শতবর্ষের ঘুম

  পবিত্র কুরআনের সূরা ইয়াসীনের ৮২ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়।”

আমরা সবাই জানি যে, আল্লাহপাক সকল জীবের জীবন দেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। জীবিত থেকে মৃতকে এবং মৃত থেকে জীবিতকে করার ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই। পবিত্র কুরআনের এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “কীভাবে তোমরা আল্লাহকে অস্বীকার কর, অথচ তোমরা মৃত ছিলে? এরপর তিনি তোমাদেরকে জীবিত করেছেন এবং আবার মৃত্যু দিয়েছেন। এরপর তিনি তোমাদেরকে জীবিত করবেন। এবং পুনরায় তোমাদেরকে তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করানো হবে।”

বন্ধুরা, আল্লাহর এসব ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করা ঠিক নয়। কারণ মৃতকে জীবিত করার ঘটনা আমরা অনেক জানি। রংধনু আসরে আমরা এ সম্পর্কেই একটি ঘটনা প্রচার করেছি।। এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের এক নতুন বন্ধু। পুরো অনুষ্ঠানটির অডিও ফাইল এই পেইজের নিচের দিকে দেয়া আছে। সেখান সেখান অনুষ্ঠানটি শুনতে পারবে। তাহলে প্রথমেই হযরত উযাইর (আ.)এর জীবন থেকে নেয়া গল্পটি শোনা যাক।

বায়তুল মুকাদ্দাস শহরে এক দম্পতি বাস করতো। মহান আল্লাহ তাদেরকে দু’টি জমজ পুত্র দান করলেন। তাদের একজনের নাম রাখা হলো উযাইর, অন্যজনের নাম উযরা। উযাইর বড় হওয়ার পর আল্লাহ তাকে বনী ইসরাইলের নবী হিসেবে মনোনীত করলেন।

নবী হওয়ার পর তিনি একদিন ভ্রমণ করতে বের হবার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিছু রুটি ও পানি নিয়ে পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করলেন এবং এরপর একটি গাধার পিঠে চড়ে পথ চলতে শুরু করলেন।

কিছুদূর যাওয়ার পর এক গ্রামে গিয়ে কিছু ভাঙ্গাচোরা ঘরবাড়ি দেখতে পেলেন। সেখানে কেউ বসবাস করতো না। কোনো কোনো কবর থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের পঁচা হাড়গুলো চোখে পড়ছিল। হযরত উযাইর (আ.) ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তুপ ও কবরের দিকে  একনজর তাকালেন। ততক্ষণাত তিনি কিয়ামতের ভাবনায় ডুবে গেলেন আর চিন্তা করতে লাগলেন, আল্লাহ কিভাবে এই মৃতদেহগুলোকে জীবিত করবেন?

বন্ধুরা, তোমরা আবার এ কথা ভেব না যে, তিনি হয়ত আল্লাহ ক্ষমতা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন কিংবা পরকালে অবিশ্বাসী ছিলেন। আসলে তিনি এ কথা আল্লাহ ক্ষমতা সম্পর্কে খানিকটা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।

যাহোক তিনি যখন এসব চিন্তায় মগ্ন ছিলেন, তখনই আল্লাহ তাঁর রুহ কব্‌জ করে নিলেন। এ ঘটনার পর একশ’ বছর পার হয়ে গেল। আল্লাহ হযরত উযাইরকে পুণরায় জীবিত করলেন এবং এক ফেরেশতাকে তাঁর কাছে পাঠালেন। ফেরেশতা উযাইর (আ.)কে বললেন, কত সময় ঘুমালেন?

হযরত উযাইর মনে করেছিলেন তিনি অল্প সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। তাই উত্তর দিলেন, ঠিক কতটুকু ঘুমিয়েছি তা বলতে পারব না, তবে মনে হয় ১৫/২০ মিনিট ঘুমিয়েছি।

ফেরেশত বললেন, না। আপনি ঘুমিয়েছেন একশ বছর! এখন উঠুন, আপনার খাদ্য ও বাহনের দিকে তাকান।

ফেরেশতার কথা শুনে হযরত উযাইর অবাক হয়ে গেলেন। এরপর উঠে দাঁড়ালেন। তিনি দেখতে পেলেন তার খাদ্য এবং পানি আগের মতই আছে কিন্তু গাধাটা মরে পচে গেছে। কেবল তার হাড়গুলোই অবশিষ্ট রয়েছে।

এবার ফেরেশতা বললেন, ‘এবার তাকিয়ে দেখুন গাধাকে কিভাবে জীবিত করি।’ এরপর আল্লাহর নির্দেশে গাধার হাড়গুলো পরপর জোড়া লাগতে শুরু করলো এবং অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই গাধাটি জীবিত হয়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে হযরত উযাইর বললেন, ‘আমি জানি, আল্লাহ সবকিছুর উপরই শক্তিমান।’ তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে উঠে দাঁড়ালেন এবং গাধার পিঠে চড়ে বসলেন। এরপর নিজ শহরের দিকে রওনা হলেন।

যখন শহরে গিয়ে পৌঁছলেন, দেখলেন সবকিছুই বদলে গেছে! ঘরবাড়ি, গাছাপালা, মানুষ কোনোকিছুই আগের মতো নাই!  খুঁজে খুঁজে তার বাড়ির পথটা পেয়ে গেলেন। বাড়ির কাছে পৌঁছে দেখতে পেলেন একজন নতজানু ও অন্ধ বৃদ্ধা সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এটাই কি উযাইরের ঘর? বৃদ্ধা বললেন, হ্যাঁ, এটাই। কিন্তু তুমি কে বাবা? তুমি কিভাবে তার নামটি মুখে আনলে?

উযাইর জবাবে বললেন, আমিই উযাইর। আল্লাহ একশ’ বছরের জন্য আমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নেন। তারপর আবার জীবিত করেন। বৃদ্ধা ‌উযাইরের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন! তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তার ছেলে  একশ’ বছর পর আবার জীবিত হয়েছে। তিনি বললেন, আমি উযাইরের মা। আমার ছেলে ছিল একজন সৎলোক, যার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। তুমি যদি সত্য বলে থাকো তাহলে এখনই আমার জন্য দোয়া কর, যেন আমার দৃষ্টি ফিরে পাই।

উযাইর তার মায়ের জন্য দোয়া করলেন। তৎক্ষনাৎ তাঁর দোয়া কবুল হয়ে গেল। বৃদ্ধা চোখ মেলে তার ছেলেকে দেখতে পেলেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করলেন। এরপর মা-ছেলে মিলে বাড়িতে গেলেন। বাড়িতে পৌঁছার পর আত্মীয়-স্বজনরা উযাইরকে দেখতে এলেন। এ সময় উযাইর (আ.) নিজের সব ঘটনা তাদের কাছে বর্ণনা করলেন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!