সুন্দর একটি শিক্ষানীয় গল্প

এক বাড়ির মালিক ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা পেতে ইঁদুরের ফাঁদ পাতল। ইঁদুরটা সেই ফাঁদ দেখে কর্তার পালা মুরগির কাছে গিয়ে বলল ফাঁদটা ছিঁড়ে ফেলতে তাকে যেন সাহায্য করে। কিন্তু মুরগি বলল যেহেতু ফাঁদের কারণে তার নিজের কোন সমস্যা হচ্ছে না তাই সে সাহায্য করতে ইচ্ছুক নয়। ইঁদুরটা মালিকের পালা ছাগল আর গরুর কাছে সাহায্য চেয়েও একই উত্তর পেল। যেহেতু ফাঁদের কারণে ছাগল বা গরুর কোন বিপদ হবে না তাই তারা ইঁদুরের অনুরোধকে অগ্রাহ্য করল।
এদিকে রাতের বেলা ইঁদুরের বদলে ফাদে আটকা পড়ল এক বিষধর সাপ। মালিক ইদুর ধরা পড়েছে ভেবে কাছে আসতেই সাপ কামড় দিল। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকা হল। ডাক্তার বিষ নামাতে পারলেন বটে, কিন্তু বললেন সুস্থ্ হয়ে উঠতে মালিকের স্যুপ খাওয়া প্রয়োজন। তাই স্যুপ রান্না করতে মালিক প্রথমেই তাঁর মুরগিটাকে জবাই করলেন।
এদিকে মালিককে দেখতে বাড়িতে অনেক মেহমান আসলেন। তাদের আপ্যায়ন করতে ছাগলটা জবাই করতে হল। কিছুদিন পর মালিকের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না দেখে ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার কথা উল্লেখ করলেন। তার জন্য অনেক টাকার দরকার ছিল বলে মালিক তাঁর গরুটাকে কসাইখানায় বিক্রি করলেন।
কয়েকদিন পর দেখা গেল শুধু ইঁদুরটাই বেঁচে আছে; মুরগি-গরু-ছাগল কেউ নেই। ইদুর ভাবল, সেদিন যদি ওরা আমার ডাকে সাড়া দিয়ে সাহায্য করত, আজ ওরাও বেঁচে যেত।
আমাদের মুসলিমদের জন্য গল্পটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দুনিয়ায় মুসলিমরা সবচেয়ে নিগৃহীত। পাখির মত গুলি করে মুসলিম মারা হচ্ছে। একের পর এক দেশে আমেরিকা আর তারা দোসর ইসরায়েল তাণ্ডবলীলা চালিয়ে আমাদের লক্ষ লক্ষ মুসলিম ভাই-বোনকে হত্যা করছে। আর আমরা বাংলাদেশে বসে নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছি। আমরা ঐ মুরগি, গরু আর ছাগলের মতই নিজেদের নিরাপদ ভাবছি। ভাবছি, বিপদ তো আফগানিস্তান-পাকিস্তানি,সিরিয়ানদের। আমাদের তো না। অথচ বাস্তবতা হল, মুসলিমদের উপর আঘাত কোন দেশ বা জাতীয়তাবাদের কারণে হচ্ছে না। হচ্ছে কেবল এই কারণে যে, ওরা মুসলিম, ওরা এক আল্লাহ্‌য় বিশ্বাস করে। কী ভাবছেন ভাই? আমরা নিরাপদ? কুফফাররা আমাদের ছেড়ে দেবে? কুফফারদের ভয়ে দাড়ি কাটছেন? কী করবেন সেদিন যেদিন ওরা আপনাকে হত্যা করবে শুধু মুসলিম নাম থাকার কারণে? আপনি কাদের সাথে আপোষ করার কথা ভাবছেন নিজের মাথা বাঁচাতে? যারা অভিশপ্ত, তাদের সাথে? তবে জেনে রাখুন, নিজের দ্বীন বিসর্জন দিয়ে ওদের ধর্ম গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত তারা আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না, হতে পারে না। এটা তো আল্লাহরই ঘোষণা। আজ তারা পাকিস্তানকে ধরেছে, কাল ধরবে আপনাকে, পরশু আরেকজনকে? নিজেকে নিরাপদ ভাবছেন? মুসলিমদের সস্তা জাতীয়াতাবাদ দিয়ে পৃথক করছেন? এই কি আপনার ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ?
আমরা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারি কত মুসলিমের লাশের সাক্ষী আমরা হয়েছি। আমরা দেখেছি গুজরাটের গণহত্যায় নিহত তিন হাজার মুসলিমের লাশ। আমরা সাক্ষী বসনিয়ার গণহত্যায় হাজার মুসলিম ভাইয়ের লাশ আর বোনের ধর্ষণের। সাক্ষী হয়েছি ইরাকের লক্ষ শিশুর আর্তনাদের। সিরিয়া, মিশর, ফিলিস্তিন আর আফগানিস্তানে মুসলিমের রক্তের নদীর স্রোত আজ আমাদের অনুভূতিকে দুলিয়ে দিতে পারে না। মুসলিমদের একই দেহের সাথে তুলনা করার হাদীস আমাদের মুখে মুখে ফেরে। অথচ বাস্তবে কোন বিকার নেই। তাঁর কারণ?? আমরা নিজেদের নিরাপদ বোধ করে আশ্বস্ত আছি !! ভুলে যাচ্ছি আমাদের নির্যাতিত ভাই, ধর্ষিত মা-বোনদের কথা !! লক্ষ মুসলিমের কান্নায় আকাশ-বাতাস কাঁপছে, আর আমরা হাসি-ঠাট্টায় দিন কাটিয়ে কুল পাই না !! কত নিচুই না এই মুসলিমদের মানসিকতা !! পেট পুরে খাওয়ার সময় একবার চিন্তা হয় ফিলিস্তিনের এতীম অভুক্ত শিশুদের কথা?? বালিশে মাথা রেখে বেঘোরে ঘুমানোর সময় স্মরণ করি রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেওয়া মুজাহিদীনদের কথা??
কী ভাবছেন ভাই? তাদের ব্যাপারে আমরা জিজ্ঞাসিত হব না? এক ভাই বলেছিলেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ আমাদের জিজ্ঞেস করবেন না যে দুনিয়ার অবস্থা কেমন ছিল। দুনিয়ার অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ভালো জানেন। তিনি দেখবেন ঐ অবস্থায় আমি-আপনি কী করেছি। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য ছিল, তা দিয়ে আমি কী করেছি আমার মুসলিম ভাইটির জন্য। চারদিকে অন্যায় আর আল্লাহদ্রোহীতারজন্য আজ আমাদের মুখে কত হাহাকার। কিন্তু এসব প্রতিরোধের জন্য আমরা নিজেরা কী করেছি? কতটুকু চেষ্টা করেছি? বাস্তবে হাত লাগিয়ে কাজ করেছি, নাকি ফেসবুকে বড় বড় স্ট্যাটাস দিয়ে রাজা উজির মেরেছি-আল্লাহ এটাই দেখবেন। কী জবাব দেব সেদিন যেদিন আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে সেব্রেনিকায় ধর্ষিত হয়ে মারা যাওয়া একটি মুসলিম বোন? কী উপায় হবে সেদিন আমাদের, যেদিন ইরাকের একটি শিশু আল্লাহ্‌র কাছে ফরিয়াদ করবে এই কাপুরুষ মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে?
জবাবদিহিতা এত সহজ নয় রে ভাই। সেদিন আমরা এমন অনেক বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে, যেই ব্যাপারে জবাবদিহিতার কথা হয়তো দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে আমরা চিন্তাই করিনি। সেই কঠিন বিচারদিবসকে ভয় করে আমরা যেন নিজ অবস্থান থেকে প্র্যাক্টিক্যালি ইসলামের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে কাজ করার মানসিকতা অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন।

দুঃখিত!