সামুদ জাতির নবী সালেহ (আঃ) ৪র্থ পর্ব

সামুদ জাতির নবী সালেহ (আঃ)-৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

তারা হত্যা করলো উটনীকে

দেখলেন তো, লোকগুলো কত বড় গাদ্দার। তারাই নবীর কাছে নিদর্শন দাবী করেছিলো। তারাই বলেছিল প্রমান স্বরূপ নিদর্শন দেখাতে পারলে তারা ঈমান আনবে। নবী নিদর্শন দেখালেন। তাঁদের চোখের সামনে এতো বড় ঘটনা ঘটে গেলো। আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত নিদর্শন তাঁদের চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু অঙ্গীকার করেও তারা ঈমান আনলো না। আসলে সকল নবীর সমকালীন লোকেরাই এভাবে নবীর কাছে নিদর্শন দাবী করতো। কিন্তু তা দেখার পর তারা আর ঈমান আনতো না। এ জন্যেই আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) –কে বলে দিয়েছেন, তোমার বিরোধীরা যতই নিদর্শন দাবী করুক, নিদর্শন দেখার পর আর তারা ঈমান আনবে না। ফেরেস্তা এসেও যদি বলে, এমনকি মৃত ব্যক্তিও যদি ঘোষনা দেয়, ইনি আল্লাহর নবী, তবু তারা মানবে না। যাই হোক আসল কথায় আসা যাক।

আল্লাহর উটনী স্বাধীনভাবে চরে বেড়াতে লাগলো। একদিনের সমস্ত পানিই উটনী পান করতো। তাঁদের ক্ষেত-খামারে সে অবাধে বিচরন করতো। এভাবে বেশ কিছুকাল অতিবাহিত হয়। ঈমান না আনলেও এই অলৌকিক উটের ব্যাপারে তাঁদের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছিলো। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও উটনীকে তারা অনেকদিন বরদাশত করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আর ধৈর্য ধরে থাকতে পারলো না। তারা শলা পরামর্শ করলো। সিদ্ধান্ত নিল উটনীকে তারা হত্যা করবে। কিন্তু কে নেবে উটনীকে হত্যা করার দায়িত্ব? এক চরম হতভাগা এগিয়ে এলো। জাতির নেতারা তাঁর উপরে এ দায়িত্ব সপে দিলো। এক চরম ভয়াবহ পরিনতির ভয় তারা করলো না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর উটনীকে তারা হত্যা করলো। এভাবে দ্রুত এগিয়ে এলো তারা নিজেদের করুন পরিনতির দিকে। তারপর কি হলো?

আর মাত্র তিন দিন

উটনী হত্যার খবর পেয়ে, হজরত সালেহ কম্পিত হলেন। কিন্তু আফসোস, তাঁর জাতি বুঝলনা। তাঁর আর কিছুই করার নেই। তিনি দৌড়ে এলেন। তারা বললো- সালেহ, তুমি তো অংগীকার করেছিলে একে হত্যা করলে আমাদের উপর বিরাট বিপথ নেমে আসবে। কোথায় তোমার সেই বিপদ? যদি সত্যি তুমি রাসুল হয়ে থাকো, তবে এনে দেখাও দেখি সেই বিপদ। আল্লাহর নবী সালেহ এবার তাঁদের জানিয়ে দিলেন-

এখন তোমাদের শেষ পরিনতির সময় আর মাত্র তিনদিন বাকী আছে। নিজেদের সুরম্য প্রাসাদগুলোতে বসে এই তিনদিন ভালো করে ভোগ বিলাস করে নাও। এ এক অনিবার্য অংগীকার।”(সূরা ১১, হুদ আয়াত ৬৫)

এবার নবীকে হত্যার ষড়যন্ত্র

উটনীকে হত্যা করার পর এবার সামুদ জাতির নেতারা স্বয়ং হজরত সালেহ (আঃ)-কেই সপরিবারে হত্যা করার ফায়সালা করলো। তারা ভাবলো, সালেহই তো আমাদের পথের আসল কাঁটা। সে-ই তো আমাদের ভোগ বিলাসে বাধা দিচ্ছে। আমাদের জীবন পদ্ধতি বদলে দিতে চাচ্ছে। আমাদের ক্ষমতা হাতছাড়া করতে চাইছে। আমাদের সমালচোনা করছে। জনগণকে আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছে। তাঁর কারনেই তো এখন আমাদের উপর বিপদ আসার আশংকা দেখা দিয়েছে। সুতরাং তাঁর ভবলীলা সাঙ্গ করে দিলেই সব চুকে যায়। সামুদ জাতির নয়টি সম্প্রদায়ের নেতারা বসে শেষ পর্যন্ত ঐ তিন দিনের মধ্যেই নবীকে হত্যা করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। তারা আরো সিদ্ধান্ত নেয়, হত্যার পরে সালেহর অলী-অভিভাবক হিসেবে যিনি তাঁর রক্তমূল্যের দাবীদার হবেন, তাঁকে বলবো, আমরা এ হত্যাকান্ডে জড়িত নই। এ ঘটনা কুরআন মাজীদে এভাবে বর্ণনা করেছে-

“শহরে ছিলো নয়জন দলপতি। তারা দেশকে অন্যায় অনাচারে বিপর্যস্ত করে তুলেছিলো। কোন প্রকার ভালো কাজ তারা করতো না। তারা একে অপরকে বললো- আল্লাহর কসম খেয়ে অংগীকার করো, রাতেই আমরা সালেহ আর তাঁর পরিবারবর্গের উপর আক্রমন চালাবো। তারপর তাঁর অলীকে বলবো, তোমার বংশ ধ্বংস হবার সময় আমরা ওখানে উপস্থিতই ছিলাম না। আমরা সত্য সত্য বলছি।” (সূরা আন নামল ২৭ আয়াত ৪৮-৪৯)

ওদের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মহান আল্লাহ্‌ বলেন- “তারা একটা ষড়যন্ত্র পাকালো আর আমরাও একটা পরিকল্পনা বানালাম। যা তারা টেরই পেলোনা।” (সূরা আন নামল ২৭ আয়াত ৫০)

ধ্বংস হলো সামুদ জাতি

আল্লাহর সে পরিকল্পনাটি কী? তা হলো সামুদ জাতির ধ্বংস। আল্লাহ্‌ বলেন-

“এখন চেয়ে দেখো, তাঁদের ষড়যন্ত্রের পরিনতি কি হলো? আমি তাঁদের ধ্বংস করে দিলাম, সেই সাথে তাঁদের জাতিকেও। ” (সূরা আন নামল ২৭ আয়াত ৫১)

আল্লাহ্‌ সামুদ জাতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিলেন। তাঁদের গর্ব অহংকার ও ভোগ বিলাস সব তলিয়ে গেলো। মুফাসসিরগন তাঁদের ধ্বংসের বিবরন দিতে গিয়ে বলেছেন- হজরত সালেহ যে তাঁদের তিন দিনের সময় বেধে দিলেন, তাতে তাঁদের অন্তরে ভয় ঢুকে গেলো। প্রথম দিন তাঁদের চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিন তাঁদের চেহারা লালবর্ণ হয়ে যায়, আর তৃতীয় দিনে তাঁদের চেহারা হয়ে যায় কালো। অতঃপর তিনদিন শেষ হবার পরপরই রাত্রিবেলা হঠাৎ এক বিকট ধ্বনি এবং সাথে সাথে ভুমিকম্প শুরু হয়ে যায়। বজ্রধ্বনি আর ভুকম্পনে তারা সম্পূর্ণ বিনাস হয়ে গেলো। মহান আল্লাহ্‌ বলেন-

“হঠাৎ বজ্রধ্বনি এসে তাঁদের পাকড়াও করলো। যখন ভোর হলো, তখন দেখা গেলো, তারা নিজেদের ঘর দোরে মরে উপর হয়ে পড়ে রইলো, যেনো এসব ঘরে তারা কোন দিনই বসবাস করেনি।”(সূরা ১১, হুদ আয়াত ৬৭-৬৮)

তাঁদের উন্নত প্রযুক্তির সুরম্য অট্টালিকা সমূহের ধ্বংসাবশেষ আজও তাঁদের অঞ্চলে শিক্ষনীয় হয়ে পড়ে আছে।

সামুদ জাতির নবী সালেহ (আঃ)-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!