সিকান্দার যুলকারনাইন
হযরত শাহ সিকান্দারিয়া বা আলেকজাণ্ডার শহরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ইস্কান্দার বা সিকান্দার নামে তার পরিচিতির কারণ ছিল তার এটাই। অবশ্য অনেকের মতে, জন্মভূমির সাথে তার নামের কোন সম্পর্ক নেই, বরং বাল্যকালেই পিতা-মাতা তার নাম রেখেছিলেন ইস্কান্দার বা সিকান্দার। তার প্রকৃত নাম যুলকারনাইন’ নয়। যুলকারনাইন ছিল তার উপাধি।
অবশ্য পরবর্তীতে তিনি যুল-কারনাইন নামেই খ্যাতি লাভ করেন। তবে এ শব্দের অর্থ ধারক বা অধিকারী এবং কারনাইন সব্দ হল কারণ’। এর দ্বিবচন কারণ অর্থ একটি বলে থাকেন যে, শাহ সিকান্দারের ছোট ছোট দুইটি শিং ছিল। এ কারণেই তাকে যুল-কারনাইন বলা হয়। বিজ্ঞ ইতিহাসবিদরা এ অভিমত খণ্ডন করে বলেন যে, তার শিং ছিল বলে এমন কোন তথ্য প্রামাণ নেই। এটা নিছক কল্পনাপ্রসূত কিংবা মনগড়া কথা। সুতরাং তা কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও বিজ্ঞ গ্রন্থকারের অভিমত হল হযরত শাহ সিকানদার সূর্যের উদয় স্থান হতে অস্তগমনের স্থান পর্যন্ত সমগ্র খণ্ডের অধিপতি ছিলেন বলে তাকে যুল কারনাইন বলা হয়। আবার অনেকে এটাও বলে থাকেন যে, তিনি পৃথিবীর ঐ দু প্রান্ত সীমায় সফর করেছিলেন বলে এ নামে তিনি খ্যাত। যেহেতু কারণ এটি অর্থ প্রান্ত সীমায় সফর করেছিলেন বলে এ নামে তিনি খ্যাত। যেহেতু কারণ শব্দের এটি অর্থ প্রান্ত সীমা বা কিনারা। সে হিসাবে পরিষ্কার দুপ্রান্ত বা সীমা তথা পূর্ব ও পশ্চিম সীমায় তিনি ভ্রমন করেছিলেন। কাজেই রুপক অর্থ তার নামের সাথে যুলকারনাইন শব্দ যুক্ত হয়েছে, তাঁদের কথা হল- আরবী ভাষায় শতাব্দীকেও কারণ বলা হয়।
হযরত শাহ সিকান্দার দীর্ঘ দু শতাব্দী ধরে বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন, সুতরাং এটাই তার যুলকারনাইন নামকরণের কারণ বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তার সম্পর্কে তথ্যভিত্তিক বক্তব্য হল হযরত নূহ (আঃ) এর অন্যতম পুত্র ইয়াফেসের বংশধরদের মধ্যেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। তার জন্মকাল ছিল হযরত শালেহ (আঃ) এর পরবর্তী ও হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আঃ)-এর পূর্ববর্তী যমানা।
হযরত যুলকারনাইন যে পৃথিবীর এক বিশাল এলাকার একজন সুশাসক, সুবিচারক ও অতি ন্যায় ও ধর্ম পরায়ন বাদশাহ ছিলেন সে বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। তবে অনেকে আবার তাকে নবী বলেও উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে তাদের বহু প্রামাণ এবং দলীয় আছে।
একটি দলীল হল পবিত্র কোরআনে আল্লাহ হযরত শাহ সিকান্দারকে প্রত্যক্ষ সম্বোধন করে কথা বলেছেন। অর্থাৎ তার প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে। অথচ নবী রাসূল ব্যতীত অন্য কারও উপর কখনও আল্লাহ ওহী নাযিল করেননি। তাছাড়া আল্লাহ কোরআন শরীফে অন্যান্য নবীদের যেরুপ প্রশংসা করেছেন তদ্রূপ যুলকারনাইন সম্পর্কেও করেছেন।
দ্বিতীয় প্রামাণ হল হযরত যুলকারনাইন বিশ্বভ্রমণে নেমে অপরাপর পর্যটক কিংবা দিগ্বিজয়ীদের ন্যায় কেবল ভ্রমণ এবং বিজয় অভিযানে লিপ্ত থাকেন নি বরং তার এ বিশ্বভ্রমণের রীতি-নীতি ও কার্যকলাপ ছিল সম্পূর্ণ আলাদা প্রকৃতির।
তিনি যেখানেই গিয়েছেন সেখানকার অধিবাসীদের কাছে সর্বপ্রথম পেশ করেছেন সত্য এবং খাটি দ্বীন। যারা তা গ্রহণ করেছে তাদের সাথে কোনরুপ যুদ্ধ-কলহ কিংবা ঝগড়া-বিবাদ তো কখনো হয়নি বরং পরম মৈত্রী ও সখ্যতা স্থাপন করে সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। এ কেবল দ্বীন প্রাচারকারী নবী-রাসূলদের রীতি।
মুলতঃ হযরত সালেহ (আঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর আগমনের পূর্ব পর্যন্ত যে দীর্ঘ কাল অতিবাহিত হয়েছিল তার প্রথমাংশে মানুষের মধ্যে মোটামুটিভাবে দ্বীনী ভাবধারা বিরাজ করলেও মধ্যম এবং শেষাংশে তা একেবারে তীরহিত হয়ে যায়। এমন কি মানুষ তখন সৃষ্টিকর্তা বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে বলেই স্বীকার করত না।
তারা নিজেদের খেয়াল খুশি অনুসারী ছিল। ধর্মীয় ব্যাপারে নিরাকার মাবুদের ইবাদতের বদলে বিভিন্ন প্রকার দেবদেবীর পূজা অর্চনা চলেছিল। এই অবস্থাটাকে দূর করবার উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ তাআলা হযরত নূহ (আঃ)-এর পুত্র ইয়াফেসের বংশের মধ্যে হযরত ইস্কান্দার যুলকারনাইনকে একাধারে নবুওয়াত ও প্রবল শাসক ক্ষমতার অধিকারী করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন।