সেডনা আর শিকারি

পৃথিবীর প্রাচীন জাতি এস্কিমো।তাদের জীবনযাত্রা এখনো প্রাচীনত্ব রয়েছে রয়েছে।উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব সাইবেরিয়া আর্কটিক অঞ্চালে আধিবাসিদের এস্কিমো বলে।এরা গ্রিকল্যান্ড,থাইল্যান্ড,আইসল্যান্ড,ও অন্যান্য সুমেরু অঞ্চালে বাঁশ করে। ঐতিহাসিক ও নতৃত্ববিদরা মনে করেন এরা এশিয়ার মঙ্গঅলীয় জাতির বংশোদ্ভুত এবং বহু বছর আগে এশিয়া থেকে এসব অঞ্চালে ছরিয়ে পড়েছ।এস্কিমোরা ছোট ছোট দলে বাঁশ করে।
এস্কিমোরা খুব কঠিন জীবনযাপন অভ্যস্ত। এরা সমুদ্রের সিল,তিমি ইত্যাদি শিকার করে নিজেদের খাবার,ঘরবাড়ি,তেল জ্বালানী ব্যাবস্থা করে।এরা কাচা মাংস খেতে অভ্যস্ত তাই রেড ইন্ডিয়ারা,এস্কিমো শব্দটির অর্থ কাচা মাংস ভক্ষন কারি।গরম কালে এরা বগলা হরিণ ও সিলের চামড়ায় তৈরি তাঁবুতে বাঁশ করে। শীতকালে বরফ খুড়ে পাথর বাঁ কাঠের ঢাকনা দিয়ে ঘর তৈরি করে।এই ঘর কে ইগলু বলে,স্থলপথে চলার জন্যে এরা কুকুরের টানা গাড়ি এবং জলপথের ভ্রমের জন্য কায়াক নামে পরিচিত চামড়ায় তৈরি ছোট নৌকা ব্যাবহার করে।সেই এস্কিমোর গল্পকথা জানতে ছোট বড় সকলের ভালো লাগে।এবার এস্কিমোর একটি গল্প শোন।সেডনা নামে এস্কিমোর একটি মেয়ে ছিল।সে ছিল মাতৃহারা।তুষারবৃত বিস্তির্ন অঞ্চালে সিডনির চেয়ে কেউ বেশি সুন্দরী ছিল না।
বাবা ও মেয়ে বাস করতো সমুদ্রের ধারে একটা বরফের ইগলুতে আর অল্পস্হায়ী গ্রীষ্মকালে বাশ করতো হরিণের চামড়ার এক তাবুতে।বহু যুবক ছিল তার ভালবাসার কাঙ্গাল।তারাপ্রতিদিন আসতো তার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।কিন্তু সেডনা সবাই কে ফিরিয়ে দিতো হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রপবানে বিদ্ধ করে।নিজেদের নিষ্ঠরতায় সে মহা আনন্দ পেতো।
আবশেষে এক মনোরম গ্রীষ্মের দিনে সমুদ্রের উপর দিয়ে নৌকা চালিয়ে সুদূর এক দেশে থেকে এসে উপস্তিত হলো এক সুদর্শন শিকারি যুবক।তার পরনে জমকালো লোমশ চামড়ার পোশাক,হাতে তিমির দাঁত দিয়ে তৈরি একটা বর্ষা।
সে তিরে নেমে এল না।সিল মাসের চামড়ায় আর্বত তার হালকা কাঠের নৌকায় বসে,সমুদ্রের শান্ত ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে দুলতে,সে নিজের কুঠিরের পাশে বসা সেডনাকে ডাকতে থাকল।“সেডনা,সেডনা এদিকে একটু এস না।সেডনা,সেডনা,এদিকে একটু শোন।”
সেডনা সমুদ্রের কাছে এসে ওই বিসেদেশীকে পরিপূর্ন দৃষ্টিতে দেখল এবং জানতে চাইল তার নাম জানলো কি করে?
সেডনাকে দেখার পর শিকারি ভারি মিষ্টি গলায় একটি গান গাইলো।সেডনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যুবকের গান শুনলো।তার মন টা নরম হয়ে গেল,তবু সে শিকারি আহবানে কোন সাড়া দিল না।শিকারি তখন আরও একটা গান গাইলো।
এরপর সেডনা আর ইতস্তত করল না।সে তার কম্বল জড়িয়ে নিল তার গায়ে।তার পর শিকারির নৌকায় গিয়ে উঠল।সঙ্গে সঙ্গে শিকারি দ্রুত তার নৌকা চালিয়ে চলে গেল সমুদ্রের ওপারে পাখ-পাখলির দেশে।
কিন্তু সেডনা সেখানে বেশি দিন সুখি থাকতে পারল না।কিছুদিন পরে সে আবিষ্কার করল যে তার সুদর্শন শিকারি স্বামী আসলে মানুষ নয়।সে একটি কুৎসিত পাখি,অনেকটা গাঙচিলের মতো দেখতে কিন্তু ডানাগুলো খুব লম্বা আর সাদা-কালো রঙবিশিষ্ট।কিন্তু কুৎসিত পাখি মানুষের রুপ ধারন করতে পারে।ওই রুপ ধারন করে সে সেডনার প্রেম ভিক্ষা করে এবং তাকে জিতে নেয়।
প্রকৃত সত্য জানার পর সেডনার মনে আর আনন্দ থাকে না।শ্বামীর প্রতি তার এক তিব্র ও বিদ্বেষ জাগে।তার কুৎসিত পাখি শ্বামী তাকে খুসি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে,তাকে মুড়ে রাখে সুন্দর সুন্দর লোশম চামড়ার পোশাকে,তার গলায় ঝুলিয়ে নানা বর্ণের শঙখ,প্রবাল আর মুক্তোর মালা।কিন্তু সেডনার চোখে পানি শুকায় না।
এদিকে সেডনার বাবা মেয়ের অহাবে ভেঙে পড়েছিল।একদিন সমুদ্র যখন শান্ত মেয়ের বাবা নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল তার মেয়েকে খুজতে,এবং একসময় সে গিয়ে পৌঁছাল পাখপাখালির দেশে।
সেডনার পাখি স্বামী তখন বাইরে গিয়েছিল খাবারের খোজে।মেয়েকে একা ঘরে কাঁদতে দেখে বাবার মনে বেদনায় ভরে যায়।সে তৎক্ষনাৎ সেডনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার নৌকায় তুলে দ্রুত স্বদেশ পথে রওনা হল।ওরা চলে জাবার পরেই কুৎসিত পাখি ঘরে এসে হাজির দেখে সেডনা নেই।সে নিজেকে এক ভয়ংকর পাখিতে রূপান্তরিত করে তার নৌকায় চড়ে ওদের পিছু নিল।দেখতে দেখতে আঙ্গুস্টা নৌকার কাছে হাজির হল।এস্কিমো তরতর করে এগিয়ে আসা অন্য নৌকাটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে সেডনাকে ভালুক আর সিল মাসের কয়েকটা চামড়ার নিচে লুকিয়ে রেখে নির্বিকার মুখকরে তার নৌকা দাঁর টানছিল।কুৎসিত পাখি মুহুর্তের মধ্যেই নিজেকে সুদর্শন শিকারিতে রূপান্তরিত উচ্চস্বরে বলে,সেডনা!আমার সেডনা কোথায়?সেডনার বাবা বলল,সেদনা আর তোমার কাছে ফিরে যাবে না।এখন থেকে সে আমার সঙ্গে থাকবে।অসম্ভব!চিৎকার করে বলে শিকারি।তারপর সে রূপান্তরিত হোল এক বিশাল ধুসর রঙের পাখিতে।ওই পাখি আঙ্গুরস্টা নৌকার উপরে কয়েকবার চক্কারে উরে,পাখা ঝাপটাটে ঝাপটাতে নিল আকাশে অদৃশ্য হয়ে গেল।
এর একটু পরেই হঠাৎ শান্ত সমুদ্র প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো। পাহাড়ের মতো ঢেউয়ের নিচে আঙ্গুস্টার নৌকা তলিয়ে যাবে এমন হল।আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।বাঘের গর্জনে কান তালা লেগে যাই।আঙ্গুষটা ভীষম ভয় পেয়ে গেল।এই প্রবাল শত্রুর বিরিদ্ধে সে কেমন করে পারবে?প্রচণ্ড বাতাস বিশাল ঢেউ যেন একযোগে চিৎকার করে বলছে,সেডন!সেডনাকে চাই আমার দেরি কর না।আঙ্গুস্টা তখন প্রান ভয়ে দিশেহারা।সে ভালুক আর সিল মাছের চামড়ার স্তূপ সরিয়ে,এক হ্যাঁচকা টানে সেডনাকে তুলে তাকে সমুদ্রের পানিতে ছুরে ফেলে দিল।এক অদ্ভুত গল গল শব্দ তুলে সেডনাকে গ্রহন করল সমুদ্র।তাকে টেনে নিল নিজের গভীর অতলে।
তারপর হঠাৎ করে ঝড় থামতে আরম্ভ করলো।ব্যাথাতুর হৃদয়ে আঙ্গুস্টা তার তাবুতে ফিরে আসল।একসময় অন্ধকার কালো রাত নেমে আসল। উত্তর মেরে অঞ্চালের রাত যেমন হয় তেমনি হিম শিতল রাত।আঙ্গুস্টার একটা মোটা ভালুকের চামরা সারাগায়ে জড়িয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকে।তার চোখে ঘুম আসে না।তার পাশে বসে থাকে তার বিশ্বস্ত কুকুর।চার দিক শান্ত নির্জন,নিস্তব্ধ।

কিন্তু মাঝ রাতে এবার প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়ে যাই,।এবার শুধু ঝড় নয়,প্রলয়স্করী জলোচ্ছ্বাস।সেই হিরস্র করাল জলোচ্ছ্বাস উন্মত্ত বেগে ছুটে এসে আঙ্গুস্টা,তার তাঁবু,তার কুকুর সবকিছু সমুদ্রের বুকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।কিছুক্ষণের মধ্যে তারা পৌছেযায় সমুদ্রের তলদেশে।সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে আঙ্গুস্টা তার মেয়ের দেখা পেল।সমুদ্রে যারা মারা গিয়াছে তদের সবার আত্না এখানে আস্রয় নিয়েছে।আর তাদের রানী হিসাবে এখানে রাজত্ব করছে সেডনা।সেডনা তার পিতাকে সহজে ক্ষমা করে দেয় ।আঙ্গুস্টা তার তাঁবু তার কুকুর ও তার নিজের জন্য একটা জায়গা দেওয়া হল।কুৎসিত পাখি শিকারি সেডনাকে এখন আর ভয় পায় না।কারন সে এখন নিজেও একটা আত্নায় পরিণীত হয়েছে।আডিলডেনের সমুদ্রে-প্রেতাত্নাদের রাজা রানিরুপে তাদের দিন কাটে।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!