রাজকন্যা বানেছা পরী– চতুর্থ খন্ড

তারা তিন জনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে । কেউ কথা বলছে না । একেক জনের মনে একেক রকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে । রাতুলই প্রথম নীরবতা ভাঙল । জামশেদের দিকে তাকিয়ে বলল, ভালো যেহেতু বেসেছ তাহলে চিন্তা ভাবনা করে লাভ নেই । বানেছার সাথে পরীস্থান চলে যাও। সুখেই থাকবে ।
জামশেদ মাথা নিচু করেই বলল, তা কি করে সম্ভব? এ হতে পারে না । আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান । আমি এভাবে চলে গেলে তারা খুব কষ্ট পাবে ।
তাহলে বানেছাকেই এখানে থেকে যেতে বল ।
বলেছিলাম । ও রাজী হয়নি । বলল, ধরা পড়ে যেতে হবে ।
তাহলে এভাবে ডুবে ডুবে আর কতদিন ?
সেটাই তো সমস্যা । আর এজন্যই তো তোমাকে আসতে বললাম ।
অহনা এতক্ষণ চুপচাপ ছিল । এবার একটু রেগে গিয়ে বলল, আসলে সমস্যা তুমি নিজেই । এর সমাধান কেউ তোমাকে দিতে পারবে না । তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।
জামশেদ কিছু বলল না । রাতুল বলল, তুই এত রেখে যাচ্ছিস কেন ? আমরা ওকে হেলফ না করলে কে করবে বল দেখি ?

এমন সময় ঘটল আরেক ঘটনা । একজন মহিলাকে অন্য কয়েকজনে জোর করে রাতুলদের বাড়ির দিকে নিয়ে আসছে । তাকে জিনে ধরেছে । সে পাগলামি করছে । বয়স খুব বেশি নয় । সাতাশ-আটাশ হবে । নাম ফালানি । বেশ সুন্দর দেখতে । সে একই কথা বার বার বলছে ।
আইজ আমি লতুর বাপেরে খাইয়্যা ফালবাম —– ।
ঘাড় ভাইঙ্গা চিবাইয়া চিবাইয়া রক্ত খাইয়াম ——।
লতু হইল মহিলার মেয়ের নাম । অন্যদের কাছ থেকে শোনা গেল, কিছুক্ষণ আগে এই মহিলা উজাড় বাড়ির পাশ দিয়ে একা একা হেঁটে কোথাও যাচ্ছিল । উজাড় বাড়ির জিনের আছর তার উপর পড়েছে । এই জন্য সে এমন আবোল তাবোল বকছে । মহিলার মা কাঁদতে কাঁদতে বলছে, তোমরা ছোট হুজুরকে তাড়াতাড়ি খবর দেও । আমার ফালানিরে জিনে মাইরা ফালাইল ।
এই ছোট হুজুর হল রাতুলের দাদা । তাঁকে সবাই ছোট হুজুর বলে ডাকে, কারণ তাঁর বাবা আমির উদ্দিনও বড় মাওলানা ছিলেন । আর তিনিই ছিলেন এ বাড়ির বড় হুজুর ।
এই অবস্থা দেখে রাতুল দৌড়ে দাদার কাছে গেল । মনির উদ্দিন সাহেব কিছুক্ষণ পরে ধীর পদক্ষেপে রোগীর কাছে আসলেন । ইতিমধ্যে অনেক লোক সমাগম হয়েছে । তিনি গভীরভাবে ফালানিকে পর্যবেক্ষণ করে বললেন,
ইয়ামলিকা জিনে ধরেছে । বড়ই শক্ত জিন । আপনারা যারা সুরা জিন জানেন, তারা সবাই মনে মনে তেলাওয়াত করতে থাকেন । আর যারা জানেন না, তারা সুরা নাস সাত বার পড়েন । আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু কইরেন । খুব শক্ত জিন । সহজে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না । আপনারা কিছু রশি আর লাঠি সোটা প্রস্তুত রাখেন ।

এই কথা শুনে ফালানির মা ছমিরন বিবির অন্তরাত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল । সে তাড়াতাড়ি হুজুরের পায়ে পড়ে গেল । আর বার বার বলতে লাগলো, ছোট হুজুর আমার মেয়েটারে বাঁচান । আমার মেয়েটারে বাঁচান । আপনে আমারার মা-বাপ । আপনে ছাড়া আমরার আর কেউ নেই হুজুর । আমরা গরীব মানুষ । ফালানি মইরা গেলে আমি কারে নিয়া থাকবাম ।

পা ছাড় ফালানির মা । চিন্তা কইরো না । দেখি কি করা যায় !
এদিকে হুজুরকে দেখা মাত্র ফালানি আরও ক্ষেপে গেল । হাত-পা ছুড়তে লাগলো । কয়েকজন লোক তারে জবরদস্তি ধরে রেখেছে । সে সমানে বকে যাচ্ছে,
ছোট হুজুরের মাথায় আইজ টুপি নাই,
আমি তারে ধইরা চিবাইয়া চিবাইয়া খাই !!
এই কথা বলে সে খিল খিল করে হাসতে লাগলো । হুজুরও ক্ষেপে গিয়ে বলল, দাঁড়া, আজ তোকে দেখাচ্ছি মজা । কত ধানে কত চাল
এখনই টের পাবি ।

জামশেদ, রাতুল আর অহনা এই তিন জন একসাথে দাঁড়িয়ে আছে । মনির উদ্দিন সাহেব রাতুলের দিকে ইংগিত করে বললেন,
একটু সরিষার তেল নিয়ে আসো তো দাদা ভাই । একে আইজ শায়েস্তা করতে হবে ।
রাতুল মনে মনে নিজেকে খুব গর্বিত ভাবল । এই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দাদা তাকে দিয়ে তেল আনাচ্ছে — এতো কম বড় কথা নয় ।বড়ই সৌভাগ্যের ব্যাপার । অন্য কাউকে দিয়েও তো দাদা তেল আনাতে পারতেন । ইতিমধ্যে শত শত লোক এসে জড়ো হয়েছে । জিন ধরার খবরটি মুহূর্তেই সারা গ্রামে রাস্ট হয়ে গেছে । নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সকলেই এসেছে । একটা খুশি খুশি ভাব সকলের মাঝে । স্বচক্ষে জিন দেখতে পাবে । একেকজন জিন সম্পর্কে একেক রকম মন্তব্য করছে । তবে অনেকই কিছুটা ভীত । আতংকিত । কী হয় কেবল আল্লাহ তায়ালাই জানেন । এরিমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে রাতুল তেল নিয়ে হাজির হয়ে গেল ।

গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!