শাস্তি– হাফিজ উদ্দীন আহমদ

শতাব্দী জাহিদঊর্মি সারারাত ঘুমাতে পারেনি। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেল একটা মিহি করুণ একটানা শব্দে। বিড়ালের কান্না নাকি? মনে হচ্ছে কোনো বাচ্চা বিড়াল কাঁদছে। রাতে তো সে ২০৩ নাম্বার রুমে দরজা ভালো করেই লাগিয়েছিল। তাহলে কোথা থেকে ঢুকল ওটা? মনে হচ্ছে খাটের তলা থেকেই শব্দটা আসছে। নিশ্চয়ই বিড়াল বাচ্চাটা দরজা লাগানোর আগেই খাটের তলায় লুকিয়ে ছিল। এতক্ষণ একা থাকায় এখন মায়ের জন্য কাঁদছে।
ঊর্মি বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে গেল। তারপর একটু ধাতস্থ হতেই টের পেল কান্না আসলে মানুষের, ঘুমের ঘোরে বেড়ালের মনে হয়েছে। সম্ভবত পাশের কক্ষ থেকেই শব্দটা আসছে।

কিন্তু কে?
কে কাঁদছে ওখানে?
দরজা খুলতেই ভোরের সি্নগ্ধ বাতাস হুটোপুটি খেয়ে আছড়ে পড়ল মুখে। শব্দটা লক্ষ্য করে এগিয়ে গেল সে। হ্যাঁ তার অনুমান ঠিক। ২০২ নাম্বার কক্ষ থেকেই বের হয়ে আসছে আওয়াজটা। একটু ধাক্কা দিতেই খুলে গেল দরজাটা।
বিছানায় উপুড় হয়ে কাঁদছে তিনি্ন। সারা দেহ ফুলে ফুলে উঠছে নদীর ঢেউয়ের মতো কান্নার তালে তালে। যতটা পারে নিঃশব্দে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ও। তবুও একটা গোঙানোর শব্দ বের হচ্ছে। দুচোখ জবাফুলের মতো লাল। চুল অবিন্যস্ত। তার চেয়েও বেশি অবিন্যস্ত শাড়ির অাঁচল। হাতে ধরে আছে একটা চিরকুট।
আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। না না আমি নই দায়ী। দায়ী …. । অ…র্ণ..ব।
_তিনি্ন
একটা ওড়না সিলিং ফ্যানের সাথে আটকানো। সেটা দেখে চমকে উঠলো ঊর্মি। ভাগ্যিস সে জেগে গিয়েছিল। আর এক মুহূর্ত দেরি হলেই হয়তো তার বান্ধবী এতক্ষণে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেত চিরকালের জন্য। বাকি রাত আর নিজের ঘরে গেল না ঊর্মি। তিনি্নর পাশেই শুয়ে শুয়ে রাত কাটাল। তিনি্ন ওকে জড়িয়ে বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়ল।
অর্ণবকে চেনে বৈকি ঊর্মি। তাদের ভার্সিটির লেকচারার। সুদর্শন চেহারা। তিনি্নর পেছনে লেগেছিল বহুদিন ধরে। তিনি্নও আকর্ষণীয় কম নয়। কিন্তু লেখাপড়া ছাড়া সে বোঝে না কিছু। তবে মাঝে মাঝে ভার্সিটির সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে যুক্ত হয়। ভালো আবৃত্তি করে। গানের গলাও মন্দ নয়। সেদিন সে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে গেয়েছিল_
সেই চম্বা নদীর তীরে
দেখা হবে দেখা হবে
যদি ফাগুন আসে ভুবনে
গান গেয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসতেই সে চমকে উঠল একটা শব্দে।
: কনগ্রাটস! খুব সুন্দর গলা আপনার।
শব্দটা অনুসরণ করে গ্রীবা ঘুরিয়ে দেখল পেছনে মাথায় ঝাঁকড়া চুলে এক সৌম্য দর্শন যুবক। উত্তরে কিছু না বলে মৃদু হেসেছিল সে। কিন্তু তারপর যে সংলাপটা শুনতে পেল তার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না_
: ফাগুন তো এসে গেল ম্যাডাম। শুধু তাই নয় দেখাটাও হয়ে গেল।
আর কথা এগুতে দেয়নি তিনি্ন। ভেবেছিল ভার্সিটির কোনো হ্যাংলা ছেলে হবে। অ-মা! দুদিন পরে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের ক্লাসে যেতেই চমকে উঠল সে। সেই ছেলেই ক্লাস নিচ্ছে। পরে জেনেছিল তার নাম অর্ণব। এ বিভাগের প্রভাষক সে। অর্ণব তার দিকে তাকিয়ে একটা অর্থপূর্ণ হাসল। কিন্তু সেটা দেখে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল তিনি্ন।
সেই শুরু।
ক’দিনের মধ্যেই সে লক্ষ্য করল অর্ণব সর্বত্র তাকে অনুসরণ করছে। একদিন লাইব্রেরি ওয়ার্ক করতে গিয়ে একটা খাতা ফেলে এসেছিল। খুব গুরুত্বপূর্ণ ওটা নয়। রাফ খাতা। তাই যখন টের পেল অন্য একটা ক্লাস করার সময় তখন আর লাইব্রেরিতে ফেরত যাওয়ার তাগাদা সে অনুভব করেনি। ভেবেছে পরদিনই তো আবার যাবে। যদি পেয়ে যাই ভালো। না পেলে কুছ পরওয়া নেহি। বিকালে হলে ফেরার জন্য একটু আগেই মেয়েদের কমনরুম থেকে বের হয়েছিল।
ও মা!
দেখে সেই খাতা হাতে অর্ণব কখন থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ওকে ফেরত দেয়ার জন্য।
: এটা আপনার হাতে কেন?
বলে এক ঝটকায় খাতাটা টেনে নিয়েছিল সে ধন্যবাদ দেয়ার পরিবর্তে। উত্তরে আমতা আমতা করেছিল অর্ণব। কিন্তু তা দেখার জন্য সে দাঁড়ায়নি। ইচ্ছা করেই সে আবার কমনরুমে ঢুকে গিয়েছিল। অপেক্ষা করেছিল যখন আপদটা ফেরত যাবে তখন সে বের হবে। তারপর আরো একটা ঘটনা ঘটল জীবনে।
সেদিন তার বিশতম জন্মদিন। বাসায়ই সে বরাবরের মতো ঘরোয়াভাবে তা পালন করছিল। মা প্রতিবারের মতো ঘন দুধের পায়েশ রান্না করেছিলেন। তিনি্নর প্রিয় খাবার সেটা মা জানতেন। কেক কাটার কোনো ঘটা ছিল না। কিন্তু হঠাৎ দরজায় কলিংবেলের শব্দে সচকিত হয়ে উঠেছিল সে। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে এক তরুণ এসে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
: ম্যাডাম আপনার জন্য গিফট আছে।
বলল সে। সঙ্গে সঙ্গে ঢাউস আকারের একটা ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ কার্ড গুঁজে দিল হাতে। তারপর গুনে গুনে গোলাপফুলের বিশটা তোড়া নামিয়ে আনল তাকে বহন করে আনা গাড়ি থেকে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল সে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার কাছে প্রাপ্তি স্বীকারের সাক্ষরটা নিয়ে চলে গেল লোকটা। মুহূর্তে এতগুলো গোলাপের সুবাসে কেমন মাদকতাময় পরিবেশের সৃষ্টি হলো। আবেশে আপ্লুত হলো তিনি্ন। কিন্তু পরমুহূর্তে সে নিজেকে সামলে নিল। কার্ডটার নিচে লেখা অর্ণব। এ কেমন বেহায়াপনা? তাকে কোনোদিন দাওয়াত দেয়া দূরের কথা নিজের জন্ম তারিখটাও জানায়নি। কী করে জানল সে আজ তার জন্মদিন? নিশ্চয়ই ওই বদজ্জাতটা অফিস থেকে তা জেনে নিয়েছে। একজন শিক্ষক কোনো স্টুডেন্টের ফাইল দেখতে চাইলে অফিস হয়তো না করতে পারেনি। কিন্তু না আর তাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। পরদিন সে ডিপার্টমেন্টের হেডকে জানিয়ে দিল পথেঘাটে তার পেছনে লেগে থাকা আর বেলেল্লাপনায় তার নিদারুণ বিব্রত হওয়ার কথা।
মনে হলো ওষুধ ধরেছে। কদিন আর দেখা নেই। এমনকি ক্লাস নিতেও আসে না। অন্য একজন টিচার এসে পড়িয়ে যায়। একটু কৌতূহলি হয়ে খোঁজ নিয়েই জানতে পারল কোনো বিশেষ কারণে তাকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়েছে। কারণটা আর কেউ না জানুক সে ঠিকই বুঝে গেল। মনে মনে খুশিও হলো। কিন্তু দুদিন ফুরফুরে থাকার পরই এলো একটি সংবাদ। এবার সত্যি সত্যি বিচলিত হয়ে পড়ল সে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে পড়ে আছে অর্ণব। একসঙ্গে অনেকগুলো সস্নিপিং পিল খেয়েছে সে। ভাগ্যিস ব্যাচেলরস ডরমেটরির রুমমেটরা দেখে ফেলেছিল, তাই তারা তাড়াতাড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সাথে সাথে তাকে স্টোমাক-ওয়াশ দেয়া হয়েছে। তার মাথার পাশে পড়েছিল একটা চিরকুট :
তিনি্ন,
তোমাকে না পেলে আমার এ জীবনের কোনো প্রয়োজন নেই।
_অর্ণব।
এই প্রথম বাঁধভাঙা চাপা কান্নায় ভেঙে পড়ল তিনি্ন। খবরটা পাওয়ামাত্রই পাগলের মতো ছুটে গিয়েছিল তার শয্যাপাশে। জ্ঞান ফিরে আসা অর্ণবের বুকে পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে।
: আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আর দশটা ছেবলা ছেলের মতো ভেবে ভুল করেছি আপনাকে।
: আপনি নয়, তুমি…
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই বাতাসে উড়ছিল তারা। ওয়ান্ডার ল্যান্ড, নন্দন পার্ক, বসুন্ধরা কোথায় যায়নি তারা। তবে বারিধারায় তিনি্নদের নির্মিয়মান বাড়িতেই আড্ডাটা জমতো ভালো। দারোয়ানকে দিয়ে দোকান থেকে খাবার আনিয়ে নিত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিত গল্প আর কথার ফুলঝুরিতে। সে সময় হোস্টেল ছেড়ে মাঝে মাঝে বাড়িতে থাকত তিনি্ন। রাতে দেরি করে বাড়িতে এলে একটা কৈফিয়ত দাঁড় করা তো_
: মা, বান্ধবীর সাথে কনসাল্ট করে পড়তে গিয়েছিলাম তার বাসায়। সেখানেই খেয়ে এসেছি।
মেয়ে পড়ালেখায় সিরিয়াস হয়েছে দেখে খুশি হতেন মা। তারপর মুষলধারা বৃষ্টিতে সেদিন কী ঘটেছিল বলতে পারবে না তিনি্ন। দারোয়ানকে বাইরে পাঠিয়ে অর্ণব তার জাদুর কাঠির মতো আঙুল গুলিয়ে অবশ করে দিয়েছিল তার শরীর। আর দেহটা বেজে উঠেছিল গিটারের অপূর্ব ছন্দে। দেহ যে এরকম কথা বলে ওঠে তা তিনি্ন জানত না। তবুও সে বিস্তর আপত্তি করেছিল। কিন্তু অর্ণবের প্রবল আকর্ষণে তা তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ল_
: তুমি এত ব্যাকডেটেড কেন?
দুদিন পরই তো বিয়ে করছি আমরা।
এরপর কেমন করে যে এক অপূর্ব আচ্ছন্নতার ঘোরে তার দেহ সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল_ তলিয়ে গিয়েছিল সব প্রতিবন্ধকতা তা সে নিজেই জানে না। যখন ঘোর কেটে গেল তখন সে বিপর্যস্ত। আবারো বারিধারায় মিশতে এসেছিল অর্ণব। কিন্তু এবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তিনি্ন।
: কবে বিয়ে করবে আমাকে?
বিয়ের আগে আমার এসব একদম ভালো লাগে না।
: বিয়ে?
যেন আকাশ থেকে পড়ে অর্ণব।
: বিয়ে করব কেন?
: তবে এতদিন পিছু লেগেছিলে কেন? কেন এরকম করলে আমার সাথে?
: তোমাকে ভালো লেগেছিল তাই।
নির্বিকারভাবে উত্তর দিল অর্ণব।
: কখনো তো বলিনি বিয়ে করব!
তারপর যোগ করে।
: তাহলে যে সস্নিপিং পিল খেয়েছিলে?
: একটা দুটা পিল খেয়েছি মাত্র, তাও বন্ধুদের পরামর্শে তোমাকে বাগিয়ে আনতে। বাকিটা ছিল অভিনয়।
: শয়তান! শয়তান!
চেঁচিয়ে উঠল তিনি্ন।
: দ্যাখো চেঁচিও না। চেঁচালে পাড়ার লোক সব জেনে যাবে। তুমিই মুখ দেখাতে পারবে না।
তারপর একটু দম নিয়ে বলল_
: শয়তানির কী দেখলে? যখন আমি তোমার সাথে মিলনের দৃশ্যটা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেব তখন বুঝবে। আমার মোবাইল দিয়ে সেটা ভিডিও করা আছে।
হঠাৎ কথা বলার সব শক্তি হারিয়ে ফেলল তিনি্ন। এর আগে শুনেছিল বটে অর্ণব ভালোবাসার জাল ফেলে বেশ কিছু মেয়েদের সর্বনাশ করেছে। কিন্তু সে বিশ্বাস করেনি। সে ভেবেছিল এটা হিংসুটে বান্ধবীদের জেলাসি। অনন্যোপায় হয়ে সে ডুকরে উঠল।
: দোহাই এরকম কাজ করো না তুমি।
: কথা দিতে পারি যদি তুমি আগের মতো আবার মেলেমেশা কর।
লজ্জা, ঘৃণা, বেদনায় নীল হয়ে গেল তিনি্ন। অনেকক্ষণ কথা ফুটল না মুখে। তারপর অনেক কষ্টে সে উচ্চারণ করল_
: আজ নয় লক্ষ্মীটি।
তারপর মিথ্যা করে বলল।
: আজ আমার শরীর খারাপ। আমি তোমাকে দিনক্ষণ জানাব পরে…
কোনো রকমে বাঘের থাবা থেকে নিজেকে রক্ষা করল তিনি্ন।
: শুধু শুধুই তুমি এর আগের দিনগুলো নষ্ট করেছ।
বলে একটা অর্থপূর্ণ বক্র হাসি হাসল অর্ণব।
: স্যার আজ ছিল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।
আবারো বারিধারায় এসেছিল সে। দারোয়ানকে অন্য কাজে বাইরে পাঠিয়ে রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হতেই …
ডুকরে কেঁদে উঠল তিনি্ন।
ইউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. জাহিদ মন্ত্রমুগ্ধের মতো কথা শুনছিল এতক্ষণ। আজ তার ও-টি ডে। সকাল ৮টার আগেই তাই হাসপাতালে চলে এসেছে সে। সিএ ডা. হারুনের অনুরোধে অস্ত্রোপচার কক্ষের ঢোকার আগেই একটা রোগী এসেছে শুনে রোগী ও স্বজনদের সাথে কথা বলছিল সে চেম্বারে।
: আপনি ওভাবে ভেঙে পড়লে হিস্ট্রি নেব কী করে?
: স্যার, ও ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেই …
আবারো থেমে পড়ল তিনি্ন।
: হ্যাঁ, বলুন…
সাগ্রহে জানতে চায় জাহিদ।
: আমি লুকিয়ে ধারালো বেস্নড দিয়ে তার পেনিস কেটে ফেলেছি।
: ও, মাই গড!
: এছাড়া আমার উপায় ছিল না স্যার। রোজ আমাকে বস্ন্যাকমেইল করছিল…
: তা আমার কাছে এসেছেন কেন?
একটু বিরক্ত হয় জাহিদ।
: ও তো মরতেই চেয়েছিল স্যার। কিন্তু আমিই আপনার কাছে নিয়ে এসেছি ওকে। আমি তার বান্ধবী আপনার অনেক নাম শুনেছি।
এতক্ষণে কথা বলে ঊর্মি।
: যখন তার অগোচরে কাটতে উদ্যত হলাম তখন হঠাৎ সে দেখে ফেলে…
কাঁদতে কাঁদতে তিনি্ন আবার শুরু করে বর্ণনা।
: চেঁচিয়ে উঠল : এই আমি তোকে বিয়ে করব… বিয়ে করব… কাটিস না। কিন্তু মুহূর্ত ব্যয় না করে ততক্ষণে আমি কেটে ফেলেছি। তারপর পোশাক ঠিক করে কাটা অংশটা নিয়েই গটগট করে বের হয়ে এসেছিলাম। হাত থেকে ফেলারও সুযোগ পাইনি। কিন্তু এখন কী করব স্যার?
জাহিদ সে কথার কোনো উত্তর দিল না। তাকে নির্বিকার দেখে আবারো ফুঁপিয়ে উঠল তিনি্ন।
: আমি তো ভালোবেসেছিলাম স্যার। আমার ভালোবাসায় কোনো খুঁত ছিল না। আমি মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম তাকে। সে আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে।
তারপর একটু দম নিয়ে বলল_
: যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। এটা কী আবার জোড়া লাগিয়ে দেয়া যায় স্যার?
: জোড়া?
চেয়ার ছেড়ে প্রায় লাফিয়ে উঠল জাহিদ।
কিন্তু ততক্ষণে তিনি্ন পলিথিনের প্যাকেট খুলে যে জিনিসটা বের করে ফেলেছে তা দেখে জাহিদের মতো দক্ষ সার্জনও শিউরে উঠল। রক্তাক্ত সেই বিশেষ অঙ্গটা। তারপরও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে সে উচ্চারণ করল_
: আশ্চর্য! নিজের হাতেই কেটেছেন আবার জোড়া দিতে চাইছেন কেন?
: আমার উপায় নেই স্যার…। আমি যে প্রেগন্যান্ট। টার্মিনেশন করতেও ভয়… আর ভালোবাসার সন্তানকে কি কেউ অ্যাবরশন করে?
: এটাকে কী আপনি ভালোবাসা বলতে চান?
এতক্ষণে মুখ খোলে জাহিদ।
: হ্যাঁ, স্যার। সে অভিনয় করেছিল। আমি তো কোনো অভিনয় করিনি। আমি তো শুধু তাকেই চেয়েছিলাম। কাউকে ভালোবাসা কি অন্যায়।
তিনি্নর কথাগুলো ঘরের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে গম গম করতে থাকে। জাহিদ কোনো উত্তর দেয় না। জাহিদকে নির্বিকার দেখে তিনি্ন আবারো আবেদন করে_
: ও তো এখন বিয়েও করতে রাজি। এতবড় শাস্তি দেয়ার পর আমার মন থেকে সব ক্রোধ মিটে গেছে এখন। আমার অনাগত সন্তানের সামাজিক পরিচয়ের দিকে তাকিয়ে একটু দয়া করুন স্যার।
: কখন ঘটেছিল ঘটনাটা?
অনেকক্ষণ চুপ থেকে নিতান্ত নির্লিপ্তের মতো জাহিদ জানতে চায়।
: গত রাত ১০টায়।
উত্তরটা উর্মি দেয়। তারপর নিজেই অনুরোধ করে_
: আমার বান্ধবী তিনি্ন এতকিছুর পরও মন থেকে কিছুতেই ওকে মুছে ফেলতে পারছে না। হতভাগিটার জন্য দুঃখে বুক ফেটে যায় আমার। স্যার প্লিজ, দেখুন না একবার চেষ্টা করে।
: চেষ্টা? চেষ্টা করব কী করে?
: এত নিষ্ঠুর হবেন না স্যার।
নিষ্ঠুর হওয়ার ব্যাপার নয়। এখন বাজে সকাল সাড়ে ৮টা। তার মানে সাড়ে ১০ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। ৬ ঘণ্টা পার হয়ে গেলে যে কোনো কাটা অঙ্গের কোষগুলো রক্ত প্রবাহের অভাবে মরে যায়। তা আর জোড়া লাগে না। আই অ্যাম সরি।
কথাটা বলেই দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে গটগট করে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পড়ল জাহিদ।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!