শালুকের দৈত্য

বিকেলবেলা। বাগানে মাটি খুঁড়ছে শালুক। ছোট্ট শাবলটা দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গর্ত করছে ও। হঠাৎ ঠন করে একটা শব্দ। কিসের শব্দ? শালুক সাবধানে শাবল চালায়। কিছুটা খুঁড়তেই একটা ছোট্ট কাচের বোতল বেরিয়ে এলো। বোতলটা নেড়েচেড়ে দেখে শালুক। বোতলের গায়ে লেগে থাকা কাদা মাটি সরিয়ে ভেতরে তাকায়। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ভেতরটা জমাট অন্ধকার। ধুৎ! বিরক্ত হয়ে বোতলটা দূরে ছুড়ে মারে শালুক। বোতল গিয়ে পড়ল বাগানের কোণে পাঁজা করে রাখা ইটের ঢিবিতে। পড়েই খুলে গেল মুখের ছিপিটা। আর সেই খোলা মুখ দিয়ে কেমন অদ্ভুত একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলি বেরিয়ে এলো।
ক্রমে কুণ্ডলিটা একটা বুড়োমতো মানুষ হয়ে গেল। বুড়োর চুল-দাড়ি সব পেকে সাদা। দাঁতগুলোও নড়বড়ে। শালুক ঠিক বুঝতে পারছে না – হচ্ছেটা কী! ঠিক তখনই বুড়ো লোকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে শালুকের সামনে এলো। অপরাধীর মতো কাঁপা গলায় বলল, ‘আমি এই বোতলের দৈত্য। যাঁর কাছে এই বোতল থাকবে সেই আমার মালিক। তাঁর সেবা করাই আমার কাজ। বলুন মালিক, আপনার জন্য কী করতে পারি?’ শালুক তো অবাক। আলাদিনের চেরাগের দৈত্যের কথা শুনেছে। নিজেই যে অমন একটা দৈত্য পেয়ে যাবে ভাবেনি কখনো। দৈত্য তখনো সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে শালুকের হুকুমের জন্য। শালুক বলল, ‘যাও তো, আমার জন্য একটা আইসক্রিম নিয়ে এসো’। দৈত্য মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, ‘মাফ করবেন মালিক। আইসক্রিম কোথায় পাওয়া যায় আমি জানি না’। শালুক আবারও অবাক হয়। এমন দৈত্যের কথা তো শোনেনি কোনো দিন। তারপর বলল, ‘আচ্ছা যাও, আইসক্রিম লাগবে না। তুমি আমার জন্য একটা লাল বেলুন নিয়ে এসো।’ দৈত্য আবারও মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, ‘মাফ করবেন মালিক। বেলুন কোথায় পাওয়া যায় তাও জানি না।’ শালুক এবার বিরক্ত হলো। আচ্ছা তুমি কেমন দৈত্য? কিচ্ছু জানো না। দৈত্য বলল, ‘মালিক, ২০ হাজার বছর ধরে আমি এই বোতলের ভেতর ছিলাম। তাই কোথায় কী আছে কিছুই জানি না। তা ছাড়া এত দিন ধরে কিচ্ছু খাইনি। শরীর খুব দুর্বল। দেখছেন না কেমন বুড়ো আর রোগা হয়ে গেছি।’
দৈত্যের কথা শুনে শালুকের মায়া হলো। বলল, ‘আচ্ছা যাও, তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না। শুধু বলো, আমার সঙ্গে খেলতে পারবে তো?’ দৈত্য মাথা নাড়ে। হ্যাঁ মালিক, পারব। খেলতে আমার খুব ভালো লাগে। শালুকদের বাসায় খেয়েদেয়ে আর বিশ্রাম করে দৈত্য বেশ সবল হয়ে উঠেছে। এখন সে রোজ বিকেলে শালুকের সঙ্গে খেলে। সকালে শালুকের সঙ্গে স্কুলে যায়। শালুকের সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে। শালুকের বন্ধুদের সঙ্গেও দৈত্যের বেশ ভাব হয়ে গেছে। টিফিন পিরিয়ডে ওরা সবাই মিলে দৈত্যের সঙ্গে খেলে। কেউ কেউ আবার ওর কাঁধে চড়ে ঘুরে বেড়ায়। তখন দৈত্য মনের আনন্দে গুন গুন করে গান ধরে। প্রথম দিন দৈত্যকে ক্লাসে দেখে শালুকদের গণিত মিস খুব রাগ করেছিলেন। কিন্তু যখন দেখল ক্লাসে খুব শান্ত হয়ে থাকে দৈত্য, তখন আর কিছু বললেন না। এখন তো মিসও দৈত্যের সঙ্গে গল্প করেন। একদিন অঙ্ক মিস বড় ম্যাডামকে বলে দৈত্যকে শালুকদের ক্লাসে ভর্তি করে দিলেন।
অল্প দিনেই দৈত্য খুব মনোযোগী ছাত্র হয়ে ওঠে। যদিও প্রায়ই পড়া ভুলে যায়। তবে ক্লাসের কাজে ফাঁকি দেয় না। তাই মিস বলেছেন, সামনের মাস থেকে ওকে ক্লাস ক্যাপ্টেন করে দেবেন। শুনে দৈত্যের সেকি আনন্দ! স্কুল ছুটির পর শালুক আর দৈত্য দুজন একসঙ্গে বাসায় ফেরে। ফেরার পথে রোজ একটা করে আইসক্রিম খায় শালুক। কিন্তু এখন ওকে দুটো করে আইসক্রিম কিনতে হয়। একটা নিজের জন্য, আরেকটা দৈত্যের জন্য। আইসক্রিম নাকি দৈত্যের খুবই প্রিয়। কী অদ্ভুত তাই না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *