শাদীদ ও শাদ্দাতের কাহিনী

বাদশাহ আদের দু পুত্র ছিল। জ্যেষ্ট পুত্রের নাম ছিল শাদীদ এবং কনিষ্ট পুত্রের নাম ছিল শাদ্দাদ।

শাদীদঃ আদের মৃত্যুর পর রাজ প্রথানুসারে জ্যেষ্ট পুত্র শাদীদ বাদশাহ হয়ে প্রবল প্রতাপের সাথে সাতশ বছর পর্যন্ত রাজত্ব করেছিল। সে ছিল কাফের। তবে সে প্রজাদের সুখ-সুবিধার দিকে বিশেষ মনোযোগী ছিল। তার শাসন প্রণালী এমনই ন্যায়নিষ্ট ও কড়া ছিল যে, তার রাজ্যে বাঘ-ছাগল একঘাটে পানি পান করত। সে সময় ন্যায়নিষ্ট শাসক ছিল তেমনি জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচক্ষণতায়ও তার যশ ও সুখ্যাতি ছিল। তার ন্যায় বিচার এবং সুশাসনের ঘটনাবলী প্রবাদের মত মনে হয়ে থাকে।

নিম্নে একটি ঘটনার উল্লেখ করছি। এর থেকেই বোঝা যাবে সুশাসনের ফলে দেশের জনসাধারণের কিরূপ সৎ এবং নিঃস্বার্থ হয়ে উঠেছিল এবং সাথে তার বিচারের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কেও অবহিত হওয়া যাবে।

একবার এক প্রজা অন্য এক প্রজার নিকট একখণ্ড জমি বিক্রয় করল। ক্রেতা স্থীয় প্রয়োজনে ক্রয়কৃত জমি খনন করতে গিয়ে ভূগর্ভে অজস্র স্বর্ণ ও রৌপ্য প্রাপ্ত হল। সে তা সম্পূর্ণ জমির পূর্বের মালিকের কাছে নিয়ে বলল, তোমার জমির নীচে এ মাল পাওয়া গেছে গ্রহণ কর। জমি বিক্রেতা বলল, এ মাল আমি গ্রহণ করব কেন, এর মালিক তো এখন তুমি! কেননা আমার বিক্রিত জমির নীচে যা পাওয়া গেছে তার ন্যায়তঃ অধিকার তোমার।

ক্রেতা বলল, তা কি করে হয়? আমি তো কেবল তোমার জমিটুকু খরিদ করেছি। আমার সাথে তো তোমার এমন কথা ছিল না যে, জমির সাথে অন্য কিছুরও আমি অধিকারী হব?

এভাবে দুজনের বাধানুবাদের পর কেউই জমির নিম্নস্থ মাল গ্রহণে রাজি হয়নি। অবশেষে তা বাদশাহ শাদীদের দরবারে গিয়ে পৌঁছে। সে দুজনের কথা শুনে অবাক হয়ে ভাবল যে, ধন-সম্পদের প্রতি এরূপ বীতরাগী হওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়। সহসা সে ভেবে পেল না যে, কীভাবে এ ঘটনার ফায়সালা করবে। কিন্তু এক মূহুর্ত চিন্তা করেই সে একটা সুন্দর বুদ্ধি আবিষ্কার করল। সে উভয়ের নিকট প্রশ্ন করে জানতে পারল যে, তাদের একজনের পুত্র এবং অন্য জনের একটি কন্যাসন্তান আছে। বাদশা তৎক্ষণাৎ পুত্র-কন্যাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে উক্ত ভূগর্ভস্থ ধন-সম্পদ তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিতরণ করে দিল। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে তখন তার এ অপূর্ব বুদ্ধিমত্তা এবং সুন্দর বিচারে খুশী হয়ে প্রত্যাবর্তন করল।

হূদ (আঃ) বাদশাহ শাদীদকে হেদায়েতের জন্য বহুবার তার দরবারে যাতায়াত করেছেন। কিন্তু বহু সৎগুন থাকা সত্বেও সে সত্যধর্ম গ্রহণ করল না। শেষ পর্যন্ত বেঈমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে হল।

Written By

More From Author

শাদীদ ও শাদ্দাতের কাহিনী

বাদশাহ আদের দু পুত্র ছিল। জ্যেষ্ট পুত্রের নাম ছিল শাদীদ এবং কনিষ্ট পুত্রের নাম ছিল শাদ্দাদ।

শাদীদঃ আদের মৃত্যুর পর রাজ প্রথানুসারে জ্যেষ্ট পুত্র শাদীদ বাদশাহ হয়ে প্রবল প্রতাপের সাথে সাতশ বছর পর্যন্ত রাজত্ব করেছিল। সে ছিল কাফের। তবে সে প্রজাদের সুখ-সুবিধার দিকে বিশেষ মনোযোগী ছিল। তার শাসন প্রণালী এমনই ন্যায়নিষ্ট ও কড়া ছিল যে, তার রাজ্যে বাঘ-ছাগল একঘাটে পানি পান করত। সে সময় ন্যায়নিষ্ট শাসক ছিল তেমনি জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচক্ষণতায়ও তার যশ ও সুখ্যাতি ছিল। তার ন্যায় বিচার এবং সুশাসনের ঘটনাবলী প্রবাদের মত মনে হয়ে থাকে।

নিম্নে একটি ঘটনার উল্লেখ করছি। এর থেকেই বোঝা যাবে সুশাসনের ফলে দেশের জনসাধারণের কিরূপ সৎ এবং নিঃস্বার্থ হয়ে উঠেছিল এবং সাথে তার বিচারের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কেও অবহিত হওয়া যাবে।

একবার এক প্রজা অন্য এক প্রজার নিকট একখণ্ড জমি বিক্রয় করল। ক্রেতা স্থীয় প্রয়োজনে ক্রয়কৃত জমি খনন করতে গিয়ে ভূগর্ভে অজস্র স্বর্ণ ও রৌপ্য প্রাপ্ত হল। সে তা সম্পূর্ণ জমির পূর্বের মালিকের কাছে নিয়ে বলল, তোমার জমির নীচে এ মাল পাওয়া গেছে গ্রহণ কর। জমি বিক্রেতা বলল, এ মাল আমি গ্রহণ করব কেন, এর মালিক তো এখন তুমি! কেননা আমার বিক্রিত জমির নীচে যা পাওয়া গেছে তার ন্যায়তঃ অধিকার তোমার।

ক্রেতা বলল, তা কি করে হয়? আমি তো কেবল তোমার জমিটুকু খরিদ করেছি। আমার সাথে তো তোমার এমন কথা ছিল না যে, জমির সাথে অন্য কিছুরও আমি অধিকারী হব?

এভাবে দুজনের বাধানুবাদের পর কেউই জমির নিম্নস্থ মাল গ্রহণে রাজি হয়নি। অবশেষে তা বাদশাহ শাদীদের দরবারে গিয়ে পৌঁছে। সে দুজনের কথা শুনে অবাক হয়ে ভাবল যে, ধন-সম্পদের প্রতি এরূপ বীতরাগী হওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়। সহসা সে ভেবে পেল না যে, কীভাবে এ ঘটনার ফায়সালা করবে। কিন্তু এক মূহুর্ত চিন্তা করেই সে একটা সুন্দর বুদ্ধি আবিষ্কার করল। সে উভয়ের নিকট প্রশ্ন করে জানতে পারল যে, তাদের একজনের পুত্র এবং অন্য জনের একটি কন্যাসন্তান আছে। বাদশা তৎক্ষণাৎ পুত্র-কন্যাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে উক্ত ভূগর্ভস্থ ধন-সম্পদ তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিতরণ করে দিল। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে তখন তার এ অপূর্ব বুদ্ধিমত্তা এবং সুন্দর বিচারে খুশী হয়ে প্রত্যাবর্তন করল।

হূদ (আঃ) বাদশাহ শাদীদকে হেদায়েতের জন্য বহুবার তার দরবারে যাতায়াত করেছেন। কিন্তু বহু সৎগুন থাকা সত্বেও সে সত্যধর্ম গ্রহণ করল না। শেষ পর্যন্ত বেঈমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে হল।

Written By

More From Author

You May Also Like

ভাঙ্গা খেলনার গল্প

রাতুল ছিল তার বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান। তার কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। সে যা…

সীতাভোগ খাওয়ার জ্বর

গোপাল আর তার প্রাণের বন্ধু নেপাল নৌকায় করে একবার চাঁদপুর যাচ্ছিল। নৌকোয় ছয়জন মাঝি ছাড়া…

লোকসান দু’পয়সা

গোপাল একবার নদীর ঘাটে ঘাটের ইজারা নিয়েছিল। নদীর ফেরী ঘাটের ইজারাদার গোপাল ভাড়া ছয় পয়সা…