লদে-ঝুঁটি মোরগহটি — রাশিয়ার উপকথা

 

এক বেড়াল, এক শালিক আর এক হলদে-ঝুঁটি মোরগটি। ছিল তারা একই বনে, একই কু’ড়েয়। বেড়াল? শালিক গভীর বনে চলে যায় কাঠ আনতে, মোরগ বাড়ীতে থাকে একা। বেরবার আগে ওরা মোরগকে সাবধান করে দেয়:

‘আমরা দূরে চলে যাচ্ছি। তুই ঘর দোর দেখিস। কিন্তু সাবধান টু’ শব্দটি করবি না। আর শেয়াল এলে জানলা দিয়ে আবার মাথা বের করিস না।’

শেয়াল যেই দেখে বেড়াল আর শালিক বেরিয়ে গেছে, অমনি মোরগের জানলার নীচে গিয়ে গান জোড়ে:

 

‘হলদে ঝুঁটি, হলদে ঝুঁটি,

বাহারে মোর মোরগটি,

তেল-চক-চক তোমার গা,

রেশমী তোমার দাড়ীটা,

জানলা দিয়ে মুখ বাড়াও,

মটরশুটি নিয়ে নাও।”

 

গান শুনে মোরগ যেই মুখ বের করেছে, অমনি শেয়াল খ্যাঁক করে ধরে নিয়ে চলল নিজের গর্তে।

ছোট মোরগ চীৎকার করে কাঁদতে লাগল:

‘শেয়ালে নিল ধ-রে

গহন বন পা-রে,

খর নদীর ধা-রে,

খাড়া পাহাড় ঘু-রে …

ও শালিক, ও বেড়াল রে,

আয় না বাঁচা মো-রে!”

 

মোরগের কান্না কানে যেতেই বেড়াল আর শালিক শেয়ালের পেছনে  ‍ছুটল। মোরগকে ছিনিয়ে আনল শেয়ালের হাত থেকে।

আবার বেড়াল আর শালিক কাঠ কাটতে গেল। আবার মোরগকে সাবধান করল:

‘দেখ বাপ  ‍মুরগীর পো, আজ আবার যেন মুখ বের করিস না। আজ আমরা আরও দূরে যাব, হয়ত তোর ডাক শনতেই পাব না।’

বেড়াল আর শালিক বাড়ী থেকে বেরিয়েছে অমনি শেয়াল বাড়ীর কাছে গিয়ে গান ধরল:

 

‘হলদে ঝুঁটি হলদে ঝুঁটি,

বাহারে মোর মোরগটি

তেল-চক-চক তোমার গা,

রেশমী তোমার দাড়ীটা,

জানলা দিয়ে মাখ বাড়াও,

মটরশুটি নিয়ে নাও।”

 

মোরগ কিন্তু চুপটি করেই বসে রইল। তাই শেয়াল ফের গান ধরল:

 

‘ছেলেমেয়েরা এ পথ দিয়ে দৌড়ে গিয়েছে,

দৌড়ে যেতে গমগুলো সব ছড়িয়ে পড়েছে।

মুরগীর দল খটে খটে খেতে লেগেছে,

মুরগীর দল মোরগদের বাদ দিয়েছে…’

 

মোরগ জানলা দিয়ে মুখ বের করে বলল:

‘কক কক কক ! বাদ দেবে কেন?’

আর অমনি শেয়াল ওকে খ্যাঁক করে ধরে নিয়ে চলল নিজের গর্তে। মোরগ চীৎকার করে কান্না জুড়ল:

 

‘শেয়ালে নিল ধ-রে

গহন বন পা-রে,

খর নদীর ধা-রে,

খাড়া পাহাড় ঘু-রে …

ও শালিক, ও বেড়াল রে,

আয় না বাঁচা মো-রে!”

 

মোরগের কান্না কানে পৌছতেই শালিক আর বেড়াল শেয়ালের পিছনে ছুটল। বেড়াল মাটিতে ছোটে, শালিক বাতাসে ওড়ে … শেয়ালকে ধরে বেড়াল অচিড়ায়, শালিক ঠোকরায়, কেড়ে নিল মোরগকে।

দিন যায়, ফের আবার শালিক বেড়াল গভীর বনে কাঠ কাটতে যাবার জন্যে তৈরী হল। যাবার আগে মোরগকে ওরা অনেক সাবধান করে দিল:

‘শেয়ালের কথা শুনিস না, মুখ বের করিস না। আজ আমরা আরও দূরে যাব। চোঁচালে শুনতেও পাব না।’

এই বলে শালিক আর বেড়াল বনে কাঠ কাটতে চলে গেল অনেক দূরে। এদিকে শেয়ালও এসে জানলার নীচে বসে বসে গান ধরল:

‘হলদে ঝুঁটি হলদে ঝুঁটি,

বাহারে মোর মোরগটি,

তেল-চক-চক তোমার গা,

জানলা দিয়ে মুখ বাড়াও,

মটরশুটি নিয়ে নাও।”

 

মোরগ তবু চুপ করে বসে রইল। তাই শেয়াল আর একটা গান ধরল:

 

‘ছেলেমেয়েরা এ পথ দিয়ে দৌড়ে গিয়েছে,

দৌড়ে যেতে গমগুলো সব ছড়িয়ে পড়েছে।

মুরগীর দল খুটে খুটে খেতে লেগেছে,

মুরগীর দল মোরগদের বাদ দিয়েছে…’

 

তবু চুপটি করে বসে রইল মোরগটি। শেয়াল তাই ফের গান ধরল:

 

‘লোকজনরা এ পথ দিয়ে চলে গিয়েছে,

যেতে যেতে বাদামগুলো ছড়িয়ে পড়েছে।

মুরগীর দল খুটে খুটে খেতে লেগেছে,

মুরগীর দল মোরগদের বাদ দিয়েছে…’

 

মোরগ তখন জানলা দিয়ে মুখ বের করে বলল: ‘কক কক কক! বাদ দেবে কেন?’

ব্যস“ অমনি শেয়ার খ্যাঁক করে ধরে গহন বনের পারে, খর নদীর ধারে খাড়া পাহাড় ঘুরে নিজের গর্তে নিয়ে গেল ওকে…

মোরগ যত ডাকে যত চোঁচায়, শালিক আর বেড়াল কিন্তু কিছু শুনতে পায় না। যখন বাড়ী ফিরল তখন দেখে মোরগ নেই।

শালিক আর বেড়াল তখন চলল শেয়ালের পায়ের দাগ ধরে ধরে। বেড়াল মাটিতে ছোটে, শালিক বাতাসে ওড়ে … শেষকালে তো শেয়ালের গর্তে পৌছল ওরা। বেড়াল বাজনা বাজিয়ে গান আরম্ভ করল:

 

‘ত্রিম ব্রিম বাজনদার

বোল তুলেছে সোনার তার…

শেয়াল-বোন কি আছে ঘরে

গুটি সুটি কোটর জুড়ে?’

 

গান শুনে শেয়াল ভাবল, “কে রে এত ভাল বাজনা বাজায়, এমন মিটি করে গায় ! দেখি তো!”

গর্ত ছেড়ে বাইরে এল শেয়াল। আমনি শালিক আর বেড়াল শেয়ালকে ধরে একেবারে মারণ আর ঠোকন। শেয়ালও ভোঁ ভোঁ দৌড়।

শালিক আর বেড়াল তখন মোরগকে চুপড়ির মধ্যে বসিয়ে বয়ে নিয়ে এল বাড়ীতে।

তারপর থেকে তারা  ‍সুখে স্বাচ্ছন্দে বাস করতে লাগল, এখনো করছে।

 

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!