শেওরা গাছ–ভুতের গল্প-শেষ পর্ব

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বাড়ির সবাই অঘোরে ঘুমুচ্ছে এখন । ঐশিকও ঘুমুচ্ছে আপন মনে । হঠাত্ একটা চিকন হাসি আর কান্নার সংমিশ্রিত শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেল তার । ঘুম চোখে ঘরিটার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল সময় এখন তিনটা পাঁচ । এরপর যেই কিসের শব্দ হল তা জানার জন্য মাথাটা একটু উঁচু করে তাকাল ।

ওমনি হতভম্ব হয়ে গেল ! একি ! এ কোথায় শুয়ে আছি আমি ! এ যে শেউরা গাছের সেই মগডালটা ! যেখানে দুর্ভাগাদের লাশ হয়ে ঝুলে থাকতে হয় !

কাজেই নিজের দশা আঁচ করতে পেরে যত দোয়া দুরুদ জানা ছিল এক এক করে খই ভাঁজার মত সব আওড়াতে লাগল সে ! কিন্তু কিছুতেই মাথায় আসছেনা , সে এখানে কি করে এল !

এদিকে একটু পরে শোঁ শোঁ শব্দ করে মেকি কান্নার সুর তুলে কতগুলো সাদা ছায়া এগিয়ে আসতে দেখল ঐশিক ।

এই বুঝি এখনি ঘাড় মটকে দেবে তার ।

আর বুঝি শেষ রক্ষা হল না ! এখনি বুঝি দুনিয়ার মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমাতে হবে ! ভাবতেই আবার জ্ঞান হারিয়ে মগডাল থেকে ধপ করে পড়ে গেল সে ।

একটু পরে আবার জ্ঞান ফিরে এলে দেখতে পেল মাতবর সাহেব আর তার স্ত্রী পাশে বসা ।

ঐশিক কিছুই বুঝতে পারলনা এসব কি হচ্ছে তার সাথে । বলে উঠল , আপনারা ? মাতবর সাহেবের বউ জবাব দিল , ভয় পেয়েছ বাবা ? ঐশিক হা করে চেয়ে রইল মুখের দিকে । এর মধ্যে মাতবর সাহেব বলে উঠলেন , ভয়ের কিছু নেই বাবা ! তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমুও । আমরা তোমার পাশেই আছি ।

কথাটা শোনার পর আপনা আপনিই যেন দুচোখের পাতা ঘুমে ভুঁজে গেল ঐশিকের ।

এদিকে ফজরের আযানের সুমধুর সুর কানে আসতেই ঘুম ভেঙে গেল তার । জেগে দেখে বিছানা ছেড়ে মেঝেতে পড়ে আছে সে । সাথে সাথে মনে পড়তে লাগল ঘটনাগুলো ।

আসলে ও এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল । গত রাতে মনে হয় দোয়া দরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে ঘুমানো হয়নি । তাই এমন বাজে স্বপ্ন দেখা হয়েছে । যেদিনই দোয়া পড়তে ভুল হয় , সেদিনই একটা না একটা বাজে স্বপ্ন দেখে ও ।

ফজরের নামায পড়ে নিজের রুমে এসে একটা বই নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেও পড়তে পারল না ঐশিক । মনে পড়ে গেল গ্রামের সেই মাতবর ফ্যামিলির কথা ।

যাদের একমাত্র মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতো সে । সত্যিই খুব খারাপ লাগল তার । এভাবে যে একটা ফ্যামিলি একসাথে নৃশংস ভাবে খুন হবে কেউ কখনো ভাবতে পারেনি । তবুও এটাই বাস্তবতা । অবিশ্বাস করার কোন জোঁ নেই ।

অনেকদিন হয় ঐশিক বাড়ি যায়না । আজ তাই ঠিক করল একবার ঘুরে আসবে । দেখে আসবে চির চেনা সেই শেওরা গাছটিকে । তাহলে হয়তো একটু ভাল লাগবে ওর ।

কিন্তু বাড়ি এসে যা জানতে পারল , তাতে একেবারে নিরাশই হতে হল তাকে । গত কদিন আগে নাকি সরকারি লোকেরা গাছটিকে কেটে দিয়েছে ।

ওখানে নাকি এখন সরকারি রেস্ট হাউজ তৈরি হয়েছে । তাই আর শেওরা গাছটিকে দেখা হলনা তার । মন খারাপ করেই ফিরে আসতে হল শহরে ।

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!