অনেককাল আগেকার কথা । এক সমুদ্রের তীরে বাস করতো এক ময়ূর দম্পতী । মনের আনন্দে দু’জনে পুচ্ছ নাচিয়ে ঘুরে বেড়াতো বনে বনে ।ঝর্ণার সেীন্দর্য্ দেখে আর পাখির কাকলি শুনে দিন কাটাতো । দিনের বেলায় বেরোত খাদ্যের সন্ধানে এইভাবে দিন কাটছিল । একদিন ময়ূর ময়ূরীকে বললো চলো, একটু দূরে কোথাও ঘুরে বেড়িয়ে আসি । একই জায়গায় রোজই ঘোরাফেরা –বড় একঘেয়ে লাগছে । নতুন জায়গার গাছপালা , ফুল, পাখি প্রাকৃতিক সেীন্দর্যের বৈচিত্র ভালোই লাগবে ।চলো যাই…
সেই দিনই তারা উড়তে উড়তে চলে গেল একটা সুন্দর দ্বীপে । যে দিকে তাকায় চোখ জুড়েয়ে যায় । গাছে গাছে বাহারী ফুল , থোকা থোকা নানা সুমিষ্ট ফল । আর নিরন্তর নির্ঝর ঝর্ণার সে কি মনোহারি শোভা ! একটা ঝাঁকড়া গাছের ছায়ায় বসে নাম না জানা নানা জাতের মিষ্টি ফল, আর ঝর্ণার নির্মল জল খেয়ে খেয়ে খুশিতে নাচতে লাগলো তারা । সারাদিন বেশ আনন্দ করে কাটিয়ে পড়্ন্ত বিকেলে যখন তারা ঘরে ফিরে চলেছে, এমন সময় সেখানে এক রাজহাঁস এসে হাজির হলো । তার চোখে মুখে আতঙ্ক । ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে এসে বললো-বাঁচাও বাঁচাও আমাকে ।
ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো । ময়ূর এগিয়ে এসে বললো-আমরা তো আছি । কী ব্যাপার কেউ তাড়া করেছে বুঝি? যাই-ই ঘটুক না কেন তোমার কোনো চিন্তা নেই বোন । এখন তুমি আমাদের অতিথি , তোমাকে রক্ষা করার সব দায়-দায়িত্ব আমাদের ।
রাজহাঁস কাঁপতে কাঁপতে বলল-আদমকিন ।
ময়ূর বললে –ভয় নেই , ভগবান রক্ষা করবেন । কিন্তু সমুদ্রের মধ্যে আদমকিন এলো কি করে? চারদিকে জল, আদমকিন তো আর উড়তে পারে না ! সাঁতার কাটতে পারে না । আচ্ছা , তুমি এখানে কতোদিন আছো ?
রাজহাঁস বললো- খুব ছোটবেলা থেকে আমি এই দ্বীপে বাস করছি । এতোদিনের মধ্যে ভয়ের কোনো ব্যাপার হয় নি । দিব্যি সুখে ছিলাম । গত রাতে আমি আমার বাসায় ঘুমিয়ে আছি –একটা স্বপ্ন দেখলাম । একটা আদমকিন এসে আমাকে বলছে, ও হে রাজহাঁস তোমার শরীরটা তো বেশ নাদুস –নুদুস । আমার জিভে জল আসছে । আর খিদেও পেয়েছে বেজায় ।দেখলাম তার চোখ দু,টো ভাটার মতো জ্বলছে।লম্বা লম্বা দাত গুলো দেখে আমার অন্তরাত্না শুকিয়ে গেল।আদ্মকিনরা ভয়ঙ্কর।ওদের গায়ে ভীষণ জোর।আর মগজে ওদের শয়তানি বুদ্ধি।বুনো হাতির সঙ্গে ওরা লড়াই করে।আমি ধড়মড় করে উঠে চোঁ চা দৌড় দিলাম।আদমকিন আমার পেছন পেছন তাড়া করতে লাগল।ছুটতে ছুটতে আবশেষে আমি একটা পাহাড়ের গুহায় এসে লুকিয়ে পড়লাম।তখন আমার হাত পা অবাস হয়ে গেছে।ভয়ে বুক ধপাস ধপাস ক্রছে।সারাদিন না খেয়ে গুহার মধ্যে রইলাম।বাইরে বেরিয়ে যে খাবার দাবার সন্ধান করবো তার সাহস পেলাম না।তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ। কিন্তু গুহার ভিতরে জল কোথায় পাবো?হঠাৎ নজর পড়লো,গুহার এক কনে শুয়ে আছে এক সিংহ আমাকে সে অনেক আগেই দেখেছিল-আমি তাকে এই প্রথম দেখলাম।শুয়ে শুয়ে আমাকে দেখে মৃদু হাসছিল।আমার বুকে ভরসা এল।সে আমাকে আদর করে ডেকে বলল,কি হয়েছে বাছা।এমন ভয়ে জড়সড় হয়ে আছো কেন?এদিকে এসো,বল কি হয়েছে,শুনি।
তার কোথায় আশ্বস্ত হয়ে গুটিগুটি তার দিকে এগিয়ে গেলাম আমি।সিংহ জিজ্ঞাসা করলো তোমার নাম কি?কোন জাতের জানোয়ার তুমি?আমি বলি আমার নাম রাজহংস।এর পর আমি টাকে আমার স্বপ্নের কাহিনি বললাম।সিংহ সব শুনে অবাক হয়ে বললেন-আর্শ্চয ব্যাপার তো দিন কতেক আগে ঠিক আমি এরকম একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম।আমার বাবাকে এব্যাপারে বলতেই তিনি হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন সাবধান,এই আদমকিনগুলো থেকে সাবধান।
সিংহের কথা শুনে আমি শিউরে উঠলাম বললাম তাহলে এখন উপায় আমি তখন সিংহকে তোয়াজ করতে লাগলাম।তুমি এ বনের রাজা।এখানে সামান্য আদমকিন এসে মাস্তানি করবে-তা কি তুমি সহ্য করবে।তুমি যদি একটা হুমকার ছাড়ো তাহলে শুধু আদম কিন কেন,আদম কিনের বাবা পর্যন্ত ভয়ে পালাবে।ঐ শয়তান জানোয়ারটিকে শায়েস্তা করতে পারলে আমাদের মতো ক্ষুদ্র জীবরাও দুহাত তুলে তোমার জয়গান করবে।তুমি পশুরাজ-এ রাজ্যের অধিপতি তোমার রাজেত্বে এত বড় অনাচার তুমি কি করে মেনে নেব?আমরা তোমার একান্ত অনুগত প্রজা।আমার প্রান ধন রক্ষা করার দায়িত্ব তোমার।তুমি এর একটা বিহিত করো সিংহরাজ।না হলে আমি তো যাবই আমার মতো হাজার হাজার জন্তুজানোয়ার ওর শিকার হবে।
সিংহ গর্জন করে উঠে,তুমি ঠিকই বলেছ,রাজহংস।আমার বনে অন্য কেউ এসে দাপট দেখিয়ে যাবে,এ আমি সহ্য করবো না।চল,এখুনি বেটার সাধ মিটিয়ে দিয়ে আসি।
আমার কেমন ভয় করছে হুজুর।ভয় কিসির আমি তো আছি।
গর্জন করতে করতে সিংহ এগিয়ে চলল।
তার পিছনে আমি ভয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে চললাম। খানিক দূরে যেতেই কানে এল প্রচণ্ড শব্দে কে যেন আমাদের দিকে ছুটে আসছে।সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়লাম।একটা ধুলোর মেঘ জেন উড়ে আসছে।কাছে আসতেই দেখলাম বাদামি কালারের ঘোড়ার মুখ থেকে গাঁজলা বেরিয়ে আসছে, গায়ের লোম গুলো খাড়া! সিংহ তাকে দেখেই চিৎকার করে উঠল,এভাবে কোথায় ছুটে চলেছিস,বাদামি ঘোড়া?কোন রকমে নিজের বেগ সামলিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বাদামি ঘোড়া বললে-আমকিনের হাতথেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছি।
ঘোরার কথা শুনে এক ধমক দিয়ে উঠল সিংহ,সারাজিবন শুধু ভয় করে গেলি। তোর মতো একটা জন্তু এত বড় চেহারা,শক্তি ও কম নেই,তোর পায়ের এক লাথিতে কত জোন্তুর মাথার খুলি উড়ে জায়,শেষে ঐ আদম কিনের ভয়ে তুই লেজ তুলে পালাছিস? তোর উচিত ইদুরের মতো গর্তে গিয়ে বাশ করা।ঘোড়ার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠে।কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো।–সবি জানি মহারাজ কিন্তু আদমকিনের যা বুদ্ধি আমি কিছুতেই বুদ্ধিতে তার সঙ্গে পেরে উঠব না।
হাঁস পিছন থেকে বলল আদম কিনের সাথে দেখা হল কোথায়? সেতো অনেক দিন আগে, একদিন জঙ্গলে ঘুরে বেরাচ্ছিলাম।একটা গাছের গুড়ায় দাঁড়িয়ে আছে আদমকিন।আমি অতোটা গ্রাহ্য করিনি।কাছে যেতেই একটা দরি ছুড়ে সোজা আমার গলায় ফাঁস লেগে গেল।অনেক চেষ্টা করে ফাঁস ছাড়াতে পারলাম ন। দুদিন একটা গাছের সঙ্গে আমাকে বেঁধে রেখেদিল আদমকিন।দু,দিন ধরে না খেয়ে আমার আর সোজা হয়ে দাঁড়াবার ক্ষ্মমতা ছিল না।জোর কমে গিয়েছিল। সেই সুযোগে আমার পিঠের উপর চেপে বসে জিন-কাগাম পরিয়ে দিলো আদমকিন।আমিও লাফালাফি শুরু করে দিলাম।সঙ্গে সঙ্গে চাবুক মারতে শুরু করে দিল।সে কি মার! শেষে প্রান বাচাতে শান্ত হতেই মার থামল।মারের ভয়ে আমার আর বেয়াদপি করতে সাহস পাইলাম না।তার পর থেকে আদম কিন আমার পিঠে বসে বন জঙ্গল যে কত ঘুরছে তার ইয়ত্তা নেই।কিছুদিন হল আমি আর আগের মতো ঘুরতে পারছিলাম না।আদম কিন আমাকে এক কলুর কাছে বেঁচে দিল।কলুর বিরাট এক তেলের ঘানি,আমাকে সেই ঘানির সাথে বেঁধে ঘুরাতে শুরু করল।ওসব কাজ কোন দিন করিনি।তাই অন্যদের থেকে বে-হাল হয়ে পড়তাম।তার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হতো মোটা লাঠি দমাদম মার।মার থেকে বাঁচতে ঘুরতেই হত।কয়েক দিনেই ঘাড়ের উপর ঘা হয়ে গেল।পুজ রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল।ঘানি টানি বার শক্তি ছিল না।শেষে কলু আমাকে কসাইয়ের কাছে বেঁচে দিল।শুললাম আমাকে নাকি কেটে ফেলবে।প্রান বাঁচাইতে কশাই কে দিলাম এক লাথি,বেটা দশ হাত দূরে ছটকে পড়ল।আর আমি এই সুযোগে ছুটে পালিয়ে এলাম।
সিংহ লেজ দিয়ে ঘোড়ার গায়ে বার দুই চাপড়ে দিয়ে বললো,-সাব্বাস,টবে এই লাথিটা যদি আগে মারতিস তাহলে তোকে এত কষ্ট পেতে হতো না।তবে আর চিন্তা নেই আমি আজিই,সবকয়টা আদমকিন সাবার করতে বেরিয়েছি। বেটাদের বাড় হয়াছে।আমার এলাকায় ডুকে আমারই প্রজাদের উপর হামলা।সিংহের কথা শেষ না হতেই মনে হল কেযেন হুড়ুম-দিয়ে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে ছুটে যাছে।
সিংহ বললো-এসো তো দেখি কে যায়! খানিক দূরে যেইতে চোখে পড়ল একটি গাধা,একে বারে নাঝাহাল অবস্তায়।চোখ মুখ ঠেলে বেরিয়ে আসছে। গায়ের চামড়া ঝুলে পড়েছে।একসঙ্গে তিনজন দেখেই দাঁড়িয়ে পড়ল।সিংহ হুমকার দিয়ে উঠল,তুইও আদমকিনের ভয়ে ছুটছিস নাকি?কাঁপতে কাঁপতে গাধা বলল-হ্যাঁ, আদমকিন! আদমকিন! গর্জন করে উঠল সিংহ।কোথায় তোর আদমকিন,আমাকে তার কাছে নিয়ে চল।
অতএব সিংহ বনজঙ্গল কাপিয়ে গর্জন করতে করতে এগিয়ে চললো।
তাহারা পেছনে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলে হাঁস গাধা আর ঘোড়া।খানিক দূরে গিয়ে একটা ফাকা জায়গা,সেখানে ফাঁকা জায়গা,গাছপালা কম।যায়গাটা পার না হতেই একটা উট হুড়মুড়িয়ে সকলের ঘাড়ের উপর পড়ে এমন কি! কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে গাধা বলে উঠল,উট ভায়া এ তোমার কি রকম চলা? উট খানিক দম নিয়ে বললো-আমার মতো যদি আদমকিনের পাল্লায় পড়তে তবে বুঝতে চলা কাকে বলে? রাগে সিংহের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠে,তোমাকে আদমকিন ধরেছিল?
শুধু ধরেছিল,আমার নাকে দড়ি বেঁধে পিঠে কাঠ ফেলে আমকে কি অবস্তা করেছে দেখো তো!এত খাটিয়ে দু, বেলা খেতে দিত না। একটু বিশ্রাম নিলেই বলতো শালা কুঁড়ে বাদশা শুধু খায় আর ঘুমাই।উঠ বললো আমার নাকটার দিকে একটু তাকান,হুজুর।আদমকিন ফুটো করে দড়ি বেধে দিয়েছে।সে আমাকে যেখানে খুশি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে বেড়িয়েছে আমার পিঠের দিকে তাকান,ব্যাটা আমার উপর পাথরের চাই চাপিয়ে দিয়েছিল।কেটে ছেঁড়ে এক সা হয়ে গেছে।আর দেখুন আমার পাণ্ডালোর কি দুর্দশা!পাহার পর্বতের দুর্গম পথে পথে আমাকে হাঁটিয়ে হাটিয়ে খোড়া করে ফেলেছে।আর এই শেষ নয়।সে আমাকে একটা কসাই এর কাছে বেঁচে মোটা টাকা মুনাফা লুটেছে।লোকটার লাথি মেরে আমি পালিয়ে এসেছি। সিংহ গর্জে উঠে।কোথায় আদমকিন,তাকে আমি জ্যান্ত গিলে খাব।
এই বলে সে কেশর ফুলিয়ে গর্জন করতে থাকে।উট কে জিজ্ঞাসা তর সঙ্গে সর্বশেষ কোথায় দেখা হয়েছিল?
উট বললো একটু আগেই আমার পিছু ধাওয়া করেছ।মনে হয় এক্ষনি এখানে এসে পড়বে।আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি চলে জাই।সিংহ বলে একটু দাড়াও আমি তোমাকে আমার ভেল্কী দেখাছি।কি করে ব্যাটাকে জব্দ কড়তে হয়। একবার নিজে চোখে দেখে যাও।ওকে আমি তুলে আছাড় মারব। ওর রক্ত মাংস চিবীয়ে খাব।না না ,আমি ওশব আমি দেখতে পারিনা।আপনি আমার যাবার অনুমতি দেন।উট চলে যেতেই একটা থুথুরে বুড়ো এসে হাজির।তার মাথায় একটা বাকস।হাতুড়ি,বাতালি,তুরপণ প্রভিতি নানা রকমের জন্ত্রপাতি। লোকটার কাধে কয়েকটা কাঠের বরগা।
বুড়ো ছুতোর বলে,আপনি জঙ্গলের অধিপতি,মহাবুভাব সম্রাট,আপনার গুনের সিমা নেই।আমি দিনহিন ছুতোর।দিন আনি দিন খাই।
আমাকে ঐশয়তানের হাত থেকে রক্ষা করুন।সিংহ উত্তেজিত কণ্ঠে বলে,কে তোমার অতিষ্ঠ করেছে?আমি তাকে সমুচিত শিক্ষাদেব। কি তোমার নাম আর পরিচয়?
বৃদ্ধ বললো-আমার নাম সূত্তাধর।বনে বনে কাঠ কাটি।তা দিয়ে ঘর বাড়ি আর নানা রকম আসবাপ পত্র বানাই। এই আমার পেশা।আমি এই বনে এসে এক আদমকিনের খপ্পরে পড়েছি।
সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সে আমাকে দিয়ে কাঠ কটায় তার বদলে না দেই খাবার না দেই মাইনে।দিনে দিনে ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলাম।আজ আমি বিদ্রোহ করে বেরিয়ে এসেছি।ঠিক করে ফেলেছি,যে বনে আদমকিন থাকবে,সে বনের ধারে কাছে আমি থাকবো না।সিংহ শুনে দাত কড়মড় করতে থাকে। ওকে আমি ছিড়ে খাব।কোথায় সে?
অপেক্ষা করুন,হু্রবে। এখুনি সে এখানে এসে পড়বে।সে আমার পেছন পেছন আসছে।আমাকে না হলে তো তার চলবে না।আমি ছাড়া কে ওর ঘর বানিয়ে দেব?সুতরাং যে ভাবে হোক,আমাকে আটকিয়ে রাখার চেষ্টা সে করবেই।
হিংহ জিজ্ঞাসা করে,তা এখন মশাইয়ের যাওয়া হচ্চে কোথায়?ছুতোর বললো তা আমি আপনার বাবা উজির চিতা বাঘের কাছে যাব।তিনি আমাকে খবর পাটিয়েছেন,তার জন্য একটা মজবত কামরা বানিয়ে দিতে হবে।আদমকিনের অত্যাচারে নাকি তিনি রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারছেন না।
সেই জন্য আমি এই বরগার কাঠগুলো আর যন্ত্রপাটি নিয়ে ওখানে যাচ্ছি।
সিংহের মনে হিংসা হয়।আমার বাবার উজির চিতা, আমাদের কর্মচারী। রাজার ঘর বানানোর আগে তার ঘর বানাবে-এ হতে পারে না-না তুমি তোমার কাঠ যন্ত্রপাতী সব নামাও।আগে সুন্দর করে আমার জন্য একটা ঘর বানাও।তারপর ওসব পরে হবে।
বৃদ্ধটি মুচকে হেসে বললো-ঠিক আছে হুজুর,যো হুকুম।আপনি রাজা আপনার আদেশ পালন করতে হবে।
বৃদ্ধ উঠে এসে সিংহের মাপ নিল।কতটা লম্বা চওড়া উঁচু-সব যথা যত মেপে নিয়ে কাঠ গুলদিয়ে একটা কামরা বানাল।ঢোকার মুখটা ছাড়া বাকি সব দিকেই ভাল করে এটে দিল বললো,
নিন,হুজুর একবার ঢুকে দেখুন তো ঠিক আছে কি না?
সিংহ বললো-বড্ড খুপকির মতো হলো। ছুতোর বলল, জি হুজুর-।কাঠ গুলোতো আপনার মাপে ছিল না।চিতার মাকরা বানাবো বলে নিয়ে যাছিলাম।আপনি শুললেন না।যাই হোক,এখন কার,মতো চালিয়ে নিন।দু-একদিন বাদে আপনার পছন্দসই একটা বিরাট মহল বানিয়ে দেব।নিন এখন ডুকে দেখুন কেমন লাগে।
মাথা পিট নিচু করে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে সিংহ সেই খাচার ভিতর ঢুকলো।আর তৎক্ষন বুড় দরজা টি বন্ধ করে সারা খাঁচার চারিদিকে বড় বড় পেরেক ঠুকে দিল।সিংহ আর নড়তে পারে না।চার পাশে পেরেকের আল গায়ে ফুটতে থাকে।সিংহ রাগে গর্জন করতে থাকে,আ
এসবের মানে কি?
বৃদ্ধ বলে,কি করবো হুজুর,মালিকের হুকুম,তামিল না করলে যে আমাকে আস্ত রাখবে না।
কে তোমার মালিক?
আদমকিন।
এমন সময় সিংহ দেখতে পেল বুড়োর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেই ছোট জানোয়ারটা-আদমকিন।দেখতে খুব কৎসিত,বেঢপ মোটা,হলদ কুচকুচে চোখ থ্যাবড়া নাক।সারাগায়ে লোময়ে ভরা।কামড়ে কামড়ে একটা আপেল খাছেচ। আর সিংহের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে-কি, গায়ে খুব জোর না? তা খাটাও দেখি কত যোর আছে?ঘটে নাই এক ফোটা বুদ্ধি একে বারে হামবড়াই ভাব। এবার বাছাধন ভগমানের নাম করো,কির মিত্যু তোমার সামনে হাজির।
বৃদ্ধ কে যেন ফিসফিস করে বলতেই কতগুলো খড় বিচালি কুড়িয়ে এনে খাচার উপরে ছড়িয়ে দিল।চমকিটা বের করতেই সিংহ চিৎকার করে উঠে,আমাকে পুড়িয়ে মারবি নাকি? বৃদ্ধ সিংহের কথায় কান না দিয়ে ততক্ষনে নুড়ো জ্বেলে দিয়ছে।দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল খড়বিচালই।কিছুক্ষনের মদ্ধ্যেই সিংহ মারা পড়ল।
উপদেশ : নিজের শক্তি ও ক্ষমতা সম্বন্ধে কথনো হামবড়াই ভাব দেখাতে নেই ।