শেয়াল ও মুরগি

এক বাগানের একটি খাঁচায় একপাল মুরগিছানা থাকত ওদের মায়ের সঙ্গে। ওরা ছিল বেশ শান্ত-সুবোধ। কেউ কারো সঙ্গে কখনই ঝগড়া করত না। বাগানের কাছে একটি গাছের গুহায় থাকত এক ধূর্ত শেয়াল। মুরগি ও তার বাচ্চাগুলোকে যখনই দেখত, তখনই তার খুব লোভ হত। মনে মনে ভাবত, ইস, যদি ওদেরকে খেতে পারতাম!  একদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাগুলো দেখল, ওদের মা খাচায় নেই। প্রথমে ওরা ভাবল, মা বুঝি ওদের জন্য খাবার আনতে বাইরে গেছে। কিন্তু অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও মুরগি ফিরে না আসায় বাচ্চারা চিন্তিত হয়ে পড়ল। এরপর তারা দল বেঁধে বাইরে বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু বাগানের কোথায় মাকে খুঁজে পেল না। মাকে না পেয়ে কাঁদতে লাগল বাচ্চাগুলো।
ওদের কান্না শুনে রাস্তার পাশের গাছের পাতার নিচে ঘুমন্ত বুড়ো বাদুড়ের ঘুম ভেঙে গেল। সে নিচে তাকিয়ে মুরগির বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বলল : ‘তোমরা যখন ঘুমিয়ে ছিলে তখন ওই শেয়ালটা বোধহয় তোমাদের মাকে ধরে নিয়ে গেছে। কাল শেয়ালটাকে বাগানের চারপাশে ঘুর-ঘুর করতে দেখেছি।’

বাদুরের কাছ থেকে এসব শোনার পর মুরগির বাচ্চারা বুঝতে পারল- শেয়ালই ওদের মাকে ধরে নিয়ে গেছে। তাই তারা ঠিক করল এক্ষুনি শেয়ালের গুহায় হানা দেবে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। সবাই একটা করে লাঠি নিয়ে রওনা হলে শেয়ালের আস্তানার দিকে। পথে এক ভীমরুলের সঙ্গে ওদের দেখা হল। ভীমরুলটি জিজ্ঞেস করল : লাঠিসোটা নিয়ে এত হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছো তোমরা?
মুরগির বড় বাচ্চাটি জবাব দিল : পাঁজি শেয়ালটা আমাদের মাকে ধরে নিয়ে গেছে। আমরা মাকে উদ্ধার করতে যাচ্ছি। তুমি কি আমাদের সঙ্গে যাবে?
ভীমরুল : ‘তোমাদের এ বিপদের দিনে আমি কি দূরে থাকতে পারি? ঠিকাছে চল- শেয়ালটাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে তোমাদের মাকে নিয়ে আসি।’
এরপর সবাই মিলে রওনা হলো শেয়ালের গুহার দিকে। পথে একটি বানমাছও ওদের সঙ্গী হল। ওরা যখন গুহায় পৌঁছুল তখন শেয়ালটি সেখানে ছিল না। ফলে বিনা বাধায় ওরা গুহায় ঢুকল। কিন্তু মুরগিকে সেখানে দেখা গেল না। মাকে না পেয়ে মুরগির বড় বাচ্চাটি বলল :
মুরগির বাচ্চা : শেয়ালের সঙ্গে লড়াই করার ছাড়া মাকে খুঁজে পাব না আমরা। ভাই বানমাছ, তুমি দরজার পেছনে থেকো। আর বোন ভীমরুল, তুমি থাকবে গুহার কোণায়। আর আমরা সবাই বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকব। শেয়াল এলেই ওকে আক্রমণ করব আমরা।
মুরগির বড় বাচ্চার নির্দেশমতো সবাই যার যার জায়গায় অবস্থান নিল। কয়েক মিনিট পর শেয়াল এসে হাজির হলো গাছের কাছে। মুরগির গোশত খাওয়ার কথা ভাবতেই ওর জিভে পানি এসে গেল। গুহার দরজা খুলে ভেতরে পা বাড়াল সে। কিন্তু বানমাছের গায়ে পা পড়তেই পিছলে পড়ে গেল। তারপর যেই উঠে দাঁড়াতে চাইল অমনি ভীমরুল এসে তাকে হুল ফুঁটিয়ে দিতে লাগল সারা গায়ে। এ সময় মুরগিছানারা বেরিয়ে এসে লাঠি দিয়ে জোরে জোরে মারতে লাগল শেয়ালকে।
মার খেয়ে শেয়ালের অবস্থা এমন হল যে, সে ঠিকমতো নড়তেও পারছিল না। সে মিনতি জানিয়ে বলল :
শেয়াল : তোমাদের অনুরোধ করছি, আমাকে আর মেরো না। তোমাদের মা ওইদিকের একটা খাঁচায় আছে।আমি কথা দিচ্ছি এমন কাজ আর কোনোদিন করব না। দয়া করে আমাকে ছেড়ে দাও।
শেয়াল অনেক কাকুতি-মিনতি করলেও কেউ তার কথা বিশ্বাস করল না। সবার মার খেয়ে এক সময় শেয়ালটি মরে গেল। এরপর বাচ্চারা খাঁচা থেকে তাদের মাকে বের করে আনল। শেয়ালের হাত থেকে বেঁচে আসতে পেরে মুরগি খুব খুশি হল। বাচ্চাদের কাজে গর্বে তার বুক ভরে উঠল।
মা আর তার বাচ্চারা বানমাছ ও ভীমরুলকে ধন্যবাদ জানাল ওদের সাহায্যের জন্য। তারপর সবাই খুশি মনে বাড়ি ফিরে গেল। #

দুঃখিত!