সোলাইমান পাশা আল-ফারান্সাভি
সোলাইমান পাশা আল–ফারান্সাভি (জন্ম নাম জোসেফ অ্যানথেলম সেভ; ১৭ মে ১৭৮৮ – ১২ মার্চ ১৮৬০):
সোলাইমান পাশা আল-ফারান্সাভি (Soliman Pasha al-Faransawi) ছিলেন একজন ফরাসি সামরিক কর্মকর্তা, যিনি পরে মিশরে আসেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। তার আসল নাম ছিল জোসেফ-অ্যান্টোনি সেলভা, এবং তিনি ১৮০৩ সালে ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন।ফরাসি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত থাকাকালীন তিনি একজন উচ্চমানের সৈনিক হিসেবে পরিচিতি পান। কিন্তু পরে তিনি নেপোলিয়নের পতনের পর সামরিক বাহিনী ছেড়ে দেন এবং ১৮২০-এর দশকে মিশরের খেদিভ মোহাম্মদ আলির অধীনে কাজ করার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। মিশরে আসার পর তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং “সোলাইমান পাশা” নাম ধারণ করেন। মিশরে তিনি সামরিক বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং মিশরীয় সেনাবাহিনীকে আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে, তিনি মিশরীয় সেনাবাহিনীর নতুন কৌশল ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি উন্নয়নে সহায়তা করেন। তার নেতৃত্বে মিশরীয় সেনাবাহিনী ইউরোপীয় সামরিক মানদণ্ডে উন্নীত হয়।
তার মুসলিম জীবন ও সামরিক অবদান তাকে মিশরের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তিনি কীভাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন?
সোলাইমান পাশা আল-ফারানসাভি, যিনি আগে জোসেফ অ্যান্থেলম সেভ নামে পরিচিত ছিলেন, তার ইসলাম গ্রহণ এবং মুসলিম জীবনযাত্রা একটি উল্লেখযোগ্য ইতিহাস বহন করে। ফ্রান্সে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, কিন্তু যুদ্ধ শেষে তিনি মিশরে চলে আসেন।মিশরের শাসক মুহাম্মদ আলী পাশা ইউরোপীয় সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে দক্ষ সৈন্য ও অফিসার নিয়োগ করছিলেন, এবং সেভ সেই নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। মিশরে আসার পর তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার নতুন নাম গ্রহণ করেন—সোলাইমান পাশা আল-ফারানসাভি। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পেছনে তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল মিশরের সামরিক বাহিনীর উন্নয়ন এবং মুসলিম সমাজের মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন।জোসেফ অ্যানথেলম সেভের ইসলাম গ্রহণের পেছনে মূল কারণ ছিল তার মিশরে আসার পর মোহাম্মদ আলী পাশার প্রভাবে থাকা এবং মিশরের সংস্কৃতি ও ধর্মের সাথে তার নিবিড় সম্পৃক্ততা।তিনি মিশরের সমাজ, সংস্কৃতি এবং ইসলামের সাথে মেলামেশার সুযোগ পান, যা তাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে। এছাড়াও, সেভ সম্ভবত মিশরে তার অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার জন্য এবং স্থানীয় সমাজে ভালোভাবে মিশে যাওয়ার জন্যও ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তার নাম পরিবর্তন করে সোলাইমান পাশা আল-ফারানসাভি রাখা হয় এবং তিনি মিশরীয় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকেন।
ইসলাম গ্রহণের পর সোলাইমান পাশা আল-ফারানসাভি (জোসেফ অ্যানথেলম সেভ) মিশরে নতুন পরিচয় ও লক্ষ্য নিয়ে জীবন শুরু করেন। ইসলাম গ্রহণের পরে তিনি “সোলাইমান” নাম গ্রহণ করেন এবং মিশরের শাসক মোহাম্মদ আলী পাশার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠেন। তিনি ইসলামের প্রতি গভীর আনুগত্য দেখিয়েছিলেন এবং মিশরের সামরিক ক্ষেত্রে বিপুল অবদান রাখেন।সোলাইমান পাশা মোহাম্মদ আলী পাশার অধীনে মিশরের সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠিত ও আধুনিকায়নের নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে মিশরের সেনাবাহিনী ইউরোপীয় ধাঁচে প্রশিক্ষিত হয়, যা মিশরের সামরিক শক্তিকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করে। তার সামরিক দক্ষতার জন্য তিনি মিশরীয় সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হয়ে ওঠেন এবং মিশরের সামরিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেন।ইসলাম গ্রহণের পর, তিনি শুধুমাত্র একজন সামরিক নেতা হিসেবে নয়, বরং একজন বিশ্বস্ত মুসলিম হিসেবে মিশরে জীবনযাপন করেন। তার অবদানের জন্য মিশরের
মুসলিম সমাজের কাছে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন, এবং তার উত্তরাধিকার মিশরের সামরিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
সোলাইমান পাশা আল-ফারানসাভির সমাধি পুরাতন কায়রোতে অবস্থিত। তার মৃত্যুর পর তাকে সেখানেই সমাধিস্থ করা হয়। তার স্ত্রীকেও তার পাশেই সমাধিস্থ করা হয়েছে, যা তাদের প্রতি মিশরের সমাজের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতিফলন। সোলাইমান পাশা আল-ফারানসাভি মিশরের সামরিক ও সামাজিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন, এবং তার সমাধি সেই ইতিহাসের একটি নীরব সাক্ষী।