রোম ও পারস্য অভিযান-পর্ব ১
রাজ্য পরিচালনার ভার গ্রহন করার অব্যবহিত পরেই পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে বাধ্য হয়েছিল হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)। পারস্য ও রোম তখন ধন-ঐশ্বর্যে, বীরত্বে এবং লোক সংখ্যায় এত প্রবল ছিল যে, হযরত আবু বকরের মুষ্টিমেয় সৈন্য তাঁরা ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে পারত। কিন্তু খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন সুদক্ষ পরিচালক, অটল আত্নবিশ্বাসী এবং লৌহ মানব।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি ছিল সুদৃঢ় প্রত্যয় এবং সৎ সাহসের জন্য এ দুটি শক্তিমান সাম্রাজ্যের সাথে মরণ-পণ যুদ্ধে তিনি বিজয়মালা কন্ঠে ধারণ করেছিলেন। অতিশয় সংকট মুহুর্তেও তিনি ভীত হননি। সব সময়ই যুদ্ধগামী সেনাপতি এবং সৈন্যদেরকে তিনি যা যা নির্দেশ প্রদান করতেন তা হলঃ সব সময় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে মনে রাখতে হবে এবং তাঁকে ভয় করে চলতে হবে।
তাঁর অধীনে যে সমস্ত সৈন্য থাকবে তাঁদের প্রতি সর্বদা ভদ্র ব্যাবহার করবে। নিজের ব্যাবহার সব সময় সংযত রাখবে। তাহলে অন্য সবাই তোমার আদর্শে অনুপ্রাণিত হবে। সেনাবাহিনীকে খুব অল্প কথায় নির্দেশ দান করবে। দীর্ঘ উপদেশ দিলে তাঁরা ভুলে যাবে। বিপদে দলের অধিনায়ককেও উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে। অসৎ চরিত্রের ব্যক্তি এবং ভীরু ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করবে না।
তোমার অধীনস্থ সৈন্য-সামন্তদের সাথে রাতে অবসর সময়ে যুদ্ধ সংক্রান্ত আলাপ আলোচনা করবে। হযরত আবু বকর (রাঃ) মুসলিম রাজ্যের বিস্তার এবং রাষ্ট্রের পরিচালন পদ্ধতি সুন্দর ভাবে গড়ে তুলেছিলেন। প্রয়োজনবোধে সংগ্রামের পর সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। বাইরাইনের বিদ্রোহ দমন করার সময় মুসলমান সৈন্যগণ বুঝতে পারল যে পারস্যবাসীরা এবং পারস্য সম্রাট স্বয়ং বাহরাইনের বিদ্রোহীদেরকে সহযোগিতা করছে।
বাহরাইন হল আরব দেশের একটি অংশ। অতএব বাহরাইনকে পারস্যের জনগণ অহেতুক সহযোগিতা করবে তা গ্রহন করা যায় না। পারস্যের এ সন্দেহজনক কাজের জন্য তাঁদের সাথে মুসলমানদের সংঘর্ষ অপরিহার্য হয়ে উঠল। এ ঘটনার অনেক পূর্বে থেকেই আরবের সাথে পারস্যের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব চলছিল। উদাহরণ সরূপ বলা যেতে পারে, হিজরীর ষষ্ঠ সালে হোদায়বিয়ার সন্ধি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মক্কার বিধর্মীদের সাথে মুসলমানদের যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব চলছিল এ সন্ধির কারণে সেখানে কিছুদিনের জন্য শান্তি স্থাপিত হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যুগে নিকটবর্তী দেশসমুহের শাসনকর্তাদেরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। খসরু ছিলেন সে সময়ের পারস্যের বাদশা। দূতের মারফৎ তাঁর কাছেও হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন।