গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
“রাইট। একটা মন্দিরের সূর্যদেবতার রক্তের তেষ্টা ছিল নাকি সবচেয়ে বেশি। যতক্ষণ না তেষ্টা মিটত, ততক্ষণ জ্বলজ্বল করত না একটা রক্তমুখী নীলা। তেষ্টা মিটলেই দপদপ করে দুবার ভেতরে জ্বলে উঠত লালরশ্মি। তেষ্টা পাওয়ার আগে জ্বলত একবার।”
“অদ্ভুত গল্প! কেউ দেখেছে?”
“হা হা! আমিও দেখিনি, তবে কিউরেটর যখন বলল, সেই মন্দিরের রক্তলোভী নীলা তার দখলে এসেছে, তখন কিনেই ফেললাম।”
“সঙ্গে নিয়ে এলেন? কাস্টম্স কিছু বলল না?” ভেতরের রাগ কথার মধ্যে গোপন রাখতে পারিনি। ভদ্রলোক ভয়ানক সবজান্তা। আর একদফা অট্টহেসে জহর দাস সামনের নিচু টেবিল থেকে মস্ত একটা টোবাকো পাইপ তুলে নিয়ে বললেন, “এর মধ্যে ছিল রক্তমুখী নীলা। জানতেই পারেনি।”
পাইপ-ভক্ত ইন্দ্রনাথ হাত বাড়িয়ে বলল, “দিন তো দেখি! কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন?”
“এই তো এইখানে,” বলেই, পাইপের যে-ফোকরে তামাক ঠাসা হয়, সেটা পেঁচিয়ে খুলে ফেললেন জহর দাশ।
খুলে এল কিন্তু আধখানা, বাকি আধখানায় রয়েছে ছোট্ট একটা গর্ত, আধ ইঞ্চির মতো ব্যাস। বললেন মুচকি হেসে, “দামি পাথর আনতেই হয়, কী আর করি বলুন, রক্তমুখী নীলা এসেছিল্রে ভেতরে।”
“এখন তিনি কোথায়?”
“রক্তমুখী নীলা? দেখতে সাধ হচ্ছে? চলুন। আমার রুচির কথা বলছিলাম না? একটাই সেই রুচি, চলুন।”
দেখছিলাম আশ্চর্য মৎসধার। মোটা কাচের বিশাল চৌবাচ্চা। তার ম্যেধ খেলে বেড়াচ্ছে বড়-বড় রঙিন মাছ। তাদের অনেকের চোখের পাতা উঠছে আর নামছে। চোখ জ্বলছে ওপর থেকে ফোকাস-করা সারি সারি আলোয়।
“কী বুঝলেন?” জহর দাশের এই এক সবজান্তা উক্তি। হাড় জ্বলে যায়। চুপ করে রইলাম।ইন্দ্রনাথ কিন্তু তন্ময় হয়ে তাকিয়ে ছিল, বলল- “কলের সাছ আনিয়েছেন জাপান থেকে?”
“এই না হলে সার ইন্দ্রনাথ!” চোখ নাচালেন জহর দাশ। নিজেও যেন একটু নেচে নিলেন, “ধরলেন কী করে?”
“মাছেরা কি চোখ পিটপিট করে? করে না।
রিমোট কন্ট্রোলার নিশ্চয় আপনার পকেটেই আছে। হাতটা কাইন্ডলি বের করবেন?”
“হা হা হা! ঠিক ধরেছেন। লেখক বন্তু কিন্তু ধরতে পারেননি,” বলতে-বলতে পাঞ্জাবির পকেট থেকে হাত বের করে রিমোট বের করে দেখালেন জহর দাশ।
“শাবাশ!” ইন্দ্রনাথের কথা যেন এখন নেচে নেচে ছুটছে, “এবারের ধাঁধা: জ্যান্ত মাছেদের ভিড়ে কলের মাছ কেন?
আপনার এক নম্বর পরীক্ষায় যখন পাশ করেছি, দু”নম্বর পরীক্ষার রেজাল্টও বলে দিচ্ছি: কলের মাছেদের চোখে মণি বসিয়ে রখেছেন। কিন্তু কেন?
“সরেস ব্রেন আপনার। ঠিক জায়গায় ঘা মেরেছেন। খুব দামি রত্ন খুব বেশি লুকিয়ে রাখতে নেই, রাখতে চোখের সামনে, তাই আনিয়েছি কলের মাছ।”
“রক্তমুখী নীলা কার চোখে?”
“আয়… আয়… আয়…!” বলতে বলতে রিমোট টিপে গেলেন জহর দাশ। লেজ নেড়ে নেড়ে কাচের ওদিকে এসে গেল প্রায় আধহাত লম্বা একটা রামধনু রঙিন মাছ- ওর একটা চোখে রক্তমুখী নীলা। যাঃ! লেজের ঝাপটা মেরে দূরে ছিটকে গেল কলের মাছ।
আমার দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিরি হাসলেন জহরত ব্যবসায়ী, “লেখক বন্ধুকে আমার আর একটা রুচির কথা বলে রাখি। – শুনছেন?”
“হাঁ, শুনছি“বলতে হলে আমাকে।
“আমিও লেখক।”
“তাই নাকি?”
“তবে আপনার মতো লেখা ছাপিয়ে বেড়াই না, জমিয়ে রেখেছি, সেরা লেখাটাই সে ছাই এখনও লেখা হল না, কোথায় বেসে লিখব জানেন? জেলখানায়।…”
“জেলখানায় বসে লিখবেন?”
“আজ্ঞে। ‘ডন কুইক্সোট’ লেখা হয়েছিল জেলখানায়। সার ওয়াল্টার রলে, ভেলতেয়ার ও হেনরি, বার্ট্রান্ড রাসেল – এরা সকলেই ভাল ভাল লেখাগুলো, কোথায় বসে লিখেছিলেন? জেলখানায়। হিটলার তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার সংগ্রাম’এর প্রথম পর্ব কোথায় বসে ডিকটেট করেছিলেন? জেলখানায়, জওহরলাল উত্তম গ্রন্থ রচনা করেছেন জেলখানায়। হা হা! আমিও চাই আমার সেরা লেখা জেলখানায় বসে লিখতে।”
গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।