Categories রূপকথা

সিনবাদ ও বাজপাখির গল্প

পঞ্চমরাতে আবার বেগম শাহরাজাদ গল্প বলতে লাগল। –‘জাঁহাপনা, সেই সুলতান উনান তাঁর উজীরকে নানা ভাষায় বকাবকি করতে লাগলেন। বাদশা সিনবাদ যেমন তাঁর প্রাণপ্রিয় বাজপাখিটাকে হত্যা করে মনে কষ্ট পেয়েছিলেন আপনিও কি তাই চান? তখন সভার সভাই সুলতানকে অনুরোধ করলেন গল্পটি বলার জন্য। সুলতান বললেন—‘বলছি তবে শুনুন,–কোন এক সময়ে কার নগরে এক বাদশাহ রাজত্ব করত। তাঁর নাম ছিল বাদশাহ সিনবাদ। ঘোড়ায় চড়া, মাছ ধরা, শিকার করা আর খেলাধুলা ইত্যাদি করাই ছিল তার প্রতিদিনের কাজ। তাঁর একটা বাজপাখি ছিল। বাজপাখিটাকে সিনবাদ খুব ভালবাসত। সব সময় বাজপাখিটাকে সে কাছে রেখে দিত। পাখিটা সোনার বাটিতে পানি পান করত, সোনার থালায় খাবার খেত।

একদিন সেনাপতি এসে সিনবাদকে বলল, হুজুর, আজকের রাত শিকারের জন্য খুবই উপযোগী। আপনি যদি অনুমতি করেন তবে বেড়িয়ে পড়া যাক।’ তখনই সিনবাদ লোকজন নিয়ে শিকারের উদ্দেশ্যে রওনা হল। এক পাহাড়ের নিচে এসে, সমতল জায়গা দেখে তাঁবু ফেলা হল। শিকারের জন্য ফাঁদ পাতা হল। কিন্তু একটা বুনো ছাগল ছাড়া আর কোন বড় শিকার ধরা পড়ল না। বাদশাহ সিনবাদ সবাইকে সতর্ক করে দিল,–‘বুনো-ছাগল যে কোন ভাবেই পালাতে না পারে। যা কাছে থেকে পালাবে, তার গর্দান যাবে। এদিকে যখন বুনো ছাগলটাকে খুব সাবধানে বাদশা সিনবাদের সামনে নিয়ে আসা হল তখন ছাগলটা দুই পা উঁচু করে এমন ভাব দেখাল যেন মনে হচ্ছিল ছাগলটা বাদশাকে সালাম করছে। এটা মনে করে সবাই বাহবা দিতে লাগল। কিন্তু ছাগলটি সুযোগ বুঝে এক লাফে বাদশা সিনবাদকে টপকে বনের মধ্যে হারিয়ে গেল। এমন অবস্থা দেখে বাদশার খুব রাগ হল। সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়া নিয়ে ছুটল ছাগলের পেছনে। কিন্তু সিনবাদ কিছুতেই ছাগলটাকে ধরতে পারলেন না। ধরতে পারল বাজপাখিটা। ছাগলটি পালিয়ে যেতেই বাজপাখিটা দ্রুত উড়ে গিয়ে ছোঁ মেরে ছাগলটার দুটো চোখ তুলে নিল।

আর ছাগলটি কাতরাতে কাতরাতে ওখানেই প্রাণ হারাল। বাদশা সিনবাদ ছাগলটার চামড়া ছাড়িয়ে ঘোড়ার জিনের সাথে বাঁধল। তারপর রওনা দিল। রাস্তায় আসতে আসতে তার খুব তৃষ্ণা পেল কিন্তু কোথায়ও এক ফোঁটা পানি পেল না। অনেক খোজা খুজির পর এক বড় গাছের নিচে কিছু পানি পেল। কিন্তু সে পানি সাধারন পানির মতো ছিল না। থাকথকে আর আঠাল ছিল। বাদশা সিনবাদ সেখান থেকেই কিছু পানি সোনার বাটিতে করে বাজপাখিকে খেতে দিল। কিন্তু বাজপাখি না খেয়ে ফেলে দিল। এ দেখে বাদশাহের খুব রাগ হল। এবার কিছু পানি ঘোড়াকে খেতে দিল কিন্তু বাজপাখিটা ঘোড়ার পানিটাকেও ফেলে দিল। এবার সিনবাদ আর রাগ সামলে রাখতে পারল না। এক কোপে বাজপাখিটার পাখা কেটে দিল।

বাজ পাখিটা যন্ত্রনায কাতরাতে কাতরাতে বলল, হুজুর, ওগুলো পানি ছিল না, ওগুলো বিষ ছিল। বাদশা সিনবাদ গাছের উপরে তাকিয়ে দেখল হাজার সাপ গাছের উপরে ঝুলে আছে আর তাদের মুখ থেকে লালা বেরিয়ে মাটিতে পড়ছে। বাদশা আর্তনাদ করে উঠল আর হায় হায় করতে লাগল। কিন্তু আর কিছুই করার নেই দেখে দুঃখি মন নিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসল। তখনও পাখিটা জীবিত ছিল। বাদশা পাখিটার দিকে তাকাল, আর সেই মূহুর্তে বাজপাখিটা মারা গেল। বাদশা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, আমি একি করলাম, নিজের হাতে নিজের বন্ধুকে হত্যা করলাম।

আরো পড়তে পারেন...

রান্না করলেন রাজপুত্র — যশোধরা রায়চৌধুরী

রাজা, রানি, রাজপুত্র, রাজকন্যা কে নিয়ে এক সুখের সংসার। কোন গোলমাল নেই,আবার গোলমাল আছেও বলা…

বুড়ী আর তার খড়ের ষাঁড় (উক্রেইনের উপকথা)

কোন এক সময়ে এক গাঁয়ে এক বুড়ো আর বুড়ি থাকত। বুড়ি ঘরে বসে চরখাতে সুতো…

ঠানদিদির বিক্রম

আমাদের এক ঠানদিদি ছিলেন। অবশ্য ঠাকুরদাদাও ছিলেন, নইলে ঠানদিদি এলেন কোত্থেকে? তবে ঠাকুরদাদাকে পাড়ার ছেলেরা…