রাজা রায়হানের স্বপ্নের তাবীর-৩য় অংশ

রাজা রায়হানের স্বপ্নের তাবীর-দ্বিতীয় অংশ   পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ভৃত্য হযরত ইউসুফ (আঃ) – এর উপদেশ নিয়ে রাজ দরবারে পৌঁছে রাজার নকত সবিস্তার বলল। রাজা হযরত ইউসুফ (আঃ) – এর কথাগুলো বিশ্বাস করলেন। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন এই মহৎ ব্যক্তি জেলে কেন পচে মরছে। যে স্বপ্নের তাবীর তাঁর রাজ্যের কোন বিদ্বান ব্যক্তি দিতে পারিনি সে স্বপ্নের তাবীর ক্ষণিকের মধ্যে যিনি দিয়ে দিলেন তিনি সাধারণ লোক নয়। তোমাকে স্বপ্নের তাবীর বলে দিলেন তিনি কেমন লোক? ভৃত্য উত্তর দিল, মহাত্মন! তিনি একজন মহা মানব, চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল তাঁর চেহারা। যে ব্যক্তি তাঁর দিকে একবার তাকায় সে দ্বিতীয়বার তাঁর দর্শনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। আপনার রাজমহলের বহু রমণী তাঁর রূপে উন্মাদ হয়ে আছে। তারা জেলখানায় গিয়ে প্রত্যহ তাকে একবার দর্শন করে আসে। এছাড়া যে রমণী তাঁর দিকে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সেই তাঁর প্রেমাসক্ত হয়ে পড়ে। এ বিষয় অনুসন্ধান করলে আপনি অনেক ঘটনা জানতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, এ ব্যক্তি জেলখানায় যাওয়ার পড়ে জেলের সমস্ত কয়েদী তাঁর ধর্ম গ্রহন করে এমন সচ্চরিত্রবান হয়েছে যাতে এখন আর জেলের গেট আটকে রাখতে হয় না। জেল প্রহরীর কোন রকম পাহারা দিতে হয় না। সকল কয়েদী ঈমানদার। তারা কারাগারের নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ না হতে কেউ জেল থেকে পালাবার চিন্তা করে না। তারা কেউ মিথ্যা কথা বলে না, বাজে কথা বলে সময় নষ্ট করে না। সর্বদা মহান শ্রষ্টা, আল্লাহ তা’য়ালার নাম স্মরণ করে এবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করে।

তৃতীয়ত, এ ব্যক্তি হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – এর বংশধর। তাঁর পিতার নাম হযরত ইয়াকুব (আঃ) তিনি নাকি কেনানবাসীদের হেদায়েতের উদ্দেশ্যে নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। তাকে তাঁর পিতা নাকি অধিক ভালবাসতেন। এজন্য তাঁর সৎ ভাইয়েরা তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয় এবং পিতার নিকট হতে কৌশল করে নিয়ে গভীর অরণ্যের এক কূপের মাঝে ফেলে দেয়। সেখানে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর জীবন রক্ষা করেন। অতপর একদল বনিক তাকে কূপ থেকে উদ্ধার করে। তাঁর ভাইয়েরা তখন তাদের নিকট গোলাম বলে পরিচয় প্রদান করে এবং অল্প কিছু মুদ্রার বিনিময় তাদের নিকট বিক্রি করে দেয়। বনিকেরা তাকে মিশরে এনে সর্বোচ্চ মূল্যে আজিজ মেছেরের নিকট বিক্রি করে। আজিজ মেছের তাকে তাঁর নিজ মহলে বসবাসের বাবস্থা করেন। আজিজ মেছেরের স্ত্রী জোলেখা তাকে খুব ভালবাসতে আরম্ভ করে। শেষ পর্যন্ত তাঁর নিকট প্রেম নিবেদন করে। একদা তিনি জোলেখার আবদার কঠিন ভাবে প্রত্যাখ্যান করে তখন সে তাঁর প্রতি কাম লালসা চরিতার্থের প্রবল চেষ্টা আরম্ভ করে। এ ঘটনা একদিন আজিজ মেছেরের নিকট ফাস হয়ে যায়। তখন নিজ পরিবারের ইজ্জত রক্ষার তাকিদে একে কারাগারে প্রেরণ করে।

রাজা ভৃত্যের নিকট হযরত ইউসুফ (আঃ) – এর গুণাগুণ শুনে তৎক্ষণাৎ তাকে রাজ দরবারে নিয়ে আসার জন্য ঘোড় সওয়ার সহ ভৃত্যকে প্রেরণ করেন। ভৃত্য অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সওয়ারসহ জেলখানায় গিয়ে পৌঁছে। অতপর হযরত ইউসুফ (আঃ) ভৃত্যের কথা শুনে বলেন, “দেখ আমাকে আজিজ মেছের কি অপরাধের জন্য জেলে পাঠিয়েছেন তা আমর জানা নেই এবং আমার নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়েছে কিনা তাও আমি জানি না। অতএব আজিজ মেছেরের আদেশ ব্যতীত আমি এখান থেকে বের হতে পারি না। দ্বিতীয়ত, যে রমণীগণ আমাকে উত্যাক্ত করেছে আমার সম্মুখে এসে লেবুর বদলে হাত কেটেছে তাদের নিকট প্রথমে জিজ্ঞাস করা হোক কার দ্বারা অপরাধ সংগঠিত হয়েছে এবং কি কারনে আমাকে জেলে পাঠান হয়েছে। এ সমস্ত রহস্য উদঘাটন হলে এবং নির্দোষ প্রমাণিত হলে আমি এখান থেকে বের হতে পারি। এর পূর্বে এখান থেকে বের হওয়া আমার জন্য উচিত হবে না। তুমি রাজাকে আমার কথাগুলো বুঝিয়ে বল।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

রাজা রায়হানের স্বপ্নের তাবীর-৪র্থ অংশ  পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।