২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসের একটা ঘটনা। আমি, সোহান
আর অভি চিটাগাং থেকে ফিরছি। সন্ধ্যা হতে তখন প্রায়
আধা ঘণ্টার মত বাকি। আমাদের গাড়ি তখন হাইওয়েতে প্রায়
১০০ স্পিডের উপরে। সোহান গাড়ি চালাচ্ছে,
আমি সোহানের পাশে আর অভি পেছনের সিটে বসে আছে।
হঠাৎ করেই গাড়ির পেছনের দিকে কেমন যেন একটা বিকট
আওয়াজ হল। সবাই ভাবলাম হয়তো গাড়ির বাম্পারের
সাথে কোন কিছু বাড়ি খেয়েছে। আমরা গাড়ি থামালাম।
গাড়ি থেকে নেমে দেখি গাড়ির বাম্পার ঠিকই আছে। এরপর
গাড়ির পেছনে গিয়ে দেখি গাড়ির ডিক্সি খোলা।
আমরা ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্ব
সহকারে না নিয়ে ডিক্সি বন্ধ করে আবার গাড়ির ভেতর
গিয়ে বসলাম। এরপর কিছুদূর যেতেই আবার সেই একই শব্দ
শোনা গেল আর আমাদের গাড়ির গতি ক্রমাগত
কমে আসতে লাগলো। মনে হচ্ছিল কেউ পেছন
থেকে গাড়ি টেনে ধরছে। ভাবলাম গাড়ির চাকা পানচার
হয়ে জায়নি তো? আমরা আবার গাড়ি থেকে নামলাম। এরপর
আবার পেছন যেতেই দেখি গাড়ির ডিক্সি আবারও খোলা।
এবার আমি কৌতূহল বশত ডিক্সির ঢাকনা উপরে তুলি। আর
ঢাকনা উপরে তুলতেই দেখি সেখানে একটা মেয়ের লাশ।
মেয়েটির সারা শরীর রক্তে ভিজে আছে। আমি ব্যাপারটা দেখার
জন্য অভি আর সোহানকে ডাকি।
ওরা এসে ঘটনাটি দেখে খুবই অবাক হয়ে যায়। এই লাশ
এখানে এল কি করে? কি করা যায় এ নিয়ে ভীষণ চিন্তায়
পরে গেলাম। সামনে চেকপোস্টের হাতে ধরা পরলে তিনজনই
মার্ডার কেসে ফেঁসে যাব। আমরা কিছুদুর
এগিয়ে সামনে ডানদিকে একটা ফাঁকা রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে দিলাম।
আমাদের প্ল্যান ছিল সেখানে কোন
একটা ফাঁকা জায়গা পেলে সেখানে লাশটা রেখে চলে আসব।
তো আমরা সেই রাস্তা দিয়ে কিছু দূর এগুতেই
একটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে গেলাম। যায়গাটা ঘন
জঙ্গলে ভরা ছিল।
আমরা গাড়ি থেকে নেমে লাশটি নিয়ে গিয়ে সেখানে রেখে আবার
ব্যাক করলাম। এবার আমরা একটু নিশ্চিন্ত অনুভব
করতে লাগলাম। ভাবলাম সমস্যা কেটে গেছে। কিন্তু না! এবার
সমস্যা আগের থেকে আরও বেড়ে গেল মনে হয়। এবার
শব্দটা আগের থেকে আরও দিগুন হতে লাগলো।
এইভাবে আমরা প্রায় কয়েক কিলোমিটার চলে এলাম। কিন্তু
শব্দ কিছুতেই থামছেনা। তখন সন্ধ্যা নেমে রাত
গরিয়ে এসেছে। আমরা রাস্তার একপাশে গাড়ি দাড় করালাম।
তখন আমরা প্রায় নারায়ণগঞ্জের কাছাকাছি। গাড়ি দাড়
করানোর সাথে সাথে মনে হল শব্দটাও থেমে গেল। তখনও
আমরা বুঝতে পারছিনা যে আমাদের
সাথে কি ঘটছে বা কি ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু
ঘটনাটা আমি বুঝতে পারলাম ঠিক তখন। যখন
আমি লুকিং গ্লাস দিয়ে পেছনে তাকালাম। আমি লুকিং গ্লাস
দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেলাম পেছনে অর্থাৎ
যেখানে অভি বসে আছে তার ঠিক পাশেই কেও একজন
বসে আছে যেটা অভি দেখতে পারছেনা। আমি আরও ভাল
করে লক্ষ করলাম এটা একটা মেয়ে আর এটা সেই মেয়ে যার
লাশ আমরা কিছুক্ষন আগেই একটা যায়গায় ফেলে এসেছি।
আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম।
আমি ব্যাপারটা অভিকে জানালাম না, কারন এতে অভি ভয়
পেতে পারে। সোহানকে যে কানে কানে বলব তারও কোন
উপায় নেই। কেননা ভয়ে আমি একদম নিস্তেজ হয়ে গেছি। আর
তাছাড়া সোহানকে বললে একটা এক্সিডেন্টও
হয়ে যেতে পারে। ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে পরল
সোহানের এক মামার কথা নাম শফিক। যে কিনা এই
বিষয়ে অনেক কিছু জানেন। আমি বুদ্ধি করে শফিক
মামাকে মোবাইলে মেসেজ করে বিষয়টা জানালাম।
তিনি আমাকে ফিরতি মেসেজ করে জানিয়ে দিলেন
যে তিনি আমাকে ফোন দিলে আমি যেন লাউড স্পিকার অন
করে দেই আর গাড়ির গ্লাস খুলে দেই। একটু পর তিনি আমার
মোবাইলে ফোন দিলে আমি মোবাইলের স্পিকার অন
করে দেই আর অভিকে বললাম গাড়ির জানালা খুলে দিতে।
অভি জানালা খুলে দিতেই শফিক মামা সূরা আরও কি কি যেন
পড়তে লাগলেন। ব্যাপারটা তখনও অভি আর সোহান
বুঝতে পারেনি। এরপর সবাই অনুভব করলাম গাড়ির ভেতর
থেকে প্রচন্ড বেগে একটা বাতাস বাইরে বেড়িয়ে গেল। এরপর
শফিক মামা বলল এবার গাড়ির জানালা বন্ধ করে দাও আর
তোমরা তারাতারি আমার বাসায় চলে আস। শফিক মামা আরও
বললেন তোমাদের গাড়িতে একটা খারাপ আত্মা উঠে পরেছিল।
আমি সেটাকে তোমাদের গাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি, কিন্তু
সেটা সহজে তোমাদের পিছু ছারবেনা। শফিক মামার বাসা ছিল
নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে। আমরা গাড়ি নিয়ে শফিক মামার
বাসায় চলে গেলাম। এরপর শফিক মামাকে সব কিছু
খুলে বলতেই তিনি বললেন, ভাগ্যিস সময় মত আমাকে ফোন
দিয়েছিলে। নয়তো আজ তোমাদের সাথে খুব খারাপ
একটা কিছু ঘটে যেতে পারত। পরদিন শফিক মামা তার
সাথে করে আমাদেরকে ঢাকায় পৌঁছে দিয়ে যায়।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।