
প্রাণপ্রিয় রাসূল আমার। কত কী যে ঘটে গেছে তাঁর জীবনে। কতশত ঘটনা! কতশত বিস্ময়কর বিষয়! কতশত মুজিযা! সে সবের কতটুকুইবা আমরা জানি! অথচ রাসূলের (সা) প্রত্যেকটি ঘটনা কিংবা মুজিযাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। তেমনি একটি মুজিযার বর্ণনা দিয়েছেন ইরবাদ (রা)। তিনি বলেন, আমি আবাসে-প্রবাসে সব সময় রাসূলুল্লাহর (সা) দরজার কাছাকাছি থাকতাম। তাবুক অভিযানের সময় একদিন রাতে কিছুক্ষণের জন্য একটু দূরে যাই। ফিরে এসে দেখি রাসূল (সা) তাঁর সাথে অবস্থানকারীদের নিয়ে রাতের আহার শেষ করেছেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন : এত রাত পর্যন্ত তুমি কোথায় ছিলে? আমি প্রশ্নের জবাব দিলাম। ঠিক সেই সময় জু’আল ইবন সুরাকা ও আবদুল্লাহ ইবন মুগাফফাল আল মুযানী (রা) সেখানে উপস্থিত হলেন। আমরা তিনজনই ছিলাম ক্ষুধার্ত। রাসূলুল্লাহ (সা) উম্মু সালামার (রা) ঘরে গিয়ে আমাদেরকে খেতে দেয়ার মত কিছু খাবার আছে কি না জানতে চাইলেন। সেখানে কিছু পেলেন না। তিনি বিলালকে (রা) ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তার কাছে কোন খাবার আছে কি? বিলাল (রা) চামড়ার পাত্রটি ঝাড়তে শুরু করলেন এবং সেখান থেকে সাতটি খেজুর সংগ্রহ করলেন। রাসূল (সা) খেজুরগুলো একটি থালায় রেখে তার ওপর একটি হাত দিয়ে ‘বিসমিল্লাহ’ বললেন। তারপর রাসূল (সা) আমাদেরকে বললেন : ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তোমরা খাওয়া শুরু কর। আমি চুয়ান্নটি খেজুর খেলাম। আমি গুনে গুনে খাচ্ছিলাম এবং আঁটিগুলো বাম হাতে রাখছিলাম। আমার দু’সঙ্গীও আমার মত করছিলেন। তারা দু’জনই পঞ্চাশটি করে খেজুর খান। আমরা খাবার শেষে হাত গুটিয়ে নিয়ে গুনে দেখি থালায় পূর্বের সেই সাতটি খেজুরই আছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : বিলাল! এগুলো তোমার চামড়ার থলিতে ভরে রাখ। পরদিন আবার একটি থালায় খেজুরগুলো রাখা হলো। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : তোমরা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাও। আমরা পেট ভরে খেলাম। সংখ্যায় আমরা ছিলাম দশজন। আমাদের খাবার পর থালায় আবার সেই সাতটি খেজুরই অবশিষ্ট থাকলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : আমি যদি আমার রবের নিকট লজ্জিত না হতাম তাহলে তোমরা সবাই এ সাতটি খেজুর খেতে খেতেই মদীনায় ফিরে যেতে। যখন তিনি মদীনায় ফিরলেন খেজুরগুলো একটি বালককে দিলেন। সে হাতে করে খেতে খেতে চলে গেল। কী বিস্ময়কর এক মুজিযা! এমনি আরেকটি মুজিযার কথা জানিয়েছেন উরওয়া ইবন রুওয়াইস। তিনি বলেন, ‘ইরবাদ (রা) তখন রাসূলুল্লাহর (সা) অতি বৃদ্ধ সাহাবীদের একজন। তিনি সব সময় মৃত্যু কামনা করতেন এবং দু’আ করতেন এভাবে : “হে আল্লাহ! আমার বয়স বেশি হয়েছে, হাড় দুর্বল হয়ে গেছে, আমাকে আপনার নিকট উঠিয়ে নিন।” একদিন তিনি দামিশকের মসজিদে বসে দু’আ করছেন, এমন সময় একজন সুদর্শন যুবক, যার গায়ে সবুজ পোশাক, এসে বললো : আপনি এ কিভাবে দু’আ করছেন? ইরবাদ (রা) বললেন : ভাতিজা, কিভাবে করবো? যুবক বললো, আপনি বলুন : “হে আল্লাহ, আমার আমলকে সুন্দর করে দিন, আমার আজল তথা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত আমাকে পৌঁছে দিন।” ইরবাদ (রা) জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন! তুমি কে? যুবক বললো : আমি রাতবালিল, যে মু’মিনদের অন্তর থেকে দুঃখ-বেদনা দূর করে দেয়। এরপর মুহূর্তের মধ্যে যুবকটি হাওয়া হয়ে যায়। ইরবাদ (রা) আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলেন না। কী আশ্চর্য এক ব্যাপার! ইরবাদ (রা) রাসূলুল্লাহর (সা) দশটির বেশি হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটি বর্ণনায় তিনি বলেছেনÑ ‘রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন আমাদেরকে প্রাঞ্জল ভাষায় ওয়াজ করলেন। তাতে শ্রোতাদের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো, অন্তর বিগলিত হয়ে গেল। এক ব্যক্তি বললো : ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ তো একটি বিদায়ী ভাষণ। অতএব, আপনি আমাদেরকে কী উপদেশ দিচ্ছেন? রাসূল (সা) বললেন : “আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে এবং নেতার কথা শুনবে ও আনুগত্য করবে, হোক না সে একজন হাবশী দাস। তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা খুব শীঘ্র বহু মতবিরোধ দেখতে পাবে। তোমরা দীনের মধ্যে সকল নতুন উদ্ভাবিত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কারণ, তা হচ্ছে পথভ্রষ্টতা। তোমাদের মধ্যে যে এমন অবস্থার মুখোমুখি হবে, তার কর্তব্য হবে আমার সুন্নাত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত সত্য পথের অনুসারী খলিফাদের সুন্নাত দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা। তোমরা তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরে থাকবে।” রাসূলের (সা) জীবনে যেমন অজস্র মুজিযা ছিলো তেমনি ছিলো তাঁর জীবনে বাস্তবতার কঠিন থেকে কঠিনতর স্তর। রাসূলের (সা) জীবনের প্রতিটি অধ্যয়ই আমাদের জন্য এক অতুলনীয় শিক্ষার বিষয়। যেমন ওপরে বর্ণিত হাদীসটির কথাই ধরা যাক। এই হাদীসটির মর্মার্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরও উচিত রাসূলের (সা) এই হাদীসটি অনুসরণ করা। কারণ সত্যই সকল সময় সমুজ্জ্বল। —-কায়েস মাহমুদ,