শেওরা গাছ-ভুতের গল্প-১ম পর্ব

গল্পের শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

ঐশিক । একজন কলেজ ছাত্র । টিউশনি করে পড়া শোনার খরচ চালায় । বাবা দিন মজুর । সেই জন্যে দিনে ও রাতে অনেকগুলো টিউশনি করতে হয় তাকে । এতে নিজের খরচ চালিয়েও কিছু টাকা সংসারে খরচ করতে পারে সে ।

এদিকে আজ একটা নতুন টিউশনিতে যোগ দেয়ার কথা আছে ও পাড়ার মাতবর বাড়িতে । সময়টা রাতের বেলা । ৯ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত । কাজেই নয়টা বাঁজার ২০ মিনিট আগে নিজের পুরণো জরাজীর্ণ সাইকেলে চেপে রওনা দিল ঐশিক । সারাদিন এত খাটা খাটনির পর এ সময়টা একটু জিরুতো সে ।

কিন্তু এখন থেকে এ সময়টাও বরাদ্ধ হয়ে গেল । কি-ইবা করার আছে ? তার যে টাকার দরকার ! সামনে ফাইনাল পরীক্ষা । বেশ কিছু টাকা খরচ হবে  তাতে । তাই ইচ্ছে না থাকলেও টিউশনিটা নিতে হল ।

সাইকেলটা চলিয়ে অনবরত ছুটে চলছে ঐশিক । মাতবর বাড়ি আর বেশি দূর নয় । ঐ যে বড় শেওরা গাছটা দেখা যাচ্ছে সেখানেই । ওটা বহুকাল আগের গাছ । দশ গ্রামে এর মত এত পুরণো গাছ আর একটাও নেই । তবে গাছটিকে নিয়ে একটা গুজব রয়েছে । সেখানে নাকি মরা মানুষের আত্মারা দল বেঁধে বাস করে ।

যারা নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে অপমৃত্যুর শিকার হয়েছে কেবল তাদের আত্মারাই না-কি থাকে ওখানে । তবে সহজে মানুষের কোন ক্ষতি এরা করেনা । তবুও রাতের বেলা এ পথ দিয়ে যেতে লোকেরা ভয় পায় ।

এইতো গত মাসে মাতবর বাড়ির বছুরে কাজের ছেলেটার লাশ পাওয়া গিয়েছিল গাছের মগডালে বিশ্রীভাবে ঝুঁলা অবস্থায় । যার চোখ দুটো উপড়ানো আর ঘারটা মটকানো ছিল । এ নিয়ে মোট ২০ জন মরল ঐ গাছের ভূতেদের রোষানলে পড়ে ।

বছুরে ছেলেটার কথা মনে হতেই বুকের ভিতরটায় কেমন যেন একটা ধুক ধুকানি আর ফুক ফুকানি শুরু হল ঐশিকের । গলাটা মনে হয় শুকিয়ে গেছে । ঘন ঘন ঢোক গিলছে ও ।

গাছটার কাছাকাছি আসার পর সাইকেলের পেডেলে যেন কিছুতেই পা পরছেনা আর । খালি মনে হচ্ছে কেউ যেন পিছন থেকে জোর করে টেনে ধরেছে সাইকেলটা ।

ভয়ে সারা গা ঘামে ভিজে গেল তার ।

তবুও জোর করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ও । এমন সময় কেউ একজন বলে উঠল , কে রে তুই ? কথাটা শুনে ধপাস করে সাইকেল থেকে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল ও ।

যখন জ্ঞান ফিরল , দেখতে পেল মাতবর সাহেবের ছোট্ট মেয়েটি তার পাশে বসা । কিছুই বুঝতে পারলনা ঐশিক । জিজ্ঞেস করল , আমার কি হয়েছে ? মেয়েটি বলে উঠল , আপনি জ্ঞান হারিয়ে আমাদের শেওরা গাছের তলায় পড়েছিলেন । সেখান থেকে আব্বু আপনাকে ঘরে আনিয়েছেন ।

বেশ ভয় পেয়েছিলেন ! না ? ছোট্ট মেয়েটির কাছে নিজের ভীরুতাকে আড়াল করতে ঐশিক একটু সাহস সঞ্চয় করে জবাব দিল , ভয় ! কিসের ভয় ? কেন ভয় ? আমি ভয় পাইনিতো ! – তাহলে ওভাবে জ্ঞান হারিয়ে পড়েছিলেন কেন ? – আসলে হঠাত্ করে শরীরটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল কি না ! – বেশ ।

আপনি এখন বিশ্রাম নিন । আমি এবার যাই । – সে কি ! আমাকে বাড়ি ফিরতে হবেনা ? – কোনই প্রয়োজন নেই । বাবা আপনাদের বাড়িতে খবর পাঠিয়ে দিয়েছেন , আজ আপনি আমাদের এখানেই থাকবেন । ও হ্যা । মা আপনার জন্য টেবিলে খাবার রেখে দিয়েছেন । এখনি খেয়ে শুয়ে পড়ুন । অনেক রাত হয়েছে ।

মেয়েটি চলে গেলে টেবিলের উপর ঢেকে রাখা খাবারের দিকে একবার তাকাল ঐশিক । এরপর মেয়েটির কথাগুলো মনে করে হেসে উঠল সে ।

বাব্বা ! কত পাকা মেয়েটা ! সবে ক্লাশ ফাইভে পড়ে , আর এখনি এত সুন্দর কথা বলতে পারে ! একে নাকি আবার তাকে পড়াতে হবে ! যাই হোক , আর বেশি দেরি না করে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ল ও ।

গল্পের শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!