লোভী নারীর ভয়াবহ অবস্থা

সারগোদায় এক ধনী পরিবারে দুই সন্তান রেখে মারা যান তাঁদের পিতা মাতা। দুই সন্তানের একটি মেয়ে অন্যটি ছেলে। দুই সন্তান মায়ের বোন খালার সংসারে বড়ও হয়। মেয়েটি ছিল অসাধারণ সুন্দরী এবং অসম্ভব মেধাবী। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে বিএ পাশ করে। তাঁর ছোট ভাই ছিল সহজ সরল বোকা টাইপের। মেয়েটি বিএ পাশ করার পর ঝং এর এক জমিদারকে ভালবেসে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাঁর ছোট ভাই খালার সংসারে থেকে যায়। বিয়ের পর জমিদার স্বামীর অঢেল ধন সম্পদ থাকার পরও মেয়েটি তাঁর বোকা ছোট ভাইকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করে পিতার কোটি টাকার সম্পত্তি তাঁর নিজের নামে লিখে নেয়। ফলে সারগোদার উর্বর কৃষি জমি এবং শহরের মূল্যবান জমির মালিকানা সে লাভ করে। খালা তাকে বুঝাতে থাকে। দেখ, ছোট ভাইকে এভাবে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করা ঠিক হচ্ছে না। এর ফল ভালো হবে না। কিন্তু রুপের, শিক্ষার, ঐশ্বর্যের গর্বে গর্বিনী নারী কোন কথাই কানে নেয় না। ছোট ভাই ধূর্ত বড় বোনের সাথে পেরে উঠেনি। ১৯৪৭ সালে ছোট ভাই পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে থাকে এবং অল্প দিনের মধ্যে অনাহারে, অর্ধাহারে, হতাশায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বরণ করে।

সারগোদার শাহজাদী ঝং এর জমিদার মহলে এসে সংসার সাজায়। তাঁর গর্ভ থেকে দুই পুত্র এবং এক কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। যতই অর্থ সম্পদ পাচ্ছিল, কিছুতেই তাঁর তৃপ্তি হচ্ছিল না। অল্প দিনের মধ্যে সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালে তাঁর হৃদপিণ্ডে সমস্যা দেখা দেয়। অল্প বয়সে বার্ধক্যে উপনীত হয় এ লোভী নারী। ছেলে মেয়েরা কলেজে পড়ার সময় জমিদার স্বামী অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে। এবং নববধূকে নিয়ে মারী এলাকায় চলে যায়।

শাহাজাদীর খালার সাথে আমার পরিচয় ছিল। ১৯৬৭ সালের মে মাসে সারগোদার পুরাতন ভবন এলাকায় স্থাপিত পি.এ.এফ. হাসপাতালে আমি শাহাজাদীর চিকিৎসার জন্য গমন করি। তাঁর জীবনের সব ঘটনা আমি জানতাম। তাঁর খালা শাহাজাদী বিছানার এক পাশে হেলান দিয়ে বসেছিলেন। আমার সাথে আমার স্ত্রীও ছিল। শাহাজাদীর খালা আমাদের দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। শাহাজাদীর রূপ লাবণ্য তখনও ছিল চোখে পড়ার মত। তাঁর গভীর কালো চোখ, গোলাগাল চেহারা, ফর্সা গায়ের রং, সুন্দর দাঁত, পাতলা ঠোঁট তখনও ছিল অসম্ভব রকমের আকর্ষণীয়। কেন জানি না তাঁর পরিধানে সে দিন লাল রং এর পোশাক দেখেছিলেন। হাতে কানে নাকে ছিল সোনার অলঙ্কার। বিছানায় শাহাজাদী ছটফট করছিল। হঠাৎ করে কখনও উঠে বসছিল।

একবার উঠে বসে স্বামী এবং সন্তানদের ডাকলো। পরক্ষণে শুয়ে পড়লো। তাঁর অস্থির অবস্থা দেখে তার খালা কেঁদে ফেললেন এবং তাঁকে শান্তনা দিলেন। এয়ারকন্ডিশন থাকা রুমের মধ্যেও শাহজাদী ক্রমাগত ঘামাচ্ছিল। তাঁর চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক। হঠাৎ ছাদের দিকে তাকিয়ে শাহজাদী বললো, দেখ খালা! আমার ভাই আমাকে নিতে এসেছে। তাঁর সাথে ভয়ানক চেহারার একজন লোক রয়েছে। খালা আমার চুরি,ঝুমকো সব সোনার অলঙ্কার আমার ভাইকে দিয়ে বলো, আমাকে যেন না নিয়ে যায়। দেখো, আমার ভাই আমার দিকে ক্রদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

একথা বলে শাহাজাদী নিজের সোনার অলঙ্কার খুলতে লাগলো খালা তাঁর হাত চেপে ধরলেন। চরম অস্থিরতার মধ্যে এক সময় শাহজাদী দেহুশঁ হয়ে পড়লো। পনের মিনিট পর কর্তব্যরত নার্স জানালো, শাহাজাদী মারা গেছে। অসুন্তুষ্ট ক্রদ্ধ ভাই এবং ভয়ানক চেহারা লোকটির সাথে সে অন্য জগতে আলমে বরযখের অধিবাসী হয়ে গেল।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।