এমন সময় দাদু বাড়ি থেকে জামশেদের মোবাইল । জামশেদ রাতুলের বন্ধু । সমবয়সী । সহপাঠী । ছোট বেলায় পাড়ার স্কুলে একসাথে লেখাপড়া করেছে । খুব ভাল আড় বাঁশি বাজায় । শোনা যায়, তার বাঁশির সুরে মুগ্ধ পরীরা দল বেঁধে চলে আসে । একদিনের ঘটনা ।দুপুর বেলা । জামশেদ হাওরে গরু ছেড়ে দিয়ে ছাতা মাথায় নরম ঘাসের বুকের উপর শুয়ে শুয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে । কখনও একমনে । আবার কখনও আনমনে । কিছুক্ষণ পরেই শোনা গেল ঝুমুর ঝুমুর নাচ আর গান । কিন্ত কাউকে দেখা যাচ্ছে না । জামশেদ কিছুটা হতচকিত হয়ে এদিক সেদিক থাকাল । না কাউকে দেখা গেল না । ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেল ।ভাবল, এ কোন তেলেসমাতি! আশেপাশে কেউ নেই । শুধু মাথার উপর সূর্য । তীব্র উত্তাপ ছড়াচ্ছে । জামশেদ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
কে তোমরা ?
আমরা পরী ।
জামশেদ অবাক হয়ে গেল । তবু জিজ্ঞেস করল, তোমরা কেন এসেছ ?
তোমার বাঁশির সুর শুনতে ।
আমার বাঁশির সুর শোনার কি আছে ?
তোমার বাঁশির সুর শোনে আমরা পাগল হয়ে গেছি ।
তুমি কে কথা বলছ ?
আমি বানেছা ।পরী রাজকন্যা । সাথে আমার সখিরা । আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই ।
তোমাকে আমরা এখন ধরে নিয়ে যাব । আমাদের পরী রাজ্যে । সেখানে মহাধুমধামে তোমার
সাথে আমার বিয়ে হবে !
এবার জামশেদ বুকে একটু সাহস সঞ্চয় করে বলল, মানুষের সাথে আবার পরীদের বিয়ে হয় নাকি ?
কেন হবে না ? তোমাকে বিয়ে করার পর আমিও মানুষের রূপ ধরে থাকব ।
তাই নাকি ? তুমি মানুষের রূপ ধরতে পারো ?
অবশ্যই পারি ।
তাহলে এখন মানুষের রুপ ধরো । আমি তোমায় দেখতে চাই ।
ঠিক আছে আমার প্রিয়তম —— ।
এই কথা বলে পরী রাজকন্যা বানেছা সাথে সাথে মানুষের রুপ ধারন করল । সখিদের নিয়ে খিল খিল করে হাসতে লাগলো ।
আর এদিকে বানেছার রুপ দেখে জামশেদের মাথা ঘুরতে লাগলো । একি দেখছে সে ? এত সুন্দর ! এত সুন্দর! এত সুন্দর ! কিভাবে সম্ভব ? এ যে তার কল্পনারও অতীত ! চোখ, মুখ, নাক, কান, চুল, হাত, পা, বুক, চিবুক সব কিছু ! সব কিছু এত সুন্দর ! এত, এত অপরূপ ! সে ধীরে ধীরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল ।
সেই জামশেদও এবার এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছে । পরীক্ষা ভাল হয়েছে । কিন্তু সে এক ভীষণ সমস্যায় পড়েছে । সমস্যার নাম পরী রাজকন্যা সমস্যা । যে কোন সময় সে কিডন্যাপ হতে পারে । সব সময় আতংকের মধ্যে তার দিন কাটছে । সমস্যাটি সে কারো সংগে শেয়ার ও করতে পারছে না । এমন কি রাতুলকেও বলেনি । নিজের মনে নিজেই জ্বলে পুড়ে মরছে । অনেক চিন্তা ভাবনা করে ছোট বেলার বন্ধু রাতুলকে মোবাইল করে আসতে বলেছে । জরুরি ভিত্তিতে । রাতুলও সাথে সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে । কিন্ত সমস্যা একটা আছে । অহনা । সে সাথে যেতে চায় । অহনার বয়স তের । সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে । খুব বুদ্ধিমতী । সারাক্ষণই কিশোর গোয়েন্দা উপন্যাস পড়ে । যে কোন জায়গায় রহস্যের গন্ধ পায় । রাতুল রহস্যকন্যা বলে ওকে ক্ষ্যাপায় । রাতুলের সাথে চার বছরের পার্থক্য । তবু দুজনে সারাক্ষণই শিশুর মত ঝগড়া করে । অবশ্য সাথে সাথে মিলেও যায় । এস এস সি পরীক্ষা শেষে বেড়ানোর জন্য দাদু বাড়ির চেয়ে উত্তম স্পট আর কিছুই হতে পারে না । তার উপর জামশেদের জরুরি কল । সব মিলিয়ে রাতুল সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলল ।
দাদু বাড়িতেই যাবে সে । আর সঙ্গে যাবে চির শত্রু-বন্ধু অহনা । যেই ভাবা সেই কাজ । পরদিন তারা দুজনে বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে দাদু বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হল । ট্রেনে । কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস । ভারী সুন্দর ট্রেন । নতুন চালু হয়েছে । ঝক ঝকে দেখতে । এর আগে আর এই ট্রেনে চড়ে সে দাদু বাড়ি যায়নি । সব সময় গিয়েছে এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেসে । নতুন জামা, নতুন বাড়ি, নতুন গাড়ি আর নতুন বউয়ের রাঁধা তরকারির মজাই আলাদা ।