রাসূল্লাহ (সাঃ) এর সাথে জ্বীনদের সাক্ষাত

আবু নোয়াইম  বর্ণনা করেন, লোকেরা ইবনে মাসউদকে জিজ্ঞেস করল, যে রাতে জ্বীন সম্প্রদায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে উপস্থিত হয়, তখন কি তুমি তার সাথে ছিলে? তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমি সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)  এর সাথে ছিলাম। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেনঃ

আসহাবে সোফফার সকলকে জনৈক মদিনাবাসী খাওয়ার দাওয়াত করলেন। যথাসময় তিনি আমাকে ছাড়া অপর সকলকে আহার করতে নিয়ে গেলেন। একটু পরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)  আমার অবস্থা জিজ্ঞেস করলে আমি তাঁকে জানালাম, আমার কেউ সাথে নেয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি আমার সাথে চল। হয়ত রাতে আহারের ব্যবস্থা হতে পারে। আমি তার সাথে উম্মে ছালমার গৃহে গেলাম। তিনি ঘরের ভিতর তাশরীফ নিয়ে গেলেন। খনিক পরেই ভেতর থেকে একটি বালিকা এসে জানাল, গৃহে আহারের কোন ব্যবস্থা নেই। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি তাৎক্ষণাৎ মসজিদে ফিরে এসে কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষন পর ঐ বালিকাটি পুনরায় আগমন করে বলল, আপনাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্মরণ করেছেন।  আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)  এর খেদমতে হাজির হলাম। তিনি খেজুর গাছের একটি শাখা দ্বারা আমার বক্ষর স্পর্শ করে বললেন, তুমি আমার সাথে চল। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম। পথে তিনি আমাকে কেয়েকটি দোয়া শিখিয়ে দিলেন। আমি ঐ দোয়াগুলো তিন বার পড়লাম।

রাসূলুল্লাহ এর সাথে মদীনার ” বাক্বীউল গারক্বাদ” নামক গবর স্থানে গমনের পর তিনি একটি কাঠি দ্বারা মাটিতে বৃত্ত রচনা করে আমাকে তার ভিতর বসিয়ে বললেন, আমি প্রত্যাবর্তনের পূর্বে তুমি এ বৃত্ত থেকে বের হবেনা। এ বলে তিনি একদিকে চলে গেলেন। আমি দেখতে পেলাম আমার সামনে খর্জুর বৃক্ষ সমূহ থেকে কাল মেঘ বের হয়ে আকাশ অন্ধকার করে ফেলছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য আমার আশঙ্কা হতে লাগল। কিন্তু তিনি ফিরে আসার পূর্বে আমাকে এ বৃত্ত হতে বের হতে নিষেধ করে গেছেন এ কারণে আমি অসহায়ের মত সেখানে বসে থাকলাম। এমন সময় হঠাৎ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কণ্ঠ শুনতে পেলাম।  তিনি বসে পড়লেন।  তৎক্ষণাৎ একদল জ্বীন বসে পড়ল। তারা ভোর হওয়া পর্যন্ত সেখানেই উপবিষ্ট ছিল।

পরবর্তীতে ইবনে মাসউদ (রাঃ) কুফা নগরীতে  বসবাসকালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সম্মুখে দেখা সেই জ্বীনদের কাউকে কাউকে মাঝে মধ্যে দেখতে পেতেন।

আবুল বাকা শিবলী হানাফী রচিত ” আহকামুল মারজান ফী আহকালিম জান গন্থে উল্লেখ করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে জ্বীন সম্প্রদায়ের সাক্ষাতের ছয়টি ঘটনা হাদীস দ্বারা প্রামাণিত।

(এক)- প্রথমবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)  হঠাৎ আমাদের মধ্যে থেকে গায়েব হয়ে গেলেন। সাহাবায়ে কেরাম চর্তুর্দিকের বন-জঙ্গল ও পাহাড় পর্বতে বহু খোঁজা খুঁজি করেও তার কোন  হদীস পাওয়া গেল না। অবশেষে প্রত্যুষে তিনি হেরা পর্বতের দিক থেকে বের হয়ে এলেন। আমাদের কৌতুহলের জবাবে তিনি বললেন, জ্বীনদের পক্ষ থেকে একজন দূত দাওয়াতনামা নিয়ে এসেছিল। আমি তার সাথে গমন করে জ্বীন সম্প্রদায়কে আল্লাহর কালাম শ্রবন করিয়েছি। এ ঘটনায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)  জ্বীনদের সাথে একাকী সাক্ষাৎ করেছিলেন।

(দুই) দ্বিতীয়বার মক্কার পাহাড়ে কতিপয় জ্বীন  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে দেখা করেন।

(তিন) তৃতীয়বারও মক্কার এক পাহাড়ে জ্বিনদের সাথে তার দেখা হয়।

(চার) চতুর্থবার বাক্বীউল গারক্বাদে তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে। তৃতীয়  ও চতুর্থু বারের সাক্ষাৎকালে  হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ছিলেন।

(পাঁচ) পঞ্চম বার জ্বীনদের সাথে মদীনার বাইরে সাক্ষাৎ হয়।  এ সময় হযরত ইবনে জোবায়ের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ এর সাথে ছিলেন।

(ছয়) ষষ্ঠবার এক সফরে কতিপয় জ্বীন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে দেখা করে। তখন বেলাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ছিলেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।