
এ পর্যায়ে তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই আমাদেরই এক নতুন বন্ধু বাংলার দামাল কিশোর,যার কৃতিত্বে সবার বুক ভরে যায়। আর চোখে আসে আনন্দের অশ্রু। ছেলেটির নাম আলী রাকিব। ১৯৯৯ সালের ২২শে এপ্রিল, তখন তার বয়স সবে মাত্র তের বছর পাঁচ মাস। ঐ দিনেই রোদ ঝলমল সকালে জীবনে প্রথমবার বিমানে চড়ে নয়, এক্কেবারে নিজে বিমান চালিয়ে আকাশে উঠেছিল সে।
আমেরিকার ফ্লোরিডার অর্মন্ডবিচ ডোমেস্টিক এয়ারপোর্ট। ছোট্ট রাকীব, গ্রাউন্ডচেকিং শেষে, কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্লিয়ারেন্স পেয়ে রানওয়ের ওপর দিয়ে ৯৯ নট বেগে সা-সা ছুটে চলা সেসনা-১৭২ কে এক ইঞ্চি পরিমাণ থ্রটল টেনে ভূমির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তুলে এনেছিল ঊর্ধ্বপানে। হয়তো তখন তার পেটটা চিনচিন করছিল, রক্তিম গালদুটি ফ্যাকাশে হয়েছিল, চোখ দুটোও হয়েছিল স্থির- আর একটু একটু ভয় লেগেছিল বৈকি। কিন্তু তার পরই দুরন্ত ঈগলের ডানা মেলে ওড়ার অপার আনন্দ। বিক্ষুব্ধ ভয়াল আটলান্টিকের দু’হাজার ফিট ওপর দিয়ে (এর ওপরে ওঠার অনুমতি তার ছিল না)। সে উড়েছিল প্রায় পৌনে দু’ঘন্টা। (ওহ! গা ছমছম করে ওঠার মতো ঘটনা; তাই না?) সাথে সাথে সেই পিচ্চি দস্যি ছেলেটি সৃষ্টি করলো এক নতুন রেকর্ড, সে হলো আটলান্টিকের ওপর দিয়ে ওড়া সর্বকণিষ্ঠ বাংলাদেশী বৈমানিক। এর পরের দু’সপ্তাহের মোট ষাট ঘন্টা ওড়ে, সে নানা করসৎ রপ্ত করে। মনে হয় চিৎকার করে আটলান্টিকের ওপারে খোদ আমেরিকায় পৌঁছে দেই আমাদের বুলন্দ আওয়াজ সাবাস! রাকিব,সাবাস!! মাকে নিয়ে ওরা চার ভাইবোন থাকে আমেরিকায়। বাবা আলীমুল্লাহ কুয়েত এয়ারলাইন্সের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, মামা সেখানেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, বড়ভাই আলীরেজা আমেরিকান এয়ারলাইন্সে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত।
কিশোর বন্ধুরা তোমরা কি ভাবছো এতকিছুর সুবাদেই কি সে পেয়েছিল বর্ণাঢ্য সুযোগ? কিন্তু না, আসল ঘটনা অন্য রকম। কেম্বারল্যান্ড স্কুলের জুনিয়র লেভেল পরীক্ষায় সে কৃতিত্বপূর্ণ জিপি এ ৪.০ পয়েন্ট অর্জন করে। প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষাতেই ৯৪ থেকে ১০০ নম্বর পেলেই কেবল তা অর্জন করা সম্ভব। তার মূল কৃতিত্ব এখানেই, সে এই জিপিএ পয়েন্টের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মার্কসধারী প্রথম বাংলাদেশী। শুধু কি তাই? কাউন্টি বোর্ড অব এডুকেশনের পক্ষ থেকে তাকে দেয়া হয় ন্যাশনাল জুনিয়ার অনার্স সোসাইটির পদক। আরো আছে, আমেরিকার সেরা তিনশ মেধাবী ছাত্রের সাথে ওয়াশিংটন ডিসি সফরের আমন্ত্রণ, এমনকি খোদ হোয়াইট হাউসেও ভ্রমন। কিন্তু রাকিবের জন্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কার ছিল এমব্রেরিডাল এরোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটির ইয়ং ঈগল প্রোগ্রামের আমন্ত্রণটি। এ প্রোগ্রামে প্রতি বছর আমেরিকার স্কুল পর্যায়ের মেধাবী ছাত্রদের ভিতর থেকে সেরা পাঁচজনকে বাছাই করা হয় বিনা খরচায় বিমান চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যে। আমাদের আলী রাকীব হলো, এ বছর সমগ্র আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সেই সেরা পাঁচজনের একজন। আমাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য চলো আমরা সবাই তাকে জানাই বুকভরা ভালবাসা আর অভিনন্দন। রাকিবদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলা রুপগঞ্জ থানার মুড়াপাড়া গ্রামে। ইস ভুমিকাতেই কত্তো কথা হলো, জানি না তোমাদের এত্তো প্যাচাল ভাল লাগে কিনা? নাকি রেগেমেগে, আমার কল্পিত আকৃতি বেচারার প্রতি বারবার চোখ রাঙ্গাও! যাক্ চলো আর দেরি নয়। ঝটপট শুরু করি কিছু কাজের কাজ।