ইউরোপ মহাদেশের একটি আধুনিক দেশ ইতালি।এদেশের প্রাচীন জনপদে রয়েছে বিখ্যাত বিখ্যাত সব কাহিনী। অনেক গল্প কাহিনী আমাদের দেশের সাধারন মানুষেদের কাহিনীর মতোই।এখান কার গল্পটা আরও সাধারন।এক ধোপা এবং ধোপার বউ তাদের তিন মেয়েদের নিয়ে সুখেই ছিল।হঠাৎ একদিন ধোপার মৃত্য হলো।শুরু হল ধোপার বউয়ের দুঃখের দিন।ধোপার বউ তাদের তিন মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাত।দিনভর তারা কাপড় ধোয়ার কাজ করত।কিন্তু যে টাকা পেত তা দিয়ে তাদের দু,বেলা পেটের ভাত হত না।একদিন তাই বড় মেয়ে বলল,মা এই কষ্ট আর ভাল লাগে না।এর চেয়ে দুষ্টলোকদের বাড়ি কাজ পেলে আমি করব।বাড়িতে আর থাকব না।মেয়ের কথা শুনে মা উত্তর দিল অমন কথা বলতে নেই মা।কার কপালে কি আছে তা কি বলা যায়?
এর কদিন পর একটা লোক এল তাদের বাড়িতে।লোকটার পরনে আগাগোড়া কালো পোশাক।হাত-পা গুলো সরু সরু।কিন্তু কোমর থেকে গলা পর্যন্ত বেশ মোটা।নাকটা বকের ঠোটের মতো লম্বা আর রুপোর মতো চকচকে।তবে লকটা বেশ ভদ্র আর অমায়িক।লোকটা ধোপার বউকে লক্ষকরে বলল,আমি জানি তিনটে মেয়ে তোমার।আমার কাজের জন্য একটা মেয়ে দিতে পার?বড় মেয়ে এই কথাশুনে লোকটার বাড়ি যেতে রাজি হল।কিন্তু তার মা তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল,মা,এরকম অদ্ভুত নাকওয়ালা আমি আর কনদিন দেখিনি।আমার যেন কেমন সন্দেহ হচ্ছে।
মেয়েটি মায়ের কোথায় উত্তর দিয়ে বলল,তা হোক।বাড়ী না খেয়ে কষ্ট করার চেয়ে ওই লোকটার বাড়িতেই আমি যাব।
তার মা তাকে অনেক বুঝাল।কিন্তু কিছুতেই শুনল না।অগ্যত্যা তার মা রাজি হলো।বড় মেয়ে কে সঙ্গে করে নিয়ে চলল,রুপালি নাকওয়ালা লোকটা।অনেক রাস্তা ঘাট,বন জঙ্গল,পাহাড়-পর্বত পরিয়ে অবশেষে একটা বাড়ির কাছে এসে থামল সে।বাড়িটা কেমন যেন ভুতুড়ে মনে হচ্ছিল।বড় মেয়ে কিন্তু ভয় পেল না।কিন্তু এখন তার তো আর ফিরে যাওয়ার কোন উপায় নেই!লোকটা বলল,এই আমার বাড়ি।তারপর মেয়েটাকে সঙ্গে করে নিয়ে ঢুকল বাড়ির ভেতরে।বাড়ি তো নয় বিরাট একটা প্রাসাদ।তার কত যে ঘর!একটার চেয়ে অন্যটা সুন্দর।মেয়েটা কে সব ঘুরিয়ে দেখাল লোকটা।অবশেষে একটা বন্ধ কোঠার কাছে এসে মেয়েদের হাতে একগোছা চাবি দিয়ে বলল,এই বাড়ির সমস্ত চাবি রয়েছে এতে।ইচ্ছা করলে তুমি যেকোনো ঘর খুলতে পার।তবে তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি এই বন্ধ ঘরটি কখনো খুলতে চেষ্টা করবে না।কথাটা শুনে মেয়েটি ভাবল-নিশ্চয় এই ঘরের মধ্যে লুকানো আছে বিপুল ধনসম্পদ।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘর টি খুলে দেখবার জন্য তার মন ছটপট করছে।সুতরাং বাড়িতে কোন লোকজন নেই।মেয়েটা কিন্তু সাহস হারল না।তাকে থাকবার জন্য একটা ঘর নির্দিষ্ট করে দিল। মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ল।পরদিন সেই অদ্ভুত রুপালি নাকওয়ালা লোকটি বেরিয়ে গেল কাজে।মেয়েটাকে বলল,আমার ফিরে আসতে দেরি হবে।তুমি ঘরের কাজকর্মগুলো সেরে রেখ।
লোকটা বাইরে যেতেই মেয়েটা ছুটল সেই বদ্ধ ঘরের কাছে।তারপর তাড়াতাড়ি খুলে ফেলল,তালা।দরজা টা খুলতেই সে একেবারে অবাক হয়ে গেল।সারা ঘর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন।মাঝখানে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন।তার একপাশ থেকে ভেসে আসছে মানুষের করুন কান্নার আওয়াজ।ভীষণ ভয় পেয়ে গেল সে।তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে পালাল।কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায়?অগ্যতা নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল।লম্বা লোকওয়ালা লোকটা বাড়ি ফিরেই মেয়েটার ঘরে গেল।তার চুলের দিকে তাকিয়ে দেখল ধোয়ায় মলিন হয়ে গেছে তার চুল।তার বুঝতে বাকি রইলনা যে মেয়েটা সেই নির্দিষ্ট বন্ধ ঘরের তালা খুলেছিল।
ভীষণ রেগে গিয়ে বলল সে,তুমি আমার কথা অমান্য করেছ।তারপর মেয়েটাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেল সেই বন্ধ ঘরের কাছে।দরজা খুলে সেই ধোঁয়া আর আগুন ভরা ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।পরদিন সেই অদ্ভুত লোকটা আবার ধোপাবউয়ের বাড়ি গিয়ে বলল,তোমার মেয়েটা খুব ভাল কাজ করে।কিন্তু আমার বাড়ি তো অনেক কাজ।তাই তোমার মেঝেমেয়েটা কে নিতে এসেছি।সে তার বড় বোন কে সাহায্য করতে পারবে।তার অমায়িক ব্যাবহার এবং মিষ্টি কথাশুনে ধোপাবউ কোন সন্ধেহ করতে পারল না।লোকটির সাথে মেঝমেয়েকে পাঠিয়ে দিল।ছোট মেয়ের নাম লুসিয়া।সে ছিল ভীষণ চলাক বাড়িতে নিয়ে লম্বা রুপালী নাকওয়ালা লোকটা একিভাবে লুসিয়াকে দেখাল।তারপর চাবির গোছা হাতে দিয়ে সেই বন্ধ ঘরটি খুলতে নিষেধ করল।লুসিয়ার প্রথম থকে কেমন যেন সন্ধেহ হচ্ছিল।বড় বোন কে না দেখে তার সন্ধেহ আরও বেড়ে গেল।কিন্তু অদ্ভুত লোকটাকে সে কিছুই বললেন না।রাতের বেলা ঘুম এল না তার চোখে।লোকটা চুপি চুপি গিয়ে ঢুকল তার ঘরে।লুসিয়া ঘুমের ভান করে শুয়েরইল।লোকটা তখন বড় বনের মতো তার চুলে গুজে দিল একটা জেসমিন ফুল।লোকটা ঘর থকে বেরিয়ে যেতেই লুসিয়া চুল থেকে ফুলটা বের করে তুলে রাখল।
পরদিন লোকটা যথারিতি কাজে বেরিয়ে গেল।আর লুসিয়া গেল বদ্ধঘরের কাছে।অত্যন্ত সাবধানে দরজা খুলল সে,সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেল সেই অদ্ভুত দৃশ্য।বড় বনের কান্না শুনতে পেল সে।তারা তাকে বলতে লাগল লুসিয়া,আমরা মরে যাচ্ছি।আমদের উদ্ধার কর বোন।আমাদের উদ্ধার কর।
লুসিয়া তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়।সে বুঝতে পারল ওই লম্বা নাকওয়ালা লোকটা আসলে মানুষ না।দুষ্ট প্রতারক।তার বড় বোন দুষ্ট লোকের বাড়িতে কাজ করতে চেয়েছিল।তাই দুষ্টলোক মানুষের ছদ্দবেশে তাদের ভুলিয়ে নিয়ে এসেছে।আর বড় কে করে রেখেছে বন্দি।সামান্য ক্রুটি পেলে তাকেও রেহাই দেবে না সে।এই বদ্ধ ঘর থেকে বড় বোন কে কিভাবে উদ্ধার যায়।আপাতত তাই দে ভাবতে লাগল।
ঘরে এসে সেই জেসমিন ফুলটা আবার চুলে গুজে দিল।লম্বা রুপালী নাকওয়ালা লোকটা ফিরে এসে লুসিয়ার চুলে জেসমিন ফুল টা দেখে খুশি হল।বলল,বা!তোমার চুলে দেখছি একটা সন্দুর তাজা জেসমিন ফুল।
হ্যাঁ,সুন্দর তাজা ফুল তোঁ বটেই!বাসি ফুল কি কেউ কখনো চুলে পরে।লুসিয়া এমন ভাবে কথাবলছে যেন ইতি মধ্যে কোনকিছু ঘটেনি।মানুষরুপী প্রতারক লুসিয়ার কথা শুনে আরও খুশি হল।সে ভাবল,নিশ্চয় লুসিয়া তার কথাশুনে বন্ধ ঘরের কাছে যায়নি।তুমি দেখছ খুব ভাল মেয়ে।এখানে এসে তুমি খুশি হয়েছ তো।লম্বা রুপালী নাকওয়ালা লোকটা আবার জিজ্ঞাসা করল।
হ্যাঁ,আমি খুব খুশি হয়েছি।তবে বাড়ি থাকে আসার সময় মাকে অসুস্থ দেখে এসেছি।তাই মনটা একটু খারাপ লাগছে।লুসিয়া বলল।
তাই নাকি এ ব্যাপারে আমি কি কিছু করতে পারি।
তুমি যদি আমার মায়ের খবরটা নিয়ে আসতে,তাহলে আমি নিশ্চিত হতাম।
এ আর এমন কী?আমি কালই তোমার মায়ের খবর নিয়ে আসব।
লুসিয়া তার কথায় বলল,তোমাকে ধন্যবাদ।আমি কিছু ময়লা কাপড় বেধে রাখব।আমার মা খুব পরিষ্কার করে সে গুলো ধুয়ে দেবে।আমার মায়ের বাড়ি যাওয়ার সময় সে গুলো নিয়ে যেও।লম্বা লোকটা রাজি হল।তারপর সে বাইরে গেলে লুসিয়া বদ্ধঘর থেকে বের করে নিয়ে এল তার বোন কে।তারপর ময়লা কাপড়ের ঝোলার মধ্যে তাকে দিল ভরে,বলল,এর মধ্যে চুপকরে থেকো বুবু।এই প্রতারকটা তোমাকে ঘারে করে বয়ে বাড়ি দিয়ে আসবে। যদি পথে সে বোঝাটা নামিয়ে খুলতে চেষ্টা করে,তাহলে চেঁচিয়ে বলবে,“আমি তোমাকে দেখতে পাছি,আমি তোমাকে দেখতে পাছি।পরদিন সকালে কাপড়ের বোঝা নেবার সময় লুসিয়া লোকটাকে বলল,বোঝাটা সরাসরি আমার মায়ের কাছে দেবে।অন্য কোথাও নিলে আমি কিন্তু দেখতে পাবো।না,না,দেখ আমি অন্য কোথাও নেব না। সে জাবাব দিল।
এরপর বোঝাটা কাধেনিয়ে রওনা হল সে।
বেশ কিছুদুর জাবার পর তার মনে হলো,বোঝাটা এত ভারি কেন?শুধু কি কাপড় না অন্য কিছু আছে এর মধ্যে!মেয়েটা বলেছ বোঝাটা অন্য কোথাও নিলে সে দেখতে পারবে সে।টা এত দূরে সত্যি কি আর দেখতে পাবে?এই ভেবে বোঝাটা নামিয়ে খুলতে গেল সে।আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি, আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছ্-কাপড়ের গাদার ভিতর থেকে চেঁচিয়ে উঠল বোন।বাপরে মেয়েট সত্যি দেখতে পাই দূর থেকে।
লুসিয়া তার বাড়ি থেকে কথা বলছে মনে করল সে।
তাড়াতাড়ি কাপড়ের বোঝাটা কাধে করে নিয়ে সে আবার হাঁটতে লাগল রুপালী নাকওয়ালা ছদ্দবেশী দুষ্ট লকটি।
সোজাগিয়ে হাজির হল ধোপা বউয়ের বাড়িতে।লোকটি ধোপা বউয়ের কাছে গিয়ে বলল,তোমার মেয়ে লুসিয়া এই কাপড় গুলো পাঠিয়েছে ধোয়ার জন্য।আর জানতে চেয়েছে,তুমি কেমন আছো।
ধোপাবউ বলল,আমি ভাল আছি।আমার মেয়েরা ভালো আছে তো?জিজ্ঞাসা করল সে।
হ্যাঁ,তারা তিনজনই ভাল আছে।জবাব দিল ছদ্দবেশী লোকটি।আমি অন্যদিন এসে কাপড় গুলো নিয়ে জাব, এত ভারি বোঝাটানতে তার ইচ্ছা হল না সেই ছদ্দবেশী সয়তানটার।কিন্তু কাজ কর্ম আর ব্যাবহারের জন্য লুসিয়া কে সে পছন্দ করে ফেলেছে সে।তাই লুসিয়ার মায়ের বাড়ি যেতে এবার ও রাজি হল সে।
লুসিয়া বলল,রাতের বেলা আমি কাপড়ের বোঝা বেধে রাখব।তুমি সকালে নিয়ে যেও।আমার মাথাটা খুব ব্যাথা করছে।সকালে ঘুম থেকে ডাকাডাকি করে আমাকে তুলনা।এদিকে লুসিয়া করেছ কী, পুরনো কাপড় দিয়ে খুব বড় একটা পুতুল বানিয়েছে।লম্বায় ঠিক তার নিজের মতো।তার নিজের মাথার কিছুটা চুল কেটে লাগিয়েছে পুতুলের মাথায়।তার পর সেই পুতুল টা শুয়েদিল নিজের বিছানায়।আর নিজেই সেই ময়লা কাপড়ের গাদার মধ্যে লুকিয়েছে।
সকালে লম্বা রুপালী নাকওয়ালা লোকটা লুসিয়ার বিছানায় কাছেগিয়ে কাপড়ে ডাকা পুতুলটিকে দেখে ভাবল,লুসিয়া সত্যি কারে ঘুমিয়ে রয়েছে।পুতুলের মাথার চুল গুলো দেখে তার মনে আর কোন সন্ধেহই জাগল না।তারপর ময়লা কাপড়ের বোঝাটা মাথায় নিয়ে রওনা হল সে।
বোঝাটা এবারে বেশী ভারি।মেয়েটা তো ঘুমিয়েই রয়েছে।আজ আর সে দেখতে পাবে না সে।বোঝাটা খুলে দেখি কি আছে এর মধ্যে।পথে এই ভেবে কাধ থেকে যেই বোঝাটা নামিয়েছে,অমনি ময়লা কাপড়ের ভিতর থেকে চেঁচিয়ে উঠল লুসিয়া আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।ওরে বাপরে!মেয়েটা দেখি ঘুমিয়েও দেখতে পায়!এই ময়েকে তো বোকা মনে করা যাবে না।এই বলে তাড়াতাড়ি করে বোঝাটা এবার কাধে তুলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল,ধোপাবউয়ের বাড়ি এসে বলল,বোঝটা ভিতরে রেখে দাও।আজ আমি দেরি করব না।এখনি বাড়ি ফিরব।লোকটা চলে গেলে ধোপার বউ ময়লা কাপড়ের ব্যাগ টা খুলল,আর ভেতর থেকে বেরিয়ে এল লুসিয়া।দুষ্ট লোকের হাত থেকে তিন মেয়েকে ফিরে পেয়ে ধোপার বউ খুব খুশি।
এদিকে লুসিয়া ছদ্দবেশির বাড়ি থেকে আসার সময় আনেক টাকা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।সুতরাং তাদের আর দঃখ কষ্ট আর রইল না।এর পর ধোপার বউ খুব একটা শক্ত গেট বানাল।যাতে ছদ্দবেশী দুষ্টলোকেরা আর কোন দিন তাদের বাড়ি না আসতে পারে।