রাজা ও ঈগল পাখি

বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশাকরি ভালো ও সুস্থ আছো। তোমাদের মধ্যে হয়ত এমন কেউ নেই যে রেডিও বা টেলিভিশনের খবর শোনে না কিংবা পত্রপত্রিকা পড়ে না। সত্য, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সবাই শুনতে চায়। কিন্তু চাইলেই কি তা পাওয়া যায়? যায় না। কারণ সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের সুবিধা অনুযায়ী সংবাদ প্রচার করে। তারা যাই প্রচার করুক-তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যাচাই-বাছাই করে সত্য খবরটা গ্রহণ করা। কেবল সংবাদমাধ্যমই নয়, কোনো মানুষ যখন কোনো বিষয়ে কোনো খবর বা তথ্য দেয় তাও যাচাই-বাছাই করে বিশ্বাস করতে হবে। কারণ ফাসেক লোকের কথা বিশ্বাস করলে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, “হে মুমিনগণ ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তাহলে তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।” (সূরা আল-হুজরাত-৬) কুরআনের এ নির্দেশ না মানার কারণে নানা ধরনের অশান্তি সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখেই আমরা একটি গল্প প্রচার করেছি। গল্পটি এ রকম- অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ইশো নামে এক রাজা ছিল। রাজা পশুপাখিদের কথা বুঝতে পারতেন এবং পশুপাখিদের সঙ্গে কথাও বলতে পারতেন। রাজার ছিল একটা পোষা ঈগল পাখি। ঈগল পাখিটা দেখতে ছিল খুবই সন্দর। রাজা সে ঈগলকে খুব আদর করতো এবং তার সব কথাই বিশ্বাস করত। বিশেষ করে ঈগল যেসব স্বপ্ন দেখতেন, রাজা মনে করত সেগুলো সব সত্যি হবে। রাজার বিশ্বাস, ঈগল কখনো মিথ্যে স্বপ্ন দেখে না।

আর ঈগলও রাজার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিদিনই নিত্য নতুন আব্দার নিয়ে হাজির হতো এবং একের পর এক তার ইচ্ছেগুলো পূরণ করত। ঈগলের যখন ক্ষুধা লাগত তখন রাজাকে কুর্নিশ করে বলত, ‘মহারাজ! কালরাতে আমি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি।’ রাজা আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইতেন: কি স্বপ্ন দেখেছ? ঈগল বলত: ‘দেখলাম আমি একটা নাদুস নুদুস সুন্দর মোষ দিয়ে আমার রাতের ভোজ সারছি।’ অথবা বলত, ‘আমি একটা বেয়াদব বানরকে দুপুরের ভোজে ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছি।’

রাজা ভাবতেন, ঈগলের স্বপ্ন তো মিথ্যে হতে পারে না, সে তো ওদের খাবেই। তাই সে তার রাজ্যের পশুদের হুকুম দিয়ে দিতেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে মোষটা সবচেয়ে নাদুস নুদুস আর সুন্দর সে মোষটা যেন রাতে সবচেয়ে উঁচু যে পাহাড় তার চূড়ায় উঠে বসে থাকে। তাতে ঈগলের খেতে কষ্ট একটু কম হবে।’ অথবা রাজা বলতেন, ‘শোনো বানরের দল। তোমাদের মধ্যে নিশ্চয়ই কেউ বাঁদরামিতে সেরা। তাকে খুঁজে বের কর। কাল দুপুরে তাকে সবচেয়ে উঁচু গাছটার ডালে উঠতে বল। কাল দুপুরে আমার ঈগল ওকে খাবে।’

কি আর করা! রাজার হুকুম পেয়েই সুন্দর মোষটা চলে যেত পাহাড়ের চূড়ায় আর বানরটা চলে যেত উঁচু গাছের মগডালে। ঈগল মজা করে তার রাত ও দুপুরের ভোজ সারত মোষ আর বানর খেয়ে। রাজার এসব কাণ্ড দেখে বনের পশুরা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকত। ঈগলকে তারা ঘৃণাও করত। কিন্তু রাজার ভয়ে কেউ কিছুই বলত না, প্রতিবাদও করত না। কারণ প্রতিবাদ করতে গেলে রাজা রেগে গিয়ে সব পশুকেই মেরে ফেলতে পারে।

একদিন ঈগল ভাবল, একটা সাদা হাতির গোশত খেলে মন্দ হয় না। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সে রাজার কাছে গিয়ে বললো, ‘রাজামশাই, কাল রাতে আমি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি। আমি দেখলাম, একটা সাদা হাতি খাচ্ছি। আচ্ছা মহারাজ! হাতি কি কখনো সাদা হয়? আমি তো দেখেছি হাতিরা দেখতে বিচ্ছিরি রকম কালো। তাহলে আমার স্বপ্নটা কি মিথ্যে?’

রাজা বললেন, না না, তোমার স্বপ্ন তো কখনো মিথ্যে হতে পারে না। তুমি হয়ত দেখনি, কিন্তু উত্তরের বনে ওই হ্রদের ধারে কয়েকটি সাদা হাতি সত্যিই আছে। ঠিক আছে আমি হুকুম দিয়ে দিচ্ছি। কালই তুমি সাদা হাতি খেতে পারবে।’ এই বলে রাজা দ্রুত তার একদল সৈন্যকে পাঠিয়ে দিলেন উত্তরের জঙ্গলে। সৈন্যরা সেখানে গিয়ে দেখল, একটা মা সাদা হাতি তার বাচ্চাকে নিয়ে হ্রদের নীল পানিতে গা পরিস্কার করছে। সৈন্যরা সেই মা হাতিকে রাজার হুকুম জানিয়ে বলল, ‘এই যে সাদা হাতি, শোনো। কাল দুপুরে তুমি তোমার বাচ্চাকে নিয়ে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টায় থাকবে। রাজার ঈগল পাখি স্বপ্ন দেখেছে যে, সে একটা সাদা হাতি খাচ্ছে। রাজার ঈগলের স্বপ্ন কখনো মিথ্যে হয় না। সে তোমাদের খাবেই। তাই তোমরা তৈরি থেকো।’

সৈন্যরা চলে যেতেই সাদা হাতি বলতে লাগল, ‘হায়! হায়!! আমাকে খেয়ে ফেললে আমার বাচ্চাটার কি হবে? কে ওকে দেখাশোনা করবে? মরণের কথা ভেবে হ্রদের পানিতে দাঁড়িয়ে কান্না জুড়ে দিল সাদা হাতি। হ্রদের পাড়ে ছিল একটা সুপারি গাছ। সুপারি গাছের মাথায় একটা পেঁচা বসেছিল। পেঁচা সাদা হাতিকে ওভাবে চিৎকার করে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ‘সাদা হাতি, তোমরা ওভাবে কাঁদছো কেন? কি হয়েছে তোমাদের?’ সাদা হাতি পেঁচাকে দেখে আরো জোরে কেঁদে উঠল, কাঁদতে কাঁদতে সব ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে পেঁচা বলল, ‘ওহ্, কি দুঃখের কথা! রাজা কেন এ রকম নির্বোধ বুঝি না। একটা ভণ্ড ঈগলের কথা বিশ্বাস করে কেউ এভাবে পশুদের প্রাণ কেড়ে নেয়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রাজা ও ঈগল পাখি

বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশাকরি ভালো ও সুস্থ আছো। তোমাদের মধ্যে হয়ত এমন কেউ নেই যে রেডিও বা টেলিভিশনের খবর শোনে না কিংবা পত্রপত্রিকা পড়ে না। সত্য, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সবাই শুনতে চায়। কিন্তু চাইলেই কি তা পাওয়া যায়? যায় না। কারণ সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের সুবিধা অনুযায়ী সংবাদ প্রচার করে। তারা যাই প্রচার করুক-তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যাচাই-বাছাই করে সত্য খবরটা গ্রহণ করা। কেবল সংবাদমাধ্যমই নয়, কোনো মানুষ যখন কোনো বিষয়ে কোনো খবর বা তথ্য দেয় তাও যাচাই-বাছাই করে বিশ্বাস করতে হবে। কারণ ফাসেক লোকের কথা বিশ্বাস করলে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, “হে মুমিনগণ ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তাহলে তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।” (সূরা আল-হুজরাত-৬) কুরআনের এ নির্দেশ না মানার কারণে নানা ধরনের অশান্তি সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখেই আমরা একটি গল্প প্রচার করেছি। গল্পটি এ রকম- অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ইশো নামে এক রাজা ছিল। রাজা পশুপাখিদের কথা বুঝতে পারতেন এবং পশুপাখিদের সঙ্গে কথাও বলতে পারতেন। রাজার ছিল একটা পোষা ঈগল পাখি। ঈগল পাখিটা দেখতে ছিল খুবই সন্দর। রাজা সে ঈগলকে খুব আদর করতো এবং তার সব কথাই বিশ্বাস করত। বিশেষ করে ঈগল যেসব স্বপ্ন দেখতেন, রাজা মনে করত সেগুলো সব সত্যি হবে। রাজার বিশ্বাস, ঈগল কখনো মিথ্যে স্বপ্ন দেখে না।

আর ঈগলও রাজার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিদিনই নিত্য নতুন আব্দার নিয়ে হাজির হতো এবং একের পর এক তার ইচ্ছেগুলো পূরণ করত। ঈগলের যখন ক্ষুধা লাগত তখন রাজাকে কুর্নিশ করে বলত, ‘মহারাজ! কালরাতে আমি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি।’ রাজা আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইতেন: কি স্বপ্ন দেখেছ? ঈগল বলত: ‘দেখলাম আমি একটা নাদুস নুদুস সুন্দর মোষ দিয়ে আমার রাতের ভোজ সারছি।’ অথবা বলত, ‘আমি একটা বেয়াদব বানরকে দুপুরের ভোজে ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছি।’

রাজা ভাবতেন, ঈগলের স্বপ্ন তো মিথ্যে হতে পারে না, সে তো ওদের খাবেই। তাই সে তার রাজ্যের পশুদের হুকুম দিয়ে দিতেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে মোষটা সবচেয়ে নাদুস নুদুস আর সুন্দর সে মোষটা যেন রাতে সবচেয়ে উঁচু যে পাহাড় তার চূড়ায় উঠে বসে থাকে। তাতে ঈগলের খেতে কষ্ট একটু কম হবে।’ অথবা রাজা বলতেন, ‘শোনো বানরের দল। তোমাদের মধ্যে নিশ্চয়ই কেউ বাঁদরামিতে সেরা। তাকে খুঁজে বের কর। কাল দুপুরে তাকে সবচেয়ে উঁচু গাছটার ডালে উঠতে বল। কাল দুপুরে আমার ঈগল ওকে খাবে।’

কি আর করা! রাজার হুকুম পেয়েই সুন্দর মোষটা চলে যেত পাহাড়ের চূড়ায় আর বানরটা চলে যেত উঁচু গাছের মগডালে। ঈগল মজা করে তার রাত ও দুপুরের ভোজ সারত মোষ আর বানর খেয়ে। রাজার এসব কাণ্ড দেখে বনের পশুরা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকত। ঈগলকে তারা ঘৃণাও করত। কিন্তু রাজার ভয়ে কেউ কিছুই বলত না, প্রতিবাদও করত না। কারণ প্রতিবাদ করতে গেলে রাজা রেগে গিয়ে সব পশুকেই মেরে ফেলতে পারে।

একদিন ঈগল ভাবল, একটা সাদা হাতির গোশত খেলে মন্দ হয় না। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সে রাজার কাছে গিয়ে বললো, ‘রাজামশাই, কাল রাতে আমি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি। আমি দেখলাম, একটা সাদা হাতি খাচ্ছি। আচ্ছা মহারাজ! হাতি কি কখনো সাদা হয়? আমি তো দেখেছি হাতিরা দেখতে বিচ্ছিরি রকম কালো। তাহলে আমার স্বপ্নটা কি মিথ্যে?’

রাজা বললেন, না না, তোমার স্বপ্ন তো কখনো মিথ্যে হতে পারে না। তুমি হয়ত দেখনি, কিন্তু উত্তরের বনে ওই হ্রদের ধারে কয়েকটি সাদা হাতি সত্যিই আছে। ঠিক আছে আমি হুকুম দিয়ে দিচ্ছি। কালই তুমি সাদা হাতি খেতে পারবে।’ এই বলে রাজা দ্রুত তার একদল সৈন্যকে পাঠিয়ে দিলেন উত্তরের জঙ্গলে। সৈন্যরা সেখানে গিয়ে দেখল, একটা মা সাদা হাতি তার বাচ্চাকে নিয়ে হ্রদের নীল পানিতে গা পরিস্কার করছে। সৈন্যরা সেই মা হাতিকে রাজার হুকুম জানিয়ে বলল, ‘এই যে সাদা হাতি, শোনো। কাল দুপুরে তুমি তোমার বাচ্চাকে নিয়ে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টায় থাকবে। রাজার ঈগল পাখি স্বপ্ন দেখেছে যে, সে একটা সাদা হাতি খাচ্ছে। রাজার ঈগলের স্বপ্ন কখনো মিথ্যে হয় না। সে তোমাদের খাবেই। তাই তোমরা তৈরি থেকো।’

সৈন্যরা চলে যেতেই সাদা হাতি বলতে লাগল, ‘হায়! হায়!! আমাকে খেয়ে ফেললে আমার বাচ্চাটার কি হবে? কে ওকে দেখাশোনা করবে? মরণের কথা ভেবে হ্রদের পানিতে দাঁড়িয়ে কান্না জুড়ে দিল সাদা হাতি। হ্রদের পাড়ে ছিল একটা সুপারি গাছ। সুপারি গাছের মাথায় একটা পেঁচা বসেছিল। পেঁচা সাদা হাতিকে ওভাবে চিৎকার করে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ‘সাদা হাতি, তোমরা ওভাবে কাঁদছো কেন? কি হয়েছে তোমাদের?’ সাদা হাতি পেঁচাকে দেখে আরো জোরে কেঁদে উঠল, কাঁদতে কাঁদতে সব ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে পেঁচা বলল, ‘ওহ্, কি দুঃখের কথা! রাজা কেন এ রকম নির্বোধ বুঝি না। একটা ভণ্ড ঈগলের কথা বিশ্বাস করে কেউ এভাবে পশুদের প্রাণ কেড়ে নেয়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…