সবুরে মেওয়া ফলে

কোন এক রাজবাড়ী। রাজবাড়ীর অন্দরে চলছে গানের জলসা। কিন্তু গায়করা গানের আসরকে ঠিক জমাতে পারছেন না। ফলে তেমন পুরস্কার আসছে না। ওদিকে আসর না জমলে, গান পছন্দ না হলে পুরস্কার তো দূরের কথা শাস্তি অবধারিত। এখন উপায় কি? গায়কদের মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে, এমাবস্থায় প্রধান গায়ক একটা গান ধরলেন। গানটির মর্মার্থ হল –পাণপণ চেষ্টা করে গেলে অর্থাৎ ধৈর্য ধরে কাজ করে গেলে সাফল্য আসবে। উপদেশমূলক এ গানটি শেষ হলে চারিদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। রাজকন্যা গায়ককে দিলেন তাঁর গলার মূল্যবান হার। রাজপুত্র দিলেন প্রচুর টাকা। অপরদিকে কোটালপুত্র ঘটালেন অন্য কাণ্ড, তিনি তার পিতার মুখে চপেটাঘাত করলেন। আর কোটাল মহাশয় এই পুত্ররত্নকে নিয়ে ধেই ধেই করে নাচতে লাগলেন। এ সমস্ত দুর্ঘটনা দেখে রাজবাড়ির লোকজনের তো চোখ ছানাবড়া। খোদ রাজা মহাশয় গেলেন ক্ষেপে, তিনি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টেনে ঘোষনা দিলেন, প্রকাশ্য রাজদরবারে আজকের কাণ্ড-কারখানার বিচার করা হবে।

বিচার সভা চলছে। রাজকন্যা, রাজপুত্র, কোটালপুত্র, কোটালসহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত। গুরুগম্ভীর কণ্ঠে রাজা রাজকন্যাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি রাজকন্যা, তা ছাড়া অবিবাহিতা, তুমি যে কাণ্ডটি করেছ তার শাস্তি কি হওয়া উচিত তা কি চিন্তা করে দেখেছ? তুমি কি একজন গায়কের গলায় তোমার গলার হার পরিয়ে দিয়ে অপমানের একশেষ করোনি?

রাজকন্যা চোড় হাতে সবিনয়ে বললেন, অভয় দিলেঃ এর রহস্য খুলে বলতে পারি। রাজা অভয় দিয়ে বললেন, বলতে পার। অভয় পেয়ে রাজকন্যা শুরু করলেন, আপনার জানা আছে যে, আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। বিগত যৌবনা না হলেও যায় যায় অবস্থা। অথচ আপনি এখনো আমার বিয়ের কোন ব্যবস্থা করেননি। এ জন্যে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম- আজ রাতেই কারো হাত ধরে আপনার মুখে চুনকালি দিয়ে রাজপুরী থেকে বেরে হয়ে যাব। কিন্তু যখন গায়ক প্রবর তার গানের মধ্যে সবুরে মেওয়া ফলার উপদেশ দিলেন তখন আমার গৃহীত সিদ্ধান্ত ত্যাগ করলাম। ভাবলাম, দেখিই না আর একটু সবুর করে, পিতা হয়ত শিগগিরই পাত্র সন্ধান করবেন। তা ছাড়া যৌবন তো এখনো বিদায় নেয়নি। তাই সন্তুষ্ট করেছি? অনুতপ্ত রাজা তার ভুল স্বীকার করে বললেন, অন্যায় আমারই হয়েছে মা। দ্রুত তোমার বিয়ের ব্যবস্থা হওয়া উচিত।

এবার রাজা রাজপুত্রের দিকে মুখ ঘুরালেন এবং বললেন, কেন তুমি প্রচুর পরিমাণ টাকা গায়ককে উপহার দিলে?

রাজপুত্র বললেন, আপনি জানেন, আমি পরিণত বয়সে এসে পৌঁছেছি। জনগণের খেদমত করার বয়স এটা। অথচ আপনি বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের গুরুভার বয়ে বেড়াচ্ছেন, আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। সে জন্য আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলাম যে, আজ রাতে আপনাকে বন্দী অথবা হত্যা করে ক্ষমতা গ্রহণ করবো। কিন্তু গায়কের উপদেশমূলক গানটি শুনে মনে করলাম, করি না আরেকটু সবুর, হয়ত তাড়াতাড়িই মেওয়া ফলবে। এখন বলুন, গায়ককে উপহার দিয়ে আমি কি কোন অন্যায় করেছি।

রাজা বললেন, না বাবা! তুমি কোন অন্যায় করোনি। ক্ষমতার লোভ আমাকে অন্ধ করে রেখেছিল। তাই ক্ষমতা উপযুক্ত পাত্রের হাতে তুলে না দিয়ে নিজে আঁকড়ে আছি। অন্যায় মূলত আমিই করেছি।

রাজা কোটালপুত্রের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার কি খবর?

কোটালপুত্র সবিনয়ে বললেন, রাজা মহাশয়, আমার পিতা আমাকে লেখাপড়া শেখাননি। ফলে অনেক কিছু থেকে আমি বঞ্চিত হই। যেমন গত রাতে রাজকন্যা ও রাজপুত্র সন্তুষ্ট হয়ে তাকে উপহার দিল। কিন্তু অশিক্ষিত হওয়ার কারণে আমি গানের মর্মার্থ বুঝতে পারিনি। এজন্য গায়ককে উপহারও দিতে পারিনি। আর এই না পারাটাই আমাকে রাজকন্যা ও রাজপুত্রের কাছে ছোট করে দিয়েছে। এ জন্য আমি আমার পিতাকে চপেটাঘাত করেছি। এখন বরুল, আমি কোন অন্যায় করেছি কি না।

সর্বশেষে রাজা কোটালের দিকে তাকালেন, কোটাল জোড় হাতে বললেন, মহারাজ, আমার মূর্খ পুত্র আমাকে যে খুন করেনি বরং শুধুমাত্র চপোঘাত করেই ক্ষান্ত হয়েছে এ জন্যই আমি তাকে কোলে নিয়ে ধেই ধেই করে নেচেছি। এখন দেখুন, যদি এটা কোন অন্যায় হয়ে থাকে, তবে এই বান্দা হাজির। যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি আছি।

এ গল্প থেকে এ শিক্ষাই আমাদের নেয়া উচিত, স্ব-স্ব দায়িত্ব সঠিক সময়ে পালন করা একান্ত প্রয়োজন। আর শিক্ষার্জন ফরজ।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!