চক্র দেখেছে রোজই তাদের বাড়ি এক ভিখারিনী আসছে।কোলে তার দু তিন বছরের একটা ছেলে।ছেলেটার নাম লচ্ছু।লচ্ছু ! এধরনের নাম চক্র কোনো দিন শোনে নি।মাকে জিজ্ঞেস করে ছিলো ও,মা লচ্ছু আবার কেমন নাম?
মা বলেছিলেন নাম রাখার মত ওদের ভাবনা নেই বাবা!ওরা খিদের তাড়নায় সারা দিন ঘুরে বেড়ায়,তাই ছেলে মেয়ে হলে যা হোক একটা নাম রেখে দেয়।
সে দিন যখন ভিখারিনী লচ্ছুকে নিয়ে এলো,চক্র লচ্ছুকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল,ওর নাম লচ্ছু কেনো রেখেছ?
ম্লান হাসলো অন্নু ভিখারিণী,বলল,ওই রাম,লছমন আছে না,তার লছমন থেকে ওর নাম লচ্ছু রেখেছি।
–আমরা তো লক্ষণ বলি।তুমি লছমন বলছ কেনো?আবার প্রশ্ন করে চক্র।
অন্নু ভিখারিণী বলল,আমি তো বাঙালী নই,ছোট্ট বাবু!তাই–
–তা হলে তুমি বাংলা বলো কি করে?
–আমি ছোট বেলা এখানে চলে আসি।আর আমার লোক,মানে স্বামী–সে ছিলো বাঙালী।
–কোই তাকে তো কখনো দেখি নি!
–সে মোরে গেছে ছোট্ট বাবু.আজ দু বছর হলো।
এমনি সময় ঘরের ভিতর থেকে,চক্র,চক্র বলে মা ডাকতে লাগলেন।তাই আরও প্রশ্ন মনে জমা থাকলেও অবলা রয়ে গেলো।ঘরের ভিতর ঢুকতে হলো তাকে।
লচ্ছুকে দেখেছে চক্র।একটা রাক্ষস ছেলে।ওর মা রুটি,ভাত,বিস্কুট যখনি যা দেয় চক্র দেখেছে মহা পেটুকের মত খেতে থাকে লচ্ছু!ওর মা দু বার মুখে পুরল না পুরল ও গপগপিয়ে সব খেয়ে ফেলল।মনে হলো সবটা বুঝি গিলে নিল!অবাক হোয়ে চক্র দেখতে থাকে।কোনো দিন লচ্ছুকে সে জিজ্ঞেস করে,আর খাবি লচ্ছু?লচ্ছু একটু হাসে,তারপর মাথা সামের দিকে ঝুঁকিয়ে দেয়।
চক্র ছুটে যায় ঘরের ভিতর।মাকে বলে,মা আর একটা রুটি দাও না। ওই লচ্ছু রাক্ষসটাকে দিয়ে আসি!
মা বলেন,ওরকম বলতে নেই বাবা!ওরা গরীব,ভালো খেতে পায় না,তাই খিদে ওদের পেটে সব সময় লেগে থাকে।কথা কটা বোলে চক্রের হাতে একটা রুটি তুলে দেন।
চক্র রুটি নিয়ে ছুটে গিয়ে লচ্ছুর সামনে তুলে ধরে।লচ্ছু এত ছোট তাও খপ করে ধরে নেয় রুটিটা।চক্র মনে মনে বলে,কি লোভী বাবা!খাবার বেলা বড়দের মত কি লাফ ঝাপ দিয়ে উঠলো দেখো!তারপর ও প্রকাশ্যেই অন্নু ভিখারিনীকে বলে উঠলো,তোমার ছেলে লচ্ছু রাক্ষস গো!
অন্নু কিছু বলল না,শুধু চক্রর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
হয়তো বলতে চাইল,তোমরা কি বুঝবে গো,মানুষ কোন জালায় রাক্ষস হয়!
এর পর থেকে যখনি অন্নু লচ্ছুকে নিয়ে আসত,চক্র তাকে দেখলেই বলে উঠতো,মা,মা,ওই রাক্ষস এসেছে।ঘরে খাবার আছে কিছু?
চক্র ক্লাশ থ্রীতে পড়ে।একটা প্রইভেট ইংরেজী স্কুলে।রোজ ভোরে গাড়ি আসে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতে।স্কুলের ইউনিফর্ম পরে বইয়ের ব্যাগ ও জলের বোতল নিয়ে তৈরী থাকে।স্কুলের গাড়ি এসে হর্ন দিলো কি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে ও।তড়িঘড়ি করে মা,বাবাকে,টা,টা,করে বাসে চেপে বসে।
সে দিন ও তাই হলো।নিয়ম মত স্কুলে পৌঁছালো।স্কুলের টিফিনে টিফিন বক্স খোলে চক্র।মা তার জন্যে অনেক খাবার দিয়েছেন।তিনটে রুটি,দু রকমের তরকারি,দু রকমের মিষ্টি,আর টিফিন বক্সের ভেতরের ছোট্ট বক্সে ভরা আছে ঘরের তৈরী মিষ্টান্ন!ও ভাবে কি যে করে না মা!এত কিছু সে কি খেতে পারে!এত খাবার দেখে লচ্ছুর কথা ওর মনে পড়ে যায়।ও যদি থাকত তো খাবার গুলো আর নষ্ট হতো না।
তাড়াতাড়িতে সে দিন বিজন টিফিন বক্স আনতে ভুলে গেছে।টিফিনের সময় পর্যন্ত তার ঘর থেকে কেউ টিফিন বক্স পৌঁছালো না।চক্র বলল,আয় আমরা একসঙ্গে বসে টিফিন খেয়ে নিই।আমার কাছে অনেক খাবার আছে।
বিজন এক দু বার আপত্তি করে শেষে এক সঙ্গে বসে ওরা ভাগাভাগি করে টিফিন খেয়ে নিল।একটু পরেই বিজনের টিফিন নিয়ে ঘরের লোক পৌঁছালো।কি হবে সে টিফিন বক্স!তেমনি ভরা পড়ে রইল।
সে দিন অনিবার্য কোন কারণে স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হোয়ে গেলো।চক্রর পেট ভালো ছিলো না।দু তিন বার মেমকে বলে টয়লেটে গিয়েছে।পেটটা আবার কেমন যেন মোচড়াচ্ছিলো।শরীর কেমন দুর্বল লাগছিল।ছুটির ঘন্টা পড়ার পর ক্লাশ ছেড়ে সবাই বেরিয়ে গেলো।যাবার আগে দু চারজন ওকে ডেকে গেলো।কিন্তু পেটের ব্যথায় কাতর চক্র বইয়ের ব্যাগ আর জলের বোতল নিয়ে টয়লেট পরিসরের ভিতরে ঢুকল।হাতের বোতল,ব্যাগ বাইরে রেখে টয়লেটের ভিতরে ঢুকে গেলো সে।ডিসেনট্রির মত হোয়ে গেছে তার।মনে হচ্ছিল আরও একটু,আরও একটু বসলে ভালো হতো!বার বার পেটের ভিতরে একটা নিম্ন চাপ অনুভব করছিল।
এমনি আধঘন্টা কেটে গেলো,তাড়াহুড়োতে স্কুলের বাসে চক্র ওঠেনি এটা কেউ লক্ষ্য করল না।বাস ছেড়ে দিলো।চক্রর ঘরের সামনে এসে হর্ন দিলো গাড়ির ড্রাইভার।কেউ নামল না।কেউ জিজ্ঞেস করল না যে চক্র কোথায়!ড্রাইভার মনে করতে পারলো না সকাল বেলা এ ঘরের ছেলেটা বাসে উঠে ছিলো কি না।ছাত্রদের ওঠানো নামানোর লোকটা মনে করল ছেলেটা হয়তো ছুটি নিয়ে গার্জিয়ানের সঙ্গে বাড়ি চলে এসেছে।যেমনটা মাঝে মোধ্যে হোয়ে থাকে।নিয়মিত সময়ের আগে স্কুলের বাস এসে চলেগেল,চক্রর ঘর থেকে কেউ তা লক্ষ্য করল না।
এদিকে স্কুল পাহারাদার,চৌকিদার ওরা পুরোপুরি এক বেলার ছুটি পেয়ে গেছে।ওরা ক্লাশ ঘরের বাইরে টাইরে ভালো ভাবে দেখে শুনে নিল।স্কুল ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করল।মেন গেটগুলোতে তালা লাগিয়ে ঘরের দিকে চলে গেলো।
চক্র যখন নিজেকে একটু সামলালো,টয়লেট থেকে ও বেরিয়ে এলো।বইয়ের ব্যাগ আর জলের বোতল হাতে তুলে টয়লেট পরিসরের বাইরে বেরিয়ে এলো।
আরে,স্কুল একেবারে ফাঁকা,একজন স্টুডেন্টকেও ও দেখতে পেল না।না মেম, না দারোয়ান,না চৌকিদার কেউ নেই!মেনগেটের সামনে হাজির হলো ও।কিন্তু একি,গেট যে বন্ধ হোয়ে গেছে!ও জোরে জোরে ধাক্কা দিলো গেটে,গেট খোলার চেষ্টা করল।না,গেট বাইরে থেকে বন্ধ!কান্না পাচ্ছিল চক্রর।ও জোরে জোরে ধাক্কা দিতে লাগলো,চীত্কার করে দারোয়ান,চৌকিদারদের ডাকতে লাগলো।না,কারো কোনো সাড়া নেই!ও চীত্কার করে উঠলো,গার্ড আঙ্কেল,গার্ড আঙ্কেল!কেউ এলো না,কেউ তাকে গেট খুলে দিয়ে গেলো না!
হঠাৎ চক্রর মনে পড়ল,স্কুলের পেছন দিকে আরও একটা গেট আছে।মনে পড়া মাত্র ও কানতে কানতে ছুটে চলল পেছন দিকের গেটের কাছে।দূর থেকেই দেখল গেট বন্ধ।তবু গেটের কাছে এলো,জোরে জোরে ধাক্কালো।এখানেও চীত্কার করে ডাকতে থাকলো গার্ড আঙ্কেল,গার্ড আঙ্কেল,বলে।
কেউ এলো না,কেউ তার ডাক সুনতে পেল না।পেছন গেটের পাশেই ও ব্যাগ, জলের বোতল নিয়ে মেঝেতে লেপটি মেরে বসে গেলো।ও হতাশায় দুটো পা সামনের দিকে ছড়িয়ে দিল।এখন আর কাঁদতে পার ছিলো না ও,মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠছিল।শরীর শিহরণ দিয়ে উঠছিল।
–মা,মা,মা,কাতর ভাবে বলে উঠলো ও।মা তুমি কোথায়!আমায় এসে নিয়ে যাও,মা!একটু থেমে আবার বাবাকে ডাকতে থাকলো,বাবা,বাবা,বাপি তুমি কোথায়,তুমি কোথায়?ওর দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকলো।
বেলা তিনটে বেজে গেলো।চক্র ঘরে আসে নি এখনো।খোঁজ,খোঁজ,খোঁজ,কোথায় চক্র?স্কুলে ফোন লাগানো হলো।স্কুলের ফোন বাজতে থাকলো,কেউ উঠালো না।কেবল স্কুলের অফিস ঘরের ফোনের ঝংকার চক্রকে উতলা করে তুলল।ছুটে এসে ও দেখল স্কুলের অফিস ঘরে ফোন বেজে চলেছে। কিন্তু কি করবে ও?অফিস ঘরেও লাগা ছিল বড় এক তালা! ও অসহায়ের মত কেবল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
চক্রর মা আশপাশের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলেন–যেখানে চক্র মাঝে মাঝে ঘুরতে যায়।না,কোথাও সে নেই।আশপাশের অলিগলি মাঠ,ঘাট কোথাও ও নেই!
চক্রর বাবা গাড়ি নিয়ে চলে এলেন স্কুলে।না,সমস্ত স্কুল বিল্ডিঙ্গের বাইরেটা তখন খা খা করছে,কোথাও একটা জনপ্রাণীর দেখা নেই।তবু তিনি গাড়ি থামিয়ে নীচে নাবলেন।স্কুলের মস্ত গেটে বড় তালা ঝুলছে দেখলেন।মনে একবার সন্দেহ হলো,এমন তো নয় চক্র স্কুলের ভিতর আটকা পড়ে আছে!পর মূহুর্তে মনে হয়েছে,না,এমন হয় না,বাচ্চাদের স্কুলে এমন ঘটনার নজির নেই বললেই চলে।তবু মেন গেটে গিয়ে তিনি কান পাতলেন।না,কোনো সাড়াশব্দ নেই।দরজায় একবার,দুবার থপ থপ করলেন।না ভেতর থকে কোনো আওয়াজ এলো না!
বেলা পাঁচটা বেজে গেলো।স্কুলের স্টাফের কাছ থেকে চৌকিদারের ঘরের লোকেশন জেনে নিয়ে চক্রর বাবা আর পাশের বাড়ির এক ভদ্রলোক গেলেন চৌকিদারের কুয়াটার্সে।চৌকিদার ছিলো না,ও বাজারে গিয়েছিল।অনেক সময় অপেক্ষার পরও যখন চৌকিদার ফিরল না,তখন ওঁরা সোজা চলে এলেন পুলিশ থানায়।সেখানে চক্রর মিসিং রিপোর্ট করা হলো।
রাত আটটা বেজে গেলো।চক্রর ঘরে কান্নার রোল পড়ে গেলো।মা অঝরে কেঁদে চলেছেন।কান্নার মোধ্যে বলে চলেছেন,আমার ছেলেকে এনে দাও,আমার ছেলে কে এনে দাও গো।বাবা স্তব্ধ হোয়ে দাঁড়িয়ে আছেন,চোখে তার জলের ধারা।চক্র তাঁদের এক মাত্র সন্তান।
চক্র চুপ করে বসে আছে।মাঝখানে সামনের গেটের থেকে ঠুক ঠাক শব্দ এসে ছিলো।ও পাগলের মত টলতে টলতে ছুটে গিয়ে ছিলো।গেটের কাছে পৌঁছাতে তার দেরী হোয়ে গিয়েছিল।ততক্ষণে ওর বাবা স্কুলের গেটে দু তিন বার ধাক্কা দিয়ে চলে গিয়ে ছিলো নিজের কারের কাছে।চক্র শুধু একটা গাড়ির স্টার্ট দেবার শব্দ পেয়েছিল।ভাঙা গলা নিয়ে সে প্রাণপণ চীত্কার করেছিল।কিন্তু কারো কান পর্যন্ত সে চীত্কার পৌঁছায় নি।
ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে এলো।ভীষণ ভয় করছিল চক্রর।সামান্য শব্দ কানে এসে বাধছিলো।হাওয়ার শন শন শব্দ,মশার ঝাঁকেদের ওড়ার শব্দ,আর দূরের লোকালয়ের কথাবার্তার আওয়াজ কানে আসছিল।আর পারছিলো না সে–চীত্কার করতে করতে ওর গলা শুকিয়ে গেলো,ভয় পেতে পেতে ওর শরীরে কেমন জড়তার ভাব এসে গেলো।তার ওপর সারা দিনের না খোয়াতে তার শরীর দুর্বল হোয়ে পড়েছে।আর চলতে পারছে না ও।ব্যাগ আর জলের বোতল পেছনের গেটের কাছে পড়ে রইল।সামনের গেটের কাছে দেওয়ালে হেলান দিয়ে ধুপ করে বসে পড়ল।দু পা সামনে ছড়িয়ে দিয়ে দু হাঁটুর ফাঁকে মাথা গুঁজে চুপচাপ শরীর এলিয়ে পড়ে রইল।
রাত তখন সারে দশটার কাছাকাছি।রিক্সা থেকে নামল দারোয়ান ও চক্র।চক্রকে কোলে করে নামাতে হলো।সদর দরজা আজ খোলাই ছিলো।রিক্সার সামান্য শব্দ শুনেই চক্রর মা,বাবা,এক সঙ্গে দরজার বাইরে বেরিয়ে এলেন।দারোয়ানের কোলে চক্রকে দেখে,চক্র,চক্র বলে ছুটে এলেন তাঁরা।
মা চক্রকে জড়িয়ে ধরলেন,বলে উঠলেন,কি হয়েছে বাবা!কি হয়েছে তোমার!কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা।বাবা হতবাক হোয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।তাঁর চোখের কোন ভিজে যেতে লাগলো।
দারোয়ান করুণ সুরে বলে উঠলো,বাবু!,ভয়ে তার মুখ দিয়ে কথা সরছিল না।হঠাৎ সে চক্রর বাবার পা জড়িয়ে ধরলো,বাবু! আমায় মাপ করুন।আমি দোষ করেছি,বাবু!
ছেলে স্কুলে আটকে পড়েছিল জানতে পেরে সত্যি রাগে কান্ডজ্ঞানহীন হোয়ে পড়লেন তিনি।দারোয়ানকে ঠাস,ঠাস,চড় মারতে লাগলেন।
দারোয়ান কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে,আরও মারুন,বাবু সাব,আরও মারুন।
–দাঁড়া,আমি তোকে পুলিশে দেবো,তোকে আমি ছাড়ব না,চক্রর বাবা ভীষণ উত্তেজিত হোয়ে গেলেন।
দারোয়ান হাত জোড় করে কাঁদো কাঁদো হোয়ে বলে ওঠে,বাবু সাব,আরও মারুন আমায়,হাত দিয়ে মারুন,লাঠি দিয়ে মারুন,চাবুক এনে মারুন,কিন্তু বাবু,হাতে মরুন,আমায় ভাতে মারবেন না।আমারও সংসার আছে,বৌ,ছেলে,মেয়ে,আছে। ওদের পেটে লাথি মারবেন না বাবু!
আস্তে আস্তে শান্ত হতে লাগলেন চক্রর বাবা।ভাবলেন,কি হবে গরীবের পেট মেরে। ঘটনা যা ঘটার তা তো ঘটেই গেছে।দারোয়ানকে ছেড়ে দিয়ে তিনি তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকলেন।ছেলে তার মার কোলে কেঁদে চলেছে তখনও,বাবাকে দেখে চক্র আরও ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো।বাবা কোলে তুলে নিলেন ওকে।মুখ দিয়ে তাঁর সম্পূর্ণ কথা সরল না,কেবল,বাবা,বাবা,বলে ডেকে উঠলেন তিনি।
রাত এগারোটা কোথা দিয়ে বেজে গেলো কেউ টের পেল না।ঘটনার উত্তেজনা খুব ধীরে ধীরে হলেও শান্ত হোয়ে আসছিল।চক্র নিজেকে সামান্য সুস্থ অনুভব করছিল। এবার তার পেট খিদেতে মুচড়ে উঠলো।ও ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠলো,মা,খুব খিদে পেয়েছে,মা!
মা তাড়াতাড়ি ছেলের খাবার থালে বেড়ে ওর মুখের সামনে তুলে ধরলেন।ছেলের অসুবিধা হবে ভেবে তিনি খায়িয়ে দিতে লাগলেন।খিদে আর সহ্য হচ্ছিল না,খুব তাড়াতাড়ি খেতে থাকলো চক্র।খিদের মুখে তার কাছে সব খাবার খুব ভালো লাগছিলো।মার দেবার আগেই ও খেয়ে নিচ্ছিল।পরের গ্রাসের জন্যে হাঁ করে বসে থাকছিল।গপাগপ সে থালের সমস্ত খাবারগুলি খেয়ে নিল।ঢকঢক করে পুরো এক গ্লাস জল খেয়ে নিল।এবার অনেকটা শান্ত হোয়ে চক্রর মনে পড়ে গেল একটা কথা।ও মাকে ডেকে বলল,মা,আমি আর লচ্ছুকে রাক্ষস বলব না,মা!
মা জিজ্ঞেস করলেন,কেনো,বাবা?
চক্র ধীরে ধীরে বলে উঠলো,আজ আমার এত খিদে পেয়েছিল,মা,দেখলে আমিও না রাক্ষসের মত সব গপাগপ খেয়ে নিলাম–ঠিক লচ্ছুর মত!
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।