রাজবধূ ৪৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাজ দোতলায় গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব তৈরি হয়ে নিলো। এবং চিন্তিত স্বরে মনে মনে বলল,
জুবায়ের রাতে চলে গেলো। ভোরে এক্সিডেন্ট করলো। প্রেমঘটিত কোন বিষয় নাকি অন্যকিছু? এটা নিশ্চিত হতে হবে আমাকে।
নিচে গিয়ে রাজ, বরকতকে সঙ্গে নিয়ে সেই অচেনা ছেলের সাথে হাসপাতালে চলে গেলো। জুবায়েরকে দেখলো সিটে গিয়ে। আহত জুবায়ের চোখ বন্ধ অবস্থায় শুয়ে আছে সীটে। তার হাতে, পায়ে,গালে ব্যান্ডেজ করা। এক পায়ের হাঁটুর নিচের চামড়া ছিলে গিয়েছে। গালের একপাশ,ও হাতের চামড়া ছিলে গিয়েছে। তবে অল্প। রাজ ডাক্তারদের সাথে কথা বলে পুরো পরিস্থিতি জেনে নিলো।
মদ্যপ অবস্থায় ছিলো জুবায়ের। এলোমেলোভাবে রোড ক্রস করতে গিয়ে একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা খায়। অমনি ছিটকে পড়ে রাস্তার একপাশে। কর্তব্যরত স্থানীয় পুলিশ খবর পেয়ে হাসপাতালে এডমিট করে ডাকে। ডাক্তাররা জানালো দুর্ঘটনা মারাত্মক হয়নি। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছে রাস্তা ফাঁকা ছিলো বিধায়। চারদিন পর রিলিজ দেওয়া হবে পেসেন্টকে। তার মোটরসাইকেল থানায় রয়েছে।
রাজ ডাক্তারদের অনুরোধ করলো জুবায়েরকে সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য। সে বরকতকে বাড়িতে পাঠালো যারা আসতে চায় জুবায়েরকে দেখতে, নিয়ে আসার জন্য। এবং প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য। সে থানায় গিয়ে জুবায়েরের বাইক বুঝে নিলো। বাইক চালিয়ে বাড়ি এলো। বাইক রেখে সঙ্গে সঙ্গে আবার বেবিট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলো হাসপাতালে। তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিলোনা প্রয়োজন নেই বলে।
বরকত বাড়ি এলো। তার সঙ্গে আমেনা,সুফিয়া,আদুরী ও তার তিনভাবি গেলো। সবাই দীর্ঘসময় জুবায়েরের পাশে থেকে বিকেলে বাড়ি চলে এলো। তবে আমেনা ও রাজ রয়ে গেলো রাত হওয়া অবধি। আমেনা রাতেও থাকতে চাইলো ছেলের শিয়রের কাছে।
রাজ থাকতে দিল না তাকে। বলল,
“চাচী, বরকত থাকবে। ছেলে পেসেন্টের পাশে ছেলে থাকলেই সুবিধা। বুঝছেন? এটা সরকারী হসপিটাল। চিকিৎসা উন্নত। আপনি আমার সঙ্গে বাড়ি চলে আসুন। চিন্তার কোন কারণ নেই। ইনশাআল্লাহ জুবায়ের সুস্থ হয়ে যাবে। আমি সকালে আবার আসবো হাসপাতালে।”
রাজ, চাচীকে নিয়ে বেবিট্যাক্সি করে বাড়ির দিকে পথ ধরলো। যেতে যেতে আমেনা আক্ষেপের সুরে রাজকে বলল,
“বাবা রাজ, চাচী এমনিতেই তোমার সঙ্গে একটু কথা কইতাম। কিন্তু এখনই কই।”
“হ্যাঁ চাচী। নিশ্চয়ই বলবেন।”
বিনয়ী কণ্ঠে বলল রাজ।
“বাবা,তোমার আগ থেইকাই জুবায়েরের লাইগা বউ খুঁজি। ওর মনেই ধরে না। নানান খুঁতে সব পাত্রী ক্যান্সেল কইরা দেয়। তার,মতিগতি কিছুই বুঝি না। আমার মা জিগাইলো কোন মাইয়ারে পছন্দ কিনা? তাও ঠিকঠাক উত্তর দেয় না। কওতো বাবা কি মুশকিলে আছি আমি। শোন,জুবায়ের সুস্থ হইলে সে ক্যান বিয়া করতে চায় না একটু জিগাইয়ো। তুমিতো ওর কাছেরজন। তোমারে খুইলা কইবো সব আমার দিলে কইতাছে।”
আমেনা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে থামলো। রাজ তাকে বলল,
“চাচী,আপনি ধৈর্য ধরুন। আমি জিজ্ঞেস করবো জুবায়ের বিয়ে না করার কারণ। জেনে আপনাকে জানাবো। এবং বিয়ে করার জন্য বুঝাবো তাকে। আগে মূল সমস্যাটা জানতে হবে।”
আমেনা নিজের রুমে চলে গেলো। রাজ নিচে শিখার রুমে গেলো। দেখলো শিখা চেয়ার টেবিলে বসা। নোট করছে সম্ভবত। রাজ পিছন হতে মাথা ঝুঁকিয়ে শিখার ঘাড়ে লম্বা করে ফুঁ দিলো।
শিখা “কে?” বলে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। রাজকে দেখেই নম্রস্বরে,
“ওহ! আপনি? ভয় পাইয়ে দিলেন কেন?”
“আমি দিলাম প্রণয়,তুমি পেলে ভয়।
এভাবেই করবো আমি তোমাকে জয়।”
“কবিসাহেব।”
“তুমি আমাকে যা মনে করবে,আমি তা। খেয়েছো?”
“হ্যাঁ আমরা সবাই খেয়েছি।”
“ভেরিগুড। তুমি দোতলায় চলে যাও। আমি ভাত খেয়ে আসতেছি।”
” আজকেও আপনার রুমে? না মানেএএ…”
“বোকার মতো কথা বলছো কেন? উপরে যাও বলছি।”
আদেশের সুরে বলল রাজ।
শিখা মাথায় আঁচল টেনে গুটিগুটি পায়ে দোতলায় চলে গেলো। রাজ মায়ের রুমে গেলো। জিজ্ঞেস করলো,
“মা আপনি খেয়েছেন?”
“হ খাইছি। তুই খাইয়া নে। টেবিলে সব বাড়া আছে। জুবার কি হাল অহন?”
” হ্যাঁ খাচ্ছি মা। ভালোর দিকে আছে। চারদিন পর রিলিজ।”
“ভালো হইলেই ভালো। এই পোলাওনা কি একটা বদের বদ। কইছি আঁখিমনিরে বিয়া কর। করব না। আমার মুখের উপর পোলা মানা কইরা দিলো।”
“জোর করে এসব হয় না আম্মা। তবুও আমি বলে দেখবো একবার।”
রাজের কথা সুফিয়ার ভালো লাগলো। বলল,
“তাইলে ত বহুত ভালো হয়। দেখ রাজী করাইতে পারস কিনা।”
রাজ ভাত খেয়ে উপরে চলে গেলো। দরজায় পা রেখে দাঁড়ালো। দেখলো শিখা পালংকের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে ম্লান মুখে। রাজ দরজা বন্ধ করে দিলো। হাতে থাকার নাস্তার পিরিচখানা টেবিলে রাখলো। শিখার কাছে গিয়ে গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। শিখার দুহাতের পিঠে চুমু খেলো।
বলল,
“আমার চাঁদমুখে অমাবস্যা নামলো কেন?”
“কই নাতো।” অস্পষ্ট গলায় জবাব দিলো শিখা।
“বাসর ঘরের ফুলগুলো শুকিয়ে গিয়েছে না তাজা রয়েছে? বলো?”
শিখা পুরো রুমের দিকে নজর বুলিয়ে বলল,
“বেশ টাটকা।”
“রাইট। সবফুল একদম ফ্রেস টাটকা আনা হয়েছে। তিন চারদিনেও এই ফুল,এই বাসর এমনিই রবে। ”
শিখা জিজ্ঞাসু চোখে রাজের মুখপানে চায়।
“ফুল টাটকা থাকবে যতদিন, রাজবধূর বাসর হবে ততদিন।”
“বাসর ত একদিনেই হয়।”
লাজুক স্বরে শিখা।
“রাজবধূর বাসর স্পেশাল। তাই পর্বাকারে চলবে। কেননা দীর্ঘদিনের পিয়াসিত এই দেহমন। আজ হবে রোমান্স পর্ব।”
শিখা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
রাজ পরনের পোশাক চেঞ্জ করে নিলো। পিরিচ থেকে একটি আঙ্গুর ফল নিয়ে তার মাঝ বরাবর কামড়ে ধরলো। শিখাকে ইশারায় বলল তার মুখ থেকে বাকি অর্ধেক আঙ্গুর খেয়ে নিতে। শিখা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো।
#রেহানা_পুতুল পেইজে ফলো দিয়ে যুক্ত রবেন।
মনে মনে আওড়ে নিলো,
কি লজ্জা! কি লজ্জা! এই সুপুরুষটা শহরের মেয়েকে বিয়ে করল না কেন?গ্রামের মেয়েরা কি এত এডভান্স নাকি? হুহু!
“অগ্নিশিখা কি হলো, কালক্ষেপণ করছো কেন?”
শিখা দুরুদুরু বক্ষে রাজের ক্ষুদ্র সাধ মিটিয়ে দিলো।
“থ্যাংকস।” বলে রাজ পিরিচ থেকে আবার একটি রসগোল্লা শিখার মুখে পুরে দিলো। বলল,
“এবার অর্ধেক রসগোল্লা বের করো কামড়ে ধরে। কুইক।”
শিখা অস্বস্তি নিয়ে তাই করলো। রাজ অর্ধেক রসগোল্লা খেতে খেতে শিখার দুঠোঁটের নিয়ন্ত্রণ নিজের দুঠোঁটের ভিতরে নিয়ে নিলো। সাধ মিটিয়ে মুক্ত করলো শিখার অধরযুগলকে। শিখা ব্যথায় ঠোঁট চেপে ধরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দেখলো রক্তজবার মতো হয়ে গেলো তার গোলাপি আভার ঠোঁটদুটো। রাজ চট করেই শিখাকে লম্বালম্বিভাবে কোলে তুলে নিলো।
নেশালো চোখে চেয়ে বলল,
“এই রাজবধূ, মরুর বুকে ঝড় তুলবে বাসরের দ্বিতীয় রজনীতে?”
শিখার বুক উঠানামা করছে। গলার স্বর কম্পিত! চাহনি লাজুক! ভীরু! শুকনো ঢোক গিলছে অনবরত। তার শব্দরা এলোমেলো। কিছু বলতে পারছে না। তবুও জড়ানো গলায় দুটো শব্দ উচ্চারণ করলো,
“ছাড়ুন বলছি।”
রাজ মোহগ্রস্ত স্বরে বলল,
“তুমি তুলোর মতো হালকা,ফুলের মতো পবিত্র,
তুমি শিশিরের মতো স্বচ্ছ, পাখির মতো ছুটন্ত।”
শিখার লজ্জা লজ্জা চাহনি এদিক ওদিক লুকাতে চায়। রাজ অনুধাবন করতে পারে। তবুও ছাড়ে না। বরং ঝাঁকি দিয়ে,শিখাকে আরো মজবুত করে ধরে রাখে কোলের মাঝে।
ওয়াশরুমের কথা বলে শিখা রাজের কোল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। রাজকে অন্যমনস্ক করার জন্য বলল,
“জুবায়ের ভাইয়ের কি অবস্থা?”
“ভালো আছে। চালাকি করছো আমার সাথে?” পুলকিত চাহনিতে বলল রাজ।
“একটু আধটু চালাকি ত করতেই হয়।”
রাজ তার বিফ্রকেস থেকে শিখাকে একটা স্লিভলেস নাইট ড্রেস বের করে দিয়ে পরতে বলল। শিখা ড্রেসটি মেলে ধরে দেখলো ভালো করে। টকটকে লাল রঙের ড্রেসটি দারুণ সুন্দর।
শিখা দৃষ্টি অন্যদিকে রেখে বলল,
“এই খোলামেলা ড্রেস আমি পরবো না। কি পাতলা। হাতা নেই। সামনে পুরোটা কাটা। সবতো দেখা যাবে।”
” দেখব ত আমি। পরে আসো ওয়াশরুমে গিয়ে। দেখি না তোমাকে কতটা সুন্দর লাগে।”
“তাহলে লাইট বন্ধ হোক। ডিম লাইট জ্বলুক।”
“তাই হবে। যাও।”
স্বামীর আদেশ অমান্য করা অনুচিত, এই নীতিতে বিশ্বাসী শিখা ওয়াশরুমে ঢুকলো। রাজ ক্যাসেট প্লেয়ারে একটি অডিও ক্যাসেট প্লে করে দিলো। ফুল সজ্জিত বিছানায় গিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। শিখা লাজরাঙা মুখে ওয়াশরুম থেকে রুমে আসলো। শুনতে পাচ্ছে মৃদুলয়ে বেজে চলা ‘সুবীর নন্দী’র বিখ্যাত সেই হৃদয় হরণ করা সঙ্গীত।
“কত যে,তোমাকে বেসেছি ভালো
সে কথা তুমি যদি জানতে।
ওই দুটি চোখ যেন,জলে ফোটা পদ্ম,
যত দেখি তৃষ্ণা মিটে না……..।
ভীরু দু’টি বাঁকা ঠোঁটে/পূর্ণিমা চাঁদ ওঠে
হাসলেই ঝড়ে পরে,জোছনা….।
আমি এই রূপ দেখে দেখে মরতে পারিইই
তেমনি পারি ওগো বাঁচতে।
সে কথা তুমি যদি জানতে।
ওই কালো কেশ তুমি,ছড়ালে যখন
মেঘেরাও পেলো যেনো,লজ্জা…
আকাশের তারা গুলো/ বাসরও সাজিয়ে দিলো,
মধুময় হলো ফুলসজ্জা….মধুময় হলো ফুলসজ্জা…
“ওগো এই রাত কভু যদি শেষ না হতো,
জীবন বেলার শেষ প্রান্তে/সে কথা তুমি যদি জানতে।”
শিখা রুমের একপাশে দাঁড়িয়ে রইলো। রাজ আবেশিত চোখে শিখাকে দেখছে। যেন স্বর্গের কোন হুরপরী মত্যলোকে নেমে এসেছে। রাজ বলল,
” সুবহানাহু! দূরে কেন মানবী? বুকে আসো?”
শিখা পালংকের উপরে উঠে গেলো। তার বালিশে শুয়ে গেলো চুপটি করে। রাজ চটজলদি করে উঠে রুমের সব বাল্ব জ্বালিয়ে দিলো।
“আহ! বাতি বন্ধ করুন। দোহাই।”
বিরক্তি নিয়ে অনুনয় স্বরে বলল শিখা।
“চোখে ঝাপসা লাগছে। তোমাকে ভালো করে দেখতে পাচ্ছি না।”
চোখ টিপে মুচকি হেসে বলল রাজ।
রাজের কথার ঝোঁক এবং চাহনীতে শিখা ভারী অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। নিজেকে ঢাকার জন্য বিছানায় কোন কাঁথা বা কিছুই খুঁজে পেল না।
রাজ শিখাকে নিজের প্রশস্ত বক্ষমাঝে জড়িয়ে ধরলো। লোভনীয় চাহনি ফেলে বলল,
“যা খুঁজছিলে তা আমি সরিয়ে রেখেছি। জীবিত মানুষ থাকতে জড়বস্তু কেন খুঁজছো নিজেকে আবৃত করার জন্য? দেখো, তোমার আপাদমস্তক আর কেউ দেখবে না। পুরাটাই ঢেকে নিয়েছি।”
শিখা মনে মনে বলল,
“আপনি ভীষণ ফাজিল আছেন।”
রাজ এবার গম্ভীর স্বরে বলল,
“প্রজাপতি, তখন তোমার মুখ মলিন ছিলো কেন?”
“ভয়ে।”
“কেন?”
“যদি গতরাতের মতন ব্যথা দেন আজও, তাই।”
“তুমি এত সফট! এত মিষ্টি! পুরোই মধু মধু! ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি! আচ্ছা, ব্যথার কাজ আজ স্টপ থাকুক। একজন ব্যথা পাবে,বাকিজন আনন্দ পাবে। এটা বৈষম্য হয়। আনন্দ পেতে হয় সমানে সমান।”
শিখা রাজের ঘন বাদামী রঙের লোমশ বুকে আদুরে বিড়ালের মতো নাক মুখ ঘষতে ঘষতে বলল,
“আপনার সঙ্গে আমার জরুরী কিছু কথা আছে।”
তড়িতেই রাজ শিখার ঠোঁটের উপর নিজের তর্জনী আঙ্গুল চেপে ধরে,
” হিইসস…বাসর পর্ব রানিং আমাদের। উপভোগ করতে দাও মন ভরে। এই ভিতরে অন্যসব আলাপ বন্ধ। কথা আমারও আছে তোমার সঙ্গে। গতনিশিতে আমি আদর করেছি। রোমান্স করেছি। আজ তোমার পালা। নাউ স্ট্রাট। হারিআপ।”
“আল্লাহ! কিভাবে?আমি এসব পারি না।”
“নোওও প্রজাপতি। কাল আমি তোমাকে যেভাবে যা করেছি। একই কাজ তুমি এখন রিপিট করো আমার উপরে। কেবল ব্যথার কাজটা বাকি থাকবে। হুবহু আমার মতো করে করো।”
“আমার মনে নেই। ভুলে গিয়েছি।”
“ওকেহ আমি আবার দেখিয়ে দিচ্ছি। তোমার জড়তা কাটাতে হবে। রোমান্স করা শিখতে হবে আমাকে পরিতৃপ্ত করার জন্য।”
বলে রাজ উঠে শিখার পায়ের কাছে গেলো। মুখ ঝুঁকিয়ে নিতেই শিখা আহ্লাদী স্বরে বলল,
“থামুন। আমার মনে পড়েছে।”
রাজ মিটমিটিয়ে হেসে সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো।
“আমি চোখ বন্ধ করে ফিল করতে চাই। নিবিড়ছোঁয়ায় ভালোবাসবে আমায় এখন।”
শিখা ফাঁকিঝুকি দিয়ে একটু আদর করলো। বলল,
“সময় লাগবে। পারছি না। আপনার মতো এক্সপার্ট নই আমি।”
“দেখো আমি কিভাবে আদর দেই তোমাকে। দেখো। আমি ভীষণ উপোস। মনের খোরাক মেটাতে দাও।”
শিখা স্বামীর আকুলতায় সায় দিলো। রাজ শিখার পিনপিনে পাতলা জর্জেট নাইটির ভিতরে অভুক্ত প্রাণীর ন্যায় চেয়ে রইলো। তর সইছে না তার। লাউয়ের ডগার ন্যায় তরতরিয়ে বেড়ে উঠা শিখার উপচে পড়া যৌবনে রাজ দিশেহারা! বেহুঁশ! তার সমস্ত অনুভূতি অবশ হয়ে আসছে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কষ্টসাধ্য। তবুও নিজের মনকে প্রবোধ দিলো রাজ, শিখার কথার গুরুত্ব দিয়ে। তাই সারারাত্রি কেবল উপরের সুখটুকুই কুড়িয়ে নিলো শিখার মাঝ হতে।
কিন্তু শিখাই রাজের ঠোঁটের গভীর অতর্কিত স্পর্শ পেয়ে বেসামাল হয়ে উঠলো। তোলপাড় শুরু হলো তার সারাঅঙ্গে। বিছানার চাদর খামচে ধরে ধলাই মলাই করে ফেলল। ব্যথার কথা স্মরণ করে নিজেকে সংযত রাখলো। রাজ শিখার নাজেহাল অবস্থা দেখে সুখে মাতোয়ারা হয়ে উঠলো।
তার পরেরদিন সকালেই জুবায়েরের বাইক চালিয়ে শিখাকে নিয়ে রাজ হাসপাতালে গেলো।
“আপনি বাইক চালাতে পারেন?”
উৎসুক গলায় বলল শিখা।
“শুধু বাইক নয়,আরো অনেক কিছুই পারে নওশাদ তালুকদার রাজ। ধীরে ধীরে জানবে সব। পিছনে উঠে বসো। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসো।”
শিখার দিকে দৃষ্টি তাক করে দুর্বোধ্য হেসে বলল রাজ।
“নওশাদ তালুকদার আপনার আসল নাম?”
“না। মামদো ভূতের নাম।”
হাসপাতালে গেলে রাজ জুবায়েরকে বলল,
“ভালো বোধ করছিস? শিখা আসছে দেখ।”
“এখন একটু ভালো লাগছে।”
বলে জুবায়ের শিখার দিকে এক পলক তাকালো। শিখা কিছু বলল না। টুল টেনে বসলো। পরক্ষণেই জুবায়ের মুখ ঘুরিয়ে বেডের ওপাশ হয়ে গেলো কাত হয়ে। একটুক্ষণ পরে নার্স এসে ডাকলে জুবায়ের পুনরায় এপাশ হলো।
নার্স তাকে দেখে চলে গেলে শিখা জিজ্ঞেস করলো,
“ভাইয়ার খারাপ লাগছে মনে হয়?”
“যে কোন কিছুর ধকল কাটতে সময় লাগাটাই স্বাভাবিক।”
দুর্বল স্বরে বলল জুবায়ের।
পাশে বসা থেকে রাজ শিখার দিকে চেয়ে বলল,
“তাতো অবশ্যই। শারীরিকভাবে ও ভালই আহত হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে।”
জুবায়ের মনে মনে খেদ ঝেড়ে বলল,
“তা না হয় হবো। কিন্তু আমার মনের উপর যে দূর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে,তা কি প্রাণ থাকতে আর কোনদিন ভালো হবে রাজ?”
রাজ ও শিখা বাড়ি চলে এলো। রাজ আসতে বরকতকে বলল, ভালো করে যেন খেয়াল রাখে জুবায়েরের দিকে। জুবায়েরের কাছে সার্বক্ষণিক পাহারাদারের ন্যায় নিযুক্ত রয়েছে বরকত।
ঠিক সেদিন শেষ বিকেলে আচমকা রানীর গা গুলিয়ে এলো। সে রসুই ঘরের পিছনে গিয়ে হড়হড় করে বমি করে দিলো। আদুরী ছাড়া কেউই তা দেখল না। সে বিস্ময়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো,
“কি ব্যাপার বড় ভাবি? ভাইয়া মারা গেলো সেই কবেই। তুমি এখন বমি করছো কেন? এই বমিতো কনসিভ করার বমি। নাকি বলো?”
“আমি যদি তোর এমন বিপদ সামাল দিবার পারি। তাইলে তুই আমার একমাত্র ননদী হইয়া এইটা সামাল দিবার পারবি না বইন?”
আর্তির স্বরে বলল রানী।
তখনই ধুমকেতুর মতো শিখা তাদের সামনে উপস্থিত হলো। বলল,
“ভাবি কি হয়েছে? বমি করলেন কেন?”
“সবসময় সব বিষয়ে নাক গলানো উচিত না। বই-পুস্তক পড়ে এইটা শিখোনাই?”
কণ্ঠে উষ্মা ঢেলে শিখাকে বলল আদুরী।
এর প্রতুৎত্তরে শিখা যা বলল,তা শুনে আদুরী ও রানী মূর্তির ন্যায় চেয়ে রইলো শিখার মুখপানে।
শিখা বলল,
রাজবধূ ৪৬ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।