রাজকন্যা বানেছা পরী– প্রথম খন্ড

উজাড় বাড়ি । আসলে এটি কোন বাড়ি নয় । জনমানবহীন বিরান জংলা ভুমি । এর আশেপাশেও কেউ বাস করে না । অবশ্য বাস করা তো দূরের কথা; দিনেও একলা কেউ যেতে চায় না । আর রাতে তো এই বাড়ির ত্রিসীমানায় কেউ যায় না । যত বড় সাহসী লোকই হোক না কেন ! এ বাড়ির নাম শুনলেই গা ছমছম করে । উজাড় বাড়ির ভিতরে বড় বড় গাছ । গভীর জংগল । ঝোপ-ঝাড় । এর ঠিক মাঝ খানে একটি গভীর খাদ । এই খাদ নিয়ে নানান জনশ্রুতি আছে । কারো কারো মতে, এই খাদের গভীরতা প্রশান্ত মহাসাগরের চেয়েও বেশি ! আবার কেউ কেউ বলে, এই খাদের তলদেশের দিকে যে কেউ দৃষ্টি দিবে তাঁর চোখ অন্ধ হয়ে যাবে । এক চোখের দৃষ্টি দিলে এক চোখ আর দুই চোখের দৃষ্টি দিলে দুই চোখ । আবার কারো কারো মতে, এখানে কোন খাদই নেই ।মায়া ।সব কিছুই জিন-পরীদের মায়া জাল । গভীর রাতে এই খাদের জায়গায় কখনও কখনও একটি সুরম্য প্রাসাদ দেখা যায় । ভিতর থেকে ভেসে আসে বেহালার নানা সুর । নুপুরের নিক্কন । সুরেলা কণ্ঠের গান আর উদ্দাম নৃত্য । অবশ্য কেউ কোন দিন একা একা এর কাছে যাওয়ার মত দুঃসাহস দেখায়নি । আর দেখাবেই বা কিভাবে ? একবার ছমির শেখ নামের এক যুবক । গানের সুরে পাগল হয়ে উজাড় বাড়ির দিকে গেল । তখন রাত প্রায় দুটা । সাথের লোকজন সবাই নিষেধ করল । সে কারো কথাই শুনল না । সেই যে গেল, আর ফিরে এল না ।

পরদিন দেখা গেল, খাদের টলমলে নীল জলে ছমির শেখের মৃত দেহ ভাসছে । পাড়াশুদ্ধ লোক সারাদিন চেষ্টা করল; কিন্তু লাশ খাদ থেকে তুলতে পারল না । হঠাত সকলের চোখের সামনে ছমির শেখের লাশ হাসতে লাগলো । পৈশাচিক হাসি । যেন গান শুনে আনন্দ উল্লাস করছে । মুহূর্তেই একটা হুলস্থূল বেঁধে গেল । যে যার মত পারল দৌড়ে গিয়ে পালিয়ে বাঁচল । সেই থেকে আর কেউ কোনদিন এই খাদের ধারে কাছেও যায় না ।

এই উজাড় বাড়ির পাশেই রাতুলদের বাড়ি । বাড়ি মানে দাদার বাড়ি । রাতে কারো উজাড় বাড়ি পাড়ি হওয়ার বিশেষ প্রয়োজন হলে রাতুলের দাদা সাথে করে নিয়ে যান । তিনি সিদ্ধ পুরুষ । তাঁর কোন ডর ভয় নেই । রাতুলরা ঢাকায় থাকে । বছরে দু তিন বার দাদু বাড়িতে বেড়াতে আসে ।এর মধ্যে দু ঈদের দুই বার কমন। বাবা-মা আর ছোট বোন অহনার সাথে । রাতুলের বয়স সতের বছর । সবে মাত্র এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছে । পরীক্ষা খুব ভাল হয়েছে । এ প্লাস পাওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। অবশ্য এ প্লাস এখন প্রায় সবাই পায় । তাই এখন শুধু এ প্লাস পেলেই চলবে না । গোল্ডেন এ প্লাস পেতে হবে। পাওয়ারও জোরালো সম্ভবনা আছে । তাই এখন সে বেশ খোশ মেজাজে আছে । গায়ে ফু দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । আর মনে মনে ভাবছে কোথাও বেড়িয়ে আসা যায় কিনা ? কোথায় যাওয়া যায়? এই ভাবনায় কদিন থেকে মনের ভেতর অদ্ভুত এক শিহরণ অনুভব করছে । মন পবনের নৌকায় ভেসে ভেসে রঙের ঘোড়া দৌড়াচ্ছে । বার বার কেন জানি দাদু বাড়ির কথা হচ্ছে ।
গল্পের দ্বিতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!