সমাপতন — সঞ্জীব শিকদার

বন্ধুদের মধ্যে পুপলু এর একটা আলাদা খাতির। এমনকি স্কুলের মাষ্টারমশাইরা পর্যন্ত পুপলুকে একটু বাড়তি স্নেহ করেন। অবশ্যই পরীক্ষাতে বরাবর প্রথম স্থান অধিকার করা তার একটা কারণ। এছাড়া ওদের পারিবারিক একটা সুনাম এর কথা কে না জানে। বন্ধুমহলে খাতির এর কারনটা অবশ্য একটু ভিন্ন। সেটা হল পুপলু এর দাদু আর তার গল্প। প্রতি রবিবারে পুপলু এর জনা দশেক বন্ধু ওদের বালিগঞ্জের বাড়িটাতে হাজির হবেই। সেদিন পুপলু র মায়ের নিজের হাতে বানানো সান্ধ্য জলখাবার আর দাদুর গল্পে পৃথিবীটা যেন অনেক রঙে রাঙা হয়ে ওঠে।

পুপলু যখন ক্লাস ওয়ান এ পড়ে, তখন ওর ঠাকুমা গত হলেন। দাদু রিটায়ার করেছেন তার বছর তিনেক আগে। ঠাকুমা চলে যাওয়ায় রাতের শোবার বেলায় গল্প শোনানোর ভারটাও দাদু নিজের কাঁধে তুলে নেন। তাই শূন্য স্থানটা কিছুটা হলেও গল্পে গল্পে ভরে থাকত। এমন দিন কত হয়েছে যেদিন রাতের গল্প স্বপ্নে এসেও হানা দিয়েছে। পাখির পিঠে চড়ে উড়েছে, নদীর ধারে আলাদিনের প্রদীপ কুড়িয়ে পেয়েছে, চিলেকোঠায় লুকোনো কুলুঙ্গিতে সোনার মোহরের বাক্স খুঁজে পেয়েছে, কোল্ড ড্রিঙ্কস এর নদীতে নেমেছে। কোনদিন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মাথার চুল রঙবেরঙের পাতা হয়েছে। সে আরো অনেক কিছু। ওর আঁকার খাতা সেসব কিছু কিছু জানে।

অফিসের কাজে ওর বাবাকে প্রায়শই হিল্লি দিল্লি করতে হয়। বাবাকে তাই একটু কমই কাছে পাওয়া যায়। কিন্তু গরমের ছুটিতে প্রতিবারই কোথাও না কোথাও ঘু্রতে যাওয়াটা হয় সবাই মিলে একসাথে। এবারে ঠিক হয়েছে উত্তরের পাহাড়ে যাওয়া হবে। পথে জল্পাইগুড়িতে কিছুদিন ছোটকাকার বাড়িতে থাকা।

ছোটো শহরের একটা আলাদা আমেজ আছে। সেটা পুপলু আগেও অনুভব করেছে। এবারেও জল্পাইগুড়িতে এসে সেই পুরোনো আমেজটা আবার নিমেষেই জেগে উঠল। কলকাতার প্রতিদিনের বাদুরঝোলা বাস এর ইঁদুরসারি, ধুলো আর ধোঁয়া, সারি সারি সবুজবিহীন লোকালয়, খেলার মাঠ ছেড়ে ঘরেই বিকেল কাটান আর হোমওয়ার্ক এর চাপমুক্ত এই দিনগুলো সহজেই প্রিয় হয়ে ওঠে।

রাতের খাওয়া শেষ হলে দাদু বললেন –

“চলো দাদুভাই। ধু্লোমুক্ত আকাশের নিচে একবার সময় কাটিয়ে আসি। রাতের আকাশের একটা অন্য রূপ এখানে দেখতে পাবে।“

চারিদিক শান্ত। কি ভীষন শান্ত। এত মনোরম আবহাওয়ায় চোখ যেন এমনিতেই জুড়িয়ে আসে। ওই দূরের তারাদের ফিসফিস কথাও যেন শোনা যাবে এত দূর থেকে। আকাশে একফালি চাঁদ, হাস্নুহানার গন্ধ আর অসংখ্য মিটিমিটি তারাদের মাঝে বসে দুজনেই চুপ করে রইল বেশ কিছুক্ষন। দাদু ওকে পাশে এক হাতে আলতো করে জড়িয়ে রেখেছিলেন। দাদু যেন কিছু ভাবছিলেন। আনমনে। পুপলু ও তাই চুপ করেই ছিল। আকাশটা বলছিল আজ চুপটি করে শুধু আমাকে দেখ। পুপলুও দেখছিল। সীমাহীন নীলাভ কালো আকাশ । তাতে ফুটে রয়েছে কিছু বিন্দু বিন্দু আলো।

হঠাৎ দাদুর কথায় যেন তন্দ্রা ভাঙলো।

“কি মনে হচ্ছে দাদুভাই? অপার রহস্য ?”

দাদুর এই আরেক ক্ষমতা। কি করে যেন মন পড়তে পারেন। পুপলু কে তাই আর উত্তর দিতে হলনা। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে চোয়ালটাও যেন আড়ষ্ট হয়ে গেছে । কথা বলতেও যেন ইচ্ছে করছেনা।

“দাদুভাই, রহস্যের থেকে বড় রহস্য আর কিছু নেই। যে এই স্বাদের আস্বাদ নিতে পারে, সেই স্থিতধী। জগতের কোন মায়াই তাকে ছুঁতে পারবেনা”

দাদুর সব কথা যে সব সময় পুপলু পুরোটা বোঝে তা নয়। যথারীতি দাদুও সেটা বোঝেন। তাই একদিন বলেছিলেন “দাদুভাই, যা একবার শুনছ, তার থেকে আর কখনও নিস্তার নেই। জ়েনো চিরদিনের মত সেগুলো তোমায় একটুখানি বদলে দিল।” মা বলেছিল, যখন দাদু থাকবেননা, তখন নাকি সব কথা পুপলুও বুঝতে পারবে। দাদুও তাই সবসময় এভাবে পুপলুর সাথে সাথেই থাকবেন। শুনে শুধু একটা অজানা খারাপ লাগা ছাড়া আর কিছু মর্ম বোঝেনি।

দাদু বলে চল্লেন…

“চোখ বন্ধ করো দাদুভাই। ধীরে ধীরে এই পৃথিবীর মাটি ছেরে ওপরে উঠতে থাকো। যত ওপরে উঠতে থাকবে, তত দেখবে কি অসীম সুন্দরের মাঝে আমাদের বাস।“

ন্যাশনাল জিওগ্রাফি তে দেখা মহাকাশ থেকে পৃথিবীর ছবিটা ভেসে উঠল পুপলুর চোখে। সত্যি। কি অপরুপ সুন্দর একটা রঙ্গীন গোলোক। নীল, সাদা, সবুজ বাদামিতে মেশান একটা উজ্বল গোলোক।

(ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে নেওয়া)
ঠিক এভাবেই কথায় কথায় কখন যেন দাদু গল্প শুরু করে দেন। সাদা চুল, সাদা দাড়ি, সাদা পোশাকে শান্ত চোখের মানুষটিকে তখন যেন মুনি ঋষিদের মত লাগে। তখন আর কারও কোনও কথা বলার শক্তি থাকেনা।

“ওই যে নীল গোলোকটা ভেসে উঠল দাদুভাই, ওতে যা রহস্য আছে, তার থেকে বেশি রহস্য আর কোথাও আছে বলে মানুষের জ্ঞানে এখনও জানা নেই। প্রাণ এর রহস্য শুধু ওতেই পাবে। ওটা একটা জীবন্ত গোলোকধাঁধা। মাথার ওপরের অসীম রহস্যের মাঝে এক খন্ড ঘন রহস্য। অসীম একটা জ্ঞানভান্ডারের প্রয়োগশালা। আমরা মানুষেরা আভিভাবকহীন হয়ে যে বাড়িটা র্রোজ তছনছ করি।”

“একদিন তোমার ই মত মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল, কে আছেন এই অপার রহস্যের পেছনে? কে এসবের সৃষ্টিকর্তা ? সেই ভয়, সম্ভ্রম আর অসহায়তা থেকে মানুষ তাদের ঈশ্বরের খোঁজ শুরু করেছিল। আর তাদের অনেক রকম ঈস্বর তাদেরকে এই সহজ কথা বোঝাতে পারেননি যে নিজেদের লোভের জন্যে তোমরা যুদ্ধ কোরোনা, একে অন্যকে হত্যা কোরোনা, কোটি কোটি মানুষ মেরোনা, বরং দেখ, অনুভব করো, বুঝতে চেষ্টা করো তোমাদের চোখের সামনে কি অকল্পনীয় এক সৃষ্টিসম্ভার। কিন্তু দাদুভাই। যুগে যুগে কিছু মানুষ জন্মান। যাঁরা তাদের সাধনায় আমাদের মানুষদের বেঁচে থাকার আয়ুটা একটু করে বাড়িয়ে দিয়ে যান। আমাদের আরেকটু মানুষ হবার পথে এগিয়ে দিয়ে যান। সবাই যে তা হতে পারি তা নয়। কিন্তু সেই রকমই একজন খনজন্মা মানুষ উচ্চারণ করেছেন “I don’t try to imagine a God; it suffices to stand in awe of the structure of the world, insofar as it allows our inadequate senses to appreciate it” কি নাম জানো দাদুভাই এই মানুষটির ? আলবার্ট আইনস্টাইন।”

আলবার্ট আইনস্টাইন কে কেই বা না চেনে। পুপলু ত তাও ক্লাস ৬ এ পরে। বিখ্যাত TIME Magazine ওনাকে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মানুষ আখ্যা দিয়েছে যে তাও ও দাদুর কাছে আগেই শুনেছিল।

“রহস্যের কথা একবার বলতে শুরু করলে আর থামার উপায় নেই দাদুভাই। রহস্য কোথায় নেই। রহস্য আক্ষরিক অর্থে সর্বত্র। সেই রহস্যের স্বাদ পেতে গেলে চাই নিষ্ঠা , শিক্ষা আর উপযুক্ত মন।”

পরের দিন সকালে ভোর ভোর ওরা সবাই মিলে রওনা হয়ে পরলো দার্জিলিং এর দিকে। বিকেলে মা বাবা কাকিমা সবাই মিলে হোটেলে সেদিনটা গল্প করবে বলে ঠিক করলো। পুপলু আর দাদু মিলে বেরল একটু হেঁটে আসবে বলে। খানিক্ষন ঘোরাঘুরি করে ওরা একটা বেঞ্চে বসে বিশ্রাম করবে বলে ঠিক করল। সেখানেই আলাপ হল প্রমথেশ গাঙ্গুলি এর সাথে।

ভদ্রলোক নাকি এখানেই থাকেন রিটায়ার করার পর থেকে। কর্মসূত্রে মার্কিন মুলুকে ছিলেন ২৫ বছর। কাজ করেছেন NASA এর বিজ্ঞানী হিসেবে। বিয়ে-থা করেননি। পয়সাকড়ি যা রোজগার করেছেন তা খরচ করেও শেষ হবার নয়। শেষ জীবনটা তাই একদম নিজের মত করে কাটাবেন বলে মনস্থ করেছেন। এখানে একটা বাড়ি কিনে নিয়েছেন। সেখানে আছে ওনার পৈতৃক গ্রাম থেকে আসা একটি ছেলে। ওর বাবা নাকি ওনাদের জমিতে এককালে চাষাবাদ করতেন। তাই প্রমথেশ বাবু ফিরে যখন একটি কাজের লোক খুঁজছিলেন তখন মুকুন্দ যেন লটারির টিকিট পেল।

ভারি অদ্ভুত এই ভদ্রলোক। কাছেই বাড়ি হওয়ায় আমন্ত্রন করলেন ওনার বাড়িতে একবার ঘুরে আসতে। গিয়ে ত পুপলুর বিস্ময়ের অন্ত নেই। বাইরে থেকে দেখে আর পাঁচটা বাড়ির সাথে আলাদা করার উপায় নেই। বসার ঘরটা ছিমছাম। দুর্মূল্য কিছু আসবাব ইত্যাদি চোখে পড়লনা। কিন্তু রুচির পরিচয় সর্বত্র ছড়িয়ে। বিস্ময়ের শুরু যখন উনি বললেন –

“চলুন আপনাদের আমার ছোট্ট ল্যাবরেটরিটা একবার দেখিয়ে নিয়ে আসি।”

বাড়ির পেছন দিকটায় একটা ঘরে ঢুকে পুপলু দেখল চারিদিকে অনেক যন্ত্র। কেমিক্যালস এর বোতল কাঁচের আলমারিতে সাজান রয়েছে সারি সারি। কিছু ওভেন মত যন্ত্র রয়েছে। একটা ছোটখাটো ঘর পু্রোটাই কাঁচের। তার মধ্যে কি আছে তা বাইরে থেকে দেখা যায় না কারণ কাঁচটা ঘষা কাঁচ। সেখান থেকে ওরা গেল মাটির নিচে সিঁড়ি চলে যাওয়া একটা ঘরে। ঘরটার আকৃতি বিশাল বড়। পুরো ওপর তলাটার যা floor area তার থেকে বেশ বড় । একটা প্রান্তে একটা বড় কাঠের দরজা। সেই দরজাটা প্রমথেশ বাবু যখন খুললেন তখন দেখা গেল দরজার ওদিকে লোকালয় দেখা যায় না। শুধু পাহাড় আর আকাশ।

কি নেই সেই ঘরটায়। অনেক বৈদ্যুতিক সুইচ, জেনারেটর , বৈদ্যুতিক যন্ত্র। কিছু নাকি বাইরে থেকে আনা। আর কিছু প্রমথেশ বাবুর নিজের বানানো। এছাড়া আর কিছু কম্পিউটার ।

প্রমথেশ বাবুকে দাদুর যার পর নাই পছন্দ হয়েছে। প্রমথেশ বাবুর ও যে দাদুকে ভালো লেগেছে তার প্রমান পাওয়া যায় কারণ উনি নিজেই দাদুর ঠিকানা নিয়ে রাখলেন। আর পুপলুরতো চোখটা এখনও কপাল থেকে নামেনি। হোটেলে ফিরলে সবার তাই পুপলুর মুখ দেখেই জিজ্ঞাসা শুরু হল কি ব্যাপার…কি এমন দেখে ফেলল ওরা হাঁটতে বেরিয়ে। শুনে বাকিরাও চমতকৃত।

প্রমথেশ বাবুর বাড়িতে একটা জিনিস পুপলুর নজরে পরেছিল। বাড়িতে কোন কাগজ-পেন ওর চোখে পড়েনি। আর ওরকম বড় ল্যাবরেটরি থাকা সত্বেও বড়িতে কোন high voltage বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ওনাকে জিজ্ঞেস করায় শুধু বলেছিলেন দুটো জিনিস এর নাকি উন্নততর বিকল্প ব্যবস্থা আছে। কি সেটা খোলসা করে উনি বলেননি। ওরাও আর জিজ্ঞেস করেনি। শুধু এটুকু বুঝেছিল প্রমথেশ বাবু একজন বড় মাপের বিজ্ঞানী । প্রচারের আলোর বাইরে তার নিজের কাজ করছেন।

পরের দিন ভোরবেলা ছোটোকাকার ড্রাইভার হরিদার হর্ন শোনা মাত্রই সবাই টাইগার হিল এ সান রাইজ দেখতে বেরিয়ে পরল। টাইগার হিল এ পৌঁছে দেখল আকাশে সেদিন মেঘ আছে। সান রাইজ দেখা নাও যেতে পারে। সবাই প্রহর গুনছে এইবেলা আজ ব্যর্থ না হয় সুর্য ওঠা দেখার মুহূর্ত । হঠাৎ পুপলু দাদুর হাত ধরে টেনে দেখাল যেদিকে, সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন প্রমথেশ বাবু। দাদুর সাথে পুপলু এগিয়ে গেল সেদিকে, ওদের দেখাদেখি বাকিরাও ওনার সাথে আলাপ করবে বলে এগিয়ে গেল। দাদু বল্লেন,

“যদি আগে জানতাম আপনিও আজ এদিকে আসবেন তাহলে আমাদের সাথে আসতেই অনুরোধ করতাম”

-“ আসলে আসার কোনো পরিকল্পনা আগে থেকে ছিলনা। হঠাৎ একটা প্রয়োজন পরায় চলে আসতে হয়েছে। ”

টাইগার হিলে কি প্রয়োজন থাকতে পারে সেটা পুপলুর মাথায় চিন্তা চলতে শুরু করলেও ও কোনো কারণ খুঁজে পেল না।

যাই হোক, উত্তরবঙ্গ ঘোরা ভালই হয়েছে। তবে সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি এবারের পালায় প্রমথেশ বাবুর সাথে আলাপ।

এর পরের রবিবার বিকেলবেলায় হঠাৎ আবার বিস্ময়। স্বয়ং প্রমথেশ বাবু এসেছেন পুপলুদের বাড়ি। দাদু নিজেই দরজা খুলেছিলেন। প্রমথেশ বাবু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন-

“নমস্কার। এদিকের পালা সাঙ্গ করে এবারে কিছুদিন অন্যদিকে পালাব ভেবেছি। তাই যাওয়ার আগে ভাবলাম একবার পুপলু বাবুকে দেখে যাই। ” – “আসুন আসুন !! কি সৌভাগ্য !!” বলে দাদু প্রমথেশ বাবুর হাত নিজের হাতে নিয়ে ওনাকে বসার ঘরে ঘরে নিয়ে এলেন। পুপলুর মাও এলেন। তিনিও খুব খুশি। সবাইকে গল্প করতে বলে এক্ষুনি আসছি বলে ভেতরের ঘরে গেলন।

কথায় কথায় দাদু জিজ্ঞেশ করলেন…“ আপনার কাজের ব্যাপারে কিন্তু আমাদের জানার আগ্রহ। আপনার ল্যাবরেটরি দেখেছি। কিন্তু কি নিয়ে আপনার কাজকর্ম সে সম্পর্কে আমাদের জানা হয়নি।“

প্রমথেশ বাবু পুপলুর দিকে ফিরে জিগ্গেস করলেন…”পুপলুবাবু, ভিনগ্রহ বাসী কি কেউ আছে? তোমার কি মনে হয় ?”

পুপলু বলল যে হ্যাঁ ওর মনে হয় আছে । এতবড় মহাবিশ্বে থাকতেই পারে মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণী।

এর পর প্রমথেশ বাবু দাদুর দিকে ফিরে বললেন…

“আমার কাজের বিষয় নির্বাচনটা খুবই আকস্মিক। আমি তখন NASA এর রেডিও বিভাগের কর্মচারী। বাইরের জগত থেকে কোনোরকম signal পাওয়া যায় কিনা সেই নিয়ে যন্ত্র সারা সময় কান পেতে আছে। একদিন আকস্মিক ভাবে কম্পিউটার মনিটরে দেখা গেল কিছু বিচিত্র signal পাওয়া যাচ্ছে। আর রোজ দিনের সাথে যা আলাদা। আলাদা বলতে কিন্তু খুব আলাদা নয়। কিন্তু একটু আলাদা। আমার বিভাগের এর HOD ডঃ রিচার্ড মরিওন সিদ্ধান্ত করলেন ওটা মহাকাশে ঘুরে বেরানো কোনো স্যাটেলাইট এর থেকে আসা সিগ্‌ন্যাল।

কিন্তু ব্যাপারটা সেখানেই শেষ নয়। এই ঘটনার ঠিক দুবছর আগে আমার বিভাগের আরেকজন বিজ্ঞানী ডঃ রুকেনস্টাইন হঠাৎ দাবি করলেন তিনি কিছু বিশেষ ধরনের radio pattern পাচ্ছেন এবং সেটা উন্নততর কোনো প্রাণীদের কাছ থেকেই আসছে। কিন্তু এই নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমান বা ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। এই ঘটনার কিছুদিনপরেই আকস্মিক ভাবে রুকেনস্টাইন মারা যান। NASA ও বিবৃতিতে বলে এরকম কোনো ধারনা করার মত কিছু ঘটেনি। যতদূর পর্যন্ত গ্রহগুলি এখনও পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়েছে সেখানে প্রাণ ধারনের উপযুক্ত পরিবেশ কোথাওই পাওয়া যায়নি। তাছারা বিজ্ঞানের এতদিনের ইতিহাসেও কোনোরকম প্রমান পাওয়া যায়নি ভিন গ্রহের প্রানীরা যোগাযোগ করেছে বলে। তাছাড়া কেনই বা করতে যাবে?

এর পর আমিও রিটায়ার করলাম। দেশে ফিরলাম। তিনকূলে ত কেউ নেই। তাছাড়া মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্বও ছিল। তাই নিজেই এবিষয়ে কিছু পড়াশোনা শুরু করি। কিছু কাজকর্ম ও শুরু করি।

আসলে ইতিহাস পড়লে দেখা যায়, যুগে যুগে অনেক বড় বড় লোকেরা এমন অনেক কিছু নস্যাৎ করেছেন যা পরে বাস্তবে করে দেখানো সম্ভব হয়েছে। যেমন কেলভিন সাহেব বলেছিলেন বাতাসের থেকে ভারি কিছু যন্ত্র আকাশে ওড়ানো সম্ভব নয়।

এইসব শেষবেলার পাগলামি আরকি বুঝলে কি পুপলু বাবু ? ” এই বলে প্রমথেশ বাবু তার উত্তর শেষ করলেন।

খানিকক্ষণ গল্পগুজব করে উনি বললেন এবারে উঠবেন। একবার দার্জিলিং হয়ে নাকি এবারে অন্যদিকে পাড়ি লাগাবেন। তাহিতি দ্বীপপুঞ্জ। যাবার আগে পুপলুকে একটা বই উপহার দিয়ে গেলেন। The Impossible Technology. আর দিয়ে বললেন, “তেমন করে ডাকলে পাহাড়ও কিন্তু ঊটের কাছে আসে। মনটাকে সাদা রেখো আর মগজটাকে ধারালো। তাহলেই হবে।”

এর ঠিক চার দিনের মাথায় খবরের কাগজে প্রথম পাতায় সব থেকে ওপরের সংবাদ। দার্জিলিং এর কাছে তাকদাহ তে মানুষেরা দাবি করেছেন গতকাল রাতে একটি উড়ন্ত বস্তু আকাশে কিছুক্ষণ তারা দেখেছেন। সরকারি সূত্রে খবরটা স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই এখনও করা হয়নি।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!