লুকছানার স্কুল যাত্রা—- ড. আবদুল ওয়াহিদ

বনের জীব-জন্তুর বাচ্চারা প্রতিদিন সকালে স্কুলে যায়। কিন্তু ছোট্ট একটু কালো রঙের ভালুক টুমকী স্কুলে যেতো না। সে বলতো : ‘আমার স্কুলে যাবার এবং লেখাপড়া করার দরকার নেই। আমি প্রতিদিন সকালে বনের মধ্যে মিষ্টি মিষ্টি মধু খুঁজে বেড়াবো’।
একদিন টুমকী ভাবলো, চাচা খরগোশের কাছে যাওয়া দরকার। তার থেকে মজার মজার গল্প শোনা যাবে। সে গেলো খরগোশের বাসায়। সে দরজায় একটি কাগজের টুকরায় কিছু লেখা দেখতে পেলো। কিন্তু টুমকী তো লেখাপড়াই জানতো না। এ জন্যে দরজায় জোরে জোরে আঘাত করলো। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। বিফল হয়ে সে ফিরে আসলো। মাঝপথে আসতেই খরগোশ চাচার সাথে ওর সাক্ষাৎ হয়ে গেলো। চাচা জানতে পারলেন, টুমকী তার ঘর থেকেই ফিরে আসছে। এতে তার ভীষণ রাগ হলো। তিনি বললেন : ‘তুমি দরজার ওপর লেখা কাগজটি পড়োনি? কাগজে লেখা ছিলো: ‘আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো। অনুগ্রহ করে আমার জন্যে অপেক্ষা করুন।’ টুমকী খুব লজ্জা পেলো। সে ক্ষমা চেয়ে ঘরে ফিরে আসলো। কিন্তু তার মনে স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা এখনো জাগলো না।
পর দিন সে মধুর কাপ হাতে নেয়। পেঁচার ঘরের দিকে যেতে থাকে। সেখানে পৌঁছে দেখলো, একটি চেয়ার রাখা আছে। চেয়ারে এক টুকরো কাগজ লাগানো আছে। টুমকী মনে মনে বললো : ‘আমি তো সব কাগজের টুকরো সম্পর্কে ভালো ভাবেই জেনে গেছি। এতে লেখা আছে : ‘আমি এক্ষুণি ফিরে আসছি। অনুগ্রহ করে আমার জন্য অপেক্ষা করুন।’
কিন্তু ছোট্ট বন্ধুরা! ওই কাগজের টুকরায় লেখা ছিলো : ‘এই চেয়ারে নতুন রং লাগানো হয়েছে। এ জন্যে এতে হাত লাগাবেন না।’ কিন্তু টুমকী বুঝেছে উল্টোটা। সে চেয়ারে বসে পড়লো। পর মুহূর্তেই সে লাফিয়ে উঠলো। কারণ, তার নতুন চকলেট রঙের প্যানেটর ওপর সবুজ রঙের দাগ লেগে গেছে। টুমকীর কান্নার শব্দে মিস্টার পেঁচা বাইরে এলো। সে তার দিকে তাকিয়ে বললো : ‘তোমার তো দেখা উচিত ছিলো চেয়ারে নতুন রং লাগানো হয়েছে, আর আমি তো এর ওপর এক টুকরো কাগজে লিখেও রেখেছি’। টুমকী লজ্জা পেয়ে চিমিত্মত মনে ঘরে ফিরে আসলো।
কিন্তু শিশুরা! এতেও তার মনে জ্ঞানার্জনের ইচ্ছা জাগলো না।
তৃতীয় দিন সে আবার বেড়াতে বেরোয়। ঘরে ফিরে এসে তার লেটার বক্সে ছোট্ট কাগজে কিছু লেখা দেখতে পেলো। সে ভাবলো, হতে পারে তার লেটার বক্সে কেউ নতুন করে রং লাগিয়েছে। এ জন্যেই কাগজ লাগিয়ে রাখা হয়েছে।
কিন্তু শিশুরা! এটা ছিলো টুমকীর জন্য দাওয়াত কার্ড। একটি বড় পিকনিক পার্টিতে অংশগ্রহণের জন্যে তার বন্ধুরা পাঠিয়েছে। কিন্তু টুমকী এই কাগজটিতে এই ভেবে হাত লাগালো না। না জানি, আবার তার পোশাক যদি নষ্ট হয়ে যায়!
চতুর্থ দিন সে দেখলো, চার ভাই- ইঁদুর, খরগোশের ছানা, কচ্ছপ ভাই এবং খেঁকশিয়াল পানাহারের অনেক জিনিসপত্র উঠিয়ে ঝিলের দিকে যাচ্ছে। টুমকী তাদের পিছু নেয়। অনেক দূরে গিয়ে দলটি নীল ঝিলের কাছে থামলো। এবার টুমকী বুঝতে পারলো, সব বন্ধু এসেছে পিকনিক করার জন্যে। এটা বুঝেই সে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে লাগলো। সব সাথী তার দিকে তাকালো। তারা তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলো। টুমকী বললো, সে এ জন্যে কাঁদছে, ওরা ওকে দাওয়াত করেনি। সবাই এক সাথে বলে উঠলো, টুমকী! আমরা তোমাকেও অন্য বন্ধুদের ন্যায় দাওয়াত কার্ড পাঠিয়েছি। কিন্তু তুমিই তো অংশগ্রহণ করোনি। আমাদের দোষ কী বলো।
এতক্ষণে টুমকীর আম্মু একটি বড় কেক নিয়ে আসলেন। তিনি বললেন: ‘টুমকী, গতকাল তুমি চিঠির বাক্স থেকে দাওয়াত কার্ড নাওনি। আমি দাওয়াত কার্ডটি পড়েছি। এ জন্যে তোমাদের জন্যে আমি কেক তৈরি করে এনেছি।’
এবার টুমকী সব ঘটনা বুঝতে পারলো। সে স্কুলে না যাওয়ার জন্যে বড়ই লজ্জিত হলো। সে তখনই স্কুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরের দিন সে বই-পুস্তক পিঠে ঝুলিয়ে তার বন্ধুদের সাথে খুশী মনে স্কুলের উদ্দেশ্যে যেতে থাকে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!