রাজা রায়হানের স্বপ্নের তাবীর-৪র্থ অংশ
রাজা রায়হানের স্বপ্নের তাবীর-তৃতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ভৃত্য হযরত ইউসুফ (আঃ) এর মর্মস্পশী আবেগের কথাগুলো শুনে রাজদরবারে চলে গেল এবং রাজার নিকট পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করল। রাজা এ সমস্ত কথা শুনে অগ্নিশর্মা হলেন। তখন রাজপরিষদবৃন্দ ও রাজমহলের রমণী দিগকে সম্মুখে ডাকলেন। প্রথমে রাজা আজিজ মেছেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আজিজ! তুমি নিষ্পাপ, সচ্চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ ও ধর্মপ্রাণ একটি ছেলেকে কেন কয়েদখানায় পাঠিয়ে দীর্ঘদিন যাবত কষ্ট দিচ্ছ? এর উপযুক্ত কৈফিয়েত দাও। আজিজ মেছের রাজার কন্থস্বর শুনে বুঝলেন, তিনি বিষয়টির সঠিক খবর অবগত হয়ে ক্রদ্ধ হয়েছেন। তাই তিনি অন্যন্ত বিনয়ের সাথে বললেন, “হে মহান রাজা! এ বিষয় আমার নিবেদন হল এই যে, আমি উক্ত ছেলেটিকে গোলাম হিসেবে মাকেলবিন জেগরের নিকট থেকে অনেক মূল্য দিয়ে খরিদ করে আমার স্ত্রী জোলেখার হাতে দিয়ে বলেছিলাম আমি এই ছেলেটি কে খরিদ করে এনেছি। অকে তুমি যত্ন কর এবং নিজ সন্তানের ন্যায় প্রতিপালন কর। যখন আমাদের কোন সন্তান নেই তখন সন্তানের অভাবটা দূরীভূত হবে। ছেলেটি দ্বারা আমাদের কোন বড় কল্যাণ সাধিত হতে পারে। আমার স্ত্রী আমার কথার প্ররিপ্রেক্ষিতে বিশেষ যত্ন সহকারে তাকে প্রতিপালন করে। দীর্ঘ সাত বছর যাবত অকে প্রতিপালনের পরে যখন সে পূর্ণ যৌবনে পদার্পণ করে তখন সে আমার স্ত্রীর প্রতি প্রেমাক্ত হয়ে পড়ে। সে প্রায়ই আমার স্ত্রীর নিকট কামনা চরিতার্থের আবেদন নিবেদন করত। আমার স্ত্রী কঠিন ভাবে তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পড়ে একদা সে শক্তি প্রয়োগ করে যৌন উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করে। যার প্রকাশ্য দৃশ্য আমার সম্মুখে পড়ে যায়। তখন আর তাকে আমার মহলে রাখা নিরপদ মনে না করে আমি তাকে কারাগারে পাঠাতে বাধ্য হয়েছি।
অতপর রাজা রমণীদের নিকট হযরত ইউসুফ (আঃ) সম্পর্কে জানতে চাইলে রমণীগণ রাজার নিকট করজোরে বলতে লাগল, হে মহামহিম রাজা! আমরা এই ছেলেটির ন্যায় রূপবান কোন মানুষকে কোন দিন দেখিনি। তাই তাকে দেখা মাত্র আমরা তাঁর রুপের নেশায় পাগল হয়ে যাই। তাঁর নিকট আমরা প্রেম নিবেদন করি। তাঁর যৌবন সুধা পান করার নিমিত্তে ব্যাকুল হয়ে উটি। এ সঙ্গে জোলেখার ঘরে তাদের লেবু কাটার ঘটনাও প্রকাশ করে দিল।
জোলেখা আর নিরব থাকতে পারলেন না। তাই চিৎকার দিয়ে উঠলেন, হে মহা সম্মানিত রাজা! অপরাধ ইউসুফ বা রমণীরা কেউই করেনি। সমস্ত অপরাধ আমি করেছি। আমি ইউসুফ এর রুপের মোহে এমন ভাবে আকৃষ্ট হয়েছি যাতে আমার স্বাভাবিক জ্ঞান, বুদ্ধি, লজ্জা-শরম সব কিছু বিলোপ পেয়েছে। এমন সত্য কথা বলতে আমার আর কোন লজ্জা নেই। ইউসুফকে অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত করার লক্ষ্যে আমি অনেক রকম কৌশল করেছি। কোন রকম চেষ্টাই কসুর করিনি।
ওর বক্ষে মুখ রেখে ক্ষণিকের জন্য তৃপ্তি লাভ করার নেশায় আমাকে পশুত্ব বরণ করতে হয়েছে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে যখন আমি ব্যর্থ হয়েছি তখন রাজমহলের আমার সখীদেরকে আমার সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহন করি। যখন তারা ইউসুফের রূপ দর্শন করল তখন আমা রকথা ভুলে গিয়ে নিজেরা অকে লাভ করার জন্য পাগল হয়ে গেল। আমি আর উপায় দেখছিলাম না। মনে দুর্বলতা দেখা দিল যাকে ঘিরে আমার জীবনের সর্বস্ব উজাড় করে দিলাম, যার মহে আমার জীবন যৌবন উৎসর্গ করলাম এবং যার জন্য মানুষের নিকট জঘন্য নিন্দার পাত্রী হিসেবে নিহ্নিত হলাম তাকে হয়ত বা আমার সখীগন আমার নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে এতা আমার সহ্য হল না। আমি আজিজ মেছেরকে বলে তাকে বন্দী খানায় পাঠিয়ে দেই। অতএব হে রাজাধিরাজ! এ ঘটনার প্রকৃত আপরাধিনী আমি। আমাকে শাস্তি দিন, আমার বিচার করুন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
রাজা রায়হানের স্বপ্নের তাবীর-প্রথম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন