জাতক বোধিসত্ত্ব একবার এক ব্রাহ্মণ বংশে জন্ম নেন।এক সময় তাঁর বিয়ের বয়স হল। বিয়ের পর বোধিসত্ত্ব পরপর দিনটি মেয়ের বাবা হলেন। নন্দা, নন্দবতী ও সুন্দরীনন্দা তাদের নাম। বোধিসত্ত্বের অকালে মৃত্যু হল। ফলে তাঁর তিন মেয়ে আর স্ত্রীকে পরের বাড়িতে কাজ করে খেতে হচ্ছিল। ওদিকে মৃত্যুর পরে বোধিসত্ত্ব সোনার হাঁস হয়ে জন্মালেন। তিনি জাতিস্মর বলে আগের জন্মের সব কথাই জানতে পারলেন। তখন তিনি ভাববার চেষ্টা করলেন, ‘এখন আমার স্ত্রী আর মেয়েরা কি করে সংসার চালাচ্ছে।’ ভাববার চেষ্টা করতেই তিনি পরিষ্কার দেখতে পেলেন, তারা কত কষ্টে বেঁচে আছে। সোনার হাঁসের সমস্ত পালকগুলোই পেটা সোনার। তাই তিনি ভাবলেন, ‘আমি যদি একটা করে পালক দেই, তাহলে ওদের সংসারের হাল ফিরে যাবে।’
এই ভেবে তিনি তাদের কুঁড়ে ঘরের পাশে উড়ে গিয়ে বসলেন। বোধিসত্ত্বকে দেখে তাঁর মেয়েরা জিজ্ঞেস করল,‘প্রভু, আপনি কোথা থেকে এসেছেন?’ বোধিসত্ত্ব বললেন, ‘আমি তোমাদের বাবা, মৃত্যুর পর সোনার হাঁস হয়ে জন্মেছি। রোজ আমি তোমাদের একটা করে সোনার পালক দেব। সেটা বিক্রি করে তোমরা আরামে থাকতে পারবে। লোকের বাড়িতে গিয়ে আর তোমাদের কাজ করতে হবে না।’ এই বলে তিনি তাদের একটা সোনার পালক দিয়ে উড়ে চলে গেলেন। তারপর থেকে বোধিসত্ত্ব মাঝে মাঝে এসে ওদের একটা করে সোনার পলক দিয়ে যেতে লাগলেন। ফলে মা আর তিন মেয়ের অবস্থা ফিরে গেল।
একদিন মা মেয়েদের ডেকে বলল. ‘দেখ, তোদের বাবা তো এখন পশুপাখির নামান্তর। এদের স্বভাব বোঝা কঠিন। হয়ত আসাই বন্ধ করে দিল। তার চেয়ে এক কাজ কর, এবার এল আমরা তার সমস্ত পালক ছিঁড়ে নেব।’ পরে বোধিসত্ত্ব এল তাঁর বৌ তাঁকে বললেন, ‘প্রভু, আমার কাছে আসুন।’ বোধিসত্ত্ব যাওয়া মাত্র সে বোধিসত্ত্বের সব পালক ছিঁড়ে নিল। কিন্তু বোধিসত্ত্বের অনিচ্ছায় নেওয়া হল বলে পালকগুলো এক মুহূর্তের মধ্যে বকের পালকের মতই সাদা হয়ে গেল।
বোধিসত্ত্ব তখন উড়ে যাবার জন্য ডানা ছড়িয়ে দিলেন। কিন্তু উড়তে পারলেন না। তাঁর আগের জন্মের স্ত্রী তখন তাঁকে একটা জালার মধ্যে রেখে দিল। রোজ সেখানে তাকে খাবার দাবারও দিত। কয়েকদিন পরে বোধিসত্ত্বের পালক গজাল। কিন্তু সব পালকই সাদা। একদিন তিনি উড়ে চলে গেলেন। আর কখনই তিনি তাঁর মেয়ে বৌকে দেখতে আসেন নি। এই জাতকের মর্মকথা: বেশি লোভ করলে সব হারাতে হয়।