নাম টি পুরনো হলেও খাবার টি একদম নতুন।আর খেলে কি হয় তাও বলি শোন।রোজ বিকাল হলে পাড়ার মোড় হতে হাঁক শোনা যায়,“চাই ঘুঘনি-ই-ই।আলু-নারকেল গরম ঘুঘনি-ই-ই”তাই শুনে পাড়ার ছেলে মেয়েরা ছুটে আসে।অমনি দেখাযায়,কাধে ময়লা কাপড়ের ঝোলা।গায়ে হাত কাটা ময়লা শাট,খালি পা একটি লোক এক পাশে একটু হেলে,একটু খুড়িয়ে গালি দিয়ে আসছে।লোকটি বাড়ি কোথায় তা তারা জানে না,কিন্তু দেখে সে রোজ এমনি সময় আসে।সে তাদের প্রায় সবারই নাম জানে।তাদের দেখে হাসে।তার ঝোলায় থাকে একটা বড় অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে ঘুঘনি-গরম,ঝাল ঝাল।সে এক খানি বড় টিনের চামচে করে তাই তুলে ছোট ছোট শাল পাতায় সবাই কে দেয়।অবশ্য পয়সা নিয়ে,বিনা পয়সায় নয়,তা সে যতই হাসুক আর আদর করে,“কি খুকি?বলুন।
সেদিনও তার হাঁক শুনে মিনু,কৃষ্ণা,নানটু,রবি,ছুটে আসে তাকে ঘিরে ধরল।রানু আর তার ছোট বোন কানু এল ছুটে।সবাই কিনছে।সবাই বলছে আমার আগে দাও।”রানু বললে,দাড়া কানু,আমি পয়সা নিয়ে আসি।বলে সে বাড়ির দিকে ছুটলো।ছুটতে ছুটতে তার মনে পড়ে গেল দাদার সেদিন কার ধমকের কথা।খবরদার বাজারের ঘুঘনি খেও না।যত সব পঁচা জনিস দিয়ে নোংরা বাসন পত্র তৈরি।ও আবার লোকে খায়!এবার যদি কখনও দেখি-”
তবে দাদা এখন নেই।কিন্তু মায়ের কাছে পয়সা পাবার সামান্য একটু গোল ছিল।দুপুরের সামান্য একটা ঘটনা,তেমন কিছু নয়,সে তো ভুলেই গিয়ে ছিলাম।তেমন ব্যাপার কারো মনেই থাকে না।দুপুরে মা যখন ঘুমাচ্ছিলেন,তারা দুই ভাই বোন ভারার ঘরে ঢুকে আচারের যার থেকে একটু খানি জলপাইয়ের আচার নিয়ে খেয়েছিল।কানুই খেয়ে ছিল প্রায় সবটা,সে কেবল আঙুলে যেটুক লেগেছিল সেটুকু চেটেছিল।কানু বড্ড কেঁদছিল।কিছুতেই থামছিল না।তাই তাকে ভোলাবার জন্য আচার টুকু নিয়ে ছিল।তাছাড়া মা তো তাদের দুজনকে একদিন একটু দেবেন নলেছিলেন।একে চুরি বলে না।খাওয়া তো নয়ই।তবুও মা তার কথা শুনতে চান না,বলেন,কেন তুই আচারে হাত দিয়েছিল?কি মুস্কিল।তাই মা হাকিয়ে দিলেন।সে ছুটল কাকিমার কাছে।কিন্তু একটু বাঁধাছিল।কাকীমা সেদিন খুকুকে নাইয়ে,কাজল পরিয়ে,পাউডার মাখিয়ে ঘুম পড়াতে যখন ঘরে ডুকেছিলেন,তখন তার ফুলকাটা পাউডারের কৌটটা বারান্দাতেই পড়েছিল।পাউডারটার কি সুন্দর গন্ধ!যেন গোলাপ ফুল।রানুও টার ডলিপুতুলটাকে এনে পা ছড়িয়ে বসে কৌটা থেকে একটুখানি-মোটে এক চিমটি-পাউডার নিয়ে মাখিয়েছিল।চোখ দুটো খারাপ হয়ে যাবে বলে চোখে কাজল পরাই নি।তবুও কাকিমা বলেন রানু পাওডারের কৌটাটা খালি করে দিয়েছে।কেউ তার কথা বিশ্বাস করে না।কেউ টার কথা বোঝে না।কো যে করবে সে।
সে যখন খালি হাতে ফিরে গেল,তখন দেখল ঘুঘনিওয়ালা চলে যাচ্ছে।আর মিনু কৃষ্ণা,রবি,নানটু,শালপাতা থেকে জিব দেয়ে চেটে খাচ্ছে আর হাসছে।কি হাসি!দেখলে গাঁ জ্বলে যায়।আহা!আবার দেখিয়া দেখিয়া খাওয়া হচ্ছে।সে বলল,যত সব পচা জিনস দিয়ে তৈরি!নানটু জিব দিয়ে একটু ঘুঘনি মুখে তুলে চিবতে চিবতে বললে,আঙ্গুর ফল টক।একদা এক শেয়াল-”
গল্পটি রানু জানে।
সে আর দাঁড়াল না;কানুর হাত ধরে টানতে টানতে বললে,চল কানু,আমরা ঘুঘনি তৈরি করি গে।ভারি তো শক্ত।যারা ঘুঘনি খায় তারা সবাই জানে ঘুঘনি কি দিয়ে তৈরি হয়।তবে রানুর ঘুঘনিদানা একেবারে আলাদা জিনিস।
সন্ধ্যাবেলা-
দুই ভাই বোন বমি করতে লাগলো।সেই সঙ্গে পেটের ব্যাথা।দুটোই থামে না।মা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন;বললেন,কেন এমন হল?কি খেয়েছিল তোরা?”
কামু বললে,ঘুঘনি।
দাদা হাঁক দিয়া উঠলো,“আবার ঘুঘনি-?
মা জিজ্ঞেস করলেন,পয়সা কোথায় পেলি?”
কামু বললেন দিদি তৈরি করেছিল।”
কাকিমা বললেন,“ওমা!আমরা দেখতে পেলাম না তো।কোথায় তৈরি করলে?কানু বললে ছাদে,
মা জিজ্ঞেস করল কি দিয়ে তৈরি করলিছিল?
রানু বললেন ধোঁকার জন্য ডাল ভিজিয়েছিলাম তাই দিয়ে-মুলো আর কাচা লঙ্কা কুচিয়ে-নারকেল তেল আর নুন মেখে-”
শুনে মা ও কাকিমা হাসবেন কি কাঁদবেন বুঝতেই পারছেন না।
দাদ কিন্তু হো-হো করে হেসে উঠল।একটু পরেই এলেন ডাক্তার।রোগী দুটো কে দিলেন ঔষধ আর দিলেন উপদেশ।
নিজের তৈরি ঘুঘনি আর কখনও খেও না।বলে মুচকি হেসে ডাক্তার চলে গেলেন। দুই ভাই আর বোনের সে রাতে জুটল উপোস আর জল।তবুও দাদার হাসি আর থামে না।ছাদ থেকে ভাঁড়টা নিয়ে আসে দু,ভাইবনের বিছনার পাশে দাঁড়িয়ে সেটা দেখে আর হাসে।ভঁড়টি দইয়ের।টার মধ্যে রানুর ঘুঘনি তখনও একটু ছিল।রানু বালিশে মুখ লুকিয়ে উপুর হয়ে পড়ে রইলো।হাসি যে তারও পাচ্ছিল না তা নয়।পরদিনও ব্যাপার টা মিটল না।বন্ধুরা যে শোনে সে হাসে।তারা আবার তাকে দেখেই বলতে থাকে ঘুঘনিওয়ালি।রানু তাই সারাদিনের মধ্যে বাড়ি থেক বেরুলোই না।পুতুল আর খেলনা দিয়ে ঘরের কোণটিতে কাটিয়ে দিল।