এ গ্রাম ও গ্রাম থেকে রুবির জন্য বর আসছে কিন্তু যৌতুক ছাড়া কেউ বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না। মোটা অংকের যৌতুক চায় সকলেই। রুবির মা জাহানারা ভিশন চিন্তায় পড়ে গেলেন। কি করে যৌতুকের এত টাকা সংগ্রহ করবে। ছুটাছুটি করতে লাগলেন চারিদিকে। অনেক কষ্টে জাহানারা জমি বন্ধক দিয়ে পাশের গ্রামের এক ধনী লোক থেকে যৌতুকের টাকা নিলেন। কিন্তু শুধু যৌতুকেইতো শেষ নয়, বিয়ের বাকী সব কাজ কি দিয়ে করবে? ডুবে গেল নতুন চিন্তায় দিন দিন বিয়ের তারিখ কাছে এসে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে জাহানারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিল। জমি বন্ধকের টাকা আর ব্যাংক ঋনের টাকার বেশ ধুম ধামের সাথেই রুবি বিয়ের দিল। বর পক্ষ ও বেশ খুশি হল, গরিব হলেও তাদের মন রক্ষা করতে পেরেছে শুধু মনে মনে দিশেহারা হচ্ছে জাহানারা। দু’দিন পর পাওনাদারদের এত টাকা কিভাবে দিবে? আশে পাশের প্রতিবেশীদের থেকে ধার নিয়ে কিস্তি দিতে লাগল। এভাবেই চললো বেশ কিছু দিন। ধীরে ধীরে বিক্রি করতে লাগল ঘরের সব আসবাবপত্র। টিভি, চেয়ার, খাট সহ এক সময় সব কিছু। কিন্তু শেষ হলনা ব্যাংক ঋণ। একদিকে ছেলে সন্তান নিয়ে দিনের পর দিন উপোস অন্য দিকে ঋনের এক মহা ঝামেলা। এমনই এক সময় সেই ধনী লোকটি এল জমি দখল করতে। জাহানারা লোকটির হাত পা ধরে অনেক কান্না কাটি করে এক সপ্তাহের সময় নিল। লোকটি যেতে না যেতে এসে পড়ল ব্যাংকের কর্মকর্তা তাকে জাহানারা কিছুতেই বুঝাতে পারল না।
শেষ বাড়ির হাস, মুরগী সব বিক্রি করে কিস্তি দিল। আজ জাহানারার ঘরটি ছাড়া আর কিছুই নেই। জাহানারা সন্তানদের বুঝানোর মত কোন শব্দ ও খুঁজে পেল না। কি করবে জাহানারা? তার এখন কি করা উচিত? বাড়ীর প্রায় সব প্রতিবেশীর কাছেই তার ঋণ আছে। কাউকে মনের দুঃখ বলতে পারে না, দিশেহারা হয়ে দিক বিদিক ছুটছে মহিলাটি। না কোথাও কিছু মিলে না কারো কাছে কানা কড়িও। দেখতে দেখতে কেটে যায় পুরো সপ্তাহ, কোথায় পাবে ঋণের টাকা ? মুখে খাবার দেওয়ার মত অবস্থাও নেই। এমনই দুঃসময়ে দিনে সহযোগীতার হাত বাড়ানোর জন্য এ পৃথিবীতে কেউ রইল না। বাঁচার নতুন পথ খুঁজে পেল জাহানার নতুন চিন্তুা চেপে ধরল মাথায়, অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বন্ধকের টাকা পরিশোধ করল, কিন্তু দুই ব্যাংক ঋনের মহা ঝামেলা তাকে আটকে দিল গভীর সংকটে । যে ঘরে চুলায় আগুন জ্বলেনা, ঠিক মত পেট চলেনা সেখানে কি করে সম্ভব দুই কিস্তি পরিশোধ করা। সোম ও শনিবার ভোর হওয়ার পূর্বে ব্যাংক কর্মকর্তা এসে হাজির হয়। দূর দূরান্তে আত্মীয়দের কাছ থেকে বিভিন্ন ওসিয়ত দেখিয়ে ঋণ নিয়ে এক সপ্তাহের মত কিস্তি দিল তবুও ঋণ শেষ হয় না। আগামী কিস্তি গুলো দেওয়ার মত আর কোন উপায় নেই। যে দিকে ঋনের জন্য হাতবাড়ায় শূন্য হাতে ফিরতে হয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋনের টাকা না পেয়ে বাড়ীর ভিটা দখল করবে বলে জানিয়ে যায়। তার পর জাহানারা ঘরের সব দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরে প্রবেশ করল। কিন্তু আর ঘর থেকে বের হচ্ছে না, সকাল ঘড়িয়ে সন্ধ্যা যায় তবুও জাহানার কোন সাড়া শব্দ নেই। ঋনের বোঝা আর বইতে না পেরে জাহানার আতœহত্যার পথই বেঁচে নিল। যে জাহানার সারা দিন এদিক ও দিক ছুটাছুটি করতো সে জাহানারা আর কোন দিন কারো কাছে কোন টাকা চাইবে না। দু’চোখ মেলে দেখবে না পৃথিবীর আলো বাতাস।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।