রাজবধূ পর্ব ৬৮ (রেহানা পুতুল)

রাজবধূ ৬৭ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

শিখা ঠায় দাঁড়িয়ে বিস্ময়কর চোখে দরজার উপরে তাকিয়ে রইলো। রাজ ভরাট গলায় বলল,

“শিখা,ভিতরে আসবে না?”

শিখা ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো দরজার উপরে ঝলমল করা #রাজবধূ শব্দটির দিকে অপলক চেয়ে রইলো। দেয়ালের মাঝে টকটকে লাল রঙ দিয়ে খোদাই করে লেখা রয়েছে রাজবধূ শব্দটি। শিখা বাড়াবাড়ি রকমের অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।

“নাম কোথাও চলে যাবে না। পরেও দেখতে পাবে। আসো বলছি।”

বলল রাজ।

শিখা সংকোচপূর্ণ মুখে বাসার ভিতরে গেলো। রাজ দু’হাত প্রসারিত করলো শিখাকে আলিঙ্গনের আশায়। শিখা এগিয়ে গিয়ে রাজের বুকে মাথা রাখলো। শিখা মৃদু কাঁপছে।

“একি! কাঁপা-কাঁপি হচ্ছে কেন?”

“রাজবধূ কেন লিখা দরজার উপরে?”

নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো শিখা।

রাজ শিখাকে নিয়ে ফোমের সোফায় বসালো। বলল,

“তোমাকে ফুলসজ্জা রাতে এই ফ্ল্যাটটারই দলিল গিফট করেছি। এটা রাজের বধূর বাসা। তাই রাজবধূ লিখা হলো। হিসাব ভেরি সিম্পল। তোমাকে আনতে যাওয়ার আগে বাসা রেডি করেছি। সব ফার্নিচার নতুন উঠানো হয়েছে। শোকেসের জন্য ডিনারসেট কেনা হয়েছে। তুমি আস্তেধীরে সব দেখে বুঝে নিও। এই বাসায় তোমার আধিপত্য চলবে। আর নাম দেখে কাঁপতে হয়?”

“নাহ এটার জন্য না। আমি কখনো লিফট দেখিওনি আর চড়িওনি। তাই হঠাৎ উঠাতে কেমন যেন লাগছে।”

“ওহ! তাইতো আমি তোমাকে ধরে রাখলাম লিফটের ভিতরে। লিফট তো তেমন কোথাও নেই। খুবই রেয়ার। যদিও বাংলাদেশে লিফটের প্রচলন শুরু হয়েছে আরো অনেক আগে থেকেই। বড় বড় কিছু অফিস ভবনে আছে। আর হাতে গোনা কিছু এপ্যাটমেন্টে আছে।”

“বুঝলাম। পুরো স্টিলের আলমারির মতো লিফট। সামনের দরজা খুলে ভিতরে দাঁড়াতে হয়। আবার দরজা বন্ধ করে দিতে হয় ভিতর থেকে। আমি একটু শোব। মাথা ঘোরাচ্ছে কেবল।”

“ওহ হো! লং জার্নিতো। তাই এমন হলো। আমার ত কিছুই হয়না জার্নিতে। আচ্ছা,যাও ভিতরে বেডরুমে গিয়ে রেস্ট নাও।”

শিখা ধীর পায়ে ভিতরে চলে গেলো। রাজ ইন্টারকমে ফোন দিয়ে গার্ডকে উপরে ডাকলো। টাকা দিয়ে বলল,

হোটেল থেকে ভাত,গোশত,ভর্তা নিয়ে আসার জন্য দুজনের হিসেবে। সে ফ্রেশ হয়ে টির্শাট ও ট্রাউজার পরে নিলো। ফ্রিজের কানেকশন দিলো। নূরীর দেওয়া খাবারগুলো বের করলো। গার্ড খাবার এনে দিয়ে চলে গেলো।

রাজ শিখাকে ডাকলো নৈশভোজের জন্য। শিখা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত। তবুও তার মাঝে মুগ্ধতার রেশ কিছুতেই কাটছে না রাজবধূ নামটা নিয়ে। রাজ তাকে এতটা ভালোবাসে? সে এত ভালো? এত মহান? এত উদার মন তার? সে উঠে গিয়ে খেতে বসলো টেবিলে। রাজ নিজেই খাবার পরিবেশন করলো।

শিখা আদুরে গলায় বলল,

“আপনি বসেন। আমি নিচ্ছি।”

“তুমি এই শহরে,এই বাসায় নতুন। তাই আমি তোমাকে আজ আপ্যায়ন করি। তারপর তো রোজ তুমিই করবে সব।”

শিখা খেতে খেতে বলল,

“আপনি কি এই বাসায় থাকতেন সবসময়?”

“নাহ। এটায় আমি কখনো থাকিনি।এটা কিনেছি বিয়ে করার কিছুদিন আগে। বউকে উপহার দেওয়ার জন্যই। আমি থাকি অন্য বাসায়। সেটা ভাড়া বাসা। অফিসের কাছাকাছি।”

“তাহলে কি আমি একা থাকবো এই বাসায়?”

ভীতু গলায় জানতে চাইলো শিখা।

“তা কেন? আমি থাকবো। আর একজন খালা ঠিক করা আছে। উনি সারাদিন থাকবে তোমার কাছে। তবে তুমি চাইলে আম্মাকে নিয়ে আসতে পারো তোমার কাছে। উনি আসলে আমি খুশী হবো এবং তোমার বিষয়ে নিঃশ্চিন্তে থাকতে পারবো। অফিসে বা বাইরে থাকলে আর চিন্তা হবে না।”

মাকে আনার কথা শুনে শিখা আবেগাপ্লুত হয়ে গেলো। কৃর্তাথ চোখে রাজের দিকে তাকালো। রাজ দু’চোখের পাতা বুঁজে শিখাকে আস্বস্ত করলো।

খাওয়া শেষে শিখা প্লেট বাটি কিচেনে সিংকে নিয়ে ধুয়ে ফেললো। পালংকে গিয়ে শুয়ে পড়লো। পালংকটা নতুন কেনা হয়েছে বোঝায় যাচ্ছে। রাতে একাকী বাসায় রাজ শিখার কোন বাধা শুনল না। বলল,

” তোমার শহর জীবনে আজ প্রথম রাত। বঞ্চিত করো না। একটু ভালোবাসা দাও এই ক্ষুর্ধাতকে।”

আকুতির স্বরে শিহরিত চোখে চেয়ে বলল রাজ। শিখা দোনোমোনো শুরু করলো। কিন্তু পরাজিত হলো রাজের ভালোবাসার কাছে। রাজ শিখার সুখ সমুদ্রে অবগাহন করলো ডুবুরির ন্যায়।

শিখার ঘুম ভাঙ্গলো বেলা করে। শাওয়ার নিলো। কাজা নামাজ আদায় করলো। মা,বোনের জন্য অনেক কাঁদলো। গ্রামের সবকিছু তার মনে পড়ছে। তালুকদার বাড়ির কথাও তার মনে পড়ছে। মতির মা,চাচী শ্বাশুড়ি ও স্বশুরের কথা বেশী মনে পড়ছে তার। কত ভালো মানুষ এরা। কতভাবে শিখার পাশে ছিলো নিজের মেয়ের মতো ভেবে। আসার সময় চেয়েও সই কুসুমের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি সে।যদিও কুসুমকে আগেই বলে নিয়েছে তার ঢাকায় চলে আসার কথা।

সকাল এগারোটার দিকে কাজের সেই খালা এলো। রাজ আগেই নিচে বলে রেখেছে তাকে খবর দেওয়ার জন্য। সে সবকাজ করলো বাসায়। রাজ তাকে বলল,

“খালা আপনি চলে যান আজ। আমি সারাদিন বাসায় আছি।”

সেই খালা চলে গেলো। শিখা ভাত রান্না করলো। রাজ লাইটার দিয়ে তাকে গ্যাসের চুলা জ্বালানো শিখিয়ে দিলো। রান্না শেষে দুজনে মিলে সব জিনিসপত্র,কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখলো।

বিকেলের অবসরে শিখা ঘুরে ঘুরে পুরো বাসা দেখতে লাগলো। এত মনোরম! এত দারুণ বাসা সেই এর আগে কোনদিনও দেখেনি। রাজ শিখার পিছন পিছন হাঁটছে। নরম হেসে জিজ্ঞেস করলো,

“বাসা পছন্দ হয়েছে বউ?”

“লজ্জা দিচ্ছেন? না উপহাস করছেন?”

নাক কুঁচকে বলল শিখা।

রাজ হ্যাঁচকা টানে শিখাকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। নাক টিপে, নাকে নাক ঘষে নিলো। দুহাতে শিখার কোমর চেপে ধরলো। ঘাড়ের চুল সরিয়ে চিবুক ঠেকিয়ে বললো,

“চাঁদ যেমন জানে না, পৃথিবীর সব মানুষ তার আলোয় মোহিত হয়। ফুল যেমন জানে না, কত মানুষের অন্তর তার সুগন্ধিতে বিবশ হয়। কত প্রেমিক মন উতলা হয়। তেমনি তুমিও জাননা, তোমার সৌন্দর্যে, তোমার গুণে, এই প্রেমিক হৃদয় কতটা আনন্দে থাকে। কতটা সুখী মনে করে সে নিজেকে। সুতরাং নিজেকে আর একটিবারের জন্যও ক্ষুদ্র ভাববে না। মনে থাকে যেন।”

শিখা জাপটে ধরে রাজকে। আদুরে বিড়ালছানার মতো রাজের বুকে মুখ ঘষতে থাকে। তার গলা ধরে আসে। কিছু বলতে পারে না। রাজ শিখার তুলুতুলে সরু ঠোঁটজোড়া দখল করে নিলো। ভিজিয়ে দিলো গাঢ় চুমুতে।

বাসায় গিয়ে জুবায়ের হারিসকে ঊর্মি নামের মেয়েটার কথা বললো। হারিস উৎসুক গলায় বললো,

“বলিস কী? আজব তো। তাহলে চল কাল আবার যাই নদীর পাড়ে। নাকি তার দেওয়া ঠিকানায় যাবি?”

“আরেহ নাহ! মাথা খারাপ? পরে কোন বিপদে পড়ি।”

তারপরের দিন তারা দুজন যায় দুবাইয়ের সেই ‘ক্রিক’ নদীর পাড়ে। দেখতে পেলো টপস পরা সেই মেয়েটি হাঁটছে। তারা এগিয়ে গেলো। হারিস পরিচিত হয়ে নিলো তার সঙ্গে। জানলো,ঊর্মির বাড়ি বাংলাদেশের লক্ষিপুর জেলায়। সেখানে পরিবারসহ থাকছে সে। তার বাবা দুবাইতে বিজনেস করে। মা হাউজওয়াইফ। তার পড়াশোনা শেষ। একটা বৃহৎ শপিংমলে ম্যানেজার পদে কর্মরত সে। নদী তাকে খুব টানে। তাই সে একা একা ঘুরতে আসে এখানে।

হারিস বলল,

“আপনাকে দেখে সবাই দূরে সরে যায়। এর কারণ কী? কাল যে আমার ফ্রেন্ডকে বললেন?”

ঊর্মি কাঁচভাঙা হাসিতে লুটোপুটি খেলো হিঃহিঃহিঃ করে। বলল,

“আপনার বন্ধু যে ভিতুর ডিম। তা দেখেই বুঝতে পেরেছি। তাই ইচ্ছে করেই বিভ্রান্তিতে ফেলে দেওয়ার জন্য ওকথা বলেছি মিস্টার। এই মজাটা এমন অচেনা কাউকে দেখলেই করি। তবে অবাক করার বিষয় হলো, অচেনা কাউকে এই জাতীয় কিছু বললে সে সত্যিই চলে যায় দ্রুত হেঁটে। এই প্রথম দেখলাম কেউ উল্টো আমার সামনে চলে এলো। এবং প্রশ্ন করলো।”

“তাহলে বুঝলেন ত ওটা ভয় ছিল না। নারীর প্রতি রেস্পেক্ট ছিলো একা দেখে।”

ঊর্মি চুপ হয়ে যায়। জুবায়েরের দিকে চেয়েই চোখ নামিয়ে ফেলল। জুবায়ের ঊর্মির মুখপানে স্থির চাহনি নিক্ষেপ করলো ঊর্মি সরি বলে অন্যদিকে চলে যায়। হারিস জুবায়েরকে নিয়ে নদীতে নৌকায় চড়ে। নৌকায় ঘোরা শেষে তারা চলে যায়।

এক সপ্তাহের মধ্যে জুবায়ের আশেপাশের অনেক এলাকা চিনে ফেললো। এখন সে একা একাই বের হয়। হারিস নিজের দোকানে ব্যস্ত থাকে। এক সকালে জুবায়ের কৌতুহলবশত ঊর্মির দেওয়া ঠিকানায় যায়। দেখে ঠিকানা সত্যি। সেই বাসায় ঊর্মিরা থাকে। সে বাড়িটি চিনে চলে আসার সময় পিছন থেকে ঊর্মি ডাক দিলো। এভাবে কয়েকবার আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে ঊর্মির সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে।

তালুকদার বাড়ির পরিবেশ আগের চেয়ে প্রাণচাঞ্চল্য। শিখা চলে আসাতে অনেকেই বেশ খুশী আদুরীসহ। তারা আগের মতো লম্পঝম্প করে চলতে শুরু করেছে। তবে বাইরের বিষয়গুলো বাদশার তদারকিতে চলে বরকতকে নিয়ে। কোন নির্দেশনার প্রয়োজন হলে তালুকদার দিচ্ছে। আলো শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছে। তবে মতির মা ও আমেনার মন পোড়ে শিখাকে স্মরণ করে।

জুবায়ের তার দোকানে টেলিফোন করে তার মাকে নিতে বলল। ম্যানেজার বাড়ি গিয়ে আমেনাকে দোকানে আনলো। টেলিফোনের দুই প্রান্ত হতে মা, ছেলে একে অপরের গলার আওয়াজ শুনেই কেঁদে ফেললো ছোটবাচ্চার মতো। জুবায়ের শিখার কথা জিজ্ঞেস করলো। আমেনা সব বললো। জুবায়েরের ভিতরটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে শিখার জন্য। পরে বিদায় নিলো মা,ছেলে।

নূরীর চোখ ভিজে থাকে সারাক্ষণ শিখার জন্য। আগে মনে হতো মেয়ে তার কাছেই আছে। এখন মনে হয় তার আদরের ছোট্ট মেয়েটা বুঝি মাকে ছেড়ে সাতসমুদ্র তেরো নদীর ওপারে চলে গিয়েছে।

শিখার শহরে জীবন পানসে যাচ্ছে। কিছুইতেই তার মন বসছে না চারদেয়ালের ভিতর। জেলখানার বন্দী আসামির মতো মনে হয় নিজেকে। তবুও নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সে। কারণ তাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। মজবুত হতে হবে। দুর্বলের জীবন কতটা অবহেলার,লাঞ্চনার,উপেক্ষার,অনাদরের,

অসম্মানের, সেটাতো সে তার জীবন ও তার মায়ের জীবন দিয়েই প্রমাণ পেয়েছে। সে মায়ের কাছে চিঠি লিখে,বোনের কাছে চিঠি লিখে। তারাও উত্তর দেয় চিঠির। এভাবে পত্র বিনিময়ের মাঝে তাদের মনের অনুভূতির আদান প্রদান হয়। শিখার মন ভালো করার জন্য রাজ তাকে একেকদিন একেকস্থানে নিয়ে যায় ঘুরতে। লালবাগ কেল্লা,শিশুপার্ক, রমনা পার্ক, ধানমন্ডি লেক, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন,জিয়া উদ্যান,গুলশান ওয়ান্ডারল্যান্ড, আহসান মঞ্জিল,সদরঘাট কিছুই বাকি রাখলো না সে। এভাবে কাটলো এক মাস।

এক বিকেলে রাজ শিখাকে জিজ্ঞেস করলো,

“তোমার রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো। ঠিক করেছো কোন বিষয়ে পড়বে? নাকি ডিগ্রীতে ভর্তি হবে?”

“হুম। আরো আগেই ঠিক করে রেখেছি। ডিগ্রীতে পড়বো না। একটা বিষয়ে পারদর্শী হতে চাই।”

“ভেরি গুড! তো কোন সাবজেক্ট?”

“আইন বিষয়ে পড়বো আমি।”

“ওরে বাবা! এই বিষয় সিলেক্ট করার কারণ? ”

“কারণ আছে এবং অপরিহার্য! খুব কাছ হতে দেখেছি,কিভাবে মানুষ জোর জবরজস্তি করে অন্যের সম্পত্তি ভোগ দখল করে। কিভাবে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে স্বামী, স্ত্রীকে ছেড়ে দেয়। কিভাবে নারীরা স্বামীর সংসারে নিগৃহীত হতে থাকে। নির্যাতিত হতে থাকে। এবং আরো নানান বিষয় আছে। তো এগুলো যেন প্রতিহত করতে পারি আমার এবিলিটি অনুযায়ী। তাই।”

“তাহলে প্রিপারেশন নিতে হবে। আমি বই,গাইড এনে দিবো আইন বিষয়ের উপর। এটা ভর্তি পরিক্ষা দিতে হবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ বিভাগে। বাকিটা খোঁজখবর নিবো।”

“আমাকে কত জায়গায় ঘুরতে নিলেন। কিন্তু আপনার অফিস ও সেই বাসায় ত নিলেন না। চেনারওতো প্রয়োজন আছে আমার।”

বলল শিখা।

“অন্যদিকে ঘুরতে ঘুরতে আর সময় হলো কই বলো? আচ্ছা,কবে যাবে? কাল যাবে? একসাথে অফিস ও আমার সেই বাসা দেখিয়ে আনবো।”

” হুম। কালই চলেন।”

“সিউর।”

পরেরদিন সকালে রাজ অফিসে যাওয়ার সময় শিখাকেও নিয়ে গেলো। স্টাফদের সাথে শিখার পরিচয় করে দিলো। তারা প্রত্যেকে শিখাকে সালাম দিলো অবনত মস্তকে। একে একে সবাই বেরিয়ে গেলো। শিখা অফিস দেখছে হেঁটে হেঁটে। অফিসের পিছনের রুমে গেলো শিখা। তার নাকে কেমন একটা ভ্যাপসা গন্ধ লাগলো। সে বোঝার চেষ্টা করেও কিছু বুঝল না। বারান্দায় দেখলো কিছু বড় বড় কাটুন বক্স ঠাসা করে রাখা। রাজ তার টেবিলে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পর শিখা রাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অধিকারসুলভ কণ্ঠে বললো,

“দেখা শেষ। এবার আপনার বাসায় যাবো।”

“এত দ্রুত দেখা শেষ বাটারফ্লাই?”

সেগুন কাঠের রকিং চেয়ারটায় দুলতে দুলতে বলল রাজ।

“হুম শেষ।”

“বসো ওই চেয়ারে। কিছু খাবে।”

“নাহ। কিচ্ছু খাব না আমি। বাসা থেকে না নাস্তা খেয়ে আসলাম?”

পিটপিট চোখে তাকিয়ে মধু মধু স্বরে বলল শিখা।

“তুমি প্রথম এলে আমার অফিসে। কিছুতো খেতেই হবে তোমার।”

তখনই চা এনে দেওয়া ছেলেটা কেক ও কোক নিয়ে আনলো। সে কাঁচের গ্লাসে ও পিরিচে সব পরিবেশন করে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। রাজ নিজের কোকের গ্লাসের চুমুক দিলো।

শিখাকে বলল,

“নাও।”

শিখা তার গ্লাস হাতে নেওয়ার পূর্বেই দরজা ঠেলে দুজন মেয়ে রাজের অফিসে ঢুকলো। তারা দুজন রাজের দুই কাঁধে হাত রাখলো। কোমর ভেঙ্গে স্টাইলিস ভঙ্গিতে দাঁড়ালো। উড়ু উড়ু গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“কি ব্যাপার হিরো? ডুমুরের ফুল হয়ে গেলে? দেখাই যায় না। ওদিকে কাজের অর্ডার এসে বসে আছে। বিজ্ঞাপনদাতা তোমাকে লন্ঠন জ্বালিয়ে খুঁজছে।”

সেইক্ষণেই তারা শিখাকে দেখিয়ে বলল,

“হু ইজ সি?”

“সি ইজ মাই সুইট ওয়াইফ?”

“সুইট? মানে রসগোল্লা? ওফহো!”

নাক সিঁটকে বলল তারা।

শিখা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো মেয়ে দুজনের অঙ্গভঙ্গি দেখে ও কথা শুনে। তারা দুজন শিখার গ্লাসের সব কোক ভাগাভাগি করে খেয়ে ফেলল। ভাবটা এমন যেন এটা তাদের জন্যই ঢেলে রাখা হলো।

রাজ ফুঁসে উঠলো। বিক্ষিপ্ত মেজাজে মেয়ে দুজনকে বলল,

রাজবধূ ৬৯ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!