মোবাইল খুলে চাপাগলায় কাউকে নির্দেশ দিলেন, “টপকা দে শালে কো!” ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে হতভম্ব কেয়ার তখন নড়ার ক্ষমতা নেই।
হঠাৎই একটা চকরা-বকরা সার্ট পরা ছেলে পেছন দিক থেকে তীরবেগে দৌড়ে গেল অজিতের দিকে। পাতলা হিলহিলে চেহারা। বয়েস বড়জোর কুড়ি। এস আই শান্তনু সাবধান করার আগেই ছেলেটা রিভলবার বের করে গুলি ছুঁড়ল। অজিতের পিঠ ভেদ করে ঢুকে গেল সেই বুলেট। সকলের সামনে অজিতের সুঠাম দেহ লুটিয়ে পড়ল রাস্তায় । কেয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধরাধরি করে অজিতকে নিয়ে গেল কনষ্টেবলরা । এবার আর কেয়া এগুলো না স্কুলের গেটের দিকে । প্রায় দৌড়ে এসে সামনের মোড় থেকে একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেল কেয়া। পথে প্রায় চল্লিশ মিনিট সময় তার সমস্ত স্বত্ত্বা জুড়ে আতঙ্কের ছায়াছবি। মাসীমার ফ্ল্যাটের দরজা ঠেলে ঢুকলো কেয়া ।

বুবাই ওকে দেখেই লাফিয়ে উঠে কেঁদে বলল :- মা, অজিতকাকুকে গুলি করে মেরে ফেলেছে ওরা! মাসীমাকে দেখল- আঁচল দিয়ে চোখ মুছছেন । মৌমিতা আর টুনটুনির মুখটা ভেসে উঠতেই বুবাইকে জড়িয়ে ধরে কেয়া কেঁদে ফেলল ঝরঝর করে ।

চোখের জলের নোনতা স্বাদ পেতে পেতে কেয়া টের পেল তার কান গরম হয়ে উঠছে। বুকের ভেতর এক অসহ্য জ্বালা। কিসের জন্য বুঝে উঠতে পারল না কেয়া। তার গলা দিয়ে কান্নার বদলে এক তীব্র চিৎকার উঠে আসতে চাইছে। সারা শরীরে পাক খাচ্ছে,একটা প্রচন্ড ঘেন্না । কেয়া বুঝতে পারল সে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে আজ।

 

তখন টিভিতে বারবার,বিরক্তিকর ব্রেকিং নিউজ :- সমাজ বিরোধীদের গুলিতে পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যু !

কেয়া জানে এ দৃশ্যও উপভোগ করার দর্শক আছে…

################সমাপ্ত#########

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!