শঙ্কুমামার সুবর্ণ সুযোগ

রস্কোর জন্মদিনের কয়েকদিন আগে ব্যাপারটা জানতে পেরেছিল সে। মামাই ওকে বলেছিল। রস্কোর মামা কলেজে পড়ে। তবে মামার থেকেও বেশি রস্কো ভালবাসে মামার বন্ধু শঙ্কুমামাকে। শঙ্কুমামার আসল নাম রস্কোর জানা নেই। সে সত্যজিৎ রায়ের প্রোফেসার শঙ্কু সিরিজের সাংঘাতিক ভক্ত বলে মামা আর বাকি বন্ধুরা ওকে মজা করে শঙ্কু বলেই ডাকে। দারুণ ভাল গল্প বলতে পারে শঙ্কুমামা। সে এলেই রস্কো আর ওর ফ্ল্যাটের বাকি বন্ধুরা তাকে গল্প বলার জন্যে চেপে ধরে। মামা রেগে গিয়ে বলে, “বারে! গল্প করব বলে ওকে নিয়ে এলাম আমি আর এখন তোরা সব ওকে হাইজ্যাক করে নিলি!” কখনও আবার বলে, “ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিস যা, প্রোফেসার শঙ্কু ছাড়া কোন গল্প ওর জানা নেই!”

তা রস্কোরা মামার কথায় কানই দেয় না। ওরা ওই সুযোগ হাতছাড়া করতে মোটেই রাজি নয় আর ওরা যে কোন গল্প শুনতে পারলেই খুশি!

হঠাৎ একদিন রস্কোর খেয়াল হল যে বেশ কিছু দিন শঙ্কুমামা আসেনি তাই সে মামাকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা মামা শঙ্কুমামা অনেক দিন আসছে না কেন? কতদিন ওর কাছে গল্প শোনা হয়নি! সেদিনই নন্দনও জিজ্ঞেস করছিল। আমি তখন বললাম আমি তোমার কাছে খোঁজ নেবো।”

ওর কথা শুনে মামার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল।
রস্কো ভয় পেয়ে বলল, “কী হয়েছে মামা?”
“শঙ্কুর শরীরটা বেশ খারাপ হয়েছে। ওর একটা অপারেশানের দরকার, সেটা নাহলে হয় তো ওকে আর বাঁচানো যাবে না। কিন্তু অপারেশানে প্রচুর খরচ আর ওর বাড়ির অবস্থা তেমন ভাল নয়। কী যে করা হবে বুঝতে পারছি না। সেই জন্যে আমাদের সবার খুব মন খারাপ।”

মামার কথা শুনে রস্কোরও মন খারাপ হয়ে গেল। কী করা যায়, কী করা যায় ভাবতে ভাবতে সে একটা ফন্দি বার করল। কার কাছে জানি সে শুনেছিল এটার কথা।

পরেরদিন স্কুলে গিয়ে সে সব বন্ধুদের বলল, “এই মাসের কুড়ি তারিখ আমার জন্মদিন। তোদের সবার নিমন্ত্রন রইল। তবে হ্যাঁ, একটা কথা বলে দিচ্ছি জন্মদিনে আমার জন্যে কোন রকম উপহার বা প্রেজেন্ট আনা চলবে না। টেবিলে একটা বাক্সো থাকবে শঙ্কুমামার অপারেশানের জন্যে, সেটাতে যা পারিস দিলে ভাল হয়। অনেক টাকা লাগবে অপারেশানটা করাতে।”

সব টিচার আর প্রিন্সিপালকেও বলা হয়ে গেল রস্কোর। শঙ্কুমামা ওদের স্কুলেরই ভাল ছাত্র ছিল তাই টিচাররা সবাই ওকে চেনেন। সবাই শুনে এক কথায় বললেন, “বাহ এটা তো খুব ভাল কাজ! আমরা নিশ্চয়ই যাবো!” বলে সবাই ওর বাড়ির ঠিকানা নিয়ে নিলেন।

সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে রস্কো মাকে বলল, “মা, আমি জন্মদিনের নেমন্তন্ন সব করে দিয়েছি! সবাই আসবে বলেছে!”

মা কী একটা কাজ করছিলেন। ওর কথা শুনে বললেন, “ও, কত জন বন্ধুকে বলেছো?”

“শুধু বন্ধু নয়, ক্লাসের সবাই আসবে আর বি সেকশানেরও বেশ কয়েকজন, তাছাড়া সব টিচার আর প্রিন্সিপাল স্যার সবাই তো আসবেন বলেছেন!”

মা তো শুনে আকাশ থেকে পড়লেন, “সে কী! এত লোক এলে কী খাবে? কোথায় বসবে? বাড়িতে তো অত জায়গাই নেই! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস না করে এত লোককে ডেকে বসেছো!”

 

রস্কো এবার বেশ ঘাবড়েই গেল। সত্যিই তো! ওই সব ব্যাপারগুলো তো সে ভেবেই দেখেনি! ওরা থাকে তো একটা ফ্ল্যাট বাড়িতে, সেখানে তো মোটেই বেশি জায়গা নেই! সে ভয়ে প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “কিন্তু আমি তো শঙ্কুমামার জন্যে সব করছিলাম! এবার কী হবে?”

বাবা অফিস থেকে ফিরে সব শুনে বললেন, “শঙ্কুর জন্যে ভেবেছো তুমি এটা খুবই ভাল কথা কিন্তু তোমার মা আর আমার দিকটাও একটু ভাবলে ভাল হত। যাক, দেখি কী করা যায়!”

পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে নন্দনকে ব্যাপারটা বলতে সে বলল, “অঙ্ক স্যারকে বল না কথাটা। দেখিস উনি ঠিক কিছু একটা উপায় বলে দেবেন।”

অঙ্ক স্যার ওদের ক্লাস টিচার। ভারি হাসিখুসি অমায়িক মানুষ। ক্লাসের সবাই ওনাকে খুব ভালবাসে।

ক্লাসের পর ওনাকে কথাটা বলতে উনি বললেন, “হ্যাঁ, সেটা তো সত্যি একটা বড় সমস্যা! এক স্কুল ভর্তি লোক তোমাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলে তো তোমার মা বাবার খুব মুশকিল হবে! একটু অপেক্ষা করো, আমি প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে একটু কথা বলে দেখি। ব্যাপারটা যে কত বিশাল আকার ধারণ করেছে সেটা ওনার জানা দরকার।”

কিছুক্ষণ বাদেই উনি ফিরে এলেন। এসে বললেন, “আর চিন্তা নেই! স্কুলের সবাই যখন যেতে চায় তখন ব্যাপারটা স্কুলে হলেই ভাল হবে সেটাই ঠিক করেছেন প্রিন্সিপাল স্যার! তবে জন্মদিন নয় তোমার শঙ্কুমামার জন্যে একটা বিশেষ চ্যারিটি শো হবে। তার টিকিট করা হবে। টিচাররা এবং ছাত্র ছাত্রীরা নাচ গান ইত্যাদি করবে। টিকিট থেকে ওঠা সব অর্থ তোমার শঙ্কুমামার অপারেশানের জন্যে দেওয়া হবে! কী এবার খুশি তো?”

আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল রস্কো। মামাকে সব জানাতে শঙ্কুমামার মা বাবাও এসে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দেখা করলেন।

রস্কোর জন্মদিনের দিনই হল চ্যারিটি শোটা। ভিড় একেবারে উপচে পড়ছিল স্কুলে। শঙ্কুমামা আর ওর মা বাবাও এলেন। শঙ্কুমামার চোখের কোলে কালি কিন্তু মুখে হাসি।

শো দারুণ হল। প্রিন্সিপাল স্যার ম্যাজিক দেখালেন। অনেক টিচাররা গান গাইলেন, আবৃতি করলেন। সিনিয়ার দাদা দিদিরা যাদের নাচ নাটক ইত্যাদি তৈরি ছিল তারাও করল।

ফাংশানের শেষে প্রিন্সিপাল স্যার রস্কোকে ডাকলেন স্টেজে। সবাইকে বললেন, “ওর জন্যেই আজ আমরা সবাই উদ্যোগ নিয়েছি এই মহান কাজে!”

তারপর সবাই হ্যাপি বার্থডে গাইল ওর জন্যে। একটু লজ্জা লাগছিল রস্কোর তবে আনন্দও হচ্ছিল খুব। এই জন্মদিনটার কথা কোনদিন ভুলবে না সে। সব শেষে টিকিট বিক্রি থেকে ওঠা সব টাকা শঙ্কুমামার মা বাবার হাতে তুলে দেওয়া হল।

<p.শঙ্কুমামা রস্কোকে=”” জড়িয়ে=”” ধরে=”” বললেন,=”” “রস্কো,=”” তোর=”” জন্যেই=”” হয়তো=”” এ=”” যাত্রা=”” প্রাণে=”” বেঁচে=”” যাব=”” রে=”” আমি!”=”” <=”” p=””>

রস্কো বলল, “ওসব নিয়ে ভেব না। তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে ওঠো। ‘শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ’ গল্পটা অর্ধেক মোটে শোনা হয়েছে, ওটা পুরোটা শুনতে হবে তো!”

দুঃখিত!