শিং ওয়ালা পেঁচা

কি শিং ওয়ালা পেঁচা নাম শুনে খুব অবাক হচ্ছেন তো? পেঁচার আবার শিং আসবে কোথা থেকে? অবাক হবারই তো কথা। কারণ পেঁচার তো আর শিং থাকে না। তাহলে এমন নাম এলো কোথা থেকে বল তো? বিষয়টি অবশ্য সত্যি নয়, পুরোটাই ভ্রম। পাখিদের যেহেতু শিং নেই, কিছু পালক মিলে এদের মাথায় শিং এর মতো উচুঁ একটি কাঠামো তৈরী করে, এই ধরনের কাঠামোকে “প্লামিকর্ণস” বলে। এর কারণেই এদেরকে দেখলে মনে হয়, এদের বুঝি শিং আছে। স থেকেই এই পেঁচার নাম -গ্রেট হর্নড আউল বা শিং ওয়ালা পেঁচা।

তবে এদের মাথায় পালক গুচ্ছ কেন এরকম হয়ে থাকে বিজ্ঞানীরা এখনও তা বের করতে পারেনি। তারপরও তারা কিছু কারণ খুঁজে বের করেছেন। হতে পারে, এই অন্যরকম চেহারার কারণে এই প্রজাতির পেঁচারা সহজেই তাদের গোত্রের মধ্যে একে অপরকে চিনতে পারে। হতে পারে, তাদের এ শিং আত্মরক্ষার কাজে আসে। গ্রেট হর্নড আউলরা যখন গাছে বসে থাকলে এদেরকে দেখতে অনেকটা গাছের ভাঙ্গা ডালের মতো দেখায়। শিকারি তখন এদের দেখে খানিকটা নিরাশই হয়, গাছের ডাল ভেবে এড়িয়ে যায়। এতে সহজেই এরা রক্ষা পেয়ে যায় শিকারির কবল থেকে।

শিং ওয়ালা পেঁচাদের বৈজ্ঞানিক নাম Bubo virginianus। এ প্রজাতির পেঁচাদের জীবনকাল প্রায় ১৩ বছর হয়ে থাকে। এদের দৈর্ঘ্য ১৮ থেকে ৩৬ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে আর ওজন হয় দুই থেকে আড়াই পাউন্ড। তবে আকারে ছোটখাটো হলে কী হবে? এদের গতি খুব ক্ষিপ্র। মানুষের বাচ্চারা যেখানে ঘণ্টায় ২ মাইল হাঁটতে পারে, সেখানে এরা ঘণ্টায় ৪০ মাইলও হেঁটে যায় অনায়াসেই।

এই শিং ওয়ালা পেঁচাগুলোর বাড়ি কোথায় জানো? এ পেঁচাকে দেখতে হলে তোমাকে উত্তর আমেরিকায় যেতে হবে। সেখানেই এরা সবচেয়ে বেশি বসবাস করে। এছাড়াও এরা বন, মরুভূমি, তুন্দ্রা এলাকা, জলাভূমি, বৃষ্টি প্রবণ এলাকা, শহরতলী, পার্ক ইত্যাদি জায়গাতেও বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে। তবে তুমি যদি উত্তর আমেরিকাতে যাও তাহলে এদের দেখতে পারার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। দেখতে যদি নাও পাও তবুও রাতের বেলা এদের গভীর, মোলায়েম এবং তোতলা ডাক শুনতে পাবে।

এদের ডাকার ধরণটাও অদ্ভুত, হোওও-হ্‌হোওও-হোওও-হোওও। এভাবে ডেকে ওরা ওদের এলাকা বা অস্তিত্ব জানান দেয়। এর বাইরেও নানারকম শব্দে ওরা ডাকতে পারে। যেমন শিস দেয়া, হিসহিস শব্দ করা, চিৎকার করা বা ফিসফিস করে ডাকা কিংবা কান্নার মতো শব্দ করা ইত্যাদি। তুমি কিন্তু পেঁচার ডাক রাতেই বেশি শুনতে পাবে। কারণ এরা নিশাচর প্রাণী। নিশাচর মানে তো জানোই, যারা রাতে সজাগ থাকে, দিনে ঘুমায়।

এই শিং ওয়ালা পেঁচাদের চোখগুলো যেমন বড় বড় তেমনি এদের চোখের মনিটাও বড়। দেখে মনে হবে যেন তারা চোখ পেতে শিকার খুঁজেছে। তবে এরা মানুষের মতো চোখ ঘুরাতে পারে না। তাহলে এরা অন্যদিকে কীভাবে তাকায়? কোনো কিছু দেখতে হলে এরা সম্পূর্ণ মাথা সেই বস্তুর দিকে ঘুরিয়ে ফেলে।

শিং ওয়ালা পেঁচাদের পাখাগুলো বেশ ছোট কিন্তু প্রশস্ত হয়। এজন্য এদের বনের ভিতর চলাচলে বেশ সুবিধা হয়। এদের পালকগুলো এতই নরম আর মোলয়ম হয় যে কোনো শব্দ না করে তারা ঠিক ঠিক শিকারের কাছে চলে যেতে পারে। খপ করে শিকারকে ধরে ফেলার আগ পর্যন্ত শিকার টেরও পায় না যে সে এখনই শিং ওয়ালা পেঁচার খাদ্য হতে যাচ্ছে।

শিং ওয়ালা পেঁচারা মূলত মাংসাশী প্রাণী। খাওয়ার জন্য তারা নানারকম প্রাণী শিকার করে থাকে। ইঁদুর, সাপ থেকে শুরু করে হাঁসও আছে এদের খাদ্য তালিকায়। অন্যান্য পেঁচার মতো এরাও মাঝে মাঝে শিকারকে প্রথমে পুরোটা গিলে ফেলে। এরপর হাড়, পালক সহ যেগুলো ওদের খাবার না সেগুলো উগড়ে ফেলে দেয়।

এই শিকার প্রিয় তীব্র গতির প্রাণীগুলো কিন্তু বাবা মা হিসেবে খুবই যত্নশীল হয়ে থাকে। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় এরা অন্য বড় পাখির পরিত্যক্ত বাসা খুঁজে বের করে এবং যে কোনো মূল্যে এই বাসা রক্ষা করে। বাচ্চা পেঁচা ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই উড়তে পারে। এরপরে শিশুরা নিজেদের মতো করে জীবন তৈরি করে।

হিংসুটি

হিংসুটি

ড্রাই স্কিনে বেইজ মেকআপ💔

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *