সেই রাতে পলাশের মৃত্য

আমি জানিনা আমার ঘটনাটা আপনাদের কতটা বিশ্বাস হবে। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা আমরা বিশ্বাস করতে না চাইলেও ঘটে যায়। যার প্রতিদান হিসেবে আমদের খুব বড় জিনিস ত্যাগের সম্মুখীন হতে হয়। ঘটনাটা ঘটেছিল গত বছর জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে। বেশ শীত শীত আবহাওয়া ছিল। বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম সিলেট বেড়াতে যাব। সেদিন ছিল বুধবার। আমরা চার বন্ধু রওনা হলাম। পলাশ, রাকিব, রায়হান এবং আমি। ঠিক রাত আটটা – সাড়ে আটটার দিকে আমরা সিলেট পৌঁছলাম।
আপনি হয়তো জানেন শীত কালে পযর্টনকেন্দ্রে হোটেল খুজে পাওয়া খুবই কঠিন। তার মধ্যে আমরা গিয়েছি রাত আটটা – সারে আটটার দিকে। যেকারণে তেমন ভাল কোন হোটেল আমরা খুজে পাইনি। অবশেষে অনেক কষ্টে আমরা একটা কটেজ খুজে পাই। কটেজটির নাম আমি বলতে চাইনা। যাইহোক, কটেজের এক বেয়ারাকে অনেক বুঝিয়ে কিছু টাকা দিয়ে একটি রোম নিলাম আমরা। বেয়ারা কটেজের মালিককে না জানিয়ে আমাদের রোমটি দিয়েছিল। বেয়ারা আমাদেরকে রোমে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল আপনারা কেউ রাতে আর এই রোম থেকে বের হবেন না। আমরা প্রশ্ন করলেও সে কোন উত্তর দিতে রাজি হল না। ভাবলাম হয়তো মালিক দেখে ফেললে তাকে গালমন্দ করবে তাই। আমরা তার কথা তেমন গুরুত্ব না দিয়ে রোমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। রোমটি দেখে মনে হল অনেক দিন ধরে কেউ এই রোমে ঢুকেনি। একদম সাজানো গোছানো। অনেকক্ষণ গাড়িতে থাকার কারণে সবাই খুব ক্লান্ত ছিল। তাই যার যার মত শুয়ে পরলাম। কিন্তু আমার একদম ঘুম আসছিল না। প্রায় বেশ কিছুক্ষন এভাবেই কেটে গেল।
হঠাৎ কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারিনি। তখন রাত প্রায় বারোটার উপরে। কি যেন একটা শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখি বিছানায় পলাশ নেই। ভাবলাম হয়তো টয়লেটে গেছে। প্রায় দশ – পনেরো মিনিট কেটে গেল। হঠাৎ আমার মনে হল এই রোমে কোন টয়লেট নেই। আর আমার প্রথমে খেয়ালই হয়নি যে আমাদের রোমের দরজা খোলা ছিল। বুঝলাম ও বাইরে গেছে। মনে মনে ওর উপর ভীষণ রাগ হল। কেননা বেয়ারা আমাদের বাইরে যেতে বারবার বারন করেছিল। তখন ছিল পূর্ণিমার রাত। বাইরে তাকাতেই চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম বারান্দায় কোন মানুষের ছায়া দাড়িয়ে আছে। ভাবলাম নিশ্চয়ই পলাশ। উঠে বারান্দায় গেলাম। হ্যাঁ, যা ভেবেছিলাম তাই। ওটা পলাশই ছিল। আমার মেজাজ তখনো ওর উপর খেপে আছে। আমি রাগান্বিত স্বরে বললাম, কিরে বেয়ারা কি বলেছিল শুনিস নি? বাইরে এসেছিস কেন? কিন্তু পলাশ কোন উত্তর দিল না। আমি আরও খেপে গিয়ে পলাশের কাছে গেলাম। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত বেপার হল আমি যতই পলাশের কাছে যাচ্ছি ও ততই আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। হঠাৎ বুঝতে পারলাম কে যেন আমার হাত টেনে ধরেছে। দেখলাম মাঝ বয়সের এক লোক হাতে লাঠি নিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরে বুঝতে পারলাম সে এই কটেজের নাইট গার্ড। আমাকে প্রশ্ন করল, আপনি কে এবং এখান দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? আমি তাকে সব কিছু খুলে বললাম। আমার কথা শুনে তার চোখে মুখে আমি আতঙ্কের ছায়া দেখতে পেলাম। সে বলল, একটুর জন্য প্রানে বেচে গেলেন। সে আমাকে নিয়ে আরও কিছু লোকজন নিয়ে আসল এবং আমরা সবাই পলাশকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও পলাশকে খুজে পাওয়া গেলনা। সারা রাত পলাশের চিন্তায় কেউ ঘুমাতে পারলাম। এর মধ্যে কথাটা কটেজের ম্যানেজারের কাছে পৌঁছে গেছে। ম্যানেজার আমাদের রোমে আসলো। ম্যানেজারের সাথে সেই বেয়ারাও আসলো। ম্যানেজার বেয়ারাকে প্রচণ্ড বকাবকি করল। ম্যানেজারের কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম এই রোমের কাহিনি। প্রায় ৩/৪ বছর আগে এই রোমে দুই স্বামীস্ত্রী এসেছিল। সকালে রোমে সেই মহিলার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু তার স্বামীকে সেখানে আর খুজে পাওয়া যায়নি।
কি কারণে মহিলাটিকে মারা হয়েছিল তা কেউ বলতে পারেনি এরপর থেকে সেই রোমে যারা এসেছে, সবাই অভিযোগ করেছে যে, তারা এক মহিলাকে দেখেছে যে ফাঁসিতে ঝুলছে। এবং অনেকে শুনেছে কেউ একজন প্রচণ্ড মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। এরপর থেকে এই রোম তালা বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। পরদিন সকালে পলাশকে খুজে পাওয়া গেল পাশের এক ডোবায় মৃত অবস্থায়। সেদিন আমি প্রানে বেঁচে গেলেও আমার বন্ধু পলাশকে আমরা বাঁচাতে পারিনি।

ইংল্যান্ডের শেরবরনের প্রাচীন দুর্গ

কাঁচপোকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *