সাফা পাহাড়ের উপরে চড়ে আহ্বান

দ্বিতীয় ও তৃতীয় সভা থেকে কোন ফলাফল লাভ না হলেও নবী করীম (সাঃ) নিরাশ না হয়ে মানুষের প্রকাশ্যে আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহ্বান জানাতে থাকেন। এ ধারায়ই একদিন তিনি সাফা পাহাড়ে আরোহন করে অতি জোরে ডাক দিলেন-হে কুরাইশ দল! হে কুরাইশ দল!


লোকেরা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করতে লাগল-কে ডাকছে? কেউ কেউ জবাব দিল-মুহাম্মদ সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে ডাকাডাকি করছেন। সুতরাং সব মানুষ তাঁর আশপাশে সমবেত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগল-আপনার কি হয়েছে? কেন আপনি এমন ডাকাডাকি শুরু করছেন? তিনি বলেন হে লোক সকল! তোমরা বল দেখি? যদি আমি এ সংবাদ দেই যে, এই পাহাড়ের অপরপার্শ্ব থেকে ঘোড়সওয়ার বাহিনী আসছে, তবে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে?


উপস্থিত লোকেরা বলল-হ্যাঁ, অবশ্যই আপনার কথা বিশ্বাস করব। কেননা, আমরা কখনও আপনাকে মিথ্যা বলতে দেখি না। তাদের জবাবে তিনি বলেন, আমি এক কঠিন আযাব সম্পর্কে তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শন করছি। হে কোরাইশ লোকেরা! তোমরা নিজেদেরকে আগুন থেকে বাঁচাও। আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে সক্ষম নই। আমি আহ্বান জানাচ্ছি-তোমরা সাক্ষী দাও- আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল।


এ আহ্বানের পর সমাবেশের মধ্যস্থল থেকে আবদুল ওযযা আবূ লাহাব দাঁড়িয়ে চীৎকার করে বলতে লাগল- তুমি ধ্বংস হও। এজন্যই কি আমাদেরকে ডেকেছ? আবূ লাহাবের এহেন অসহযোগিতামূলক উদ্ধত্যপূর্ণ উক্তিতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) চিন্তায় পড়ে গেলেন। করুণাকামী দৃষ্টিতে পিতৃব্য আবূ তালিবের দিকে তাকাচ্ছিলেন, তাঁর একান্ত আশা, হয়তো চাচা আবূ তালেব তাঁর সাহায্যকারী হন। তা হলেই তিনি লোকদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে পারবেন, দ্বীনে হক তাদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।

আল্লাহ কর্তৃক তাঁর কাছে সমর্পিত আমানত মানুষের কাছে পৌঁছাবেন। কিন্তু আবূ লাহাব তাঁকে সে সুযোগ তো দিলই না, উপরন্তু কঠোর বাক্যবাণ প্রয়োগে সে আরও বেড়ে গেছে। ঠিক সে মুহূর্তেই হযরত জিবরাঈল (আঃ) অবতরণ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আবু লাহাবের আল্লাহ নির্ধারিত পরিণতির কথা শুনান। ওহী নাযিল হল-
আয়াতের অর্থ- আবূ লাহাবের হস্তদ্বয় ভেঙ্গে গেছে এবং সে ধ্বংস হয়েছে। তার ধন সম্পদ কোন কাজে আসেনি এবং তার উপার্জনও নয়; অচিরেই সে শিখাবিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে এবং তার স্ত্রীও, যে কাষ্ঠ বহন করে আনে, তার গলায় একটি রশি হবে খুব পাকানো।


মজলিসে উপস্থিত লোকেরা একে অন্যের সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে চলে যাচ্ছে। কেউ বলছে, আবদুল মুত্তলিবের যুবক নাতীর সাথে আসমানে অবস্থিত সভায় কথাবার্তা হয়। কেউ বলছে-সে আমাদেরকে এমন সত্তার এবাদতের কথা বলছে যাকে আমরা না দেখতে পাচ্ছি আর না তার কোন কথা শুনতে পাচ্ছি। কেউ বলছে, আবদুল মুত্তালিবের যুবক নাতী যে সত্তার সাথে নিজে কথা বলে, তার সাথে আমাদেরকে কেন কথা বলাচ্ছে না? এ ধরনের কথাবার্তা বলতে বলতে লোকজন যার যার গৃহাভিমুখে চলে যাচ্ছিল।

পূর্বের দুটি সভার মত সাফা পাহাড়ে আহূত এ সভাও আবূ লাহাবের নষ্টামির কারণে ভণ্ডুল হয়ে যায়।
সাফা পাহাড়ের এ মজলিস পন্ড হওয়ার পর কিছু দিন এভাবেই কেটে যায়। নবী করীম (সাঃ) অনুসারীদের নিয়ে নির্জনগৃহে অথবা আরকাম ইবনে আবিল আরকামের গৃহে একত্রিত হয়ে আল্লাহর তাআলার নাযিলকৃত আয়াত তিলাওয়াত করে শুনাতেন। বার বার তিলাওয়াত করতেন যাতে নিরক্ষর লোকদের মনোজগতে তা দৃঢ়ভাবে স্থির হয়ে যেত।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।